ছবি সংগৃহীত
ডেস্ক রিপোর্ট : ধানমন্ডিতে র্যাব-ম্যাজিস্ট্রেট-ছাত্র পরিচয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত সরঞ্জাম, নগদ টাকাসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে সেনাবাহিনীর এক সার্জেন্ট রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠলেও তা নিয়ে লুকোচুরি চলছে। পুলিশ বলছে, বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডাকাতির ঘটনার বিস্তারিত জানান রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদ আলম।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমরা ছয়জনকে গ্রেফতার করেছি। তবে গ্রেফতারকৃত একজন সেনা সদস্য কি না সেটা যাচাই-বাছাই চলছে। এ ঘটনায় ৩০ জনের একটি টিম জড়িত। আমরা পুরো টিমকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।
এর আগে বুধবার দিবাগত গভীর রাতে র্যাব-ম্যাজিস্ট্রেট-ছাত্র পরিচয়ে ডাকাতির ওই ঘটনা ঘটে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ফরহাদ বীন মোশারফ (৩৩), ইয়াছিন হাসান (২২), মোবাশ্বের আহাম্মেদ (২৩) ওয়াকিল মাহমুদ (২৬), আবদুল্লাহ (৩২) ও সুমন (২৯) । এ সময় তাদের কাছ ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত র্যাব লেখা কালো রঙের দুটি জ্যাকেট, তিনটি কালো রঙের র্যাব লেখা ক্যাপ, একটি মাইক্রোবাস, পাঁচটি মোবাইল ফোন, একটি লোহার তৈরি ছেনি, একটি পুরাতন লাল রঙের স্লাই রেঞ্জ ও নগদ ৪৫ হাজার ১০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ধানমন্ডিতে এম এ হান্নান আজাদের ‘অলংকার নিকেতন জুয়েলার্স’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। ভিকারুন্নেসা স্কুলের ধানমন্ডি শাখার গলিতে তার বাড়ির নিচতলায়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় এস এম সোর্সিংয়ের অফিস আছে। এছাড়া ওই বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় একটি কনসালটেন্সি অফিস এবং পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলা নিয়ে তার ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট রয়েছে।
বুধবার ভোরে তিনটি মাইক্রোবাস এবং একটি প্রাইভেটকারে অভিযুক্ত ডাকাতরা দলবদ্ধভাবে ওই বাসার সামনে এসে গেটে দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ডদের বলে, তারা র্যাবের লোক, তাদের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট আছে। তারা বাড়িতে অভিযান চালাবে বলে তাড়াতাড়ি গেট খুলতে বলে। তাদের কয়েকজনের গায়ে র্যাব লেখা জ্যাকেট ছিল।
সে সময় দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ড তাদের সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। তখন ডাকাতি করতে আসা ব্যক্তিরা সিকিউরিটি গার্ডদের গালাগালি করতে থাকেন এবং গেট না খুললে হত্যার হুমকি দেন। তাদের মধ্যে থেকে কয়েকজন গেটের ওপর দিয়ে উঠে জোর করে সেটি খুলে ফেলে। এরপর তারা সবাই জোর করে বাড়ির ভেতরে ঢুকে সিকিউরিটি গার্ড, কেয়ারটেকার ও গাড়ি চালককে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলেন।
ঘটনার বিবরণে ডিসি মাসুদ আরও বলেন, এরপর ডাকাতদল নিচতলার অফিসের গেট ভেঙে পিয়নকে মারধর করে এবং হত্যার ভয় দেখিয়ে তার কাছে থাকা নগদ ৪৫ হাজার ১০০ টাকা ছিনিয়ে নেন। এরপর তৃতীয় তলায় এস এম সোর্সিংয়ের অফিসের গেট ভেঙে নগদ ২২ লাখ টাকা লুট করে। তাদের আরেকটি দল চতুর্থ তলার অফিসের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে আলমারি ভেঙে নগদ ১৩ লাখ টাকা লুট করে নেন।
এরপর তারা মালিক এম এ হান্নান আজাদের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা, স্বর্ণের কানের দুল ও চেইনসহ আনুমানিক ২.৫ ভরি স্বর্ণ (যার মূল্য তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা) লুট করে নেন।
এরপর তারা মালিক এম এ হান্নানকে জোর করে নিচে নিয়ে গাড়িতে উঠানোর চেষ্টা করে। তখন ধানমন্ডি থানার একটি টহল টিম ওই বাড়ির সামনে হাজির হয়ে ডাকাতদের হাত থেকে তাকে উদ্ধার করে। এ সময় ডাকাতরা তাদের হাতে থাকা ছেনি ও রেঞ্জ দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে। তাদের হামলায় পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হন। তখন আশেপাশে থাকা লোকজনের সহায়তায় পুলিশ ডাকাতদের গ্রেফতার করে। সূূএ:ঢাকা মেইল ডটকম