পানি না খেয়েই বছরের পর বছর বেঁচে আছেন যারা

পানির অপর নাম জীবন। পানি শরীরের একটি বড় উপাদান। নারীদের শরীরের ৫০ শতাংশ এবং পুরুষদের শরীরের ৬০ শতাংশ জুড়ে থাকে পানি। তাই নিজেদের শরীর ঠিক রাখার জন্য দৈনিক নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি পান করাটা প্রয়োজন। তবে পানি ছাড়া কীভাবে তাদের জীবন চলছে। অবিশ্বাস্য হলেও বিষয়টি সত্য, পৃথিবীতে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি রয়েছেন যারা দীর্ঘদিন পানিহীন রয়েছেন। সেইসঙ্গে তারা সুস্থ ও সবল রয়েছেন। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক এমন দু’জন ব্যক্তি সম্পর্ক- 

গিরি বালা

গিরি বালা

গিরি বালা
৫৬ বছর ধরে হাওয়া খেয়ে বেঁচে আছেন এই নারী। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, তিনি পানি এমনকি খাবারও খান না। বর্তমানে তার বয়স ৭০ বছর। আর পাঁচটা মেয়ের মতই গিরি বালার জীবন ছিলো। তিনি খুব খেতে পছন্দ করতেন। তবে দারিদ্রতার কষাঘাতে প্রায় সময়ই উপোস থাকতে হতো তাকে। মাত্র ৯ বছর বয়সে বিয়ে হয় তার। তবুও অভাব যেন পিছু ছাড়ে না। নিজে না খেয়ে স্বামী ও শ্বাশুড়ির মুখে অন্ন ঠেলে দিতেন তিনি। এভাবেই একদিন দু’দিন না খেয়ে থাকার অভ্যাস তৈরি হয়।

গিরি বালা একদিন এক সন্ন্যাসীর দেখা পান এবং তার দেয়া পরামর্শে আলো ও বাতাসের সাহায্যে বেঁচে থাকার দীক্ষা নেন। এরপর থেকে ক্রিয়া যোগাসন ও শ্বাসচর্চার মাধ্যমে খাবার থেকে দূরে সরে যান তিনি। এরপর থেকে তিনি কখনো অসুস্থ হননি এমনকি খাবার খাওয়ার প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করেননি। এভাবেই পানি ও খাবার ছাড়া দিব্যি আছেন এই নারী। তাকে পরীক্ষা করার জন্য টানা দু’মাস নজরে রাখা হয়। তবুও তার পানি পিপাসা কিংবা খাবার খাওয়ার প্রয়োজন পড়েনি। এছাড়াও শরীরের কোনো সমস্যাও ধরা পড়েনি।

প্রহ্লাদ জানি

প্রহ্লাদ জানি

প্রহ্লাদ জানি
১৯৪০ সাল থেকে খাবার কিংবা পানি ছাড়া বেঁচে আছেন ভারতের এই সন্ন্যাসী। ২০০৩ এবং ২০১০ সালে প্রহ্লাদ জানি আদতেও সত্যি বলছেন কিনা সেটা যাচাই করার জন্য পরীক্ষা করা হয়। ভারতের আহমেদাবাদে অবস্থিত স্টারলিং হাসপাতালের চিকিৎসক সুধীর শাহ নিজে এই পরীক্ষা শেষ করে জানান যে, প্রহ্লাদ জানি খাবার এবং পানি ছাড়া বেশ ভালোভাবেই বেঁচে আছেন। যদিও অনেকেই ব্যাপারটির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

 

