ধর্ষণবিরোধী নতুন আইন পুরুষদের জন্য বৈষম্যমূলক: আইনজীবী ইশরাত হোসেন

ছবি সংগৃহীত

 

ডেস্ক রিপোর্ট : ধর্ষণবিরোধী নতুন আইন পুরুষদের জন্য বৈষম্যমূলক বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হোসেন। ২৬ মার্চ একটি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।

 

তিনি বলেন, “শারীরিক সম্পর্ক অপরাধ হবে কি না, তা নির্ধারণ করা হচ্ছে বিয়ের ভিত্তিতে। কিন্তু বিয়ের বয়স কত হবে, সেটার কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই। তাছাড়া, অপরাধী হিসেবে কেবলমাত্র পুরুষদেরকেই টার্গেট করা হচ্ছে, যা স্পষ্ট লিঙ্গবৈষম্য।

 

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন দেশের আইন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ ধরনের অদ্ভুত আইন খুব কম দেশেই আছে। ভারতের নাঈম ভার্সেস স্টেট মামলার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সেখানে এক বিবাহিত নারী অভিযোগ করেন যে এক ব্যক্তি বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করেছেন। প্রথমে অভিযুক্ত ব্যক্তির ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলেও হাইকোর্ট সেটি কমিয়ে ৭ বছর করে। পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেন যে এটি ধর্ষণ নয়, কারণ ভুক্তভোগী প্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন এবং নিজেই সম্মত হয়ে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন।

 

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, “মনোয়ার ভার্সেস স্টেট মামলায় হাইকোর্ট স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে ১৬ বছরের অধিক বয়সী কোনো নারী যদি নিজ ইচ্ছায় শারীরিক সম্পর্কে জড়ান, তবে সেটিকে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করা যাবে না। অথচ বর্তমান প্রস্তাবিত আইনে পুরুষদের প্রতি স্পষ্ট বৈষম্য তৈরি করা হচ্ছে।

 

আইনজীবী ইশরাত হোসেন অভিযোগ করেন যে ধর্ষণ সংক্রান্ত মামলাগুলোতে অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম, ছবি প্রকাশ করা হলেও ভুক্তভোগী নারীর পরিচয় গোপন রাখা হয়। অনেক সময় বিয়ের প্রতিশ্রুতির নামে করা মিথ্যা মামলাগুলোতে অভিযুক্ত ব্যক্তি সমাজে হেয়প্রতিপন্ন হন এবং সামাজিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হন। অথচ চার-পাঁচ বছর পর বিচার শেষে যদি তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন, ততদিনে তার সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবন ধ্বংস হয়ে যায়।

 

তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই, এই ধরনের মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে কণ্ঠ তুলতে এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে। নতুন আইনে পুরুষদের প্রতি বৈষম্য দূর করা এবং সত্যিকার অর্থে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।

 

উল্লেখ্য, সরকার ২০২৫ সালে ধর্ষণ সংক্রান্ত নতুন আইনের খসড়া তৈরি করেছে, যেখানে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আস্থা ও প্রণয়ের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আইনজীবী ইশরাত হোসেন মনে করেন, এই আইনে এখনো অনেক অস্পষ্টতা রয়েছে এবং তা লিঙ্গবৈষম্যমূলক।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» হোয়াটসঅ্যাপে বাড়ছে হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি, সতর্ক থাকার পরামর্শ

» ফেশিয়াল ম্যাসাজের যত উপকারিতা

» কক্সবাজার ঈদগাহ ময়দানে প্রধান জামাত সকাল ৮টায়

» গর্ভকালীন ডায়াবেটিস : মা ও নবজাতাকের অসুস্থতা কিভাবে

» প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সেনাবাহিনী প্রধানের সৌজন্য সাক্ষাৎ

» সৌদির সঙ্গে মিল রেখে ফতুল্লায় ঈদ উদযাপন

» স্পেনে উৎসাহ উদ্দীপনায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঈদ উদযাপন

» বোয়ালমারীতে ১০ গ্রামে আজ ঈদ

» এবারের ঈদ আনন্দে যোগ হয়েছে উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনার নতুন মাত্রা : তারেক রহমান

» পররাষ্ট্র নীতিতে ড. ইউনূসের কাছে হেরে গেছেন নরেন্দ্র মোদী!

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ধর্ষণবিরোধী নতুন আইন পুরুষদের জন্য বৈষম্যমূলক: আইনজীবী ইশরাত হোসেন

ছবি সংগৃহীত

 

ডেস্ক রিপোর্ট : ধর্ষণবিরোধী নতুন আইন পুরুষদের জন্য বৈষম্যমূলক বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হোসেন। ২৬ মার্চ একটি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।

 

তিনি বলেন, “শারীরিক সম্পর্ক অপরাধ হবে কি না, তা নির্ধারণ করা হচ্ছে বিয়ের ভিত্তিতে। কিন্তু বিয়ের বয়স কত হবে, সেটার কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই। তাছাড়া, অপরাধী হিসেবে কেবলমাত্র পুরুষদেরকেই টার্গেট করা হচ্ছে, যা স্পষ্ট লিঙ্গবৈষম্য।

 

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন দেশের আইন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ ধরনের অদ্ভুত আইন খুব কম দেশেই আছে। ভারতের নাঈম ভার্সেস স্টেট মামলার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সেখানে এক বিবাহিত নারী অভিযোগ করেন যে এক ব্যক্তি বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করেছেন। প্রথমে অভিযুক্ত ব্যক্তির ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলেও হাইকোর্ট সেটি কমিয়ে ৭ বছর করে। পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেন যে এটি ধর্ষণ নয়, কারণ ভুক্তভোগী প্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন এবং নিজেই সম্মত হয়ে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন।

 

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, “মনোয়ার ভার্সেস স্টেট মামলায় হাইকোর্ট স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে ১৬ বছরের অধিক বয়সী কোনো নারী যদি নিজ ইচ্ছায় শারীরিক সম্পর্কে জড়ান, তবে সেটিকে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করা যাবে না। অথচ বর্তমান প্রস্তাবিত আইনে পুরুষদের প্রতি স্পষ্ট বৈষম্য তৈরি করা হচ্ছে।

 

আইনজীবী ইশরাত হোসেন অভিযোগ করেন যে ধর্ষণ সংক্রান্ত মামলাগুলোতে অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম, ছবি প্রকাশ করা হলেও ভুক্তভোগী নারীর পরিচয় গোপন রাখা হয়। অনেক সময় বিয়ের প্রতিশ্রুতির নামে করা মিথ্যা মামলাগুলোতে অভিযুক্ত ব্যক্তি সমাজে হেয়প্রতিপন্ন হন এবং সামাজিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হন। অথচ চার-পাঁচ বছর পর বিচার শেষে যদি তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন, ততদিনে তার সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবন ধ্বংস হয়ে যায়।

 

তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই, এই ধরনের মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে কণ্ঠ তুলতে এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে। নতুন আইনে পুরুষদের প্রতি বৈষম্য দূর করা এবং সত্যিকার অর্থে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।

 

উল্লেখ্য, সরকার ২০২৫ সালে ধর্ষণ সংক্রান্ত নতুন আইনের খসড়া তৈরি করেছে, যেখানে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আস্থা ও প্রণয়ের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আইনজীবী ইশরাত হোসেন মনে করেন, এই আইনে এখনো অনেক অস্পষ্টতা রয়েছে এবং তা লিঙ্গবৈষম্যমূলক।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com