বাংলাদেশের মতো দেশে সাংবাদিকতা হচ্ছে, পুকুরে অনেকগুলো কুমির ছেড়ে দিয়ে সাঁতার কাটতে বলা। আর এই কুমির হলো- কখনো আইন, পুলিশ, রাষ্ট্র বা রাজনৈতিক দল। সেক্ষেত্রে কোনো সাংবাদিক যদি ভালো সাঁতার জানেন তাহলে এগুলো এড়িয়ে যেতে পারবেন।
মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘সাংবাদিকদের জন্য আচরণবিধি প্রতিপালন এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। এই সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা বাড়ছে। অভিযোগ বাড়ছে প্রেস কাউন্সিলে। এবছর এখন পর্যন্ত ৩০টি অভিযোগ এসেছে। ধারণা করছি ৫০টি ছাড়িয়ে যাবে অভিযোগ। আগের বছরগুলোতে যা আসতো, এবার আরও বেশি আসছে।
সাংবাদিকদের ‘প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্ট’ পুরোপুরিভাবে মেনে চলার ওপর তাগিদ দেন বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম।
তিনি বলেন, নীতিমালায় যা আছে, আমরা তা কিছু মানি, কিছু মানি না। যা আছে পুরোটাই মেনে চলার চেষ্টা করবেন। আমাদের জনগণের জন্য কাজ করতে একজন ভালো সাংবাদিক হতে হবে। সাংবাদিকতার মানকে আরও উচ্চতর স্তরে নিতে হবে।
প্রেস কাউন্সিলের দায়িত্ব তুলে ধরতে গিয়ে নিজের মত ব্যক্ত করে তিনি বলেন, সাংবাদিক বা সংবাদপত্রকে জড়িয়ে কোনো মামলা যদি হয়, তাহলে সেটি কোর্টে যাওয়ার আগে প্রেস কাউন্সিল যাচাই করে দেখবে। তারপরই মামলা যাবে কোর্টে। তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা হয়নি বলে জানান তিনি।
প্রেস কাউন্সিল স্বপ্রণোদিত হয়ে সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়াবে কি না এমন প্রশ্নে বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম বলেন, চাকরি হারিয়ে বা বেতনজনিত কারণে অনেক সাংবাদিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করতে চাইলেও সাহস পান না। সেক্ষেত্রে কেউ প্রস্তাবনা দিলে প্রেস কাউন্সিল বিষয়টা বিবেচনা করবে। কিন্তু তার আগে সেই সাংবাদিক ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে যাচাই করা হবে।
সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, সাংবাদিকতা করতে হলে এর সব নিয়ম জানতে হবে। জানতে হবে আইন সম্পর্কে। চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা দিতে হবে। ‘তবে’ এই তবের মাঝে অনেক কিছু আছে। তবে মানেই হলো আইনের বাইরে কিছু করা যাবে না। কোনো প্রতিষ্ঠান নিয়ে আপনি কাজ করলে তার সম্পর্কে জানতে হবে।
প্রস্তাবিত গণমাধ্যম আইন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গণমাধ্যম আইন নিয়ে অনেকেই নানা কথা বলছেন। বিএনপির অনেক নেতা বলছেন, ‘হঠাৎ করেই এই আইন কেন’। এটি নিয়ে অনেক কিছুই তারা বলছেন। কিন্তু এর ভেতরে অনেক দিক আছে। এটা বুঝতে হবে। না বুঝে শুধু বলে গেলে হবে না।
বাংলাদেশে সাংবাদিকতার পরিস্থিতি তুলে ধরে মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশে সাংবাদিকতা হচ্ছে- পুকুরের মধ্যে অনেকগুলো কুমির ছেড়ে দিয়ে বলা হলো, এপার থেকে ওপারে সাঁতার কেটে যাও। কিন্তু কুমিরের লেজের মধ্যেও পড়তে পারবা না, মুখেও পড়তে পারবা না। কারণ, লেজে পড়লেও বিপদ, মুখে পড়লেও বিপদ। আর এই কুমির হলো কখনো কালোবাজি, কখনো আইন, পুলিশ, রাষ্ট্র বা কখনো আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, বিএনপি, ছাত্রদল। কোন কুমিরের খপ্পরে পড়বেন, তা বলা মুশকিল। কিন্তু আপনি যদি ভালো সাঁতার জানেন তাহলে এগুলো এড়িয়ে যেতে পারবেন।
ডিআরইউ সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু বলেন, আপনাকে বুঝতে হবে প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্ট যেটা আছে, সেটা সাংবাদিকদের রিপোর্ট বিচারের জন্য। এটা আপনার পক্ষে নয়। আমি আমার বিবেকের স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা বলবো।
মতবিনিময় সভায় ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম হাসিবের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন প্রেস কাউন্সিলের সচিব মো. শাহ আলম। এছাড়া ডিআরইউর সদস্যরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।