তবে বিজ্ঞান নিজের মতন কাজ করুক কিংবা না করুক, প্রহ্লাদ জানি বেশ লম্বা একটি সময় সবার নজরবন্দী হয়ে থেকেছেন। কিন্তু কোনো পরীক্ষাতেই কোনো কাজ হয়নি। পুরোটা সময়েই ক্যামেরার সামনে ছিলেন প্রহ্লাদ জানি। কেবল গড়গড়া করা আর গোসল করা বাদে আর একবারের জন্যও পানির সংস্পর্শে যাননি তিনি। তাহলে কীভাবে নিজের শরীর পরিচালনা করেন তিনি? কেবল যে পানি পান বা খাবার খাননি প্রহ্লাদ জানি তা কিন্তু নয়, এই পুরোটা সময় মল-মূত্রও ত্যাগ করতে হয়নি তাকে।

 

টানা পনেরো দিনের পর্যবেক্ষণ শেষে পরীক্ষা করা হয় প্রহ্লাদকে। চিকিৎসকেরা জানান, সাধারণত পানি পান না করলে বা খাবার গ্রহণ না করলে যে প্রভাবগুলো মানুষের শরীরে দেখতে পাওয়া যায় সেগুলোর কোনোটাই ছিল না প্রহ্লাদ জানির শরীরে। সত্যি বলতে গেলে, তার বয়সের চাইতে আরো কমবয়সীদের মতন সুস্থ ও নীরোগ ছিল তার শরীর। প্রহ্লাদ জানির দাবী, সূর্য থেকেই নিজের দরকারী শক্তি পান তিনি।

পিটার ফেলেক

পিটার ফেলেক

পিটার ফেলেক
পিটার ফেলেক অবশ্য প্রহ্লাদ জানির মতো এতদিন ধরে পানি পান না করে বেঁচে নেই। খাবারটাও তিনি আর দশটা স্বাভাবিক মানুষের মতই খান। মল-মূত্র ত্যাগ করেন নিয়মিত। পিটার ফেলেকের পানি না পান করাটা পুরোটাই নিজের শখের বশে।

 

শুরুটা হয় ২০১২ সালের ৫ মে। পিটারের মনে হলো পানি না পান করেই থাকবেন তিনি। আর সেটাই করলেন শেষ পর্যন্ত। প্রথমে খানিকটা সোডা আর চকলেট মিল্ক পান করেছিলেন কিছুদিন। তবে ধীরে ধীরে সেগুলোও বাদ দিয়ে দেন পিটার নিজের খাবার তালিকা থেকে। এরপর থেকে কেবল কাঁচা সবজি খেয়েই নিজের শরীরের খাবার এবং পানির চাহিদা পূরণ করেছেন পিটার। বর্তমানে প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১ হাজার ক্যালরির খাবার গ্রহণ করেন তিনি। সবজি থেকে প্রাপ্ত পানি দিয়েই বেশ চলে যায় তার। বাড়তি পানির আর দরকারই পড়েনা।

 

অবশ্য গিরি বালা, প্রহ্লাদ জানি ও পিটার ফেলেকের নামগুলো অস্বাভাবিক উদাহরণের মতো করেই ভেবে নিয়েছেন গবেষক ও চিকিৎসকেরা। স্বাভাবিক মানুষগুলোর পক্ষে এমনটা সম্ভব নয়। যারা পেরেছেন তাদের শরীর সেভাবেই তৈরি এবং তাই খুব সহজেই পানি ছাড়া বেঁচে থাকতে পারছেন। আর সবার মতো আপনিও কি সুস্থ থাকতে চান? তাহলে প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান করুন!  সূএ:ডেইলি বাংলাদেশ ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» নির্বাচন বিলম্বিত হলে জনগণই রাস্তায় নামবে : ফারুক

» ‘জুলাই স্পিরিটের’ প্রতারণাকারীরা আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন : শিবির সভাপতি

» শুধুমাত্র ইসরায়েল ছাড়া ভারতের পাশে আজ কেউ নেই : পাকিস্তান

» আমার বিরুদ্ধে মানুষ জঘন্য মিথ্যাচার করছে : আসিফ নজরুল

» আ.লীগ নিষিদ্ধ ইস্যুতে তথ্য উপদেষ্টার ‘কয়েকটি কথা’

