দুর্ভোগ

রাস্তা বন্ধ করে খোঁড়াখুঁড়ির কর্মযজ্ঞ। পড়ে আছে ইট, বালি পাথরসহ নির্মাণ সামগ্রী। এমনভাবে রাখা হয়েছে যেন যুদ্ধক্ষেত্রে পড়ে থাকা ধ্বংসস্তূপ। আর সেখান থেকে ধোঁয়ার মতোই উড়ছে ধুলোবালি। এমনই ভয়াবহ পরিস্থিতি মিরপুরের বেগম রোকেয়া সরণির। উপরে মেট্রোরেলের কাজ। নিচে চলছে ড্রেনের নির্মাণকাজ। পুরোপুরি বন্ধ রাস্তার একপার্শ্ব।

মেট্রোরেল   নির্মাণসামগ্রীর জন্য অপর পাশও হয়েছে সরু। বাসা-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অলিগলির প্রবেশপথ অধিকাংশই বন্ধ। এজন্য প্রতিনিয়ত লেগে আছে যানজট। বাতাসে উড়ছে মাত্রাতিরিক্ত ধুলোবালি, আর যত্রতত্র পড়ে আছে ময়লার স্তূপ। খোঁড়াখুঁড়ি, যানজট, ধুলো-দূষণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

গত ৬ মাসের বেশি সময় ধরে ঢাকার প্রধান এ সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার খুঁড়ে রাখলেও কাজের তেমন অগ্রগতি নেই। ফলে ভোগান্তির সময়সীমা বেড়েই চলছে। এই দুর্ভোগ থেকে কবে মুক্তি মিলবে জানে না মিরপুরের বাসিন্দারা। এদিকে বছরজুড়ে চলা এই অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও ঠিকাদাররা কোনো ধরনের বিধিমালার তোয়াক্কা করছে না বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন- রাজধানীতে অপরিকল্পিতভাবে খোঁড়াখুঁড়ির পেছনে সিটি করপোরেশন বেশি দায়ী। তারা এই দায় এড়াতে পারে না। একটি সড়ক বছরে কতো বার কাটাছেঁড়া হচ্ছে সে বিষয়ে সিটি করপোরেশনের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এতে সড়কে মাসের পর মাস খোঁড়াখুঁড়ি চলছেই। আর মালামাল সড়কে রেখে গণপরিবহনের গতি রোধ করছে। এতে যেমন সৃষ্টি হচ্ছে জনদুর্ভোগ, তেমনি যানজট। পথচারীর পায়ে হেঁটে চলার মতোও অবস্থা নেই। ফুটপাথেও রাখছেন নির্মাণসামগ্রী। ফলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জারি করা পরিপত্রও অনুসরণ করা হয় না এসব কাজে। সরকারি নির্দেশনা না মেনে এমন জনদুর্ভোগ সৃষ্টিতে সিটি করপোরেশনের নিয়মিত তদারকি প্রয়োজন। প্রয়োজন মেয়রের সদিচ্ছা। তাহলে কোনো সংস্থা উন্নয়ন কাজের জন্য সড়ক খুঁড়লেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে বাধ্য হবে। তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বলছে উল্টো কথা। সংস্থাটি বলছে- পর্যাপ্ত পানি ছিটানো হচ্ছে। যদিও সরজমিন দেখা যায়, সিটি করপোরেশন যেভাবে পানি ছিটাচ্ছে, তা কয়েক মিনিটেই শুকিয়ে যায়। যার ফলে মিরপুরে এই পথ সব সময়ই ধুলোময়। এতে বাড়ছে ধুলোবাহিত রোগীর সংখ্যা। এ ছাড়া এক কিলোমিটারের বেশি রাস্তা একসঙ্গে কেটে তা না সারানোয় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, একসঙ্গে পুরো রাস্তা না কেটে অল্প অল্প করে কাজ করে নিলে এত দুর্ভোগ হতো না।

