সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক : নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, ‘একটি ভালো এবং সুষ্ঠু ভোটের পূর্ব শর্তই হচ্ছে একটি সুষ্ঠু ও নির্ভুল ভোটার তালিকা। বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই প্রথম সভাতেই আমরা সিদ্ধান্ত নেই, এবারের ভোটার তালিকাটি আমরা হালনাগাদ করব। বাড়ি বাড়ি যাওয়ায় বাধ্যবাধকতা নেই এবং ভবিষ্যতে আর কখনো বাড়ি বাড়ি যাব কি না আমরা জানি না। কারণ এই সেবাটি সারা বছর সব সময় উন্মুক্ত।
আজ বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ভোটের তারিখ নিয়ে ইসি বলেন, নির্বাচনের সময়টা আসলে নির্বাচন কমিশনের হাতে নেই। তবে আমরা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার গত ১৬ ডিসেম্বরের বক্তব্য থেকে একটা মোটামুটি ধারণা পাই। তিনি বলেছিলেন- সংস্কার কার্যক্রম যদি সংক্ষিপ্ত আকারে করতে হয়, রাজনৈতিক দলগুলো যদি সে পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ায়, তাহলে আগামী ডিসেম্বর। আর যদি সংস্কার কার্যক্রম আরও একটু এক্সটেন্ডেড করতে দেওয়া হয় তাহলে ২০২৬ সালের জুন মাসের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব। আমরা নির্বাচন কমিশন মোটামুটি এই সময়টা সামনে রেখেই প্রস্তুতি নিচ্ছে।
গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে ইসি সানাউল্লাহ ভুয়া ভোটাদের ব্যাপারে বলেন, ‘যাদের ভোটার তালিকায় থাকার কথা, তাদের না থাকা এবং যাদের ভোটার তালিকায় থাকার কথা না, তাদের উপস্থিতি এটাই সমস্যা। বর্তমান পদ্ধতিতে কিন্তু ভোটার তালিকা নিয়ে খুব বেশি জালিয়াতি করার সুযোগ নেই। কারণ এটা একটা ডাটাবেজের মাধ্যমে সেন্ট্রালি কন্ট্রোলড হয়, ক্রস চেক করা হয়। মূল সমস্যা হয় যখন মৃত ব্যক্তিদের যথাযথভাবে বাদ না দিতে পারি। এটা যে পুরোটাই প্রতারণামূলক তাও না। আমাদের মানুষ অতটা সচেতন নয় যে, কেউ মারা গেলে অফিসে গিয়ে ফরম পূরণ করে মৃত্যুর সংবাদ দেবে। এটা আমাদের সামাজিক বাস্তবতা।
জন্ম নিবন্ধন সংক্রান্ত সমস্যা থাকবে না বলেও এ সময় আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, অন্যতম যে কারণে আমরা মাঠ পর্যায়ে গেছি, ভোটার তালিকা সম্বন্ধে যেসব কথা বাজারে প্রচলিত আছে সেগুলো থেকে ভোটার তালিকাকে ত্রুটিমুক্ত করা। যেমন- ভুয়া ভোটার তালিকা।
‘ভুয়া ভোটার তালিকা বলতে প্রথম যেটি বোঝায়, সেটি হচ্ছে মৃত ব্যক্তিদের ভোটার তালিকা থেকে কর্তন না করা। আমরা ধারণা করেছিলাম এই সংখ্যাটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যা হবে। আমি আজকে পর্যন্ত যে উপাত্ত পাচ্ছি, এক শতাংশ অনেক আগেই অতিক্রম করে গেছে, আমার মনে হয় এটা দুই শতাংশে চলে যেতে পারে। তাহলে আমরা ধরতে পারি, ১৮ থেকে ২৪ লাখ মৃত ভোটার এই তালিকায় ছিল।
ভোটারদের তথ্য হালনাগাদ নিয়ে তিনি বলেন, আজকে বাড়ি বাড়ি যাওয়ার দিন শেষ কিন্তু আগামীকাল থেকে যারা এখনো নিবন্ধন করতে পারেননি, তারা যেকোনো সময় অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারবেন। আমরা বোধ করি, আমাদের এই শত চেষ্টার পরও কিছু মানুষ সেবার বাইরে থেকে যাবেন।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, আরেকটি বিষয় আমাদের ভোটার তালিকাকে বিতর্কিত করে, সেটি হলো দ্বৈত উপস্থিতি। একই এলাকার ভোটার তালিকায় দুইবার উপস্থিতি অথবা দুটি এলাকার ভোটার তালিকায় উপস্থিতি। যদিও এটার সুযোগ অনেক কম। কারণ দ্বৈত উপস্থিতি ঘটনাটা সাময়িক। তথ্য হালনাগাদের পর পরই একটি ব্লক করে দেওয়া হয়।
পুরোনো তালিকায় নারী ভোটারদের অংশগ্রহণ কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত বছর পর্যন্ত পুরুষের চেয়ে নারী ভোটার ১৮ লাখ কম ছিল। গত ২ জানুয়ারি আমাদের এই বছরের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। এতে পুরুষের চেয়ে নারী ভোটারের সংখ্যা আরও কম। প্রায় ৩০ লাখ কম। আমার মনে হয়, নারী ভোটারের সংখ্যা বেশি হওয়া উচিত ছিল। এক্ষেত্রে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। ধর্মীয় জায়গা থেকে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠাগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখতে পারে।