» আ. লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সমাবেশে জনতার ঢল, এখনও চলছে বিক্ষোভ

» প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে বিক্ষোভকারীদের জুমার নামাজ আদায়

» আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য সাগর গ্রেপ্তার

» আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চেয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জাতীয় সংলাপ চান: রাশেদ খান

» আ. লীগ নিষিদ্ধ হবে কি না, সেটি বিএনপির বিষয় নয় : মঈন খান

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

পানি না খেয়েই বছরের পর বছর বেঁচে আছেন যারা

পানির অপর নাম জীবন। পানি শরীরের একটি বড় উপাদান। নারীদের শরীরের ৫০ শতাংশ এবং পুরুষদের শরীরের ৬০ শতাংশ জুড়ে থাকে পানি। তাই নিজেদের শরীর ঠিক রাখার জন্য দৈনিক নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি পান করাটা প্রয়োজন। তবে পানি ছাড়া কীভাবে তাদের জীবন চলছে। অবিশ্বাস্য হলেও বিষয়টি সত্য, পৃথিবীতে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি রয়েছেন যারা দীর্ঘদিন পানিহীন রয়েছেন। সেইসঙ্গে তারা সুস্থ ও সবল রয়েছেন। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক এমন দু’জন ব্যক্তি সম্পর্ক- 

গিরি বালা

গিরি বালা

গিরি বালা
৫৬ বছর ধরে হাওয়া খেয়ে বেঁচে আছেন এই নারী। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, তিনি পানি এমনকি খাবারও খান না। বর্তমানে তার বয়স ৭০ বছর। আর পাঁচটা মেয়ের মতই গিরি বালার জীবন ছিলো। তিনি খুব খেতে পছন্দ করতেন। তবে দারিদ্রতার কষাঘাতে প্রায় সময়ই উপোস থাকতে হতো তাকে। মাত্র ৯ বছর বয়সে বিয়ে হয় তার। তবুও অভাব যেন পিছু ছাড়ে না। নিজে না খেয়ে স্বামী ও শ্বাশুড়ির মুখে অন্ন ঠেলে দিতেন তিনি। এভাবেই একদিন দু’দিন না খেয়ে থাকার অভ্যাস তৈরি হয়।

গিরি বালা একদিন এক সন্ন্যাসীর দেখা পান এবং তার দেয়া পরামর্শে আলো ও বাতাসের সাহায্যে বেঁচে থাকার দীক্ষা নেন। এরপর থেকে ক্রিয়া যোগাসন ও শ্বাসচর্চার মাধ্যমে খাবার থেকে দূরে সরে যান তিনি। এরপর থেকে তিনি কখনো অসুস্থ হননি এমনকি খাবার খাওয়ার প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করেননি। এভাবেই পানি ও খাবার ছাড়া দিব্যি আছেন এই নারী। তাকে পরীক্ষা করার জন্য টানা দু’মাস নজরে রাখা হয়। তবুও তার পানি পিপাসা কিংবা খাবার খাওয়ার প্রয়োজন পড়েনি। এছাড়াও শরীরের কোনো সমস্যাও ধরা পড়েনি।

প্রহ্লাদ জানি

প্রহ্লাদ জানি

প্রহ্লাদ জানি
১৯৪০ সাল থেকে খাবার কিংবা পানি ছাড়া বেঁচে আছেন ভারতের এই সন্ন্যাসী। ২০০৩ এবং ২০১০ সালে প্রহ্লাদ জানি আদতেও সত্যি বলছেন কিনা সেটা যাচাই করার জন্য পরীক্ষা করা হয়। ভারতের আহমেদাবাদে অবস্থিত স্টারলিং হাসপাতালের চিকিৎসক সুধীর শাহ নিজে এই পরীক্ষা শেষ করে জানান যে, প্রহ্লাদ জানি খাবার এবং পানি ছাড়া বেশ ভালোভাবেই বেঁচে আছেন। যদিও অনেকেই ব্যাপারটির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

