প্রশাসক এত কেন

ওয়াহিদা আক্তার: জুতা সেলাই থেকে চ-ীপাঠ পর্যন্ত সব ধরনের কাজ প্রশাসনের লোকদের করতে হয়। এই প্রশাসক শুধু জেলা প্রশাসক নন, তিনি হতে পারেন কখনো একজন ডাক্তার, একজন পুলিশ সদস্য, কখনো একজন প্রকৌশলী, একজন বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। মূলত প্রশাসক একজন সমন্বয়ক, একজন সেবক যিনি সমন্বয়ের মাধ্যমে সুচারুরূপে তাঁর দায়িত্ব পালন করে থাকেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বয়স ৫০ বছর। এর আগে আমরা কখনো আমাদের নিজেদের সিদ্ধান্তে আমাদের দেশ পরিচালনা করতে পারিনি। আমাদের ভাগ্য, আমাদের উন্নয়ন নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্যরা তাদের মতো করে। আমাদের দেশটি ছিল পশ্চিমা অর্থনীতিবিদদের চোখে নরকের সব দুঃখ দিয়ে ভরা একটি পাত্র। যে দেশ নিয়ে খুব কম ব্যক্তিই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। বলেছেন বাংলাদেশ হবে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র। সব নৈরাশ্যজনক ভবিষ্যদ্বাণীকে মিথ্যা প্রমাণ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভালোবাসার বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, আমার মাটি আছে আমার মানুষ আছে। দেশকে বা দেশের মানুষকে কতটুকু ভালোবাসলে একজন মহান নেতা এমন দূরদর্শী বক্তব্য দিতে পারেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমাদের দেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ৭ কোটি, ৫০ বছরে দেশের জনসংখ্যা হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। যে দেশের মানুষ আবেগপ্রবণ, তুচ্ছ কারণে তাঁরা যেমন জীবন দিতে পারে তেমন নিতেও কুণ্ঠাবোধ করে না, তাঁদের সেবক হিসেবে প্রশাসনে যারা কাজ করেন তাঁরা জানেন বাংলাদেশের প্রতিটি জেলার মানুষের ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন মেজাজ সব মিলিয়ে তাদের সেবা দেওয়ার কাজটি কতটুকু চ্যালেঞ্জিং; সেখানে যত দোষ নন্দ ঘোষের মতো মাথা পেতে নিতে হয় স্থানীয় সব প্রশাসনকে। অথচ এখনো মানুষ আইনশৃঙ্খলাজনিত যে কোনো বিপদ বা সংকটে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার শরণাপন্ন হয়, আস্থা রাখে সেই প্রতিষ্ঠানের ওপর। যে কোনো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে অশান্ত দুই দল মানুষের মাঝে ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিতি সবার মনে স্বস্তি এনে দেয়। পরম আস্থায় তারা প্রতিকারের আশায় জেলা প্রশাসক বা পুলিশ সুপারের অফিসে আসে, এর বিকল্প কোনো প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়নি। মন্দ নজির কখনো উদাহরণ হতে পারে না। দু-একজন সদস্যের বিতর্কিত কাজের দায় ঢালাওভাবে সবার ওপর চাপিয়ে দিলে এক সময় তা আমাদের নিজের মাথার ছাতাটিকে শতছিন্ন করার কাজের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। ঝড়-বৃষ্টিতে বিপদের দিনে তখন সেই ছাতা আর রক্ষা করতে পারবে না। রাষ্ট্রীয় এসব প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি আমাদের দেশের স্বার্থেই বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা প্রয়োজন। কোনো সদস্যের সীমা লঙ্ঘনের কারণে কৃতদায় তাকেই নিতে হচ্ছে। এ পর্যন্ত কেউ অন্যায় করে পার পেয়েছে বলে জানা যায় না। প্রত্যেকটি ঘটনা বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। ঘটনা প্রমাণিত হলে সে শাস্তিপ্রাপ্ত হচ্ছে।

 

গণতন্ত্রের সংস্কৃতি একদিনে গড়ে ওঠে না। এটা ধারাবাহিক চর্চার মাধ্যমে অর্জিত হয়। অনেকটা কোনো দুই দল খেলোয়াড়কে খেলার নিয়মনীতি দুই পক্ষেরই মেনে খেলার মতো। হার-জিৎ আছে মেনে নিয়ে খেলতে হয়। খেলার মাঝখানে কোনো দল যদি বলে খেলব না বা গোলপোস্ট ছেড়ে দিয়ে বলে চললাম তাহলে আর খেলা হলো না। হলেও একতরফা গোল হতে থাকবে। একদল নিয়ম মেনে খেলছে তো অন্যদল খেলার নিয়ম মানছে না তাও তো চলবে না। দীর্ঘ চর্চার মাধ্যমে ন্যায্যতার এই মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়।

 

