নিউইয়র্কে বন্দুক হামলায় বাংলাদেশিসহ নিহত ৪

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে বন্দুক হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে এক বাংলাদেশি রয়েছেন। দিদারুল ইসলাম (৩৬) নামের ওই বাংলাদেশি অভিবাসী নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের একজন কর্মকর্তা। স্থানীয় সময় সোমবার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।

 

সিএনএন জানিয়েছে, দিদারুল নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে তিন বছর ছয় মাস কর্মরত ছিলেন। তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা এবং তার দু’টি ছোট সন্তান রয়েছে।

বার্তা সংস্থা এপি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নিউইয়র্ক শহরের একটি বহুতল ভবনে স্থানীয় সময় সোমবার এক বন্দুকধারী হামলা চালায়। এতে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে কর্মরত একজন বাংলাদেশি অভিবাসীসহ চারজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। পরে এক পর্যায়ে বহুতল ভবনটির ৩৩ তলায় উঠে বন্দুকধারী আত্মহত্যা করেছে বলে পুলিশ জানায়।

 

পুলিশ জানিয়েছে, বন্দুকধারীর নাম শেন তামুরা, তিনি লাস ভেগাসের বাসিন্দা। তার মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পূর্ব ইতিহাস রয়েছে। তবে কী কারণে তিনি এই হামলা চালিয়েছেন, তা এখনো জানা যায়নি। নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেন, ঘটনায় আরও একজন গুরুতর আহত হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন।

 

নিরাপত্তা ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, এক ব্যক্তি একটি পার্ক করা বিএমডব্লিউ গাড়ি থেকে নেমে এম৪ রাইফেল হাতে নিয়ে ভবনের দিকে এগিয়ে যায়। ভবনে ঢুকেই সে পুলিশ কর্মকর্তার ওপর গুলি চালায় এবং আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করা এক নারীকে গুলি করে। এরপর লবিতে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকে।

 

পুলিশ জানায়, বন্দুকধারী পরে এলিভেটরের দিকে যায় এবং নিরাপত্তা ডেস্কের পেছনে লুকিয়ে থাকা এক নিরাপত্তাকর্মী ও লবিতে থাকা আরও একজনকে গুলি করে। এরপর সে ভবনের ৩৩ তলায় উঠে একটি রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানে গিয়ে একজনকে গুলি করে হত্যা করে এবং পরে নিজেই গুলি করে আত্মহত্যা করে।

 

পুলিশ জানায়, বন্দুকধারীর গাড়ি থেকে একটি রাইফেল কেস, একটি রিভলভার, গুলি ও ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার পর স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে নিউইয়র্ক ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা পার্ক অ্যাভিনিউর ওই অফিস ভবনে গিয়ে উপস্থিত হন। ভবনটিতে দেশের শীর্ষ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ন্যাশনাল ফুটবল লিগের (এনএফএল) অফিস রয়েছে।

 

নিউইয়র্ক পুলিশের কমিশনার সংবাদ সম্মেলনে জানান, নিহত পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম ছিলেন ব্রঙ্কসের ৪৭ নম্বর প্রিসিংটের সদস্য। ঘটনার সময় তিনি অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলেন পার্ক অ্যাভিনিউয়ের সেই ভবনের নিরাপত্তার কাজে। তাঁর বাড়ি বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায়। স্ত্রী এবং দুই শিশু পুত্রের জনক দিদারুল বছর চারেক আগে নিউইয়র্ক পুলিশের ট্রাফিক এনফোর্সমেন্ট ডিপার্টমেন্ট ছেড়ে পুলিশ বিভাগে অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। তাঁর স্ত্রী বর্তমানে তৃতীয় সন্তানসম্ভবা।

 

