ফেনীর শাহজালাল রেস্তোরাঁ অভাবীরা যেখানে মেহমান, খাবার খাওয়ানো হয় ফ্রি

মাস পাঁচেক আগে ফেনীর পরশুরাম উপজেলা সড়কে খাবারের রেস্তোরাঁ খোলেন মো. আজিম উদ্দিন ভূইঞা। ব্যবসার পাশাপাশি তার রয়েছে ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ। মানবিক এই মানুষটির রেস্তোরাঁয় প্রথম দিন থেকেই তিনবেলা বিনামূল্যে খাবার খাওয়ানো হয় অভাবী মানুষদের। এসব মানুষের কেউ কেউ ভিক্ষাবৃত্তিতে যুক্ত থাকলেও তাদের ভিক্ষুক বলতে নারাজ আজিম উদ্দিন। তার কাছে এসব মানুষ মেহমান। খাওয়ার পর এসব মানুষ মন খুলে দোয়া করেন- এটাই তার পাওয়া।

 

এই মেহমানদের জন্য রয়েছে আলাদা পরিচারক। রন্ধনশালা থেকে অন্য দশজন ক্রেতার মতোই আসে তাদের খাবার। তারা যখন যা খেতে চান তাই তাদের খাওয়ানো হয়।

মো. আজিম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, সারাদিন বিরিয়ানি হয়। সকালের নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবারের পাশাপাশি বিকেলে নাস্তা, পুরি, শিঙাড়া যখন যা মেহমানরা খেতে চান তখন তাই দিয়ে আপ্যায়নের চেষ্টা করি। আমরা তাদের ভিক্ষুক বলি না, তারা আমাদের মেহমান।

যেদিন থেকে বিনামূল্যের খাবারের কথা জেনেছেন সেদিন থেকে এই রেস্তোরাঁর খাবার খাচ্ছেন নুরুন নাহার। স্বামী থেকেও নেই! বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে অভাবের সংসার। সাদা গরম ভাতের সঙ্গে কোনো দিন মাছ, মাংস আবার কোনো দিন ডিম-সবজি খান তিনি।

নুরুন নাহার জাগো নিউজকে বলেন, শুধু পশুরাম থেকেই নয়, দূর-দূরান্ত থেকেও এই রেস্তোরাঁয় অনেক অসহায় মানুষ খাবার খেতে আসেন। সবাইকে খুব ভালোভাবে আপ্যায়ন করা হয়।

 

রেস্তোরাঁর ম্যানেজার মোহাম্মদ ইলিয়াস জাগো নিউজকে বলেন, শুরু থেকেই প্রতিদিন ৭-৮ জন মেহমান আসেন। সপ্তাহে দুদিন হাটের দিন। বৃহস্পতি ও রোববার আসেন ১০-১৫ জন। তারা যা খেতে চান তাকে তাই দিয়ে খাওয়ানো হয়।

তিনি বলেন, মেহমানরা সবই খান। গরুর মাংস বেশি পছন্দ করেন, কারণ তারা সেটা কিনতে পারেন না। সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত রেস্তোরাঁ খোলা থাকে। তাদের জন্য একজন স্টাফ অপেক্ষা করে যাতে মেহমানরা যখন যা চান, তা দেওয়া হয়। কিচেনেও বলা আছে।

প্রায় ৬০ বছর বয়সী বৃদ্ধ আবুল কালাম। তার জন্ম ফেনীর সীমান্তবর্তী এলাকা বিলোনিয়ায়। এক সময় ভাঙাড়ির ব্যবসা করলেও এখন শারীরিক অসুস্থতায় কাজ করতে পারেন না। দুই ছেলেও কোনো খোঁজ নেয় না। ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কোনো দিন পয়সা উপার্জন করতে পারলে দিনের একবেলা খাবার জোটে, উপার্জন করতে না পারলে থাকতে হয় না খেয়ে। ক্ষুধা পেট নিয়ে আবুল কালাম আসেন রেস্তোরাঁটিতে। বিগত কয়েক মাস ধরে রেস্তোরাঁটিতে আসছেন তিনি।

তিনি বলেন, এখানে আমাদের সঙ্গে মেহমানের মতোই আচরণ করা হয়, যা খেতে চাই তাই দেওয়া হয়। তাদের মঙ্গল কামনা করি সব সময়।

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ঊর্ধ্বগতির এই সময়েও অনুকরণীয় এ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার আশাবাদ জানিয়ে রেস্তোরাঁর ম্যানেজার বলেন, মেহমানরা আমাদের এখানে খাবার খেয়ে পরিতৃপ্ত হন। দোয়া করেন, গায়ে হাত বুলিয়ে দেন। অনেক খুশি হন। আমাদের ইচ্ছা আছে এভাবেই রেস্তোরাঁ চালিয়ে নেবো। মেহমানদারিকে আমরা সমস্যা মনে করছি না। লাভ সামান্য কম হলেও আমরা এটা চালিয়ে যাবো।  সূএ: জাগোনিউজ২৪.কমে 

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ২০ ফিলিস্তিনি নিহত

» মাহফুজের মাথায় বোতল নিক্ষেপ, অভিযুক্ত যুবককে খুঁজছে পুলিশ

» অনেকগুলো দাবি নিয়ে আন্দোলন দানা বেঁধে উঠছে, এই পরিস্থিতির দায় সরকারের: মাসুদ কামাল

» ‘পালানো’র সময় বিমানবন্দর থেকে বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা আটক

» ইশরাককে মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণের দাবিতে নগর ভবনে তালা