একটি দেশের সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। ন্যায়বিচার বা ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠাকে আমরা আইনের শাসন বলে থাকি। সংবিধান একটি দেশের সর্বোচ্চ আইন। এই সর্বোচ্চ আইনে বলা আছে সব ক্ষমতার উৎস জনগণ। তাহলে জনগণ কীভাবে সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করে তা হলো জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করে। সে জনপ্রতিনিধি অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হয়ে কাজ করার শপথ গ্রহণ করে। জনপ্রতিনিধি জনগণের চাহিদার ভিত্তিতে স্ব-স্ব নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং জনস্বার্থে মহান সংসদে আইন প্রণয়ন করে থাকেন। এলাকার জনগণের মুখপাত্র হিসেবে জাতীয় সংসদে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আলোচনা ও সিদ্ধান্তের জন্য উত্থাপন করেন। জনপ্রতিনিধিদের সর্বোচ্চ মর্যাদা সমুন্নত রেখে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের মধ্যে নির্বাহী বিভাগের প্রশাসকগণ কাজ করেন। পাঁচ বছরের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় আসে। এই পাঁচ বছরে তাদের জনগণের কাছে নির্বাচনী ইশতেহারের মাধ্যমে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকে। পাঁচ বছর পর আবার জনগণের ভোটে সরকার নির্বাচিত হয়। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তাদের জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রশাসকগণ কাজ করেন।

ছোট একটি ঘটনা আমার মনে দাগ কেটেছে যা এখানে বলতে চাই। আমাকে কিছুদিন আগে পারিবারিক অনুষ্ঠানে খুলনা যেতে হয়। দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ হিসেবে আমি জানি পদ্মার উভয় পাড়ের পদ্মাঘাটের ফেরি পারাপারের বিড়ম্বনা নিয়ে দুঃখের শত মহাকাব্য লেখা যাবে। আজ সেখানে যেন বুক পেতে সবার দুঃখকে বুকে ধারণ করে শুয়ে আছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, শেখ হাসিনার পদ্মা সেতু। ফেরার পথে শীতের বিকাল, শেষ ফেরির অপেক্ষায় সঙ্গে আছে ছোট ছোট বাচ্চা-কাচ্চা। ঘাটে অপেক্ষমাণ অনেক ছোট বড় গাড়ি; সবার লক্ষ্য এই ফেরি মিস করা যাবে না তাহলে সারা রাত ঘাটে বসে থাকতে হবে। দক্ষিণবঙ্গের দূর-দূরান্ত জেলা থেকে মাইক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্সে রোগী অপেক্ষমাণ সেই সঙ্গে আছে হাজারখানেক মোটরসাইকেল। একটি মাত্র ফেরি ধারণক্ষমতার চেয়ে অপেক্ষমাণ গাড়ি বেশি। দুশ্চিন্তা বেড়ে যেতে লাগল। মোটরসাইকেল আরোহীরা মনে হলো প্রতিদিন কর্মোপলক্ষে যাওয়া-আসা করে। ঘরে ফেরার জন্য সবাই মরিয়া। প্রশাসকদের মানুষ একটুতেই কটূক্তি করে।

 

আমার সঙ্গে ফ্লাগস্ট্যান্ড গাড়ি, ভয়ে চুপসে আছি। এই ফেরি পারাপারের বিড়ম্বনায় আমাদের এক সহকর্মী নির্দোষভাবে নানা বিড়ম্বনার শিকার হয়েছিলেন। ভুক্তভোগীরাই জানেন প্রকৃত ব্যথা।

 

এর মধ্যে দেখলাম প্রশাসন ক্যাডারের একজন সহকারী কমিশনার ও দায়িত্বরত পুলিশ এ বিষয়টিকে ম্যানেজ করছে। আশ্বস্ত হলাম যে প্রশাসনের কেউ আছে। ধীরে ধীরে সব ম্যানেজ করে তারা যখন ফেরি ছাড়বে তখন দেখা গেল বাকি শতাধিক হোন্ডা তারা ফেরি ছাড়তে দেবে না তাদের নিয়ে যেতে হবে। সবাই মারমুখী তারা পাটাতনের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে ফেরি পরিপূর্ণ। দেখলাম কি অসীম ধৈর্য, সাহস ও দক্ষতায় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা সবাইকে ম্যানেজ করে ফেরি ছাড়ার ব্যবস্থা করল। এটা দুই পাড়ের প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিত্যদিনের ডিউটি। কিন্তু এ ধরনের দায়িত্ব পালন করতে হবে কোথাও বলা নেই। কিন্তু যে কোনো সংকটে মানুষ মধ্যস্থতার আশায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে। বেশি দিন আগের কথা নয়, যখন সারা বাংলাদেশের মানুষ করোনা আতঙ্কে অস্বাভাবিক আচরণ করছে বাবা ছেলের মৃত্যুশয্যায় নেই, মৃত্যু হলে দাফন করার কেউ নেই। পরিবার-পরিজন করোনার ভয়ে আপনজনকে ছুঁয়ে দেখছে না। সেই কঠিন লকডাউন কার্যকর করা, মাস্ক পরতে বাধ্য করা, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে প্রশাসকগণ নিশ্চিত করেছেন। তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় শ্রমজীবীদের ঘরে ঘরে গিয়ে খাদ্য উপকরণ ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম থেকে শুরু করে করোনা রোগীদের লাশ দাফনের দায়িত্ব মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিতে হয়েছে। জীবন দিয়েছে প্রশাসনের শতাধিক সহকর্মী। মাঠপর্যায়ে কাজের পরিধি অনেক বেড়েছে, প্রতিটি দফতরের ব্যস্ততা বহুগুণে বেড়েছে। সহকর্মী কনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি উপজেলা পর্যায়ে অর্থনৈতিক কার্যক্রম কতটা বেড়েছে। বিরামহীনভাবে তারা আইনশৃঙ্খলা, উন্নয়ন সমন্বয়, ভূমি ব্যবস্থাপনা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, দুর্ঘটনার আহত নিহতদের উদ্ধার, চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ স্ব-স্ব দফতরে নানাবিধ কাজ করে যাচ্ছে। এরা সবাই আমাদের স্বাধীন দেশের সন্তান স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রজন্ম। সদাশয় সরকার ২০১৫ সালের বেতন স্কেল প্রদানের আগে তারা খুব বেশি সচ্ছল জীবনযাপন করতে পারত না।

