ফাইল ছবি
অনলাইন ডেস্ক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, বর্তমান সরকারকে সবাই ফেসবুক মার্কা সরকার হিসেবে অভিহিত করছেন। এই সরকারের যত হুম্বিতম্বি, যত হাঁকডাক সবকিছুই ফেসবুকের মাধ্যমে হয়। এবং এই সরকার যা কিছু করে, ফেসবুকে যে আওয়াজ তোলা হয় এবং যার মাধ্যমে ভয় দেখানো হয়। তো এই যে ফেসবুক মার্কা সরকার, সেই সরকারের এই যে দুরবস্থা, সেই দুরবস্থা কীভাবে হলো?
সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেলের এক ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, প্রথম কারণ হলো- এই সরকারের যে একটা আইনগত ভিত্তি সেই আইনগত ভিত্তি নিয়ে প্রথম দিন থেকেই একটা তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে। এই সরকার কি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা এই সরকার কি একটা ইন্টারিয়াম সরকার? বলা হচ্ছে এই ধরনের কোনো কথা অর্থে আমাদের সংবিধান, আইন-আদালত কিংবা আমাদের যে প্রথা রয়েছে সে প্রথার মধ্যে এগুলো রয়েছে কি না।
তারপর এই সরকারের পেছনে জনসমর্থন কত ভাগ? কত পারসেন্ট? দেশের প্রধানতম রাজনৈতিক যে দলগুলো রয়েছে তারা কিভাবে সরকারকে গুরুত্ব দিচ্ছে, মূল্যায়ন করছে, সরকারকে সহযোগিতা করছে এবং রাষ্ট্রের যে প্রশাসন যন্ত্র রয়েছে সেগুলোর সঙ্গে সরকারের যে সংযোগ, সরকারের যে বন্ধুত্ব সেটা কেমন হচ্ছে?
সব মিলিয়ে যখন এই সরকার ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের ৮ তারিখে ক্ষমতায় এসেছিল বা শপথ নিয়েছিল। সেদিন থেকে বিতর্ক যে এটা সাংবিধানিক সরকার না অসাংবিধানিক সরকার? বিপ্লবী সরকার, নাকি গণতান্ত্রিক সরকার? এটি কি যাকে বলা হয় গণ-অভ্যুত্থানের সরকার নাকি একটা পশ্চিমাদের চাপিয়ে দেওয়া জোর জবরদস্তিমূলক সরকার?
রনি বলেন, তো এই ধরনের নানা রকম কুটচাল কুটবিতর্কে সরকার কখনোই তাদের পক্ষে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারেনি। কেন পারেনি? এর কারণ সরকার যে কাজকর্মগুলো করেছে বা করে চলেছে তার একটিও জনগণের বিশ্বাস, আস্থা এবং ভালোবাসার কারণে হয়নি। কিংবা জনগণের কল্যাণে এযাবতকালে কোনো ঘটনা ঘটানো হয়েছে বা সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেখানে ব্যাপক মাত্রায় জনগণের যে জনমত সেটি প্রতিফলিত হয়েছে।
বরং সরকার যা কিছু করছে, যা কিছু বলছে বা এমন কিছু সিদ্ধান্ত যা একটার পর একটা জনমনে অস্বস্তি তৈরি করছে। ক্রমশ এদেশের যে ভূখণ্ড সেই ভূখণ্ড থেকে জনগণের আস্থা, বিশ্বাস এবং ভালোবাসা থেকে সরকারকে ক্রমশ দূরে অনেক অনেক দূরে নিয়ে যাচ্ছে।
ফলে এই সরকারকে আমরা পথে ঘাটে মাঠে দেখতে পাই না। এ সরকারের কণ্ঠস্বর আমাদের যে বাংলা সাহিত্য কৃষ্টি কালচারের সঙ্গে কখনো সুর মিলায় না। তারা এসে জাতীয় সংগীত পরিবর্তন করার কথা ভাবল। সংবিধান ছুড়ে ফেলার কথা বলল। তারপর পুরো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।
এটিকে নতুন করে আবার রিসেট বাটনে চাপ দিয়ে একটা আধুনিক বাংলাদেশের কথা বলা হলো। যা কিনা শুরু হবে ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের পাঁচ তারিখ থেকে। এইরকম একটা প্রস্তাবনা দিয়ে তারা যে সারা বাংলাদেশে সংস্কারের একটা ধুও তুলেছে এটি কালের বিবর্তনে মানুষের মন মস্তিষ্কে রীতিমতো বিষক্রিয়া তৈরি করেছে। এখন আপনি যদি কারো কানের কাছে গিয়ে ১০-১২ বার বলেন, সংস্কার সংস্কার সংস্কার কিংবা সংস্কারের জনক ইউনূস ইউনূস ইউনূস কিংবা সংস্কারের জনক আলী রীয়াজ আলী রীয়াজ আলী রীয়াজ। কিংবা আলরিয়াস এবং বদিউল আলম মজুমদার ভাই ভাই ভাই ভাই। এই কথাগুলো শোনার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মনোমস্তিষ্ক এক ধরনের গোসসা চলে আসবে। আমাদের এই বাংলায় গত দীর্ঘদিন ধরে কতগুলো নাম কতগুলো মুখ যেমন ধরুন জনাব আসিফ নজরুল সাহেব কিংবা ধরুন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এই নামগুলো এবং মুখগুলো খুবই জনপ্রিয় ছিল।
