দ্বিতীয় দিনেও যমুনার সামনে অবস্থান জবি শিক্ষার্থীদের

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : কেউ খালি গায়ে শুয়ে আছেন, কেউবা জামাকাপড় বিছিয়ে সড়কে শুয়ে আছেন। কেউ গাছের পাতা ও ডালপালা মেলে রাস্তায় শুয়ে পড়েছেন, কেউবা ক্লান্ত শরীর নিয়ে সহপাঠীর কাঁধে হেলান দিয়েছেন। কেউ আবার বসে আছেন কিংবা সহপাঠীদের সঙ্গে গল্পে সময় পার করছেন। এমন চিত্রই দেখা গেছে কাকরাইল মসজিদের সামনে তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের।

 

আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’ অভিমুখে সড়কে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, অনেক শিক্ষার্থী রাতভর সড়কে শুয়ে-বসে কাটিয়ে দিয়েছেন। তাদের সঙ্গে থেকে কয়েকজন শিক্ষকও রাস্তায় রাত কাটিয়েছেন। সকাল হতেই পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যোগ দিতে কাকরাইলে ছুটে আসছেন। সবার কণ্ঠে একটাই কথা- “দাবি মানতেই হবে।”

রাতভর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সড়কে অবস্থান করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের শিক্ষক ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন এবং ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক মঞ্জুর মোর্শেদ ভূঁইয়া। এছাড়া রাত আড়াইটা পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন ছাত্রকল্যাণ পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক কেএমএম রিফাত হাসান ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুমন কুমার মজুমদার। রাত দুইটা পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন প্রক্টর, সহকারী প্রক্টরসহ অনেক শিক্ষক।

 

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে সড়কে অবস্থান নিয়েছেন শাখা ছাত্রদল, ছাত্র শিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী।

 

একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, “এখান থেকে পিছিয়ে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। আমাদের কোনও আবাসন নেই, আবাসন ভাতা দিচ্ছে না- রাস্তার উপরই আমাদের একমাত্র আশ্রয়। এত বঞ্চনার পর খালি হাতে ফিরে যাওয়া অসম্ভব। গতকাল (বুধবার) পুলিশের লাঠিপেটা, জলকামান, টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড খেয়ে, রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, না খেয়ে পুরোদিন পার করেছি। এখন লিখিত আশ্বাস ছাড়া ক্যাম্পাসে ফিরব না।”

 

জবি শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে সব ক্রিয়াশীল সংগঠন আছে। কাকরাইল মসজিদের ভেতরে প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী ও বাইরে রাস্তায় অসংখ্য শিক্ষার্থী অবস্থান করছে। তারা বিপ্লবের গান গেয়ে সময় পার করছে। রাস্তায় যখন নেমেছি, রাস্তাতেই সব দাবি আদায় করব।”

 

শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি এ কে এম রাকিব বলেন, “আমরা অধিকার আদায় না করে ঘরে ফিরব না। মার খেয়েছি, দরকার হলে আরও মার খাব। কিন্তু এবার কোনও আশ্বাসে রাজপথ ছাড়ছি না।”

 

শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন বলেন, “আমি পিতা হয়ে সন্তানদের ফেলে যেতে পারি না। আমার শিক্ষার্থীরা যতক্ষণ আছে, আমিও ততক্ষণ থাকব। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসে ফিরব না।”

 

শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি হলো-

১. আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০% শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করতে হবে।

২. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাঁটছাঁট না করেই অনুমোদন করতে হবে।

৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করতে হবে।

 

উল্লেখ্য, বুধবার (১৪ মে) দুপুর সাড়ে ১১টা থেকে তিন দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’ অভিমুখে কাকরাইল মসজিদের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ২০ ফিলিস্তিনি নিহত

» মাহফুজের মাথায় বোতল নিক্ষেপ, অভিযুক্ত যুবককে খুঁজছে পুলিশ

» অনেকগুলো দাবি নিয়ে আন্দোলন দানা বেঁধে উঠছে, এই পরিস্থিতির দায় সরকারের: মাসুদ কামাল

» ‘পালানো’র সময় বিমানবন্দর থেকে বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা আটক

» ইশরাককে মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণের দাবিতে নগর ভবনে তালা

» ‘সোশ্যাল মিডিয়া হোক দাওয়াত ও সত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যম’: জাহিদুল ইসলাম

» ইসকন-সম্পৃক্ত সংঘবদ্ধ চক্রের ফাঁদে বাংলাদেশের মুসলিম তরুণীরা, বিশেষ বার্তা দিলেন ইলিয়াস

» উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত

» রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিকে লাঞ্ছিত করা অপ্রত্যাশিত, সরকারের আচরণও সন্দেহজনক

» পাথরের কান্না

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

দ্বিতীয় দিনেও যমুনার সামনে অবস্থান জবি শিক্ষার্থীদের

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : কেউ খালি গায়ে শুয়ে আছেন, কেউবা জামাকাপড় বিছিয়ে সড়কে শুয়ে আছেন। কেউ গাছের পাতা ও ডালপালা মেলে রাস্তায় শুয়ে পড়েছেন, কেউবা ক্লান্ত শরীর নিয়ে সহপাঠীর কাঁধে হেলান দিয়েছেন। কেউ আবার বসে আছেন কিংবা সহপাঠীদের সঙ্গে গল্পে সময় পার করছেন। এমন চিত্রই দেখা গেছে কাকরাইল মসজিদের সামনে তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের।

 

আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’ অভিমুখে সড়কে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, অনেক শিক্ষার্থী রাতভর সড়কে শুয়ে-বসে কাটিয়ে দিয়েছেন। তাদের সঙ্গে থেকে কয়েকজন শিক্ষকও রাস্তায় রাত কাটিয়েছেন। সকাল হতেই পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যোগ দিতে কাকরাইলে ছুটে আসছেন। সবার কণ্ঠে একটাই কথা- “দাবি মানতেই হবে।”

রাতভর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সড়কে অবস্থান করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের শিক্ষক ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন এবং ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক মঞ্জুর মোর্শেদ ভূঁইয়া। এছাড়া রাত আড়াইটা পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন ছাত্রকল্যাণ পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক কেএমএম রিফাত হাসান ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুমন কুমার মজুমদার। রাত দুইটা পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন প্রক্টর, সহকারী প্রক্টরসহ অনেক শিক্ষক।

 

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে সড়কে অবস্থান নিয়েছেন শাখা ছাত্রদল, ছাত্র শিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী।

 

একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, “এখান থেকে পিছিয়ে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। আমাদের কোনও আবাসন নেই, আবাসন ভাতা দিচ্ছে না- রাস্তার উপরই আমাদের একমাত্র আশ্রয়। এত বঞ্চনার পর খালি হাতে ফিরে যাওয়া অসম্ভব। গতকাল (বুধবার) পুলিশের লাঠিপেটা, জলকামান, টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড খেয়ে, রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, না খেয়ে পুরোদিন পার করেছি। এখন লিখিত আশ্বাস ছাড়া ক্যাম্পাসে ফিরব না।”

 

জবি শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে সব ক্রিয়াশীল সংগঠন আছে। কাকরাইল মসজিদের ভেতরে প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী ও বাইরে রাস্তায় অসংখ্য শিক্ষার্থী অবস্থান করছে। তারা বিপ্লবের গান গেয়ে সময় পার করছে। রাস্তায় যখন নেমেছি, রাস্তাতেই সব দাবি আদায় করব।”

 

শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি এ কে এম রাকিব বলেন, “আমরা অধিকার আদায় না করে ঘরে ফিরব না। মার খেয়েছি, দরকার হলে আরও মার খাব। কিন্তু এবার কোনও আশ্বাসে রাজপথ ছাড়ছি না।”

 

শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন বলেন, “আমি পিতা হয়ে সন্তানদের ফেলে যেতে পারি না। আমার শিক্ষার্থীরা যতক্ষণ আছে, আমিও ততক্ষণ থাকব। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসে ফিরব না।”

 

শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি হলো-

১. আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০% শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করতে হবে।

২. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাঁটছাঁট না করেই অনুমোদন করতে হবে।

৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করতে হবে।

 

উল্লেখ্য, বুধবার (১৪ মে) দুপুর সাড়ে ১১টা থেকে তিন দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’ অভিমুখে কাকরাইল মসজিদের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com