সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক : শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার জানিয়েছেন, আগামীকাল (১০ জুলাই) এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হবে। এই ফলাফলে অতীত ঐতিহ্যের আলোকে শিক্ষার্থীদের মেধার প্রকৃত মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এবারের এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্টে শিক্ষার্থীদের মেধার প্রকৃত মূল্যায়ন করা হচ্ছে। অর্থাৎ তারা যেভাবে পরীক্ষা দিয়েছে, প্রকৃত মূল্যায়নে সেই ফলাফল তাদের হাতে পৌঁছানো হবে। ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে অতীতের মতো রেজাল্ট আর দেওয়া হবে না।
আজ বাংলাদেশ সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কার্যালয়ে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসস’কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, অতীতে আমরা দেখেছি শিক্ষার্থীরা যেভাবে পরীক্ষা দিত, প্রকৃত মূল্যায়নে তাদের রেজাল্ট প্রকাশ করা হতো। কিন্তু গত ১৬ বছরে যে সরকার ছিল, তাদের আমলে সরকারের সাফল্য দেখানোর জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের নম্বর বাড়িয়ে দিয়ে জিপিএ-৫ এর সংখ্যা বাড়িয়ে ফুলিয়া ফাঁপিয়ে ফলাফল প্রকাশ করা হতো। এমনকি সেই ফলাফল প্রকাশ নিয়ে এক ধরনের ফটোসেশনের আয়োজন ছিল রাষ্ট্র প্রধানের। শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানগণ পরীক্ষার ফলাফলের বই নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেতেন এবং প্রধানমন্ত্রী তখন তাদেরকে নিয়ে ফটোসেশন করে রেজাল্ট প্রকাশ করতেন। আমাদের অন্তর্বর্তী সরকার এটাকে বাহুল্য মনে করছে এবং এটা থেকে সরে এসে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতার প্রকৃত মূল্যায়নে শিক্ষা বোর্ডগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে।
অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, এবার ফলাফল প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না। অর্থাৎ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানগণ নিজেরাই তাদের কার্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবেন। শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই তাদের রেজাল্ট পাবেন।
তিনি জানান, অতীতে (গত ১৬ বছরের আগে) যেভাবে শিক্ষার্থীদের ফলাফল প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রকৃত মূল্যায়নের পরিমাপ ছিল, আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত রাখতে তিনি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের প্রকৃত মেধা প্রকাশ করতে পারে, সেজন্য এবার পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। শিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ছাড়াও শিক্ষক, অভিভাবক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে এবার যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেছে। এজন্য তিনি সকলকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, এবারের এসএসসি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা কোনো ধরনের নকলে উৎসাহিত ছিল না। আগামীকাল রেজাল্ট প্রকাশের ক্ষেত্রে তারা তাদের সেই মেধার যথাযথ মূল্যায়ন দেখতে পাবে। আগের মতো ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে রেজাল্ট দেওয়ার সেই পূর্ব অবস্থা থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি। আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে রেজাল্ট প্রকাশের কারণে অতীতে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রকৃত মূল্যায়ন না হওয়ায় তাদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে। পরীক্ষায় পাশের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি জিপিএ-৫ এর সংখ্যাও বেশি পরিমাণে দেখানো হয়েছে। আমরা এবার জিপিএ-৫ নয়, প্রকৃত মেধার মূল্যায়ন দেখতে যাচ্ছি।
শিক্ষার্থীরা যাতে পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তাদের মেধার প্রকৃত মূল্যায়ন দেখতে পায়, বর্তমান সরকারের সেই আন্তরিক ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে আশাবাদ ব্যক্ত করেন শিক্ষা উপদেষ্টা।
এবার দুই মাসেরও কম সময়ে এসএসসির ফলাফল প্রকাশ করা হচ্ছে জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, আগে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল তিন মাস বা সাড়ে তিন মাস পর প্রকাশ করা হতো। শিক্ষার্থীদের সময়ের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে এবার দুই মাসের কম সময়ে রেজাল্ট প্রকাশ করা হচ্ছে। এসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর দুই মাস হতে আরও পাঁচ দিন বাকি আছে। তাই বলা যায়, আমরা দু’মাস শেষ হওয়ার আগেই রেজাল্ট প্রকাশ করতে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, দুই মাসের মধ্যে রেজাল্ট প্রকাশ করায় শিক্ষার্থীরা পরবর্তী শিক্ষাবর্ষে দুই মাস বেশি ক্লাস করার সুযোগ পাবে। তাদের শিক্ষা জীবন সমৃদ্ধ হবে।