কিন্তু বর্তমান সরকারের কবলে পড়ে এখন তাদের অবস্থা এমন হয়ে গেছে যে তারা অনেক জায়গাতে মবের শিকার হচ্ছেন। তাদেরকে আটকে রাখা হচ্ছে। তাদেরকে নিয়ে নানা রকম কথাবার্তা বলা হচ্ছে। যেটা তাদের সারাজীবনের অর্জনকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। তো যেটা বলছিলাম যে এইভাবে নানা রকম কর্মকাণ্ড সেই কর্মকাণ্ড ইতিবাচক নেতিবাচক জনকল্যাণ বা জনবিরোধী এ সব মূল্যায়ন করার কোনো সুযোগই জনগণ পাচ্ছে না। জনগণ কেবলই বলে যাচ্ছে সব খারাপ। সব খারাপ সব খারাপ।
তো এই সব খারাপের কারণে কী হচ্ছে? সরকারে যারা কর্তাব্যক্তি আপনজন প্রিয়ভাজন বিপ্লবী সৈনিক তারা এখন জনারণ্যে মানে জনগণের যে অরণ্য রয়েছে যেখানে জনসমাবেশ হয় যেখানে জনগণ থাকে ব্যাপক মাত্রায় সেখানে তারা নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে নির্ভাবনায় একাকি যেতে পারছেন না। তাদেরকে রাষ্ট্রীয় যে পুলিশ সেনাবাহিনী বিজিবি র্যাব তারপরে সোয়াত নামে যে একেবারে খুব অত্যাধুনিক পুলিশ বাহিনী গঠন করা হয়েছে তার সঙ্গে রয়েছে ডগ স্কোয়াড। সেই ডগ স্কোয়াড নিয়ে তাদেরকে যেতে হচ্ছে বিভিন্ন জায়গাতে। এর বাইরে একাকি আকাশের চাঁদ দেখার সুযোগ তাদের নেই। তারকা গণনার সময় তাদের নেই। তারা একটা ইলিয়েশন একটা কল্পনার জগত নিজেদের জন্য তৈরি করে রেখেছে।
জনগণ তাদের সেই যে বিপ্লবী ভাই যারা জুলাই ২১শের বিপ্লব যুদ্ধে যেভাবে ট্যাংকের সামনে, বন্দুকের সামনে জীবনের মায়া ত্যাগ করে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। ঠিক একটি বছর আগে-পরে এখন এই যে বিপ্লবীদের কথা শুনে নতুন বিপ্লবী তারা উত্তাল হয়ে যাচ্ছে, নতুন একটা বিপ্লবের কথা বলা হচ্ছে। এই যে জনসমুদ্র সেই জনসমুদ্রে গোল হয়ে বসার সময় এসেছে। কাছাকাছি এসে ভাগাভাগি করার সময় এসেছে। একে অপরের দুঃখকে ভাগ করে নেওয়ার কথা বলার সময় এসেছে। ঠিক সেই সময়টিতে সরকারের সঙ্গে বিপ্লবীদের সঙ্গে জনগণের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে।
সাবেক এ সংসদ সদস্য বলেন, দূরত্বের মাঝে এসে একটা কল্পনার শক্তি বাসা বেঁধেছে। এবং সেটি হলো সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক। এই সরকারের হর্তাকর্তা প্রায় সবারই ফেসবুক রয়েছে। সেখানে জনাব ড. মুহাম্মদ ইউনূস, তার যেসব কুশীলব রয়েছেন তারা। যেসব বিপ্লবী যারা রয়েছেন তরুণ এবং যুবক তারা সবাই তাদের যে মনের বেদনা মনের কষ্ট মনের দুঃখ তাদের আশা আকাঙ্ক্ষা আদেশ নির্দেশ সবকিছু তারা ঢেলে দেন কোথায়? ফেসবুকে। লক্ষ লক্ষ শেয়ার লক্ষ লক্ষ লাইক কমেন্ট আর সেটা দেখে তারা মনে করেন যে মাই গড এ কি হলো এত জনসমর্থ নিয়ে পৃথিবীতে কোন সরকার কি গঠিত হয়? কোনো বিপ্লব কি সাধিত হয়েছে? বিপ্লবের একটি বছর পর বিপ্লবের নায়ক মহানায়করা ফেসবুকে যে ঝড় তুলছেন এমন ঝড় কি পৃথিবীর কোথাও ঘটেছে?
যেটি দিয়ে তারা আজকের অবস্থানে পৌঁছেছেন। যেটি দিয়ে তাদের উত্থান হয়েছে, ঠিক সেটি দিয়েই তাদের পতন হবে। আপনি দেখবেন যে হঠাৎ করে বিদেশি গণমাধ্যমে এমন একটা খবর চলে এসেছে বাংলাদেশি গণমাধ্যমে এরকম একটা খবর চলে এসেছে কিংবা সামাজিক মাধ্যমে এরকম একটা খবর তারাই করেছে।
মানে আমাদের করতে হবে না বা বাইরের কাউকে করতে হবে না এই সরকারের কর্তা ব্যক্তিরাই করেছে, বলেছে সেটার প্রতিক্রিয়া ঠিক সেই শেখ হাসিনার রাজাকারের বাচ্চাকাচ্চা বা রাজাকারের নাতিপুতি এই শব্দটা যেভাবে সারা বাংলাদেশকে তোলপড় করে দিয়েছিল ঠিক ওরকম একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যাবে এই ফেসবুকের মাধ্যমে।