বখাটেরা বেপরোয়া, পাড়া মহল্লায় কিশোর গ্যাং

দেশের শহর ও গ্রামাঞ্চলে আবারও বখাটেরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। যৌন হয়রানির ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মূলত স্কুল ও প্রাইভেটে পড়তে আসা-যাওয়ার পথে এবং ঘরের বাইরে বের হলেই মেয়েরা বেশি উত্ত্যক্তের শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া নারী শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী নারীরাও প্রতিনিয়ম গণপরিবহন ও পাবলিক প্লেসে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অনেক কিশোর অপরাধী এখন বখাটেপনায় জড়িত। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে যাওয়ার পর এই হয়রানি আরও বেড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, বখাটেদের কুপ্রস্তাবে সাড়া না দিলেই হামলার শিকার হতে হচ্ছে ভুক্তভোগীকে। এমনকি দিতে হচ্ছে প্রাণও। কিছু ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর পরিবারের ওপর আক্রমণ করছে বখাটেরা।

 

বখাটেদের ইভ টিজিং ও যৌন হয়রানির কারণে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুজন আত্মহত্যা করেছে। এ সময় ১৬ জন তরুণী-কিশোরীকে যৌন হয়রানি করা হয়। এ কারণে দুর্বৃত্তের হামলায় ১৭ জন আহতও হয়। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদনে এমনটি জানানো হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে বখাটেরা তাদের অপরাধের পরিণতি সম্পর্কে সচেতন নয়। তাই তারা কিছু বিবেচনা না করেই হামলা চালাচ্ছে। আর আমরা যদি অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে না পারি তবে এভাবেই ইভ টিজিংয়ের শিকার হয়ে একের পর এক প্রাণ ঝরে যাবে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাড়া-মহল্লায় গজিয়ে ওঠা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে, বিনোদন কেন্দ্রে, পাবলিক প্লেসে ও মার্কেট-সংলগ্ন এলাকায় দলগতভাবে বিভিন্ন বয়সী নারী-কিশোরীদের যৌন হয়রানি করছে। এমনকি ফেসবুক ও টিকটকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকেও তারা যৌন হয়রানির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে, বস্তির ছিঁচকে সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান, এমনকি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এবং ভাসমান পথশিশু ও টোকাইরা এসব কিশোর গ্যাংয়ে জড়িত।

 

আঁচল ফাউন্ডেশনের ‘তরুণীদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট এবং মানসিক স্বাস্থ্যে এর প্রভাব’ শীর্ষক সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে, ৬৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ তরুণী যৌন নিপীড়নের শিকার হন। এর মধ্যে ৩৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ তরুণী জানান যে, তারা বিকৃত যৌন ইচ্ছার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত বা কুদৃষ্টির মাধ্যমে নিগ্রহের শিকার হন। ২৯ দশমিক ৬২ শতাংশ তরুণীকে আপত্তিকর স্পর্শের ভুক্তভোগী হতে হয়েছে। আর বিভিন্ন জায়গায় ইভ টিজিংয়ের শিকার হয়েছেন ২২ দশমিক ২৬ শতাংশ তরুণী। এর মধ্যে ৪৫ দশমিক ২৭ শতাংশ গণপরিবহনে যৌন হয়রানির শিকার হন। আর বাসস্ট্যান্ডে ৮৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ যৌন হয়রানির মতো অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। ৭৫ দশমিক ৬০ শতাংশ তরুণী একাকী চলার সময় যৌন নিপীড়নের শিকার হন। আর ২১ দশমিক ৫৭ শতাংশ মা, বোন বা বান্ধবী থাকা অবস্থায় এবং ২ দশমিক ৮৩ শতাংশ বাবা, স্বামী, ভাই বা অন্য পুরুষসঙ্গী থাকা অবস্থায় যৌন হয়রানির শিকার হন। গতকাল মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত এক গবেষণায় জানানো হয়, যে মেয়ে ও নারীরা ধর্ষণের শিকার ও যৌন নির্যাতনের শিকার হন, এতে ভুক্তভোগীদেরও দোষ আছে- এমনটি ভাবেন ৫৩ শতাংশ মানুষ।