করোনায় সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে দেখেছি বাংলাদেশের নার্স ও ডাক্তাররা পৃথিবীতে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। সবাই বলেছে রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়ে থাকবে, কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন বাংলাদেশের ডাক্তাররা, মৃত্যু বাড়তে দেননি। প্রকৃতই সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে হারিয়েছি শতাধিক চিকিৎসক। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন অনেক পুলিশ সদস্য। এরা সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে বাংলাদেশের সামাজিক রাজনৈতিক যে কোনো সংকটে হুকুম পালন করেন। কথায় বলে যখন সারা দেশ ঘুমাতে যায় তখন জেগে থাকে পুলিশ প্রশাসন ও পাহারাদার।

 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে তাঁর আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে একেবারে গৃহহীন, ভূমিহীন দুই লক্ষাধিক পরিবারকে গৃহ প্রদান করা হয়েছে। খাসজমি থেকে এই জমির সংস্থান করে গৃহনির্মাণ পর্যন্ত যে দুরূহ কাজ জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ করেছেন তাতে বিস্ময় সৃষ্টি করে। একটি কাজে দরিদ্র মানুষের জীবনমান ও নিশ্চয়তা বহুগুণে বেড়ে গেছে।

 

কথায় কথায় আমরা যাদের সমালোচনা করি সেই ট্রাফিক পুলিশকে দেখি সময়মতো ইফতার করার জন্য আমরা যেন ঘরে ফিরতে পারি সে ব্যবস্থা করলেও নিজের ইফতার রাস্তায় দাঁড়িয়ে সেরে নেন। রোদে বৃষ্টিতে আমরা যখন নিরাপদ আশ্রয় খুঁজি তারা উন্মুক্ত আকাশের নিচে দায়িত্ব পালন করেন। আপনজন মারা গেলে যে ডাক্তারকে আমরা পিটিয়ে রক্তাক্ত করি তিনিও কিন্তু তাঁর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নেন। একজন দুর্বৃত্ত যখন হাতুড়ি দিয়ে উপর্যুপরি মাথায় আঘাত করে সে ভেবে দেখে না যে, হাতুড়ির নিচে একজন প্রশাসনের কর্মকর্তা। মানে-অপমানে, ভালোবাসায়, ঘৃণায়, নিন্দায় প্রশংসায় যে মানুষটি দিন-রাত কাজ করেন তিনি একজন প্রশাসক, একজন মানুষ। তাঁর পিতা-মাতা আছেন, স্ত্রী-পুত্র-সন্তান আছে। তার শুধু ঘৃণা বা সমালোচনা নয়, ভালোবাসা পাওয়ারও চাহিদা আছে। কাজের স্বীকৃতি বা প্রশংসা সেও পেতে চায়, ভালো কাজের প্রশংসা না থাকলে সমাজে ভালো কাজে কেউ উৎসাহ পাবে না।

 