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, ঘটনার দিন স্থানীয় বিকেল সময় সাড়ে পাঁচটার দিকে একটি গাড়ি এসে থামে ভবনের সামনে। গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন শেন তামুরা নামের এক ২৭ বছর বয়সী যুবক, যার পরনে ছিল বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট এবং হাতে ছিল স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র। ভবনের ভিতরে ঢুকেই তিনি গুলি চালান। প্রথমে লবির নিরাপত্তাকর্মী ও সাধারণ লোকজনের দিকে, পরে লিফট ব্যবহার করে ভবনের উপরের তলায় উঠে সেখানে আরও কয়েকজনকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়।

 

দিদারুল ইসলামের মৃত্যুতে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে কর্মরত কয়েক শত বাংলাদেশি কর্মকর্তার সকলেই শোকে আচ্ছন্ন। সহকর্মীর মৃত্যুর পর অনেকে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ অফিসার অ্যাসোসিয়েশন তথা বাপা এক বিবৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে এবং দিদারুলের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেছে।

 

আরও গভীর শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম এবং সেক্রেটারি মোহাম্মদ আলী, আমেরিকা-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট ও সিইও হাসানুজ্জামান হাসান, ডেমক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার ড. দীলিপ নাথ এবং অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। তারা সকলেই পৃথক পৃথক বিবৃতিতে দিদারুল ইসলামকে কম্যুনিটির সাহস ও সম্মানের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ছাত্র সংসদ না থাকলে রাজনীতি পেশিশক্তির হাতে চলে যাবে: নূর

» ‘জামায়াত-শিবির রাজাকার’ স্লোগান দেওয়ার জন্য একটি দলের নেতাকর্মীদেরও লিখে দেওয়া হয়েছে: ড. শফিকুল

» বিএনপি বা এনসিপির নয়, পুলিশ হবে জনতার: হাসনাত আবদুল্লাহ

» বাংলাদেশের প্রতি ইঞ্চি মাটি থেকে আমরা মুজিববাদ বিতাড়িত করব: নাহিদ

» বিচার-সংস্কারের আগে নির্বাচন হলে সেটা জাতির জন্য ডিজাস্টার: জামায়াতের আমির

» আগামীর বাংলাদেশে মিডিয়াকে দালাল হিসেবে দেখতে চাই না: সারজিস

» গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষের দায় গোটা বিশ্বের: শায়খ আহমাদুল্লাহ

» মাঝে মাঝে ভয় হয়, জুলাইয়ের শিক্ষা ক্ষয়ে যাবে: প্রধান উপদেষ্টা

» সৌদি যুবরাজের আমন্ত্রণে রিয়াদ সম্মেলনে যাচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস

» পুলিশের সুনাম-দুর্নাম আপনাদের ওপর নির্ভর করে: এসআইদের ডিএমপি কমিশনার

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

নিউইয়র্কে বন্দুক হামলায় বাংলাদেশিসহ নিহত ৪

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে বন্দুক হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে এক বাংলাদেশি রয়েছেন। দিদারুল ইসলাম (৩৬) নামের ওই বাংলাদেশি অভিবাসী নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের একজন কর্মকর্তা। স্থানীয় সময় সোমবার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।

 

সিএনএন জানিয়েছে, দিদারুল নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে তিন বছর ছয় মাস কর্মরত ছিলেন। তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা এবং তার দু’টি ছোট সন্তান রয়েছে।

বার্তা সংস্থা এপি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নিউইয়র্ক শহরের একটি বহুতল ভবনে স্থানীয় সময় সোমবার এক বন্দুকধারী হামলা চালায়। এতে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে কর্মরত একজন বাংলাদেশি অভিবাসীসহ চারজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। পরে এক পর্যায়ে বহুতল ভবনটির ৩৩ তলায় উঠে বন্দুকধারী আত্মহত্যা করেছে বলে পুলিশ জানায়।

 