 

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বেশ কিছু আলোচিত ঘটনায় বখাটেদের বেপরোয়া হয়ে ওঠার বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। সম্প্রতি জামালপুরের মেলান্দহ পৌরসভার শাহজাতপুর এলাকায় ধর্ষণের শিকার হয়ে দশম শ্রেণির এক ছাত্রী আত্মহত্যা করে। সেই কিশোরীর রেখে  যাওয়া চিরকুট থেকে জানা যায়, স্থানীয় চেয়ারম্যানের ভাতিজা তামিম আহমেদ স্বপন সেই কিশোরীকে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করত। পরে তাকে ধর্ষণ করে। ফলে ওই স্কুলছাত্রী লোকলজ্জার ভয়ে আত্মহত্যা করে। ২০ মার্চ চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হকপাড়ায় বখাটের উত্ত্যক্ততা সহ্য করতে না পেরে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করে রেলবাজার আলিয়া মাদরাসার প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী। শহরের আরামপাড়ার মোবারক হোসেনের ছেলে আবুল কালাম প্রায়ই ভুক্তভোগীকে উত্ত্যক্ত করত। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে এক স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় তার পরিবারের ওপর হামলা চালিয়েছে বখাটেরা। এতে সেই ছাত্রীর ভাই, চাচা ও চাচি আহত হয়েছেন। প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় সম্প্রতি এক পুলিশ কর্মকর্তার মেয়ে এবং বরিশাল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রীকে মারধর করা হয়। এ অভিযোগে বরিশালের কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অভিভাবকদের কন্যাসন্তানের নিরাপত্তার বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে। তাদের কন্যাসন্তানকে কেউ উত্ত্যক্ত করছে কি না এ বিষয়ে মেয়ের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে। এ বিষয়ে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়কেও সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। আর এই মামলাগুলোতে যত দ্রুত তদন্ত করে বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যাবে, সমাজ থেকে তত দ্রুত এ ঘটনাগুলো হ্রাস পাবে। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির (বিএনডব্লিউএলএ) নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী  বলেন, বর্তমানে ঢাকা ও এর বাইরে নারী ও কিশোরীরা কোথাও নিরাপদে নেই। অথচ নারীদের কর্মক্ষেত্রে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উত্ত্যক্ত করার বিষয়ে উচ্চ আদালতের প্রদত্ত দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে অভিযোগ কমিটি গঠন করার বিষয়ে বলা হয়েছে। কিন্তু আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিষয়টি এখনো আমলে নিচ্ছে না। বেশ কয়েক বছর আগে শিক্ষার্থীদের যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যৌন নির্যাতনবিরোধী কমিটি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার নজির নেই। এর বাইরে উচ্চ আদালত যৌন হয়রানি ইস্যুতে দেশের সব জেলা প্রশাসককে এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া মাত্রই দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে। একই সঙ্গে এ ধরনের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করা এবং দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ডিসিদের নির্দেশ দেওয়াসহ মোট পাঁচ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। কিন্তু এত কিছুর পরও বখাটেদের উত্ত্যক্ততা বন্ধ হচ্ছে না।  সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» শহীদ তিন পরিবারের পাশে শামসুজ্জামান দুদু

» মাইলস্টোনের শিক্ষিকা মাসুকার কবরে বিমানবাহিনীর গার্ড অব অনার

» সরকার একটি দলকে পৃষ্ঠপোষকতার মধ্য দিয়ে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে : নুর

» রাজা যায় রাজা আসে কিন্তু সুনামগঞ্জবাসীর ভাগ্য পরিবর্তন হয় না: হাসনাত আবদুল্লাহ

» ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তির ব্যাপারে নেতাকর্মীদের সতর্ক করলেন রিজভী

