প্রতিদিন একটি করে নৌকা তৈরিই শঙ্করের পেশা। নৌকা তৈরিতেই ফিরছে আগৈলঝাড়ার অর্ধ শতাধিক পরিবারের সচ্ছলতা

অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকে : দক্ষিণাঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকায় বর্ষা মৌসুমে চলাচল, জীবন জীবিকা ও পণ্য পরিবহনের অন্যতম বাহন হচ্ছে নৌকা। বিশেষ করে জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এলাকার মৎস্য শিকারীরা তাদের জীবনধারণ ও যাতায়াতের জন্য ডিঙি নৌকার ওপর নির্ভরশীল থাকেন। এ সময় তারা নৌকায় করে জাল পাতার পাশাপাশি বাঁশের শলায় তৈরি চাঁই ও বড়শি নিয়ে মাছ শিকার করেন। তাই বর্ষা মৌসুম এলেই বেড়ে যায় নৌকার কদর। এদিকে বর্ষার কারণে ফসলি জমি বা বাড়ি-ঘর নির্মাণের তেমন কোনো কাজ না থাকায় এ সময় কাঠ মিস্ত্রিরাও ব্যস্ত থাকেন নৌকা তৈরির কাজে। তারা নিজেদের বাড়িতে বসেই নির্মাণ করেন বিভিন্ন সাইজ ও ডিজাইনের নৌকা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার দক্ষিণ জোবারপাড় মরান্দিরপাড় গ্রামের জিতেন্দ্রনাথ শাহের ছেলে শংকর শাহ নিজ হাতেই তৈরি করছেন নৌকা। এছাড়াও এই অঞ্চলের অসংখ্য পরিবার কাঠ মিস্ত্রি পেশায় জড়িত। তারা গ্রামাঞ্চল থেকে অপেক্ষাকৃত কম দামে গাছ কিনে চেরাই করে আকার অনুযায়ী কাঠ বানিয়ে নৌকা তৈরি করে থাকেন।

এরমধ্যে জারুল, রেইনট্রি, চাম্বল, কদম, রয়না, ওড়িয়া, আম গাছের কাঠ দিয়েও ডিঙি ও ছোট-বড় আকারের নৌকা তৈরি করেন। পরে তৈরি এসব নৌকা বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করেন। আর এর মাধ্যমে আয় করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সহস্রাধিক মিস্ত্রি পরিবার। যে আয়ের মাধ্যমে নিজেদের পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন অনেকেই।
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার হাট পরিচালনাকারীরা জানান, উপজেলার বারপাইকা, দুশুমীর হাট, রামানন্দের আঁক, বাটরা, বাহাদুরপুর থেকে শুরু করে ত্রিমুখী, রামশীল, সাদুল্লাপুর, পীরের বাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় এখন নৌকা বিক্রির জমজমাট হাট বসে। তবে সপ্তাহে দু’দিন করে বসা নৌকা বিক্রির সবচেয়ে বড় হাট বাহাদুরপুর ও সাহেবের হাট।

তবে শুধু যে আগৈলঝাড়ায় বানানো নৌকা স্থানীয় লোকজনই কেনে এমনটা নয়; স্থানীয় ছাড়াও পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি, বরিশালের বানারীপাড়া-উজিরপুর এবং মাদারীপুর থেকে পাইকাররা এসে নৌকা কিনে নিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন নৌকা তৈরির কারিগর বাশাইল গ্রামের সুশীল দাস। আর সুকুমার রায় নামে অপর কারিগর জানান, বর্ষার সময়টাতে অন্য কোনো কাজ না থাকায় নৌকা বানানোর ওপরেই তারা বেশি জোর দেন। যে কাজে স্ত্রী সন্তানেরাও সহায়তা করেন। আর একটি নৌকা তৈরি করে তা বিক্রি করে মোটামুটি ভালো লাভ করা গেলে জীবিকায় কোনো বিরূপ প্রভাবও পড়ে না। আর সবমিলিয়ে বর্ষায় দক্ষিণের নৌকার বাজার ভালো থাকায় কারও শ্রমই বৃথা যায় না।

