ফাইল ছবি
অনলাইন ডেস্ক : বাজারগুলোতে আবারও বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ১০ টাকা বাড়িয়ে বর্তমানে ১৮০–১৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, ফার্ম পর্যায়ে দাম বৃদ্ধি এবং পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। তবে ভোক্তাদের অভিযোগ, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বেশিরভাগ মানুষ সপ্তাহের বাজার করায় বিক্রেতারা কৌশলে এই সময়টাতে দাম কিছুটা বাড়িয়ে দেন।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সকালে বাড্ডা-রামপুরা এলাকার একাধিক বাজার ঘুরে এবং বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় অন্যদিনের তুলনায় বাজারে ক্রেতাদের ভিড় কিছুটা বেড়েছে। দাম কিছুটা বেশি হলেও বাধ্য হয়েই সপ্তাহের বাজার একসঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন ত্রেতারা। আবার বেশি দাম শুনে দ্বিধায় পড়ছেন অনেকেই।
মধ্যবাড্ডা কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা ফারজানা আক্তার বলেন, দুই সপ্তাহ আগেও ব্রয়লার ১৬০ টাকায় কিনেছি, গত সপ্তাহে আবার ১৭০ টাকা এবং আজ ১৮৫ টাকা চাইছে। গরু-খাসির মাংস তো অনেক আগেই হাতের বাইরে চলে গেছে, এখন মুরগিও কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।
রামপুরা বাজারে বাজার করতে আসা চাকরিজীবী নাসির উদ্দিন বলেন, মাছের দাম আকাশ ছোঁয়া, তাই মুরগির দিকে ঝুঁকেছিলাম। কিন্তু এই দাম চলতে থাকলে আর মুরগিও কিনতে পারব না।
তিনি বলেন, ব্রয়লার মুরগির দাম সর্বোচ্চ ১৩০/১৪০ টাকা হলেই যথেষ্ট। কিন্তু এই বাজরে সবসময় বড় একটা সিন্ডিকেট বিদ্যমান, যে কারণে বারবার দাম কমেও আবার বেড়ে যায়। শুক্রবার হলে যেহেতু বাজারে ত্রেতা বাড়ে, বিক্রেতারা জোট করে সেদিন দামও বাড়িয়ে দেয়।
এদিকে বিক্রেতারা বলছেন, এই দাম বৃদ্ধির পেছনে তাদের হাত নেই।
রামপুরা বাজারের মুরগি বিক্রেতা হাসান শেখ বলেন, আমরা পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে কিনে আনছি। আগে যে ব্রয়লার পাইকারিতে ১৫৫–১৬০ টাকায় পাওয়া যেত, এখন তা ১৬৫–১৭০ টাকা হয়ে গেছে। খরচ যোগ করতেই খুচরা বাজারে ১৮০–১৮৫ টাকা পড়ে যাচ্ছে।
আরেক বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার কেন্দ্রিক চাহিদা কিছুটা বেড়ে যায়, কিন্তু সরবরাহ খুব একটা বাড়ে না। ইদানীং আবার বিভিন্ন কারণে পরিবহন খরচও বেড়েছে, তাই দাম কমানোর সুযোগ নেই।
অপরদিকে মাছের বাজারেও ক্রেতাদের খুব বেশি স্বস্তি মিলছে না। দেশি মাছের মধ্যে রুই, কাতল, শিং, টেংরা, শোল—সব কিছুর দামই আগের তুলনায় কেজিতে ৫০–১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ফলে ক্রেতারা প্রোটিনের জন্য বিকল্প খোঁজার চেষ্টা করলেও কোথাও স্বস্তি পাচ্ছেন না। সরেজমিনে দেখা গেছে, রুই ও কাতল বিক্রি হচ্ছে ৩০০–৩৪০ টাকা কেজিতে। পাবদা ৩৫০–৪০০ টাকা, চিংড়ি ৬৫০–৭০০, টেংরা ৬০০–৭০০, শিং ৪০০–৪৫০, কৈ ২০০–২২০ এবং তেলাপিয়া ও পাঙাস পাওয়া যাচ্ছে ১৮০–২০০ টাকায়।
বাজারে গরু ও খাসির মাংসের দাম আগের মতোই স্থিতিশীল আছে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫০–৮০০ টাকা এবং খাসি ১,২৫০ টাকা কেজি—তবে উচ্চমূল্যের কারণে তা অনেকের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে।
ভোক্তারা বলছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রোটিনের দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকলে তাদের খাদ্যতালিকা থেকে মাছ-মাংস দ্রুতই বাদ পড়ে যাবে। তারা সরকারের কাছে বাজার মনিটরিং ও সরবরাহ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার দাবি জানিয়েছেন।
মাংস বিক্রেতা হাফিজুর রহমান বলেন, সকাল থেকে মাংস ঝুলিয়ে রেখেছি, বিক্রি খুব একটা নেই। সাধারণত মানুষের আম-রোজগার কমে গেছে, যেকারণে গরুর মাংসের ক্রেতাও কমে গেছে। অধিকাংশ মানুষ মাছ-মুরগিতেই চলে গেছে।