গত মঙ্গলবার শেওড়াপাড়া এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার পশ্চিমাংশ পুরোপুরি বন্ধ। ব্যস্ততম সড়ক খুঁড়ে ড্রেন নির্মাণ করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। ড্রেনের কোথাও বসানো হয়েছে পাইপ। কোথাও বড় বড় গর্ত। গর্তেই পড়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। সেখান থেকে ভেসে আসছে দুর্গন্ধ। রাস্তার উপর রাখা হয়েছে বালি-মাটি ও পাথরের স্তূপ। উড়ছে ধুলাবালি। এতে আশপাশের বাসাবাড়ি, দোকানপাট প্রায় অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেছে। সড়কের অপর পাশে যেসব যানবাহন ও পথচারীরা যাচ্ছেন তাদের নাক মুখে উড়ে আসছে সেই বালি। এমনই পরিস্থিতি যেন কয়েক মিনিট সেখানে অবস্থান করলেই নিজের চেহারা শনাক্ত করা মুশকিল। শুধু শেওড়াপাড়া নয়, সেনপাড়া পর্বতা, কাজীপাড়ায় একই অবস্থা। প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তা খুঁড়ে রাখার কারণে এখানকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। শুধু স্থানীয় বাসিন্দারাই নয়, এই পথে যাতায়াতকারী লাখ লাখ মানুষ প্রতিনিয়তই সীমাহীন ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন। ধুলোয় অতিষ্ঠ হয়ে অনেকেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন। যেসব দোকানপাট খোলা রয়েছে, তাদেরও মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্যের দোকানিরা মহাবিপাকে পড়েছেন। ধুলোবালি মিশ্রিত খাবার খেয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কেউ কেউ হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন বাসার অলিগলির প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে অনেকেই গত ৬ মাস ধরে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছেন। স্থানীয়রা বলছেন, ২০১৭ সাল থেকে মেট্রোরেলের কাজ শুরু হয়েছে। তখন থেকে এখন পর্যন্ত ওই এলাকার মানুষের দুর্ভোগ আর দুর্গতির শেষ নেই। মেট্রোরেলের কাজ শেষ হলেও নিচের অংশে এখনো অবরোধ করে রাখা হয়েছে। এতে রাস্তা সরু হয়ে গেছে। দুইদিকের যানবাহন এখন ১০/১২ ফুট রাস্তা দিয়ে পারাপার হচ্ছে। এতে দিনরাত সব সময়ই এই এলাকায় যানজট থাকছেই। মাঝে মধ্যে গণপরিবহন আটকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলে যায়, তবুও যানজট কমে না। মধ্যরাত পর্যন্ত লেগে থাকে যানজট। সিটি করপোরেশনের কাজের পাশাপাশি মেট্রোরেলের কাজের জন্য রাস্তা বন্ধ রাখা হয় সময়ে সময়ে। এতে যানজট অসহনীয় রূপ নেয়।
বেলা ১২টার দিকে দেখা যায়, কয়েকজন স্কুলছাত্রী লাফিয়ে ড্রেন পার হচ্ছেন। একজন আরেক জনের হাত টেনে ড্রেন থেকে তুলছেন। কথা হলে তারা জানান, রাস্তার কাজ চলমান থাকায় অনেক পথ ঘুরে আসতে সময় লাগবে। আগে যে পথে বাসায় যেতেন, এখন সেই পথ বন্ধ। তাই বিকল্প পথে বাসায় যেতে ঝুঁকি নিয়ে নির্মাণাধীন ড্রেনের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। শুধু স্কুলছাত্রীরা নয়, এলাকার অনেকই কোনো উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন। দেখা যায়নি নিরাপত্তা কর্মীদেরও।
মো. শিমুল নামের এক পথচারী বলেন, আগে তালতলা থেকে মিরপুর-১০ এ বাসে যাতায়াত করতাম। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির পর এখন বাসের আগে হেঁটেই যাতায়াত করি। তবে রাস্তা এমনভাবে কাটা হয়েছে ফুটপাথ দিয়ে হাঁটার মতোও অবস্থা নেই। সব সময় দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকি কখন ধাক্কা খেয়ে ড্রেনে পড়ে যাই। এ ছাড়া ধুলোবালিতে নাক, মুখসহ জামাকাপড় নষ্ট হয়ে যায়। গত ৫/৬ মাস ধরে এই খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। আর আমাদের ভোগান্তি বাড়ছে। কবে যে এই অবস্থা থেকে আমরা মুক্তি পাবো। এনিয়ে সংশ্লিষ্টদের কোনো মাথাব্যথা নেই। মিজান নামের এক চা দোকানি বলেন, ধুলোর কারণে মানুষ চা খেতে আসে না। সারাদিন বসে থেকেও ২০০ টাকার চা বিক্রি করতে পারি না। প্রতি মুহূর্তেই ধুলোবালি উড়ে এসে চায়ের মধ্যে পড়ে। রুটি, বিস্কুটের প্যাকেট খোলা যায় না। তবুও বসে থাকি যদি দোকান ভাড়াটা উঠানো যায়। গত ৬ মাসের বেশি সময় ধরে এমনই দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে দিন পার করছি। মোদির দোকানি কামাল হোসেন বলেন, প্রতি আধা ঘণ্টা পরপর দোকান ঝাড়ু দিতে হয়। ধুলোয় দোকানের মালামাল নষ্ট হয়ে যায়। আগে মেট্রোরেলের কাজের কারণে অসুবিধা হতো। এখন হয় সিটি করপোরেশনের খোঁড়াখুঁড়িতে। রাস্তা খুঁড়ে রেখে দেয়। সময় নিয়ে কাজ করে। যদি যেটুকু খুঁড়ে সঙ্গে সঙ্গে সেটুকুর কাজ করতো তাহলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। এখন এই এলাকার মানুষ মহাবিপদে আছে। শিক্ষার্থী রিয়াদ হোসেন বলেন, প্রতিদিনই ধুলোর মধ্যেই যাতায়াত করতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে সিটি করপোরেশনের পানির গাড়ি দেখি। তবে তারা ভালো জায়গায় পানি ছিটায়। যেখানে ধুলোবালি আছে সেখানে ছিটানো হচ্ছে না। সিটি করপোরেশন মানুষকে দেখানোর জন্য কাজ করছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

