নেত্রকানার গ্রামাঞ্চলে চলছে ধান সিদ্ধ উৎসব। স্কুল মাঠ কিংবা সড়কজুড়ে ধানের গন্ধে বিমোহিত চারপাশ। এবার রোপা আমনের বাম্পার ফলন হওয়ায় নেত্রকোনার কৃষকের মুখে মুখে হাসির ঝিলিক। নবান্নের উৎসবে মেতেছে নানা বয়সীরা। ধানের দাম ভালো থাকায় খুশি কৃষক। নারী-পুরুষ-শিশুসহ পরিবারের সবাই যেন এখন ব্যস্ত ঘরে ফসল তোলায়। তবে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে লাভের পাল্লা সমান সমান বলে কৃষকদের দাবি। ধানের দাম পেলেও সবকিছুর দাম বাড়তি থাকায় তাদের আয় থাকছে না এবার।
এদিকে শ্রমিকদের নাভিশ্বাস। সারদিন কাজ শেষে যা আয় হয় তার সবই ব্যয় হয় প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর ১ লাখ ৩২ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্র ছিল রোপা আমন আবাদে। কিন্তু ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭৫ হেক্টর অর্জিত হয়েছে। জেলার হাওরাঞ্চলে ৮০৫০০ জন কৃষক এবং সমতলে রয়েছেন ৪৫২৪৮৪ জন কৃষক।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, জেলার বেশিরভাগ মানুষ বোরো ফসেলের উপর নির্ভরশীল। বাকিগুলোতে আমন আবাদ হয়। এ বছর জেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ায় যেমন খুশি কৃষক। তেমনি খুশি কৃষি বিভাগও।
জেলার উঁচু এলাকার ধান কর্তনের পর এখন চলছে সিদ্ধ এবং শুকানোর প্রস্তুতি। গ্রামঞ্চলের স্কুলমাঠ সড়ক সবকিছুই যেন এখন কৃষকদের দখলে। শ্রমিকদের পাশাপাশি বেশিরভাগই হারভেস্টার মেশিনে অল্প সময়ে ঘরে তুলছেন ধান। উলুয়াটি গ্রামের কৃষক আব্দুল হাই-সহ অনেকেই জানান, কাঠা প্রতি এবার ধান পাচ্ছেন ৪ থেকে ৫ মণ করে।
কাঠাপ্রতি ২ হাজার টাকা খরচ হলেও ধান উঠেছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার। এতে তাদের এবার ধারদেনা করতে হবে না। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে আবার খোরাকি হবে কোনও রকমে। এক মণ ধান বেচে ১৫ দিনের খাবারসহ সাবান পানি ব্যবহার করে পোষাবে না।
তবে উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে গ্রামের কৃষক পরিবারের নারীরাও পাড়া-পড়শি সবাইকে নিয়ে আনন্দে ধান শুকাচ্ছেন।
চারদিকে উৎসবের আমেজ। দিনরাত এক করে ঘরের খাবার তৈরিতে তারা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। ধানের দর সন্তোষজনক হওয়ায় খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারবেন বললেও অন্যান্য জিনিসের দামের জন্য ফলনে লাভের পাল্লা সমান সমান বলে দাবি তাদের। তবে নিম্নআয়ের মানুষদের মাঝে রয়েছে চরম অসন্তোষ।