পুলিশ জানিয়েছে, বন্দুকধারীর নাম শেন তামুরা, তিনি লাস ভেগাসের বাসিন্দা। তার মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পূর্ব ইতিহাস রয়েছে। তবে কী কারণে তিনি এই হামলা চালিয়েছেন, তা এখনো জানা যায়নি। নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেন, ঘটনায় আরও একজন গুরুতর আহত হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন।

 

নিরাপত্তা ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, এক ব্যক্তি একটি পার্ক করা বিএমডব্লিউ গাড়ি থেকে নেমে এম৪ রাইফেল হাতে নিয়ে ভবনের দিকে এগিয়ে যায়। ভবনে ঢুকেই সে পুলিশ কর্মকর্তার ওপর গুলি চালায় এবং আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করা এক নারীকে গুলি করে। এরপর লবিতে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকে।

 

পুলিশ জানায়, বন্দুকধারী পরে এলিভেটরের দিকে যায় এবং নিরাপত্তা ডেস্কের পেছনে লুকিয়ে থাকা এক নিরাপত্তাকর্মী ও লবিতে থাকা আরও একজনকে গুলি করে। এরপর সে ভবনের ৩৩ তলায় উঠে একটি রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানে গিয়ে একজনকে গুলি করে হত্যা করে এবং পরে নিজেই গুলি করে আত্মহত্যা করে।

 

পুলিশ জানায়, বন্দুকধারীর গাড়ি থেকে একটি রাইফেল কেস, একটি রিভলভার, গুলি ও ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার পর স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে নিউইয়র্ক ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা পার্ক অ্যাভিনিউর ওই অফিস ভবনে গিয়ে উপস্থিত হন। ভবনটিতে দেশের শীর্ষ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ন্যাশনাল ফুটবল লিগের (এনএফএল) অফিস রয়েছে।

 

নিউইয়র্ক পুলিশের কমিশনার সংবাদ সম্মেলনে জানান, নিহত পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম ছিলেন ব্রঙ্কসের ৪৭ নম্বর প্রিসিংটের সদস্য। ঘটনার সময় তিনি অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলেন পার্ক অ্যাভিনিউয়ের সেই ভবনের নিরাপত্তার কাজে। তাঁর বাড়ি বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায়। স্ত্রী এবং দুই শিশু পুত্রের জনক দিদারুল বছর চারেক আগে নিউইয়র্ক পুলিশের ট্রাফিক এনফোর্সমেন্ট ডিপার্টমেন্ট ছেড়ে পুলিশ বিভাগে অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। তাঁর স্ত্রী বর্তমানে তৃতীয় সন্তানসম্ভবা।

 

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, ঘটনার দিন স্থানীয় বিকেল সময় সাড়ে পাঁচটার দিকে একটি গাড়ি এসে থামে ভবনের সামনে। গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন শেন তামুরা নামের এক ২৭ বছর বয়সী যুবক, যার পরনে ছিল বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট এবং হাতে ছিল স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র। ভবনের ভিতরে ঢুকেই তিনি গুলি চালান। প্রথমে লবির নিরাপত্তাকর্মী ও সাধারণ লোকজনের দিকে, পরে লিফট ব্যবহার করে ভবনের উপরের তলায় উঠে সেখানে আরও কয়েকজনকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়।

 

দিদারুল ইসলামের মৃত্যুতে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে কর্মরত কয়েক শত বাংলাদেশি কর্মকর্তার সকলেই শোকে আচ্ছন্ন। সহকর্মীর মৃত্যুর পর অনেকে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ অফিসার অ্যাসোসিয়েশন তথা বাপা এক বিবৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে এবং দিদারুলের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেছে।

 

আরও গভীর শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম এবং সেক্রেটারি মোহাম্মদ আলী, আমেরিকা-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট ও সিইও হাসানুজ্জামান হাসান, ডেমক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার ড. দীলিপ নাথ এবং অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। তারা সকলেই পৃথক পৃথক বিবৃতিতে দিদারুল ইসলামকে কম্যুনিটির সাহস ও সম্মানের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com