 

তবে বিজ্ঞান নিজের মতন কাজ করুক কিংবা না করুক, প্রহ্লাদ জানি বেশ লম্বা একটি সময় সবার নজরবন্দী হয়ে থেকেছেন। কিন্তু কোনো পরীক্ষাতেই কোনো কাজ হয়নি। পুরোটা সময়েই ক্যামেরার সামনে ছিলেন প্রহ্লাদ জানি। কেবল গড়গড়া করা আর গোসল করা বাদে আর একবারের জন্যও পানির সংস্পর্শে যাননি তিনি। তাহলে কীভাবে নিজের শরীর পরিচালনা করেন তিনি? কেবল যে পানি পান বা খাবার খাননি প্রহ্লাদ জানি তা কিন্তু নয়, এই পুরোটা সময় মল-মূত্রও ত্যাগ করতে হয়নি তাকে।

 

টানা পনেরো দিনের পর্যবেক্ষণ শেষে পরীক্ষা করা হয় প্রহ্লাদকে। চিকিৎসকেরা জানান, সাধারণত পানি পান না করলে বা খাবার গ্রহণ না করলে যে প্রভাবগুলো মানুষের শরীরে দেখতে পাওয়া যায় সেগুলোর কোনোটাই ছিল না প্রহ্লাদ জানির শরীরে। সত্যি বলতে গেলে, তার বয়সের চাইতে আরো কমবয়সীদের মতন সুস্থ ও নীরোগ ছিল তার শরীর। প্রহ্লাদ জানির দাবী, সূর্য থেকেই নিজের দরকারী শক্তি পান তিনি।

পিটার ফেলেক

পিটার ফেলেক

পিটার ফেলেক
পিটার ফেলেক অবশ্য প্রহ্লাদ জানির মতো এতদিন ধরে পানি পান না করে বেঁচে নেই। খাবারটাও তিনি আর দশটা স্বাভাবিক মানুষের মতই খান। মল-মূত্র ত্যাগ করেন নিয়মিত। পিটার ফেলেকের পানি না পান করাটা পুরোটাই নিজের শখের বশে।

 

শুরুটা হয় ২০১২ সালের ৫ মে। পিটারের মনে হলো পানি না পান করেই থাকবেন তিনি। আর সেটাই করলেন শেষ পর্যন্ত। প্রথমে খানিকটা সোডা আর চকলেট মিল্ক পান করেছিলেন কিছুদিন। তবে ধীরে ধীরে সেগুলোও বাদ দিয়ে দেন পিটার নিজের খাবার তালিকা থেকে। এরপর থেকে কেবল কাঁচা সবজি খেয়েই নিজের শরীরের খাবার এবং পানির চাহিদা পূরণ করেছেন পিটার। বর্তমানে প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১ হাজার ক্যালরির খাবার গ্রহণ করেন তিনি। সবজি থেকে প্রাপ্ত পানি দিয়েই বেশ চলে যায় তার। বাড়তি পানির আর দরকারই পড়েনা।

 

অবশ্য গিরি বালা, প্রহ্লাদ জানি ও পিটার ফেলেকের নামগুলো অস্বাভাবিক উদাহরণের মতো করেই ভেবে নিয়েছেন গবেষক ও চিকিৎসকেরা। স্বাভাবিক মানুষগুলোর পক্ষে এমনটা সম্ভব নয়। যারা পেরেছেন তাদের শরীর সেভাবেই তৈরি এবং তাই খুব সহজেই পানি ছাড়া বেঁচে থাকতে পারছেন। আর সবার মতো আপনিও কি সুস্থ থাকতে চান? তাহলে প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান করুন!  সূএ:ডেইলি বাংলাদেশ ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com