প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশের অর্জন গত এক যুগের অর্জন, গত ১২ বছরের অর্জন। একটার পর একটা বৃহৎ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যে প্রকল্পগুলো এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। শতভাগ বিদ্যুৎ বাংলাদেশের চেহারা পরিবর্তন করে দিচ্ছে। আমাদের একজন নেতা আছেন যিনি সর্বাবস্থায় আশাবাদী থাকেন। কখনো দেশবাসীকে হতাশার কথা বলেন না, তাঁর ব্যক্তিগত আক্ষেপের কথা বলেন না। আসলে কাকেই বা বলবেন! তিনি প্রশংসা চান না, কৃতজ্ঞতা পান না, তাঁর মানসিক অস্থিরতা তৈরি করে কষ্ট দিতে, তাঁকে লক্ষ্য বিচ্যুৎ করতে সামাজিক মাধ্যমে মিথ্যাচার, অপপ্রচার করা হয়। তিনি সবকিছু উপেক্ষা করে এগিয়ে যান তাঁর লক্ষ্যকে সামনে রেখে। আমাদের দেশটা এগিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি কৃষিমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ১৭ কোটি মানুষ বাংলাদেশে কেউ আর না খেয়ে থাকে না এটাই ৫০ বছরে স্বাধীনতার বড় অর্জন। এর চেয়ে সত্য আর হতে পারে না। বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে নেই, থাকবে না ইনশা আল্লাহ। শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের কাছ থেকে গঠনমূলক সৎপরামর্শ দেশবাসী আশা করে। ভালো কাজকে ভালো, খারাপ কাজকে খারাপ বললে আস্থা পাওয়া যায়। ঢালাওভাবে শুধু খারাপ বা ভালো বলা হলে গ্রহণযোগ্যতা থাকে না।

 

এই বাংলাদেশ আমাদের অনেক কষ্টে অর্জিত বাংলাদেশ। অনেক রক্ত, অনেক দাম দিয়ে কেনা। মানুষের মতো বেঁচে থাকা, সুখী সমৃদ্ধ জীবন গড়া, নিজের দেশের ভাগ্য নিজেরা গড়ার সুযোগ এনেছে এই স্বাধীনতা। এ দেশ আমাদের, আমরাই আমাদের ভাগ্য গড়ব। আমাদের দেশের প্রশংসা আমরাই করব। আমাদের সন্তানদের প্রশংসা করে তাদের আত্মবিশ্বাসী হিসেবে গড়ে তুলব। জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, বুদ্ধিমত্তায়, মননশীলতায় বাংলাদেশ এগিয়ে থাকবে। এ দেশে রাজনীতিবিদ, প্রশাসক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী সমাজ, পেশাজীবী, পারস্পরিক শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তিতে কাজ করবে তবেই স্বাধীনতা সার্থক হবে।

 

আমাদের দেশের জননিরাপত্তা, শান্তি-শৃঙ্খলা আমাদের সিদ্ধান্তে যুগোপযোগী উপায়ে রক্ষা করতে হবে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর মানব ইতিহাসের করুণতম ও নৃশংসতম হত্যাকান্ডে হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে।

 

বাড়িতে, রাস্তা, গ্রাম, মসজিদ, মন্দির, হাসপাতাল, নদীনালা, খালে-বিলে, সবখানেই বাঙালিকে নির্মমভাবে নিধন করে পাকিস্তানিরা। যখন ঠান্ডা মাথায় প্রতিহিংসায় উন্মত্ত হয়ে নিরীহ বাঙালি নারী-পুরুষ-শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা বেসামরিক লোকজনকে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে তখন মানবতার ধ্বজাধারী কিছু দেশ এই গণহত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেনি। তাদের প্রশ্রয়েই বাংলাদেশে গণহত্যা হয়। এই গণহত্যা হয় তাদের নীরব ভূমিকার জন্য। সেই সব দেশের মানবতার জন্য কান্না যে নিছক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বুঝতে এখন কারও অসুবিধা হয় না। তত সময় পর্যন্ত তা তারা সমর্থন করে যতক্ষণ তা তাদের রাজনৈতিক স্বার্থরক্ষায় প্রয়োজন হয়। এখন বিশ্বে এই যুগে অর্থনৈতিক কূটনীতিতে যখন কোনো দেশ এগিয়ে যায় তাদের দমানোর জন্য মানবিক সূচক ব্যবহার করা হয়।

 

অনেকটা প্রতিবেশীর ছেলে চাকরি পেলেও যেন বেতন না পায়। পরিশেষে বলতে চাই প্রমত্তা পদ্মাকে আমরা যখন বাঁধ দিয়ে বশে আনতে পেরেছি তখন পৃথিবীর কোনো শক্তিকে জয় করা আমাদের দেশের জন্য কঠিন কিছু হবে না। জয় আমাদের হবেই, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবেই।

কারণ এখনো আমাদের একজন শেখ হাসিনা আছেন তিনি জানেন তিনি চিরদিন থাকবেন না কিন্তু যতদিন সুযোগ পান দেশটাকে একটু এগিয়ে দিয়ে যেতে চান। আমরা বঙ্গবন্ধুকে সময় দিইনি, আমাদের উচিত শেখ হাসিনাকে সময় দেওয়া।

লেখক : অতিরিক্ত সচিব।সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» অভিষেক ছাড়তে চেয়েছিলেন অভিনয়, ফেরালেন কে?

» রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পেলেন সদ্য সাবেক আইজিপি ময়নুল

» ইসকন ইস্যুতে দেশি-বিদেশি ইন্ধন থাকতে পারে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

» আইনজীবী হত্যার তদন্তের নির্দেশ, দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

» ‌আমরা কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হতে দেব না : হাসনাত আব্দুল্লাহ

» লক্ষ্মীপুরে জুলাই বিপ্লবে নিহত ও আহতদের স্মরণে জেলা প্রশাসনের সভা 

» রবি আজিয়াটাকে অ্যাডভান্সড ক্যাশ ম্যানেজমেন্ট সল্যুশন দেবে ব্র্যাক ব্যাংক

» ১৫০ কৃষি উদ্যোক্তার জন্য ইউসিবির দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ আয়োজন

» আওয়ামী সন্ত্রাসীর হামলায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যু

» বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম করলে কঠোর ব্যবস্থা: পরিবেশ উপদেষ্টা

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

প্রশাসক এত কেন

ওয়াহিদা আক্তার: জুতা সেলাই থেকে চ-ীপাঠ পর্যন্ত সব ধরনের কাজ প্রশাসনের লোকদের করতে হয়। এই প্রশাসক শুধু জেলা প্রশাসক নন, তিনি হতে পারেন কখনো একজন ডাক্তার, একজন পুলিশ সদস্য, কখনো একজন প্রকৌশলী, একজন বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। মূলত প্রশাসক একজন সমন্বয়ক, একজন সেবক যিনি সমন্বয়ের মাধ্যমে সুচারুরূপে তাঁর দায়িত্ব পালন করে থাকেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বয়স ৫০ বছর। এর আগে আমরা কখনো আমাদের নিজেদের সিদ্ধান্তে আমাদের দেশ পরিচালনা করতে পারিনি। আমাদের ভাগ্য, আমাদের উন্নয়ন নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্যরা তাদের মতো করে। আমাদের দেশটি ছিল পশ্চিমা অর্থনীতিবিদদের চোখে নরকের সব দুঃখ দিয়ে ভরা একটি পাত্র। যে দেশ নিয়ে খুব কম ব্যক্তিই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। বলেছেন বাংলাদেশ হবে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র। সব নৈরাশ্যজনক ভবিষ্যদ্বাণীকে মিথ্যা প্রমাণ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভালোবাসার বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, আমার মাটি আছে আমার মানুষ আছে। দেশকে বা দেশের মানুষকে কতটুকু ভালোবাসলে একজন মহান নেতা এমন দূরদর্শী বক্তব্য দিতে পারেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমাদের দেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ৭ কোটি, ৫০ বছরে দেশের জনসংখ্যা হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। যে দেশের মানুষ আবেগপ্রবণ, তুচ্ছ কারণে তাঁরা যেমন জীবন দিতে পারে তেমন নিতেও কুণ্ঠাবোধ করে না, তাঁদের সেবক হিসেবে প্রশাসনে যারা কাজ করেন তাঁরা জানেন বাংলাদেশের প্রতিটি জেলার মানুষের ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন মেজাজ সব মিলিয়ে তাদের সেবা দেওয়ার কাজটি কতটুকু চ্যালেঞ্জিং; সেখানে যত দোষ নন্দ ঘোষের মতো মাথা পেতে নিতে হয় স্থানীয় সব প্রশাসনকে। অথচ এখনো মানুষ আইনশৃঙ্খলাজনিত যে কোনো বিপদ বা সংকটে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার শরণাপন্ন হয়, আস্থা রাখে সেই প্রতিষ্ঠানের ওপর। যে কোনো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে অশান্ত দুই দল মানুষের মাঝে ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিতি সবার মনে স্বস্তি এনে দেয়। পরম আস্থায় তারা প্রতিকারের আশায় জেলা প্রশাসক বা পুলিশ সুপারের অফিসে আসে, এর বিকল্প কোনো প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়নি। মন্দ নজির কখনো উদাহরণ হতে পারে না। দু-একজন সদস্যের বিতর্কিত কাজের দায় ঢালাওভাবে সবার ওপর চাপিয়ে দিলে এক সময় তা আমাদের নিজের মাথার ছাতাটিকে শতছিন্ন করার কাজের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। ঝড়-বৃষ্টিতে বিপদের দিনে তখন সেই ছাতা আর রক্ষা করতে পারবে না। রাষ্ট্রীয় এসব প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি আমাদের দেশের স্বার্থেই বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা প্রয়োজন। কোনো সদস্যের সীমা লঙ্ঘনের কারণে কৃতদায় তাকেই নিতে হচ্ছে। এ পর্যন্ত কেউ অন্যায় করে পার পেয়েছে বলে জানা যায় না। প্রত্যেকটি ঘটনা বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। ঘটনা প্রমাণিত হলে সে শাস্তিপ্রাপ্ত হচ্ছে।

 

গণতন্ত্রের সংস্কৃতি একদিনে গড়ে ওঠে না। এটা ধারাবাহিক চর্চার মাধ্যমে অর্জিত হয়। অনেকটা কোনো দুই দল খেলোয়াড়কে খেলার নিয়মনীতি দুই পক্ষেরই মেনে খেলার মতো। হার-জিৎ আছে মেনে নিয়ে খেলতে হয়। খেলার মাঝখানে কোনো দল যদি বলে খেলব না বা গোলপোস্ট ছেড়ে দিয়ে বলে চললাম তাহলে আর খেলা হলো না। হলেও একতরফা গোল হতে থাকবে। একদল নিয়ম মেনে খেলছে তো অন্যদল খেলার নিয়ম মানছে না তাও তো চলবে না। দীর্ঘ চর্চার মাধ্যমে ন্যায্যতার এই মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়।