» ‘সোশ্যাল মিডিয়া হোক দাওয়াত ও সত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যম’: জাহিদুল ইসলাম

» ইসকন-সম্পৃক্ত সংঘবদ্ধ চক্রের ফাঁদে বাংলাদেশের মুসলিম তরুণীরা, বিশেষ বার্তা দিলেন ইলিয়াস

» উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত

» রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিকে লাঞ্ছিত করা অপ্রত্যাশিত, সরকারের আচরণও সন্দেহজনক

» পাথরের কান্না

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ফেনীর শাহজালাল রেস্তোরাঁ অভাবীরা যেখানে মেহমান, খাবার খাওয়ানো হয় ফ্রি

মাস পাঁচেক আগে ফেনীর পরশুরাম উপজেলা সড়কে খাবারের রেস্তোরাঁ খোলেন মো. আজিম উদ্দিন ভূইঞা। ব্যবসার পাশাপাশি তার রয়েছে ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ। মানবিক এই মানুষটির রেস্তোরাঁয় প্রথম দিন থেকেই তিনবেলা বিনামূল্যে খাবার খাওয়ানো হয় অভাবী মানুষদের। এসব মানুষের কেউ কেউ ভিক্ষাবৃত্তিতে যুক্ত থাকলেও তাদের ভিক্ষুক বলতে নারাজ আজিম উদ্দিন। তার কাছে এসব মানুষ মেহমান। খাওয়ার পর এসব মানুষ মন খুলে দোয়া করেন- এটাই তার পাওয়া।

 

এই মেহমানদের জন্য রয়েছে আলাদা পরিচারক। রন্ধনশালা থেকে অন্য দশজন ক্রেতার মতোই আসে তাদের খাবার। তারা যখন যা খেতে চান তাই তাদের খাওয়ানো হয়।

মো. আজিম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, সারাদিন বিরিয়ানি হয়। সকালের নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবারের পাশাপাশি বিকেলে নাস্তা, পুরি, শিঙাড়া যখন যা মেহমানরা খেতে চান তখন তাই দিয়ে আপ্যায়নের চেষ্টা করি। আমরা তাদের ভিক্ষুক বলি না, তারা আমাদের মেহমান।

যেদিন থেকে বিনামূল্যের খাবারের কথা জেনেছেন সেদিন থেকে এই রেস্তোরাঁর খাবার খাচ্ছেন নুরুন নাহার। স্বামী থেকেও নেই! বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে অভাবের সংসার। সাদা গরম ভাতের সঙ্গে কোনো দিন মাছ, মাংস আবার কোনো দিন ডিম-সবজি খান তিনি।

নুরুন নাহার জাগো নিউজকে বলেন, শুধু পশুরাম থেকেই নয়, দূর-দূরান্ত থেকেও এই রেস্তোরাঁয় অনেক অসহায় মানুষ খাবার খেতে আসেন। সবাইকে খুব ভালোভাবে আপ্যায়ন করা হয়।

 

রেস্তোরাঁর ম্যানেজার মোহাম্মদ ইলিয়াস জাগো নিউজকে বলেন, শুরু থেকেই প্রতিদিন ৭-৮ জন মেহমান আসেন। সপ্তাহে দুদিন হাটের দিন। বৃহস্পতি ও রোববার আসেন ১০-১৫ জন। তারা যা খেতে চান তাকে তাই দিয়ে খাওয়ানো হয়।

তিনি বলেন, মেহমানরা সবই খান। গরুর মাংস বেশি পছন্দ করেন, কারণ তারা সেটা কিনতে পারেন না। সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত রেস্তোরাঁ খোলা থাকে। তাদের জন্য একজন স্টাফ অপেক্ষা করে যাতে মেহমানরা যখন যা চান, তা দেওয়া হয়। কিচেনেও বলা আছে।

প্রায় ৬০ বছর বয়সী বৃদ্ধ আবুল কালাম। তার জন্ম ফেনীর সীমান্তবর্তী এলাকা বিলোনিয়ায়। এক সময় ভাঙাড়ির ব্যবসা করলেও এখন শারীরিক অসুস্থতায় কাজ করতে পারেন না। দুই ছেলেও কোনো খোঁজ নেয় না। ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কোনো দিন পয়সা উপার্জন করতে পারলে দিনের একবেলা খাবার জোটে, উপার্জন করতে না পারলে থাকতে হয় না খেয়ে। ক্ষুধা পেট নিয়ে আবুল কালাম আসেন রেস্তোরাঁটিতে। বিগত কয়েক মাস ধরে রেস্তোরাঁটিতে আসছেন তিনি।

তিনি বলেন, এখানে আমাদের সঙ্গে মেহমানের মতোই আচরণ করা হয়, যা খেতে চাই তাই দেওয়া হয়। তাদের মঙ্গল কামনা করি সব সময়।

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ঊর্ধ্বগতির এই সময়েও অনুকরণীয় এ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার আশাবাদ জানিয়ে রেস্তোরাঁর ম্যানেজার বলেন, মেহমানরা আমাদের এখানে খাবার খেয়ে পরিতৃপ্ত হন। দোয়া করেন, গায়ে হাত বুলিয়ে দেন। অনেক খুশি হন। আমাদের ইচ্ছা আছে এভাবেই রেস্তোরাঁ চালিয়ে নেবো। মেহমানদারিকে আমরা সমস্যা মনে করছি না। লাভ সামান্য কম হলেও আমরা এটা চালিয়ে যাবো।  সূএ: জাগোনিউজ২৪.কমে 

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com