এদিকে নৌকার ক্রেতা কাদের সরদার, আয়নাল হক, লিটন মন্ডল জানান, শুধু বর্ষা মৌসুমে ব্যবহারের জন্য কম দামি নৌকাই ক্রেতাদের বেশি পছন্দ। কারণ এ সময়ে গবাদি পশুর জন্য মাঠ থেকে ঘাসপাতা সংগ্রহ, মাছ শিকারসহ চলাচলের জন্য বেশি নৌকার প্রয়োজন হয়।

জীবন বালা নামে অপর এক ক্রেতা বলেন, বর্ষায় যারা নৌকা কেনেন, তাদের মূলত শুকনোর সময়ে এর প্রয়োজন হয় না। যদিও আকারভেদে নৌকার দামও কম বেশি হয়ে থাকে বলেও জানান তিনি।

এদিকে বর্ষাকালে জাল পেতে ও বড়শি দিয়ে মাছ ধরার জন্য নৌকার বিকল্প নেই জানিয়ে রাজিহার গ্রামের মৎস্য শিকারী শাহ আলম, ঐচারমাঠ গ্রামের সঞ্জয় বালা বলেন, শুষ্ক মৌসুমে খালে জাল পেতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করি। তবে বর্ষার বিশাল ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে থাকায় তাতে জাল পেতে মাছ শিকার করি। আর এজন্য নৌকার বেশি প্রয়োজন হয়। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনেও নৌকা ব্যবহার বাড়ে। এককথায় বিলাঞ্চলের লোকজনকে হাট-বাজার থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজসহ কর্মস্থলে যাতায়াতের জন্য তাদের নির্ভর করতে হয় নৌকার ওপর।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» মিটফোর্ডে হত্যার শিকার সোহাগের পরিবারের পাশে বিএনপি

» সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে বিএনপি নেতাকর্মীদের মিছিল

» জরুরি অবস্থা যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার না হয় : এনসিপি

» বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার পরিকল্পিত চক্রান্ত : মির্জা ফখরুল

» কোনো ব্যক্তি বা দলের চরিত্রহনন অনাকাঙ্ক্ষিত ও নিন্দনীয়

» সোমবার বিকেল থেকে বন্ধ থাকবে মেট্রোরেলের ঢাবি স্টেশন

» সোহাগ হত্যাকাণ্ডের সময় ওখানে কোনো আনসার সদস্য কর্তব্যরত ছিলেন না: ডিজি

» বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের উপকূলে ইলিশের সুবাস: এক ট্রলারে ৬৫ মণ মাছ, বিক্রি ৩৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা

» শরণখোলায় বিএনপি’র দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

» তরুণ প্রজন্ম কোন নির্বাচনী ভাগ বাটোয়ারায় বিশ্বাস করে না ……….নাহিদ ইসলাম

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

প্রতিদিন একটি করে নৌকা তৈরিই শঙ্করের পেশা। নৌকা তৈরিতেই ফিরছে আগৈলঝাড়ার অর্ধ শতাধিক পরিবারের সচ্ছলতা

অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকে : দক্ষিণাঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকায় বর্ষা মৌসুমে চলাচল, জীবন জীবিকা ও পণ্য পরিবহনের অন্যতম বাহন হচ্ছে নৌকা। বিশেষ করে জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এলাকার মৎস্য শিকারীরা তাদের জীবনধারণ ও যাতায়াতের জন্য ডিঙি নৌকার ওপর নির্ভরশীল থাকেন। এ সময় তারা নৌকায় করে জাল পাতার পাশাপাশি বাঁশের শলায় তৈরি চাঁই ও বড়শি নিয়ে মাছ শিকার করেন। তাই বর্ষা মৌসুম এলেই বেড়ে যায় নৌকার কদর। এদিকে বর্ষার কারণে ফসলি জমি বা বাড়ি-ঘর নির্মাণের তেমন কোনো কাজ না থাকায় এ সময় কাঠ মিস্ত্রিরাও ব্যস্ত থাকেন নৌকা তৈরির কাজে। তারা নিজেদের বাড়িতে বসেই নির্মাণ করেন বিভিন্ন সাইজ ও ডিজাইনের নৌকা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার দক্ষিণ জোবারপাড় মরান্দিরপাড় গ্রামের জিতেন্দ্রনাথ শাহের ছেলে শংকর শাহ নিজ হাতেই তৈরি করছেন নৌকা। এছাড়াও এই অঞ্চলের অসংখ্য পরিবার কাঠ মিস্ত্রি পেশায় জড়িত। তারা গ্রামাঞ্চল থেকে অপেক্ষাকৃত কম দামে গাছ কিনে চেরাই করে আকার অনুযায়ী কাঠ বানিয়ে নৌকা তৈরি করে থাকেন।