রাইসুল ইসলাম নামের একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সিটি করপোরেশন রাস্তা কেটে মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। ৬ মাসের বেশি সময় জনদুর্ভোগ হলেও কর্তৃপক্ষ নাছোড়বান্দা। মেয়র বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শনে যায়। নানা পদক্ষেপ নেয়। এখানে কেন আসে না। প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মানুষের কত কষ্ট আর ভোগান্তি হয় একবার এসে দেখুক।
দীর্ঘ সময় ধরে খোঁড়াখুঁড়িতে মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করে নির্মাণ কাজের প্রকৌশলী ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) মো. শহিদুল ইসলাম  বলেন, গত ৬ মাসের অধিক সময় ধরে ড্রেন নির্মাণ চলছে। এতে রাস্তা কাটতে হচ্ছে। এটি সিটি করপোরেশনের কাজ। সিটি করপোরেশন থেকেই প্রায় ১৫ কোটি টাকার কাজের টেন্ডার হয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে। রাস্তার একপাশে কাজ চলমান থাকায় ওই অংশ বন্ধ করে কাজ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে তালতলা অংশ থেকে শেওড়াপাড়ার কিছু অংশের কাজ শেষ হয়েছে। যা চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। নির্মাণ কাজের জন্য ধুলোবালি হচ্ছে। এজন্য মাঝেমধ্যে পানি ছিটানো হয়। যাতে ধুলোবালি কম হয়। এ ছাড়া অলিগলির মুখ বন্ধ করে দেয়ার কারণ হচ্ছে কিছু গলিতেও কাজ চলছে। তবে আশা করি খুব দ্রুতই কাজ শেষ করবো।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের বক্তব্য জানতে এক সপ্তাহ ধরে ফোনে চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেন, বিষয়টি আগে আমার জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করবো।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির এমন চিত্র শুধু বেগম রোকেয়া সরণিতেই সীমাবদ্ধ নয়। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়তই খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। রাজধানীর উত্তরা, বাড্ডা, রামপুরা, মগবাজার, লালবাগ, তেজগাঁও, কাওরান বাজার, কেরানীগঞ্জসহ অন্তত ৩০ থেকে ৪০টি স্থানে রাস্তা খুঁড়ে রাখা হয়েছে। এতে প্রতিনিয়তই দুর্ভোগে পড়ছেন নগরবাসী।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক ও নগর পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান  বলেন, সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির অন্যতম কারণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের বাস্তবায়ন অথবা বিভিন্ন পরিষেবার রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি। তবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মসূচি পৃথকভাবে গ্রহণ এবং সমন্বয়হীনতার কারণে অনেক সময় একটা সড়কে একাধিকবার খোঁড়াখুঁড়ি করতে দেখা যায়। এতে ধুলোবালি, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, যানজট-জলজটসহ বিভিন্ন ধরনের জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছে যাচ্ছে দিন দিন। সবগুলো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে পরিকল্পনা করে, পরিকল্পনামাফিক বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ, পারস্পরিক সমন্বয় এবং সমঝোতার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করলে এমন দুর্ভোগ হয় না। এ জন্য রাজউকের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় প্রস্তাবিত সমন্বিত ইউটিলিটি ডাক্ট বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সূএ:মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» কিশোরি হেনস্থার মামলায় নিউইয়র্কে বাংলাদেশি গ্রেফতার