» নির্বাচনে ব্যালট ডাকাতি রুখতে যুব সমাজকে সজাগ থাকার আহ্বান: এটিএম আজাহার

» বাংলাদেশে চাঁদাবাজদের ঠাঁই দেব না: নাসীরুউদ্দীন পাটোয়ারী

» ‘একটি দলের নেতারা আমাদের বিরুদ্ধে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করেছে’-চরমোনাই পীর

» বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধানের জন্য রাজপথে নেমেছি: নাহিদ ইসলাম

» নির্বাচনি ব্যবস্থার সংস্কার ছাড়া কার্যকর সংসদ কল্পনাতীত: খেলাফত মজলিস

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

বখাটেরা বেপরোয়া, পাড়া মহল্লায় কিশোর গ্যাং

দেশের শহর ও গ্রামাঞ্চলে আবারও বখাটেরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। যৌন হয়রানির ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মূলত স্কুল ও প্রাইভেটে পড়তে আসা-যাওয়ার পথে এবং ঘরের বাইরে বের হলেই মেয়েরা বেশি উত্ত্যক্তের শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া নারী শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী নারীরাও প্রতিনিয়ম গণপরিবহন ও পাবলিক প্লেসে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অনেক কিশোর অপরাধী এখন বখাটেপনায় জড়িত। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে যাওয়ার পর এই হয়রানি আরও বেড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, বখাটেদের কুপ্রস্তাবে সাড়া না দিলেই হামলার শিকার হতে হচ্ছে ভুক্তভোগীকে। এমনকি দিতে হচ্ছে প্রাণও। কিছু ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর পরিবারের ওপর আক্রমণ করছে বখাটেরা।

 

বখাটেদের ইভ টিজিং ও যৌন হয়রানির কারণে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুজন আত্মহত্যা করেছে। এ সময় ১৬ জন তরুণী-কিশোরীকে যৌন হয়রানি করা হয়। এ কারণে দুর্বৃত্তের হামলায় ১৭ জন আহতও হয়। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদনে এমনটি জানানো হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে বখাটেরা তাদের অপরাধের পরিণতি সম্পর্কে সচেতন নয়। তাই তারা কিছু বিবেচনা না করেই হামলা চালাচ্ছে। আর আমরা যদি অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে না পারি তবে এভাবেই ইভ টিজিংয়ের শিকার হয়ে একের পর এক প্রাণ ঝরে যাবে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাড়া-মহল্লায় গজিয়ে ওঠা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে, বিনোদন কেন্দ্রে, পাবলিক প্লেসে ও মার্কেট-সংলগ্ন এলাকায় দলগতভাবে বিভিন্ন বয়সী নারী-কিশোরীদের যৌন হয়রানি করছে। এমনকি ফেসবুক ও টিকটকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকেও তারা যৌন হয়রানির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে, বস্তির ছিঁচকে সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান, এমনকি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এবং ভাসমান পথশিশু ও টোকাইরা এসব কিশোর গ্যাংয়ে জড়িত।

 

আঁচল ফাউন্ডেশনের ‘তরুণীদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট এবং মানসিক স্বাস্থ্যে এর প্রভাব’ শীর্ষক সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে, ৬৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ তরুণী যৌন নিপীড়নের শিকার হন। এর মধ্যে ৩৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ তরুণী জানান যে, তারা বিকৃত যৌন ইচ্ছার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত বা কুদৃষ্টির মাধ্যমে নিগ্রহের শিকার হন। ২৯ দশমিক ৬২ শতাংশ তরুণীকে আপত্তিকর স্পর্শের ভুক্তভোগী হতে হয়েছে। আর বিভিন্ন জায়গায় ইভ টিজিংয়ের শিকার হয়েছেন ২২ দশমিক ২৬ শতাংশ তরুণী। এর মধ্যে ৪৫ দশমিক ২৭ শতাংশ গণপরিবহনে যৌন হয়রানির শিকার হন। আর বাসস্ট্যান্ডে ৮৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ যৌন হয়রানির মতো অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। ৭৫ দশমিক ৬০ শতাংশ তরুণী একাকী চলার সময় যৌন নিপীড়নের শিকার হন। আর ২১ দশমিক ৫৭ শতাংশ মা, বোন বা বান্ধবী থাকা অবস্থায় এবং ২ দশমিক ৮৩ শতাংশ বাবা, স্বামী, ভাই বা অন্য পুরুষসঙ্গী থাকা অবস্থায় যৌন হয়রানির শিকার হন। গতকাল মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত এক গবেষণায় জানানো হয়, যে মেয়ে ও নারীরা ধর্ষণের শিকার ও যৌন নির্যাতনের শিকার হন, এতে ভুক্তভোগীদেরও দোষ আছে- এমনটি ভাবেন ৫৩ শতাংশ মানুষ।