 

একটি দেশের সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। ন্যায়বিচার বা ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠাকে আমরা আইনের শাসন বলে থাকি। সংবিধান একটি দেশের সর্বোচ্চ আইন। এই সর্বোচ্চ আইনে বলা আছে সব ক্ষমতার উৎস জনগণ। তাহলে জনগণ কীভাবে সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করে তা হলো জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করে। সে জনপ্রতিনিধি অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হয়ে কাজ করার শপথ গ্রহণ করে। জনপ্রতিনিধি জনগণের চাহিদার ভিত্তিতে স্ব-স্ব নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং জনস্বার্থে মহান সংসদে আইন প্রণয়ন করে থাকেন। এলাকার জনগণের মুখপাত্র হিসেবে জাতীয় সংসদে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আলোচনা ও সিদ্ধান্তের জন্য উত্থাপন করেন। জনপ্রতিনিধিদের সর্বোচ্চ মর্যাদা সমুন্নত রেখে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের মধ্যে নির্বাহী বিভাগের প্রশাসকগণ কাজ করেন। পাঁচ বছরের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় আসে। এই পাঁচ বছরে তাদের জনগণের কাছে নির্বাচনী ইশতেহারের মাধ্যমে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকে। পাঁচ বছর পর আবার জনগণের ভোটে সরকার নির্বাচিত হয়। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তাদের জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রশাসকগণ কাজ করেন।

ছোট একটি ঘটনা আমার মনে দাগ কেটেছে যা এখানে বলতে চাই। আমাকে কিছুদিন আগে পারিবারিক অনুষ্ঠানে খুলনা যেতে হয়। দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ হিসেবে আমি জানি পদ্মার উভয় পাড়ের পদ্মাঘাটের ফেরি পারাপারের বিড়ম্বনা নিয়ে দুঃখের শত মহাকাব্য লেখা যাবে। আজ সেখানে যেন বুক পেতে সবার দুঃখকে বুকে ধারণ করে শুয়ে আছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, শেখ হাসিনার পদ্মা সেতু। ফেরার পথে শীতের বিকাল, শেষ ফেরির অপেক্ষায় সঙ্গে আছে ছোট ছোট বাচ্চা-কাচ্চা। ঘাটে অপেক্ষমাণ অনেক ছোট বড় গাড়ি; সবার লক্ষ্য এই ফেরি মিস করা যাবে না তাহলে সারা রাত ঘাটে বসে থাকতে হবে। দক্ষিণবঙ্গের দূর-দূরান্ত জেলা থেকে মাইক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্সে রোগী অপেক্ষমাণ সেই সঙ্গে আছে হাজারখানেক মোটরসাইকেল। একটি মাত্র ফেরি ধারণক্ষমতার চেয়ে অপেক্ষমাণ গাড়ি বেশি। দুশ্চিন্তা বেড়ে যেতে লাগল। মোটরসাইকেল আরোহীরা মনে হলো প্রতিদিন কর্মোপলক্ষে যাওয়া-আসা করে। ঘরে ফেরার জন্য সবাই মরিয়া। প্রশাসকদের মানুষ একটুতেই কটূক্তি করে।

 

আমার সঙ্গে ফ্লাগস্ট্যান্ড গাড়ি, ভয়ে চুপসে আছি। এই ফেরি পারাপারের বিড়ম্বনায় আমাদের এক সহকর্মী নির্দোষভাবে নানা বিড়ম্বনার শিকার হয়েছিলেন। ভুক্তভোগীরাই জানেন প্রকৃত ব্যথা।

 

