সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও টিভি উপস্থাপক জিল্লুর রহমান স্বৈরাচার হাসিনার পতন ও দেশত্যাগের এক বছর পার হওয়ার পরও রাজনীতির অস্থিরতা, নির্বাচনের প্রস্তুতির ধীর গতি এবং বিচারহীনতার প্রশ্নে সরব হয়েছেন।
সোমবার নিজের ইউটিউব চ্যানেলে এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘মানুষ এখনো নতুন দিনের স্বপ্ন দেখেনি, তারা ভয় নয় রোডম্যাপ চায়, ট্যাগিং নয় ন্যায় চায়।’ এক বছর আগে মানুষ ভেবেছিল- এবার মোড় ঘুরবে। কিন্তু বাস্তবে কি মোড় ঘুরেছে, নাকি গাড়িটাই শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে- এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন তিনি।
জিল্লুর রহমান বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার মিশন ঢাকায় এসেছে, এটা ভালো খবর। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তারা যা দেখছে শুনছে, সেই লঙ্ঘনের খাতা খুলবে তো? গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে গোলাগুলি, পাঁচজনের মৃত্যু, হাজারো মানুষের নামে মামলা- এসব কি নতুন দিনের সংকেত, নাকি পুরনো দিনেরই পুনরাবৃত্তি?
তিনি নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তার ভাষায়, ভোট কাগজে আছে, বাজেটেও আছে। কিন্তু মাঠে সীমানা নির্ধারণ ঝুলে আছে, ভোটার তালিকা ধীর, নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্তি আরো ধীরতর। নির্বাচন কমিশনের লজিস্টিক প্রস্তুতিরও বাস্তব গতি চোখে পড়ছে না।
প্রবাসী ভোটারদের অন্তর্ভুক্তি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা, এমনকি নির্বাচনী সরঞ্জামের টেন্ডার ও সরবরাহ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। বিচারব্যবস্থা নিয়েও সরাসরি কথা বলেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনে যারা মাঠে ছিল, তাদের হয়রানি না করার ঘোষণা শোনাতে ভালো লাগলেও, এর মানে দাঁড়ায় যাদের পক্ষে তারা নিরাপদ, যাদের বিপক্ষে তারা অভিযুক্ত-এমন বিচার কি টেকসই রাষ্ট্র নির্মাণ করে, নাকি নতুন বৈষম্য তৈরি করে?
নির্বাচন প্রসঙ্গে জিল্লুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক নৈতিকতা সনদ জরুরি। প্রতিটি দলের সহাবস্থান, সহনশীলতা, অস্ত্র বর্জন, ভুয়া খবর না ছড়ানো, প্রশাসনে হস্তক্ষেপ না করার বিষয়ে তিন-চার পাতার সনদে সম্মত হোক।
তিনি সেপ্টেম্বরকে নির্বাচনী প্রস্তুতির জন্য মোক্ষম সময় আখ্যা দিয়ে বলেন, সীমানা নির্ধারণ, ভোটার তালিকা চূড়ান্ত, প্রবাসী ভোটের পাইলট প্রকল্প- সব এখনই শুরু না করলে ফেব্রুয়ারির ভোট ক্যালেন্ডারে থাকবে, ইতিহাসে নয়।
যোগাযোগ কৌশল নিয়েও সমালোচনা করেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব যখন বলেন- আগামী সাত দিন খুব ক্রুশিয়াল। তাতে মানুষ আতঙ্কিত হয়। সরকার কি মানুষের উদ্বেগ কমাবে, নাকি ভয় দেখাবে? ভয় দেখিয়ে নয়, রোডম্যাপ দেখিয়ে আস্থা ফেরাতে হবে।
ভিডিওর শেষ দিকে জিল্লুর রহমান বলেন, এই নির্বাচন টেস্ট ম্যাচ না, টি-টোয়েন্টি। হাতে সময় কম। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সংবিধান ও আইনের ন্যূনতম সংস্কার, ভোটার তালিকা ও সীমানা চূড়ান্ত এবং মাঠের প্রস্তুতিতে ট্র্যাকশন না দেখাতে পারলে সবকিছুই ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।