নরমাল ডেলিভারির প্রস্তুতি

ছবি : সংগৃহীত

ডা. উম্মুল নুসরাত জাহান :

১) শরীরের স্বাভাবিক ওজন : নরমাল ডেলিভারির প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো ওজন স্বাভাবিক রাখা। একটি স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল মেনটেইন করতে হবে, যাতে শরীরের ওজন (BMI) স্বাভাবিক থাকে। ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম বা বেশি হলে নরমাল ডেলিভারি সম্ভাবনা কমে যায় এবং ডেলিভারির সময় বিভিন্ন ধরনের জটিলতা হতে পারে।

 

২) প্রেশার ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা : যাদের প্রেগন্যান্সির আগ থেকেই বিভিন্ন ধরনের মেডিকেল সমস্যা যেমন- প্রেশার বা ডায়াবেটিস আছে তাদের নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শে চলতে হবে, যাতে গর্ভাবস্থায় এ সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকে।

 

৩) সিজারের পরও নরমাল ডেলিভারি করা যায় : যাদের একবার সিজার হয়েছে তারাও পরবর্তীতে নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করতে পারেন। তবে এটি ডিপেন্ড করবে পূর্ববর্তী সিজার কী কারণে হয়েছিল এবং আরও কিছু ফ্যাক্টরের ওপর। বাংলাদেশের কিছু কিছু করপোরেট হসপিটালে এ ডেলিভারি করা হয়।

 

৪) মাঝারি মানের ব্যায়াম : প্রেগন্যান্সির প্রথম থেকেই মায়েদের উচিত নরমাল অ্যাকটিভিটি চালিয়ে যাওয়া। কিছু কিছু প্রেগন্যান্ট মায়েরা (প্লাসেন্টা প্রিভিয়া, প্রিটার্ম ডেলিভারির হিস্ট্রি ইত্যাদি) ছাড়া অন্য সবাই এ সময় হালকা থেকে মাঝারি মানের ব্যায়াম এবং সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন ২০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করতে পারবেন। অনেকে প্রেগন্যান্ট হলেই ভাবেন এখন তাকে রেস্টে থাকতে হবে। যার ফলে ডায়াবেটিস, প্রেশার, ওজন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন মেডিকেল ডিজঅর্ডার হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায় এবং নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা কমে যায়।

 

৫) মানসিকভাবে প্রস্তুত হন : মানসিক প্রস্তুতি বড় ভূমিকা রাখে। সব মায়েরই মনে রাখতে হবে নরমাল ডেলিভারি একটি কষ্টকর প্রক্রিয়া হলেও মা এবং বাচ্চা উভয়ের জন্যই এর সুফল রয়েছে। আর ডেলিভারি পেইন সহ্য করার মতো মানসিক প্রস্তুতি শুধু মাকে নিলেই চলবে না, পরিবারের অন্যদের উৎসাহ এবং সাপোর্ট এক্ষেত্রে অতি জরুরি।

 

৬) ডেলিভারি পেইন : ডেলিভারি পেইন উঠানোর জন্য কোনো ধরনের ওষুধ বা খাবারের দরকার হয় না। এটি একটি প্রক্রিয়া যা স্বাভাবিক নিয়মে হয়। একটি নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষার পরও না হলে ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে ইন্ডাকশনের (induction) মাধ্যমে ডেলিভারি পেইন উঠানো সম্ভব। এ জন্য অধিক টেনশন বা দুশ্চিন্তা না করে একজন গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শে থাকবেন।

 

সবশেষে আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে, সব রকম মানসিক প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও কিছু কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে, যখন নরমাল ডেলিভারি চেষ্টা করলে মা ও বাচ্চা উভয়ের ক্ষতি হতে পারে, এ সময় সিজারের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি না করাই ভালো। তাই এসব বিষয়ে অবহেলা না করে আমাদের যথেষ্ট যত্নবান ও সচেতন হতে হবে।

লেখক : এমবিবিএস, এফসিপিএস (অবস-গাইনি), এম আর সিওজি (ইংল্যান্ড)। কনসালটেন্ট (গাইনি), বিআরবি হসপিটালস লিমিটেড।

সূএ : বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» অন্তর্বর্তী সরকারকে হাসনাত আব্দুল্লাহ ‘এক্সকিউজ দেওয়ার সুযোগ নেই, যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে’

» নুরুল হক নুর রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে

» ‘লন্ডন ক্লিনিকে’ ভর্তি করা হয়েছে খালেদা জিয়াকে

» পরিবেশ উপদেষ্টা সামুদ্রিক প্রাণী রক্ষায় নতুন পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে সরকার