এর মধ্যে দেখলাম প্রশাসন ক্যাডারের একজন সহকারী কমিশনার ও দায়িত্বরত পুলিশ এ বিষয়টিকে ম্যানেজ করছে। আশ্বস্ত হলাম যে প্রশাসনের কেউ আছে। ধীরে ধীরে সব ম্যানেজ করে তারা যখন ফেরি ছাড়বে তখন দেখা গেল বাকি শতাধিক হোন্ডা তারা ফেরি ছাড়তে দেবে না তাদের নিয়ে যেতে হবে। সবাই মারমুখী তারা পাটাতনের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে ফেরি পরিপূর্ণ। দেখলাম কি অসীম ধৈর্য, সাহস ও দক্ষতায় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা সবাইকে ম্যানেজ করে ফেরি ছাড়ার ব্যবস্থা করল। এটা দুই পাড়ের প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিত্যদিনের ডিউটি। কিন্তু এ ধরনের দায়িত্ব পালন করতে হবে কোথাও বলা নেই। কিন্তু যে কোনো সংকটে মানুষ মধ্যস্থতার আশায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে। বেশি দিন আগের কথা নয়, যখন সারা বাংলাদেশের মানুষ করোনা আতঙ্কে অস্বাভাবিক আচরণ করছে বাবা ছেলের মৃত্যুশয্যায় নেই, মৃত্যু হলে দাফন করার কেউ নেই। পরিবার-পরিজন করোনার ভয়ে আপনজনকে ছুঁয়ে দেখছে না। সেই কঠিন লকডাউন কার্যকর করা, মাস্ক পরতে বাধ্য করা, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে প্রশাসকগণ নিশ্চিত করেছেন। তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় শ্রমজীবীদের ঘরে ঘরে গিয়ে খাদ্য উপকরণ ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম থেকে শুরু করে করোনা রোগীদের লাশ দাফনের দায়িত্ব মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিতে হয়েছে। জীবন দিয়েছে প্রশাসনের শতাধিক সহকর্মী। মাঠপর্যায়ে কাজের পরিধি অনেক বেড়েছে, প্রতিটি দফতরের ব্যস্ততা বহুগুণে বেড়েছে। সহকর্মী কনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি উপজেলা পর্যায়ে অর্থনৈতিক কার্যক্রম কতটা বেড়েছে। বিরামহীনভাবে তারা আইনশৃঙ্খলা, উন্নয়ন সমন্বয়, ভূমি ব্যবস্থাপনা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, দুর্ঘটনার আহত নিহতদের উদ্ধার, চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ স্ব-স্ব দফতরে নানাবিধ কাজ করে যাচ্ছে। এরা সবাই আমাদের স্বাধীন দেশের সন্তান স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রজন্ম। সদাশয় সরকার ২০১৫ সালের বেতন স্কেল প্রদানের আগে তারা খুব বেশি সচ্ছল জীবনযাপন করতে পারত না।

করোনায় সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে দেখেছি বাংলাদেশের নার্স ও ডাক্তাররা পৃথিবীতে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। সবাই বলেছে রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়ে থাকবে, কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন বাংলাদেশের ডাক্তাররা, মৃত্যু বাড়তে দেননি। প্রকৃতই সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে হারিয়েছি শতাধিক চিকিৎসক। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন অনেক পুলিশ সদস্য। এরা সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে বাংলাদেশের সামাজিক রাজনৈতিক যে কোনো সংকটে হুকুম পালন করেন। কথায় বলে যখন সারা দেশ ঘুমাতে যায় তখন জেগে থাকে পুলিশ প্রশাসন ও পাহারাদার।

 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে তাঁর আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে একেবারে গৃহহীন, ভূমিহীন দুই লক্ষাধিক পরিবারকে গৃহ প্রদান করা হয়েছে। খাসজমি থেকে এই জমির সংস্থান করে গৃহনির্মাণ পর্যন্ত যে দুরূহ কাজ জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ করেছেন তাতে বিস্ময় সৃষ্টি করে। একটি কাজে দরিদ্র মানুষের জীবনমান ও নিশ্চয়তা বহুগুণে বেড়ে গেছে।

 

কথায় কথায় আমরা যাদের সমালোচনা করি সেই ট্রাফিক পুলিশকে দেখি সময়মতো ইফতার করার জন্য আমরা যেন ঘরে ফিরতে পারি সে ব্যবস্থা করলেও নিজের ইফতার রাস্তায় দাঁড়িয়ে সেরে নেন। রোদে বৃষ্টিতে আমরা যখন নিরাপদ আশ্রয় খুঁজি তারা উন্মুক্ত আকাশের নিচে দায়িত্ব পালন করেন। আপনজন মারা গেলে যে ডাক্তারকে আমরা পিটিয়ে রক্তাক্ত করি তিনিও কিন্তু তাঁর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নেন। একজন দুর্বৃত্ত যখন হাতুড়ি দিয়ে উপর্যুপরি মাথায় আঘাত করে সে ভেবে দেখে না যে, হাতুড়ির নিচে একজন প্রশাসনের কর্মকর্তা। মানে-অপমানে, ভালোবাসায়, ঘৃণায়, নিন্দায় প্রশংসায় যে মানুষটি দিন-রাত কাজ করেন তিনি একজন প্রশাসক, একজন মানুষ। তাঁর পিতা-মাতা আছেন, স্ত্রী-পুত্র-সন্তান আছে। তার শুধু ঘৃণা বা সমালোচনা নয়, ভালোবাসা পাওয়ারও চাহিদা আছে। কাজের স্বীকৃতি বা প্রশংসা সেও পেতে চায়, ভালো কাজের প্রশংসা না থাকলে সমাজে ভালো কাজে কেউ উৎসাহ পাবে না।

 

