মেজর আখতার (অব.): কিছুদিন আগে একটি কথা প্রচলিত হয়েছিল। আর তা হলো, ‘খেলা হবে’। খুবই অরুচিকর একটি বাক্য। বাক্যটি ব্যবহার করছিলেন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের দোর্দ- প্রতাপশালী এক নেতা। বাক্যটি ছিল আবার আমদানি করা। পাশের দেশের একজন মুখ্যমন্ত্রী তাঁর দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রাদেশিক রাজনীতিকে এক ধরনের খেলা হিসেবে নিয়েছিলেন। তাঁর এহেন বক্তব্যের মূল লক্ষ্য ছিল তাঁর দেশের প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনের চালকে গুরুত্বহীন করে দেওয়া। কারণ তখন রাজ্যসভার নির্বাচন চলছিল এবং ওই নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে হারানোর জন্য বিভিন্ন চাল চেলেছিলেন, যাকে মুখ্যমন্ত্রী খেলা হিসেবে নিয়েছিলেন এবং সেই খেলার জবাবে তিনি বলেছিলেন ‘এবার খেলা হবে’। নির্বাচন কোনো রাজনীতি নয়, এটি রাজনীতির একটি খন্ডিত অংশ। তাই নির্বাচন এক ধরনের খেলা, যার জয়-পরাজয় আছে। নির্বাচনে সবাইকে মাঠে নেমে অন্য সব খেলার মতো খেলতে হয়। এখানে ক্ষমতাসীনরা পরাজয় ঠেকানোর জন্য খেলে। আবার ক্ষমতার বাইরে যারা থাকে তারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য খেলে। কারণ ক্ষমতায় থাকলে এক ধরনের খেলা হবে। আবার ক্ষমতার বাইরে থাকলে আরেক ধরনের খেলা হবে। ক্ষমতায় থাকা ও না থাকার ওপর ভবিষ্যৎ রাজনীতি পুরোপরি নির্ভরশীল। তাই উভয়েই নির্বাচনের মাঠে খেলবে এবং তাদের খেলা দেখে জনগণ নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে তাদের রায় দেবে এবং সে রায়ে নির্বাচনের জয়-পরাজয় নির্ধারিত হবে। নির্বাচনের মাঠে খেলা মানে নিছকই খেলা। এখানে রাষ্ট্রকে ব্যবহার বা রাষ্ট্রীয় শক্তি প্রয়োগের কোনো সুযোগ নেই, থাকতে পারে না। উভয় পক্ষ মাঠে খেলবে তাদের বুদ্ধি, মেধা, শক্তি, কৌশল, চাল, চালাকি, ধোঁকা ইত্যাদি প্রয়োগ করে বা সত্য-মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে, চাপ সৃষ্টি বা প্রতিরোধ করে নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারলে অন্য সব খেলার মতোই জয় অর্জন করতে পারলেই জয়। ম্যারাডোনার মতো সবার চোখের আড়ালে হাত দিয়ে গোল দিয়ে দিতে পারলেও সবাই জয় বলে চিৎকার করে উঠবে। খেলাতে জয় জয়ই। এর কোনো পরিবর্তন নেই। তাই মুখ্যমন্ত্রী আগে থাকতেই প্রধানমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন যে, ‘এবার খেলা হবে’। সম্ভবত মুখ্যমন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কেউ পার পাবে না। নির্বাচনে জিততে হলে খেলেই জিততে হবে। তাই মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনে অত্যন্ত ঝানু খেলোয়াড় বলে নির্বাচনে ‘খেলা হবে’ বলে আগে থাকতেই ঘোষণা দিয়ে দিয়েছিলেন।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা ছিল তাঁর খেলোয়াড়সুলভ আচরণের বহিঃপ্রকাশ এবং নির্বাচনে সদাচার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তার দৃঢ়প্রত্যয়ের পূর্ব ঘোষণা। কিন্তু আমাদের ক্ষমতাসীন দলের নেতার ‘খেলা হবে’ ঘোষণা ছিল ব্যঙ্গাত্মক এবং আক্রোশে আক্রান্ত। সরকারের বিপক্ষে বিরোধী দল বিগত বছরের শেষ প্রান্তিকে লাগাতার রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়েছিল। সেই রাজনৈতিক কর্মসূচি রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার সম্পূর্ণ অধিকার সরকার ও সরকারের রাজনৈতিক দলের আছে এবং থাকবে। এমনকি বিরোধী দল রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে আইন অমান্য করতে গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পূর্ণ অধিকার ও ক্ষমতা আছে ও থাকবে সরকারের। এ ব্যাপারে কারও দ্বিমত করার সুযোগ নেই। কিন্তু ‘খেলা হবে’ বলে যে ব্যঙ্গাত্মক, আক্রমণাত্মক ও আক্রোশমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, তা ছিল অপ্রত্যাশিত। রাজনৈতিক হীনমন্যতার বহিঃপ্রকাশ। জনগণ ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছ থেকে এ রকম বক্তব্য কখনই কামনা করে না। রাজনীতির ‘খেলা হবে’ বক্তব্যের সুযোগ তো নেই। রাজনীতিতে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয় না। রাজনীতি হলো জনগণের কল্যাণ করার মত ও পথ। যার বা যাদের মত ও পথে জনগণের জন্য অধিক কল্যাণের সুযোগ থাকবে জনগণ সেই রাজনীতির দিকেই ঝুঁকবে। এরই নাম রাজনীতি। পুলিশ ও প্রশাসন দিয়ে বিরোধী দলকে ঠ্যাঙানোর নাম রাজনীতি নয়। এর নাম জনবিমুখ রাজনীতি। ‘খেলা হবে’ বলে নেতা ঘোষণা দিলেন, তিনি বিরোধী দলের কর্মসূচির বিরুদ্ধে খেলবেন। তাঁর এ খেলার ঘোষণার প্রতি উত্তর দেওয়ার মতো নেতা বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরে না থাকার কারণে দেশ গৃহযুদ্ধ থেকে মুক্তি পাচ্ছে। অন্তত আমার যদি বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরে ছোটখাটো একটা তাঁবু থাকত তাহলে আল্লাহকে হাজির-নাজির রেখে বলছি, ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে পার্টি অফিসের সামনে নেতাকে খেলা দেখিয়ে দিতাম। কারণ খেলা মানেই জয় অথবা পরাজয়। দুটিই খেলার সমান ফল। কাজেই ১০ ডিসেম্বর খেলা খেলেই দেখতাম নেতার কত দম!
রাজনীতি জনগণের কল্যাণ সাধনের একমাত্র সাধন। আজকের আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় জনগণের বিপক্ষে গিয়ে দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকা যায় না। রাজনীতিতে একচ্ছত্র ক্ষমতা জনবিচ্ছিন্ন করে ফেলে। নিজের ছায়াই প্রতিপক্ষ হয়ে যায়। চারদিক থেকে স্তাবকরা ঘিরে অন্ধ করে ফেলে। চারপাশে তখন বিশ্বাসী ও অনুগত কাউকে পাওয়া যায় না। সবাই খাই খাই, চাই চাই পার্টি হয়ে যায়। যতক্ষণ দেওয়া যাবে ততক্ষণ পা চাটবে, না দিলেই খেপে যাবে। তখন রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষ লাগবে না। চারপাশের লোভী স্তাবকরাই চরম সর্বনাশ করে দেবে। তখন রাজনীতি হিংস্র বর্বরতায় রূপ নেবে। বিরোধী রাজনৈতিক দল কখনই হিংস্র বা চরম সহিংস হবে না। সন্ত্রাস, হিংসা, দ্বেষ, প্রতিশোধ সব সময় কাছের বা পক্ষের লোকেরা করে। বিরোধীরা জানে অনিয়মতান্ত্রিক পথে রাজনীতি করলে চরম ক্ষতি তাদের নিজেদেরই হবে। ইতিহাস শিক্ষা দেয়, যারাই রাজনীতিতে চরমপন্থা অবলম্বন করেছে, বিরোধীদের নিধন রাজনীতি করেছে তারাই চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারাই সবার আগে নিধন হয়েছে। সম্প্রতি হুমকি-ধমকির রাজনীতি শুরু হওয়ার আলামত দেখা যাচ্ছে। বিরোধী পক্ষের কেউ কেউ সরকারের বিরুদ্ধে বেশ হুমকি-ধমকি দিয়ে রাজনৈতিক সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন। সবাই বুঝতে পারে, এসব বক্তব্যের পেছনের গোপন কারণ কী? মানুষ যখন তার অবস্থান বা অস্তিত্বের সংকটের আশঙ্কা করে তখন মানুষ অনেকটা বেপরোয়া হয়ে যায়। নিজেকে চরম যোগ্য দেখাতে গিয়ে নিজের অযোগ্যতা বা সীমাবদ্ধতাই প্রকারান্তরে প্রকাশ করে ফেলে। তাই সম্প্রতি বেশ অনেক নেতার বক্তব্যে দেখা যাচ্ছে, তারা প্রকাশ্যেই বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছেন- সরকারি নেতারা তাড়াতাড়ি ক্ষমতা না ছাড়লে, ভবিষ্যতে ক্ষমতা তো ছাড়বেই কিন্তু তখন তারা দেশ ছেড়ে পালাতেও পারবে না। বক্তব্যগুলো কেমন যেন বিদঘুটে ও অশালীন। এ ধরনের বক্তব্য অবশ্যই মেনে নেওয়া যায় না যে, বিরোধী দল শক্তিশালী আন্দোলন করতে পারলে সরকার ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হতে পারে। এটি অস্বাভাবিক কিছু নয় এবং অসাধ্য বলেও আমি মনে করি না। অতীতে আন্দোলনের মুখে বিভিন্ন সরকার ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু তারা সবাই দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে, এমন কোনো নজির এখনো সৃষ্টি হয়নি। এবং সৃষ্টি হোক তা-ও কাম্য নয়। অতীতে আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে, এমন নেতারা আবার পরে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা, বিশেষ দূত ও মন্ত্রী হয়েছেন। কাজেই আন্দোলনের মুখে সরকার ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হলে তাদের দেশ থেকে পালাতে হবে- এ ধরনের বক্তব্য যে অতি হঠকারী, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। আমাদের দেশে অতিবিপ্লবী কোনো রাজনৈতিক দল নেই। শক্তিশালী ধর্মীয় মৌলবাদী দলও নেই। মোটামুটি সবাই মধ্যপন্থি, উদার ও সহজ-সরল জীবনব্যবস্থায় বিশ্বাসী। এখানে উগ্র কোনো মতবাদ নেই। তবে রাজনীতিটা অবিশ্বাস ও প্রতিহিংসার আবর্তে আটকে আছে। যার ফলে সবাই নিজেদের দুর্বলতা ঢেকে রাখতে হুমকি-ধমকির বক্তব্য দিয়ে যার যার অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করছে। এ ধরনের দায়িত্বহীন ও আক্রোশমূলক বক্তব্যে রাজনীতিতে অস্থিরতা তথা অবিশ্বাস, প্রতিহিংসা বা প্রতিশোধলিপ্সু রাজনীতি সৃষ্টি হবে, যা কারও জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না।
দেশ ছেড়ে পালানোর হুমকির জবাবে ইতোমধ্যে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী পাল্টা বক্তব্য দেওয়া শুরু করে দিয়েছেন। প্রভাবশালী এক মন্ত্রী তো বলেই দিয়েছেন, তিনি দেশ ছেড়ে পালাবেন না। বরং বিরোধী দলের নেতার বাড়িতে গিয়ে উঠবেন। খুবই কৌঁসুলি এবং রাজনৈতিক উদার বক্তব্য। এ ধরনের পরিপক্ব বক্তব্য রাজনৈতিক মেধা ও শিষ্টাচারসহায়ক হতে নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে। সরকারের অন্য মন্ত্রীরাও ইতোমধ্যে প্রকাশ্যেই বলে বেড়াচ্ছেন যে, তারা ক্ষমতাও ছাড়বেন না এবং দেশ ছেড়েও পালাবেন না। আবার স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাঁর দলের কারও দেশ থেকে পালানোর নাকি উদাহরণ নেই তবে বিরোধী শিবিরের নেতারা নাকি অনেকে পালিয়ে আছেন! কাজেই রাজনীতি এখন চলে যাচ্ছে দেশ ছেড়ে পালানোর পাল্টাপাল্টি হুমকিতে। আমরা রাজনীতিবিদ তথা জাতীয় নেতারা ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়, বা নিজেদের কোনো দুর্বলতার কারণেই হোক- দেশটাকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছি। একটু গভীরভাবে চিন্তা ও বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, দেশে একটি অনিশ্চয়তার অবস্থা সৃষ্টি হতে পারলে আমাদের অনেকের রাজনৈতিক অবস্থা স্থির থাকে, বিরোধী দলে থেকেও আর্থিকভাবে সচ্ছল থাকা যায়, নিজেদের অর্জিত সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে। গরম গরম চটকদার সরকারবিরোধী বক্তব্য দিয়ে ইউটিউব থেকে দিনের শেষে ভালো আয়-রোজগার হয়। সবচেয়ে বড় ফায়দা বিরোধী রাজনৈতিক দলের লাখো-কোটি অসহায় সদস্যের রাজনৈতিক পরিচয় দেওয়ার নামে তাদের ওপর নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ধরে রাখা যায়। আন্দোলনের মিতালি খেলার নামে চাঁদাবাজির এক বিশাল সুযোগ সৃষ্টি হয়। বিদেশে থাকা লাখ লাখ শ্রমজীবীর সহানুভূতি ও লাগাতার সাহায্য-সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে জ্বালাময়ী বক্তৃতা অনেক কাজে আসে। কিন্তু আমরা একবারও বিবেচনায় আনি না যে, সরকারের লোকেরা ক্ষমতা ছেড়ে পালানোর আগে আমাদের তারা কোথায় রাখছে? দলে এমন কোনো সক্রিয় নেতা বা কর্মী নেই, যার মাথার ওপর অজস্র মামলা ঝুলছে না, দিনের পর দিন, মাসের পর মাস তারা ঘরছাড়া, বাড়িছাড়া। মামলা চালানোর খরচ জোগাড় করা তো পরের ব্যাপার, নিজের ও পরিবারের দৈনন্দিন খাবার জোগাড়ই তারা করতে পারছে না। অথচ গুরুত্বপূর্ণ নেতারা দায়িত্বহীন বক্তব্য দিয়ে সরকারকে তাদের অবস্থান মজবুত করতে অব্যাহত ও অনাহূত সুযোগ দিয়ে যাচ্ছেন। অথচ চরম বাস্তবতা, আগামী দিনের রাজনীতিতে এদের অনেকেরই কোনো ভবিষ্যৎ নেই।
আমরা সবাই আন্দোলন করতে চাই। আন্দোলনের কোনো বিকল্প আমাদের নেই। কিন্তু এই বক্তৃতাসর্বস্ব আন্দোলন আমাদের কোনো কাজে আসবে না। অযথা সময় ও অর্থ নষ্ট। আন্দোলন করতে হলে সবাইকে একযোগে মাঠে নামতে হবে। মরলে একবারই মরতে হবে এবং সবাইকে একসঙ্গেই মরতে হবে। না হলে মাথার মধ্যে নির্বাচনের খায়েশ আর রাজপথে আন্দোলনের নাটক আমাদের অস্তিত্ব বিলোপ করে ফেলবে। সরকার ২০২৩ সালে সবাইকে দেশি-বিদেশি দালালদের মাধ্যমে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে আন্দোলনের খেলায় ব্যস্ত রাখবে। তারপর বিএনপিকে নিয়ে খেলবে নির্বাচনী খেলা। সেই খেলায় বিএনপিকে মাঠে নামিয়ে চূড়ান্ত মারটি দিয়ে বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলের সমাধি রচনা করে দেবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, পরিবর্তন আসবে কিন্তু পরিবর্তনের আগে বিএনপির চিরসমাধি করে দিয়ে যাবে।
আমাদের রাজনীতির প্রচ- গুণগত পরিবর্তন হয়ে গেছে। প্রবীণদের আর রাজনীতিতে তেমন প্রভাব নেই। ১/১১-এর পট পরিবর্তন রাজনীতিতে তাৎক্ষণিক যে পরিবর্তন আনতে তথা নেতৃত্বের চরিত্রের যে গুণগত মান বাড়াতে পারেনি, সেখানে গত এক যুগের রাজনীতি নীরবে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে যার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে পারে আগামী নির্বাচনে। দেশে একটি নতুন পেশিশক্তির জন্ম হয়েছে, যারা বিচ্ছিন্নভাবে আগামী নির্বাচনের জন্য নীরব প্রস্তুতি নিচ্ছে। বড় দুই দলের ৬০০ মনোনীত প্রার্থীর পাশাপাশি আরও তিন বা গুণ প্রার্থী তৈরি হয়ে যাচ্ছে, যাদের দলীয় গন্ডিতে ধরে রাখা কঠিন হবে। আগামী নির্বাচনে নতুন ও তরুণ নেতৃত্বের বিস্ফোরণ ঘটবে। নেতৃত্বের এ বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বড় দুই দলই। নেতৃত্বের সর্বোত্তম সময় হলো মধ্যবয়স তথা ৫০-এর কম বা বেশি যখন ঝুঁকি নেওয়া যায়। যখন মাঠে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দেশময় ঘুরে বেড়ানো যায়। যখন কাজ করার পরিকল্পনা নেওয়া যায়। যখন নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার সামর্থ্য তৈরি হয়। বয়স দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বাড়ায় কিন্তু কাজ করার সক্ষমতা কমিয়ে দেয়। যে সক্ষমতা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। তা ছাড়া নতুন প্রজন্ম আধুনিক জ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ, বিশ্বায়নে অনেক বেশি পারঙ্গম। কাজেই পরিবর্তন অত্যাসন্ন। তাই প্রবীণদের মেনে নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। না হলে সংঘাত অনিবার্য। তবে জয় নতুনদেরই হবে। পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী।
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য । সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন