সংগৃহীত ছবি
ধর্ম ডেস্ক : প্রস্রাব ঝরে পড়ার সন্দেহ—এটি অনেক মুসল্লির জন্য একটি সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষ করে নামাজের সময় হঠাৎ মনে হয়, হয়তো কয়েক ফোঁটা প্রস্রাব নিঃসরণ হয়েছে। তখন অনেকে দ্বিধায় পড়েন—নামাজ কি ভেঙে গেছে? নতুন করে অজু করতে হবে কি? এমন দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে অনেকে নামাজ ছেড়ে দেন, আবার কেউ কেউ নামাজ চালিয়ে যান।
কিন্তু ইসলামি শরিয়তে এই বিষয়ে রয়েছে পরিস্কার দিকনির্দেশনা। সন্দেহ হলেই নামাজ ভেঙে ফেলা বা অযথা কষ্টে পড়া ইসলাম অনুমোদন করে না। তাই এই বিষয়ে সঠিক জ্ঞান থাকা জরুরি, যেন ইবাদতে আত্মবিশ্বাস ও সওয়াব—দুই-ই বজায় থাকে।
শুধুমাত্র সন্দেহের কারণে নামাজ ভাঙবে না
শুধু সন্দেহের ভিত্তিতে অজু ভাঙে না এবং নামাজও বাতিল হয় না। হাদিসে এসেছে— ‘সে যেন নামাজ না ছাড়ে, যতক্ষণ না সে কোনো শব্দ শোনে অথবা গন্ধ পায়।’ (সহিহ বুখারি: ১৩৭; সহিহ মুসলিম: ৩৬১) অর্থাৎ, শুধু মনে হলে “হয়ে থাকতে পারে”—এ ধরনের অনিশ্চয়তা নামাজ ভেঙে দেয় না।
নিশ্চিতভাবে প্রস্রাব বের হলে কী করণীয়
তবে যদি নিশ্চিত হন যে, দুয়েক ফোঁটা প্রস্রাব বেরিয়েছে, সেক্ষেত্রে অজু ভেঙে যাবে। তখন নতুন করে অজু করতে হবে। শরীর ও কাপড়ে যদি নাপাক লাগে, তা ধুয়ে পবিত্র করতে হবে। তারপর নামাজ আদায় করতে হবে।
সন্দেহ হলে পানি ছিটিয়ে দেওয়া সুন্নত পদ্ধতি
যদি প্রস্রাব ঝরে পড়ার সন্দেহ হয়, কিন্তু যাচাই করলে কিছুই না পাওয়া যায়—তাহলে ইসলামে একটি হিকমতপূর্ণ উপায় বলা হয়েছে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘তুমি অজু করার পর তোমার লজ্জাস্থানে পানি ছিটিয়ে নেবে। অতঃপর যদি আর্দ্রতা অনুভব হয়, তবে সেটাকে ছিটানো পানির আর্দ্রতা বলে মনে করবে।’ (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক: ৫৮৩)
এই পদ্ধতি সন্দেহ ও শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার উত্তম উপায়।
প্রস্রাব ঝরে পড়া যদি নিয়মিত অসুখ হয় (মাজুর)
যাদের প্রস্রাব ঝরে পড়ার অসুখ রয়েছে, তারা যদি ফরজ নামাজ পরিমাণ সময়ও পবিত্র থাকতে না পারেন, তবে তারা মাজুর হিসেবে গণ্য হবেন। এ অবস্থায় প্রত্যেক নামাজের ওয়াক্তে নতুন করে অজু করতে হবে। একবার অজু করে সেই ওয়াক্তের মধ্যে যত ইচ্ছা নামাজ পড়া যাবে, এমনকি যদি অজুর মধ্যে প্রস্রাব নিঃসরণ হয়। কোরআন তিলাওয়াত ও স্পর্শও জায়েজ হবে। তবে নতুন ওয়াক্ত শুরু হলে আগের অজু বাতিল হয়ে যাবে, তখন নতুন করে অজু করতে হবে।
মাজুর ব্যক্তির কাপড় পবিত্র না থাকলে?
যদি প্রস্রাবের কারণে কাপড় অপবিত্র হয়ে যায় এবং তা পরিষ্কার করার সুযোগ না থাকে, তাহলে সেই কাপড়েই নামাজ আদায় করা যাবে। ফিকহে বলা হয়েছে, ‘যদি সম্ভব হয় পবিত্র কাপড় দিয়ে নামাজ আদায় করবে। যদি না হয়, তাহলে সেই কাপড়েই নামাজ আদায় করবে।’ (হাশিয়াতুত তাহতাবি আলা মারাকিল ফালাহ: পৃষ্ঠা ১৪৮–১৫১)
শুধু সন্দেহের কারণে নামাজ ভেঙে দেওয়া শরিয়তের দৃষ্টিতে অনুচিত। তবে নিশ্চিতভাবে অজু ভেঙে গেলে নামাজের পূর্বে পবিত্রতা অর্জন জরুরি। আর যারা প্রস্রাব ঝরে পড়ার অসুখে আক্রান্ত, তাদের জন্য ইসলাম সহজ ও বাস্তবসম্মত নিয়ম রেখেছে, যা মেনে চললে কোনো ইবাদতে ঘাটতি হবে না ইনশাআল্লাহ।