প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশের অর্জন গত এক যুগের অর্জন, গত ১২ বছরের অর্জন। একটার পর একটা বৃহৎ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যে প্রকল্পগুলো এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। শতভাগ বিদ্যুৎ বাংলাদেশের চেহারা পরিবর্তন করে দিচ্ছে। আমাদের একজন নেতা আছেন যিনি সর্বাবস্থায় আশাবাদী থাকেন। কখনো দেশবাসীকে হতাশার কথা বলেন না, তাঁর ব্যক্তিগত আক্ষেপের কথা বলেন না। আসলে কাকেই বা বলবেন! তিনি প্রশংসা চান না, কৃতজ্ঞতা পান না, তাঁর মানসিক অস্থিরতা তৈরি করে কষ্ট দিতে, তাঁকে লক্ষ্য বিচ্যুৎ করতে সামাজিক মাধ্যমে মিথ্যাচার, অপপ্রচার করা হয়। তিনি সবকিছু উপেক্ষা করে এগিয়ে যান তাঁর লক্ষ্যকে সামনে রেখে। আমাদের দেশটা এগিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি কৃষিমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ১৭ কোটি মানুষ বাংলাদেশে কেউ আর না খেয়ে থাকে না এটাই ৫০ বছরে স্বাধীনতার বড় অর্জন। এর চেয়ে সত্য আর হতে পারে না। বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে নেই, থাকবে না ইনশা আল্লাহ। শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের কাছ থেকে গঠনমূলক সৎপরামর্শ দেশবাসী আশা করে। ভালো কাজকে ভালো, খারাপ কাজকে খারাপ বললে আস্থা পাওয়া যায়। ঢালাওভাবে শুধু খারাপ বা ভালো বলা হলে গ্রহণযোগ্যতা থাকে না।

 

এই বাংলাদেশ আমাদের অনেক কষ্টে অর্জিত বাংলাদেশ। অনেক রক্ত, অনেক দাম দিয়ে কেনা। মানুষের মতো বেঁচে থাকা, সুখী সমৃদ্ধ জীবন গড়া, নিজের দেশের ভাগ্য নিজেরা গড়ার সুযোগ এনেছে এই স্বাধীনতা। এ দেশ আমাদের, আমরাই আমাদের ভাগ্য গড়ব। আমাদের দেশের প্রশংসা আমরাই করব। আমাদের সন্তানদের প্রশংসা করে তাদের আত্মবিশ্বাসী হিসেবে গড়ে তুলব। জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, বুদ্ধিমত্তায়, মননশীলতায় বাংলাদেশ এগিয়ে থাকবে। এ দেশে রাজনীতিবিদ, প্রশাসক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী সমাজ, পেশাজীবী, পারস্পরিক শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তিতে কাজ করবে তবেই স্বাধীনতা সার্থক হবে।

 

আমাদের দেশের জননিরাপত্তা, শান্তি-শৃঙ্খলা আমাদের সিদ্ধান্তে যুগোপযোগী উপায়ে রক্ষা করতে হবে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর মানব ইতিহাসের করুণতম ও নৃশংসতম হত্যাকান্ডে হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে।

 

বাড়িতে, রাস্তা, গ্রাম, মসজিদ, মন্দির, হাসপাতাল, নদীনালা, খালে-বিলে, সবখানেই বাঙালিকে নির্মমভাবে নিধন করে পাকিস্তানিরা। যখন ঠান্ডা মাথায় প্রতিহিংসায় উন্মত্ত হয়ে নিরীহ বাঙালি নারী-পুরুষ-শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা বেসামরিক লোকজনকে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে তখন মানবতার ধ্বজাধারী কিছু দেশ এই গণহত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেনি। তাদের প্রশ্রয়েই বাংলাদেশে গণহত্যা হয়। এই গণহত্যা হয় তাদের নীরব ভূমিকার জন্য। সেই সব দেশের মানবতার জন্য কান্না যে নিছক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বুঝতে এখন কারও অসুবিধা হয় না। তত সময় পর্যন্ত তা তারা সমর্থন করে যতক্ষণ তা তাদের রাজনৈতিক স্বার্থরক্ষায় প্রয়োজন হয়। এখন বিশ্বে এই যুগে অর্থনৈতিক কূটনীতিতে যখন কোনো দেশ এগিয়ে যায় তাদের দমানোর জন্য মানবিক সূচক ব্যবহার করা হয়।

 

অনেকটা প্রতিবেশীর ছেলে চাকরি পেলেও যেন বেতন না পায়। পরিশেষে বলতে চাই প্রমত্তা পদ্মাকে আমরা যখন বাঁধ দিয়ে বশে আনতে পেরেছি তখন পৃথিবীর কোনো শক্তিকে জয় করা আমাদের দেশের জন্য কঠিন কিছু হবে না। জয় আমাদের হবেই, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবেই।

কারণ এখনো আমাদের একজন শেখ হাসিনা আছেন তিনি জানেন তিনি চিরদিন থাকবেন না কিন্তু যতদিন সুযোগ পান দেশটাকে একটু এগিয়ে দিয়ে যেতে চান। আমরা বঙ্গবন্ধুকে সময় দিইনি, আমাদের উচিত শেখ হাসিনাকে সময় দেওয়া।

লেখক : অতিরিক্ত সচিব।সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com