এরমধ্যে জারুল, রেইনট্রি, চাম্বল, কদম, রয়না, ওড়িয়া, আম গাছের কাঠ দিয়েও ডিঙি ও ছোট-বড় আকারের নৌকা তৈরি করেন। পরে তৈরি এসব নৌকা বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করেন। আর এর মাধ্যমে আয় করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সহস্রাধিক মিস্ত্রি পরিবার। যে আয়ের মাধ্যমে নিজেদের পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন অনেকেই।
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার হাট পরিচালনাকারীরা জানান, উপজেলার বারপাইকা, দুশুমীর হাট, রামানন্দের আঁক, বাটরা, বাহাদুরপুর থেকে শুরু করে ত্রিমুখী, রামশীল, সাদুল্লাপুর, পীরের বাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় এখন নৌকা বিক্রির জমজমাট হাট বসে। তবে সপ্তাহে দু’দিন করে বসা নৌকা বিক্রির সবচেয়ে বড় হাট বাহাদুরপুর ও সাহেবের হাট।

তবে শুধু যে আগৈলঝাড়ায় বানানো নৌকা স্থানীয় লোকজনই কেনে এমনটা নয়; স্থানীয় ছাড়াও পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি, বরিশালের বানারীপাড়া-উজিরপুর এবং মাদারীপুর থেকে পাইকাররা এসে নৌকা কিনে নিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন নৌকা তৈরির কারিগর বাশাইল গ্রামের সুশীল দাস। আর সুকুমার রায় নামে অপর কারিগর জানান, বর্ষার সময়টাতে অন্য কোনো কাজ না থাকায় নৌকা বানানোর ওপরেই তারা বেশি জোর দেন। যে কাজে স্ত্রী সন্তানেরাও সহায়তা করেন। আর একটি নৌকা তৈরি করে তা বিক্রি করে মোটামুটি ভালো লাভ করা গেলে জীবিকায় কোনো বিরূপ প্রভাবও পড়ে না। আর সবমিলিয়ে বর্ষায় দক্ষিণের নৌকার বাজার ভালো থাকায় কারও শ্রমই বৃথা যায় না।

এদিকে নৌকার ক্রেতা কাদের সরদার, আয়নাল হক, লিটন মন্ডল জানান, শুধু বর্ষা মৌসুমে ব্যবহারের জন্য কম দামি নৌকাই ক্রেতাদের বেশি পছন্দ। কারণ এ সময়ে গবাদি পশুর জন্য মাঠ থেকে ঘাসপাতা সংগ্রহ, মাছ শিকারসহ চলাচলের জন্য বেশি নৌকার প্রয়োজন হয়।

জীবন বালা নামে অপর এক ক্রেতা বলেন, বর্ষায় যারা নৌকা কেনেন, তাদের মূলত শুকনোর সময়ে এর প্রয়োজন হয় না। যদিও আকারভেদে নৌকার দামও কম বেশি হয়ে থাকে বলেও জানান তিনি।

এদিকে বর্ষাকালে জাল পেতে ও বড়শি দিয়ে মাছ ধরার জন্য নৌকার বিকল্প নেই জানিয়ে রাজিহার গ্রামের মৎস্য শিকারী শাহ আলম, ঐচারমাঠ গ্রামের সঞ্জয় বালা বলেন, শুষ্ক মৌসুমে খালে জাল পেতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করি। তবে বর্ষার বিশাল ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে থাকায় তাতে জাল পেতে মাছ শিকার করি। আর এজন্য নৌকার বেশি প্রয়োজন হয়। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনেও নৌকা ব্যবহার বাড়ে। এককথায় বিলাঞ্চলের লোকজনকে হাট-বাজার থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজসহ কর্মস্থলে যাতায়াতের জন্য তাদের নির্ভর করতে হয় নৌকার ওপর।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com