» ডেসটিনির এমডিসহ ১৯ জনের ১২ বছরের কারাদণ্ড

» শ্রীপুরে প্রেমিকার সাবেক প্রেমিকের ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত

» ছাগলকাণ্ডে আলোচিত সেই মতিউর ও তার স্ত্রী গ্রেফতার

» বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

» সিদ্ধিরগঞ্জে দুই কারখানায় আগুন

» বিএসএফের হাতে বাংলাদেশি আটক

» উইজডেনের বর্ষসেরা ওয়ানডে দলে তাসকিন

» ট্রাম্পের শপথ ঘিরে নিরাপত্তা বলয়ে মোড়া থাকবে ক্যাপিটল হিল

» প্রধান উপদেষ্টার কাছে সংস্কার প্রস্তাব জমা দিলো কমিশন

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

দুর্ভোগ

রাস্তা বন্ধ করে খোঁড়াখুঁড়ির কর্মযজ্ঞ। পড়ে আছে ইট, বালি পাথরসহ নির্মাণ সামগ্রী। এমনভাবে রাখা হয়েছে যেন যুদ্ধক্ষেত্রে পড়ে থাকা ধ্বংসস্তূপ। আর সেখান থেকে ধোঁয়ার মতোই উড়ছে ধুলোবালি। এমনই ভয়াবহ পরিস্থিতি মিরপুরের বেগম রোকেয়া সরণির। উপরে মেট্রোরেলের কাজ। নিচে চলছে ড্রেনের নির্মাণকাজ। পুরোপুরি বন্ধ রাস্তার একপার্শ্ব।

মেট্রোরেল   নির্মাণসামগ্রীর জন্য অপর পাশও হয়েছে সরু। বাসা-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অলিগলির প্রবেশপথ অধিকাংশই বন্ধ। এজন্য প্রতিনিয়ত লেগে আছে যানজট। বাতাসে উড়ছে মাত্রাতিরিক্ত ধুলোবালি, আর যত্রতত্র পড়ে আছে ময়লার স্তূপ। খোঁড়াখুঁড়ি, যানজট, ধুলো-দূষণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

