জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা), আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ (এলজেডি) এবং বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (জেএটিআই) যৌথ উদ্যোগে আইন পেশাজীবীদের জন্য একটি বেসিক মধ্যস্থতা প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১ ও ২ আগস্ট ‘অ্যাকসেস টু জাস্টিস প্রজেক্ট’ (এটুজে প্রকল্প) -এর আওতায় জেএটিআই -তে এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। মধ্যস্থতা সংক্রান্ত জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে দেশের জনগণের জন্য আরও উন্নত সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে এ কর্মসূচিতে আইন পেশাজীবীদের ভবিষ্যতের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে প্রস্তুত করে তুলতে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। প্রত্যাশা করা হচ্ছে, এ ধরনের কর্মসূচি সমাজে মধ্যস্থতার চর্চাকে আরও ত্বরান্বিত করবে।
এটুজে প্রকল্পটি জাইকার সহযোগিতায় ও এলজেডি’র অংশীদারিত্বে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে শুরু হয়। প্রকল্পটির লক্ষ্য: বাংলাদেশে বিচারপ্রাপ্তির সুযোগ স¤প্রসারণ এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। এরই অংশ হিসেবে, ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে জেএটিআই-তে মধ্যস্থতা নিয়ে একটি বেসিক প্রশিক্ষণ এবং ২০২৫ সালের ফেব্রæয়ারিতে একটি অ্যাডভান্সড কোর্স সফলভাবে সম্পন্ন হয়।
বিচারপ্রাপ্তির সুযোগ বৃদ্ধিতে এ প্রকল্পের আওতায় অনুষ্ঠিত এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে আইন পেশাজীবীদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জ্ঞান ও প্রয়োজনীয় ধারণা এবং এর ব্যবহারিক প্রয়োগ নিয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়, যা ভবিষ্যতে তাদের মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালনায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। প্রশিক্ষণে ইন্টারঅ্যাকটিভ লেকচার ও রোল-পে অনুশীলনের সমন্বয় করা হয়। প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাপান থেকে আমন্ত্রিত অভিজ্ঞ মধ্যস্থতা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইরিয়ে হিদেয়াকি। তিনি আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া এবং বাস্তব ক্ষেত্রে তার প্রয়োগ নিয়েও অংশগ্রহণকারীদের সম্যক ধারণা দেন ও দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। এ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন মোট ৫০ জন অংশগ্রহণকারী, যাদের মধ্যে ছিলেন বিচারক, জেলা আইন সহায়তা কর্মকর্তা, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা জেলার আইনজীবী এবং সংশ্লিষ্ট বিচারিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। এটুজে প্রকল্পের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট ২৪০ জন বিচারক, আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মধ্যস্থতা সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।
এই উদ্যোগটি বাংলাদেশি বিচারব্যবস্থায় মধ্যস্থতা বিষয়ক সক্ষমতা তৈরি এবং জনগণকেন্দ্রিক বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে এটুজে প্রকল্পের ধারাবাহিক অঙ্গীকারের প্রতিফলন।
প্রশিক্ষণ শেষে অনুষ্ঠিত হয় সনদ বিতরণ অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের হাতে সনদ তুলে দেন অধ্যাপক ইরিয়ে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহের এবং জাইকা বাংলাদেশ অফিসের চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ইচিগুচি তোমোহিদে।
প্রশিক্ষণ সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ইচিগুচি তোমোহিদে বলেন, “বর্তমানে বিচার ব্যবস্থার সংস্কার একটি জাতীয় অগ্রাধিকার। বাংলাদেশের মানুষ একটি ন্যায়সঙ্গত, স্বচ্ছ, দক্ষ এবং সব নাগরিক, বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীবান্ধব বিচারপ্রক্রিয়া চায়। জাইকা এই রূপান্তরে বাংলাদেশ সরকারকে সবসময় পাশে থেকে সহযোগিতা করে আসছে এবং আগামীতেও করে যাবে। এটি জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ১৬.৩ অনুযায়ী আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং সবার জন্য বিচারপ্রাপ্তির সুযোগ নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
বিচার ব্যবস্থায় মধ্যস্থতার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ আবু তাহের বলেন, “আমার বিশ্বাস, আইন পেশাজীবী যারা এ আয়োজনে অংশ নিয়েছেন, তারা এখান থেকে অর্জিত জ্ঞানের অর্থবহ ব্যবহার করবেন। মধ্যস্থতার ক্ষেত্রে, নিয়ম ও কৌশল মেনে চলা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি এ প্রক্রিয়ায় সাথে সম্পৃক্ত সবার অনুভূতি ও প্রয়োজনের বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত।”
জাইকা আশাবাদী, প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীরা অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে উন্নত মধ্যস্থতা সেবা প্রদান করবেন। সেই সঙ্গে, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আইন পেশাজীবীরা স¤প্রতি সংশোধিত লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস অ্যাক্টে নতুনভাবে সংযোজিত ‘স্পেশাল মিডিয়েটর’ হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা রাখবেন। এর মাধ্যমে, মধ্যস্থতা করে বিরোধ নিষ্পত্তি হবে, মামলার জট কমবে এবং বিচারপ্রাপ্তির পথ আরও সহজ ও বিস্তৃত হবে।-শেষ-