» মসজিদের ইমামকে কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ

» যুবককে কুপিয়ে হত্যা

» বৈঠকে ডেনমার্কের রাজা গ্রিনল্যান্ড নিয়ন্ত্রণে নিতে সামরিক আগ্রাসনের হুমকি ট্রাম্পের

» কেরানীগঞ্জ কারাগারের অস্থায়ী আদালতে চলবে বিডিআর বিদ্রোহ মামলা

» নতুন ভোটারদের তথ্য সংশোধন নিয়ে যা জানাল ইসি

» জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার : প্রধান উপদেষ্টা

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

নরমাল ডেলিভারির প্রস্তুতি

ছবি : সংগৃহীত

ডা. উম্মুল নুসরাত জাহান :

১) শরীরের স্বাভাবিক ওজন : নরমাল ডেলিভারির প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো ওজন স্বাভাবিক রাখা। একটি স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল মেনটেইন করতে হবে, যাতে শরীরের ওজন (BMI) স্বাভাবিক থাকে। ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম বা বেশি হলে নরমাল ডেলিভারি সম্ভাবনা কমে যায় এবং ডেলিভারির সময় বিভিন্ন ধরনের জটিলতা হতে পারে।

 

২) প্রেশার ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা : যাদের প্রেগন্যান্সির আগ থেকেই বিভিন্ন ধরনের মেডিকেল সমস্যা যেমন- প্রেশার বা ডায়াবেটিস আছে তাদের নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শে চলতে হবে, যাতে গর্ভাবস্থায় এ সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকে।

 

৩) সিজারের পরও নরমাল ডেলিভারি করা যায় : যাদের একবার সিজার হয়েছে তারাও পরবর্তীতে নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করতে পারেন। তবে এটি ডিপেন্ড করবে পূর্ববর্তী সিজার কী কারণে হয়েছিল এবং আরও কিছু ফ্যাক্টরের ওপর। বাংলাদেশের কিছু কিছু করপোরেট হসপিটালে এ ডেলিভারি করা হয়।

 

৪) মাঝারি মানের ব্যায়াম : প্রেগন্যান্সির প্রথম থেকেই মায়েদের উচিত নরমাল অ্যাকটিভিটি চালিয়ে যাওয়া। কিছু কিছু প্রেগন্যান্ট মায়েরা (প্লাসেন্টা প্রিভিয়া, প্রিটার্ম ডেলিভারির হিস্ট্রি ইত্যাদি) ছাড়া অন্য সবাই এ সময় হালকা থেকে মাঝারি মানের ব্যায়াম এবং সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন ২০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করতে পারবেন। অনেকে প্রেগন্যান্ট হলেই ভাবেন এখন তাকে রেস্টে থাকতে হবে। যার ফলে ডায়াবেটিস, প্রেশার, ওজন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন মেডিকেল ডিজঅর্ডার হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায় এবং নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা কমে যায়।

 

৫) মানসিকভাবে প্রস্তুত হন : মানসিক প্রস্তুতি বড় ভূমিকা রাখে। সব মায়েরই মনে রাখতে হবে নরমাল ডেলিভারি একটি কষ্টকর প্রক্রিয়া হলেও মা এবং বাচ্চা উভয়ের জন্যই এর সুফল রয়েছে। আর ডেলিভারি পেইন সহ্য করার মতো মানসিক প্রস্তুতি শুধু মাকে নিলেই চলবে না, পরিবারের অন্যদের উৎসাহ এবং সাপোর্ট এক্ষেত্রে অতি জরুরি।

 

৬) ডেলিভারি পেইন : ডেলিভারি পেইন উঠানোর জন্য কোনো ধরনের ওষুধ বা খাবারের দরকার হয় না। এটি একটি প্রক্রিয়া যা স্বাভাবিক নিয়মে হয়। একটি নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষার পরও না হলে ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে ইন্ডাকশনের (induction) মাধ্যমে ডেলিভারি পেইন উঠানো সম্ভব। এ জন্য অধিক টেনশন বা দুশ্চিন্তা না করে একজন গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শে থাকবেন।

 

সবশেষে আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে, সব রকম মানসিক প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও কিছু কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে, যখন নরমাল ডেলিভারি চেষ্টা করলে মা ও বাচ্চা উভয়ের ক্ষতি হতে পারে, এ সময় সিজারের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি না করাই ভালো। তাই এসব বিষয়ে অবহেলা না করে আমাদের যথেষ্ট যত্নবান ও সচেতন হতে হবে।

লেখক : এমবিবিএস, এফসিপিএস (অবস-গাইনি), এম আর সিওজি (ইংল্যান্ড)। কনসালটেন্ট (গাইনি), বিআরবি হসপিটালস লিমিটেড।

সূএ : বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com