 

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বেশ কিছু আলোচিত ঘটনায় বখাটেদের বেপরোয়া হয়ে ওঠার বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। সম্প্রতি জামালপুরের মেলান্দহ পৌরসভার শাহজাতপুর এলাকায় ধর্ষণের শিকার হয়ে দশম শ্রেণির এক ছাত্রী আত্মহত্যা করে। সেই কিশোরীর রেখে  যাওয়া চিরকুট থেকে জানা যায়, স্থানীয় চেয়ারম্যানের ভাতিজা তামিম আহমেদ স্বপন সেই কিশোরীকে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করত। পরে তাকে ধর্ষণ করে। ফলে ওই স্কুলছাত্রী লোকলজ্জার ভয়ে আত্মহত্যা করে। ২০ মার্চ চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হকপাড়ায় বখাটের উত্ত্যক্ততা সহ্য করতে না পেরে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করে রেলবাজার আলিয়া মাদরাসার প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী। শহরের আরামপাড়ার মোবারক হোসেনের ছেলে আবুল কালাম প্রায়ই ভুক্তভোগীকে উত্ত্যক্ত করত। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে এক স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় তার পরিবারের ওপর হামলা চালিয়েছে বখাটেরা। এতে সেই ছাত্রীর ভাই, চাচা ও চাচি আহত হয়েছেন। প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় সম্প্রতি এক পুলিশ কর্মকর্তার মেয়ে এবং বরিশাল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রীকে মারধর করা হয়। এ অভিযোগে বরিশালের কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অভিভাবকদের কন্যাসন্তানের নিরাপত্তার বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে। তাদের কন্যাসন্তানকে কেউ উত্ত্যক্ত করছে কি না এ বিষয়ে মেয়ের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে। এ বিষয়ে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়কেও সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। আর এই মামলাগুলোতে যত দ্রুত তদন্ত করে বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যাবে, সমাজ থেকে তত দ্রুত এ ঘটনাগুলো হ্রাস পাবে। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির (বিএনডব্লিউএলএ) নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী  বলেন, বর্তমানে ঢাকা ও এর বাইরে নারী ও কিশোরীরা কোথাও নিরাপদে নেই। অথচ নারীদের কর্মক্ষেত্রে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উত্ত্যক্ত করার বিষয়ে উচ্চ আদালতের প্রদত্ত দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে অভিযোগ কমিটি গঠন করার বিষয়ে বলা হয়েছে। কিন্তু আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিষয়টি এখনো আমলে নিচ্ছে না। বেশ কয়েক বছর আগে শিক্ষার্থীদের যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যৌন নির্যাতনবিরোধী কমিটি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার নজির নেই। এর বাইরে উচ্চ আদালত যৌন হয়রানি ইস্যুতে দেশের সব জেলা প্রশাসককে এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া মাত্রই দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে। একই সঙ্গে এ ধরনের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করা এবং দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ডিসিদের নির্দেশ দেওয়াসহ মোট পাঁচ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। কিন্তু এত কিছুর পরও বখাটেদের উত্ত্যক্ততা বন্ধ হচ্ছে না।  সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com