সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক : অতীতে সংবিধান লঙ্ঘনকারী প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমরা বর্তমান সরকারকে সফল হিসেবে দেখতে চাই।
শনিবার (১০ মে) বিকেলে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিএনপি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বিশ্বের সব বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, গৌতম বুদ্ধ তার অনুসারীদের জন্য ঘোষণা করেছিলেন পঞ্চশীল বা ৫টি মৌলিক শিক্ষা। এরকম প্রত্যেক ধর্মে নির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা ও মৌলিক শিক্ষা রয়েছে। বিশ্বে সত্য, ন্যায় ও মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা হলো প্রতিটি ধর্মের মূল লক্ষ্য। একজন মানুষ বা নাগরিক হিসেবে বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বা সমাজ বাস্তবায়নের জন্য ভুমিকা রাখা প্রত্যেকের নৈতিক দায়িত্ব। সব ধর্মের ও মতের সব মানুষ সবাই মিলেমিলে যেন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি। এজন্য রাজনীতিতে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ও চর্চা ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন। দলমত নির্বিশেষে সকলের নিরাপদ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হলে নিরাপদ ও মানবিক রাষ্ট্র এবং সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বে এখনও গণতন্ত্রই একমাত্র উত্তম বিকল্প। গণতান্ত্রিক বিশ্বে রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে গণতন্ত্র বিরোধী যারা অপশক্তি হিসেবে চিহ্নিত।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে যারা বা যে দলটি গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে ফ্যাসিস্ট বাংলাদেশ কায়েম করেছিল তারা কিন্তু অপশক্তি হিসেবেই চিহ্নিত। দেশের জনগণ তাদের অপশক্তি হিসেবেই চিহ্নিত করেছে। ১৯৭১, ৭৫ এর ৭ নভেম্বর, ৯০ এবং ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতা এখানে দেশের মানুষ দুটি বিষয়ে একমত। এক- বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে যাতে আর কেউ তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে না পারে। দুই- গণতন্ত্র বিরোধী পলাতক তাবেদার অপশক্তি আর যাতে মাথাচড়া দিতে না পারে। এই দুই বিষয়ে দেশের জনগণ আর কোনো আপোস মানতে রাজি নয় বলে আমি মনে করি। বিএনপিসহ দেশের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল জনগণের এই দাবির সঙ্গে একমত।
তারেক রহমান বলেন, আমাদের বক্তব্য হলো- যারা বার বার সংবিধান লঙ্ঘন করেছে বা জড়িত ছিল তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। জনগণ কোনোভাবেই আয়না ঘর স্থাপনকারী, গুম-খুন অপহরণ ও দুর্নীতি-লুটপাটকারীদের পুনর্বাসন চায় না দেশের মানুষ। আমরাও দল হিসেবে মতামত দিয়েছি। বিএনপিসহ সব দল এই সরকারকে সফল দেখতে চায়। এ জন্য কিন্তু আমরা সরকারের কাছে একটি পথনকশা ঘোষণার জন্য বারবার আহ্বান জানিয়েছি। স্বচ্ছ পথনকশা থাকলে জনগণের মাঝে অস্পষ্টতা থাকে না।
গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিশ্বের কোথায় কখন কী হয় আমরা মুহুর্তেই জানতে ও দেখতে পারি। দেশের ফ্যাসিবাদ পতনের পর এখন গত ১৫ বছরের দুর্নীতি, কুকর্ম কিন্তু আলোচনায় রাখা দরকার। ফ্যাসিবাদের অপকর্ম যদি নিয়মিত প্রচার করতে পারি তাহলে মানুষ সচেতন হবে এবং ফ্যাসিবাদী বিরোধী দলগুলোর মাঝে কেউ বিভেদ উস্কে দিতে পারবে না। ফ্যাসিবাদী শাসনের দীর্ঘ দেড় দশকে বিভিন্ন সময় জঙ্গী নাটক ও ধর্মীয় ব্যক্তিদের ওপর হামলা চালিয়ে ফ্যাসিস্টরা তাদের লুটপাটের ঘটনা আড়াল করতে চেয়েছিল। তারা ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চেয়েছিল। পলাতক স্বৈরাচার বিভিন্ন ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকে ঘিরে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করতো। এ বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হতে পারে। যা আগামীতে রাজনৈতিক বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক হতে পারে। কেন না, কক্সবাজারের রামু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রংপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার বিচার হলে আগামীতে কেউ এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারবে না।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে রাষ্ট্র ও সমাজে নারী ও শিশু এবং ধর্মীয় জনগোষ্ঠী নিরাপদ বোধ করে না সেই রাষ্ট্র কোনো ভালো রাষ্ট্র হতে পারে না। সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু এটি কোনো পরিচয় হতে পারে না। দলমত ধর্ম নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিকের পরিচয় হচ্ছে আমরা বাংলাদেশি। প্রতিটি নাগরিক রাষ্ট্রের প্রতিটি অধিকার সমানভাবে ভোগ করবে এটিই বিএনপি মনে করে। বিএনপি আগামীতে জনগণের ভোটের মাধ্যমে এমন সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায় যারা জবাদিহিতা করবে। আমাদের সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমি বৌদ্ধ ধর্মীয় সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে সব অনুষ্ঠানের সফলতা কামনা করছি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা আপনাদের সবাইকে আহ্বান জানাবো আসুন সবাই মিলে দেশের উন্নয়ন ও শান্তি-সমৃদ্ধিতে শামিল হই। বিএনপিও আপনাদের জন্য কাজ করছে।
ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, গৌতম বুদ্ধের জীবনী থেকে বেশকিছু শেখার আছে। আসুন আমরা সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সবাই মিলে একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলি। যাতে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। কেন না, আমরা একটি ক্রান্তিকালে তথা রুপান্তরের সময়ে উপণীত হয়েছি। ফ্যাসিজম থেকে গণতন্ত্রের পথে রুপান্তর।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা সাংবিধানিকভাবে সবাই নাগরিক। আমরা সবাই বাংলাদেশি। আমাদের নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তনের মাধ্যমে এই স্বীকৃতি পেয়েছি। আমরা সবাই মিলে একটি সুখী সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলি এই কামনা করছি।
বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক দীপেন দেওয়ানের সভাপতিত্বে ও সুভাষ চন্দ্রা চাকমার পরিচালনায় বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটর সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, বিজন কান্তি সরকার, কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক দিলীপ কুমার বড়ুয়া, বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে মৈত্রী দেওয়ান, সমীর দেওয়ান, সাথী উদয় কুসম বড়ুয়া, প্রবীণ চাকমা, অনিমেষ চাকমা, অ্যাডভোকেট নিকোলা চাকমা, পার্থ প্রতিম বড়ুয়া, চন্দ্রা চাকমা, মানস থু চাকমা, লু থু মু মারমা, রাঙাপানি অনাথ শিশু সদনের ভিক্ষু এম শ্রী ইন্দ্র বংশ, আর্যসুখ বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত সুধর্ম ভিক্ষু, আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের ভদন্ত মৈত্রী রতন ভিক্ষু এবং আনন্দ প্রিয় শ্রমন।