গত ৬ মাসের বেশি সময় ধরে ঢাকার প্রধান এ সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার খুঁড়ে রাখলেও কাজের তেমন অগ্রগতি নেই। ফলে ভোগান্তির সময়সীমা বেড়েই চলছে। এই দুর্ভোগ থেকে কবে মুক্তি মিলবে জানে না মিরপুরের বাসিন্দারা। এদিকে বছরজুড়ে চলা এই অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও ঠিকাদাররা কোনো ধরনের বিধিমালার তোয়াক্কা করছে না বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন- রাজধানীতে অপরিকল্পিতভাবে খোঁড়াখুঁড়ির পেছনে সিটি করপোরেশন বেশি দায়ী। তারা এই দায় এড়াতে পারে না। একটি সড়ক বছরে কতো বার কাটাছেঁড়া হচ্ছে সে বিষয়ে সিটি করপোরেশনের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এতে সড়কে মাসের পর মাস খোঁড়াখুঁড়ি চলছেই। আর মালামাল সড়কে রেখে গণপরিবহনের গতি রোধ করছে। এতে যেমন সৃষ্টি হচ্ছে জনদুর্ভোগ, তেমনি যানজট। পথচারীর পায়ে হেঁটে চলার মতোও অবস্থা নেই। ফুটপাথেও রাখছেন নির্মাণসামগ্রী। ফলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জারি করা পরিপত্রও অনুসরণ করা হয় না এসব কাজে। সরকারি নির্দেশনা না মেনে এমন জনদুর্ভোগ সৃষ্টিতে সিটি করপোরেশনের নিয়মিত তদারকি প্রয়োজন। প্রয়োজন মেয়রের সদিচ্ছা। তাহলে কোনো সংস্থা উন্নয়ন কাজের জন্য সড়ক খুঁড়লেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে বাধ্য হবে। তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বলছে উল্টো কথা। সংস্থাটি বলছে- পর্যাপ্ত পানি ছিটানো হচ্ছে। যদিও সরজমিন দেখা যায়, সিটি করপোরেশন যেভাবে পানি ছিটাচ্ছে, তা কয়েক মিনিটেই শুকিয়ে যায়। যার ফলে মিরপুরে এই পথ সব সময়ই ধুলোময়। এতে বাড়ছে ধুলোবাহিত রোগীর সংখ্যা। এ ছাড়া এক কিলোমিটারের বেশি রাস্তা একসঙ্গে কেটে তা না সারানোয় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, একসঙ্গে পুরো রাস্তা না কেটে অল্প অল্প করে কাজ করে নিলে এত দুর্ভোগ হতো না।

গত মঙ্গলবার শেওড়াপাড়া এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার পশ্চিমাংশ পুরোপুরি বন্ধ। ব্যস্ততম সড়ক খুঁড়ে ড্রেন নির্মাণ করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। ড্রেনের কোথাও বসানো হয়েছে পাইপ। কোথাও বড় বড় গর্ত। গর্তেই পড়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। সেখান থেকে ভেসে আসছে দুর্গন্ধ। রাস্তার উপর রাখা হয়েছে বালি-মাটি ও পাথরের স্তূপ। উড়ছে ধুলাবালি। এতে আশপাশের বাসাবাড়ি, দোকানপাট প্রায় অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেছে। সড়কের অপর পাশে যেসব যানবাহন ও পথচারীরা যাচ্ছেন তাদের নাক মুখে উড়ে আসছে সেই বালি। এমনই পরিস্থিতি যেন কয়েক মিনিট সেখানে অবস্থান করলেই নিজের চেহারা শনাক্ত করা মুশকিল। শুধু শেওড়াপাড়া নয়, সেনপাড়া পর্বতা, কাজীপাড়ায় একই অবস্থা। প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তা খুঁড়ে রাখার কারণে এখানকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। শুধু স্থানীয় বাসিন্দারাই নয়, এই পথে যাতায়াতকারী লাখ লাখ মানুষ প্রতিনিয়তই সীমাহীন ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন। ধুলোয় অতিষ্ঠ হয়ে অনেকেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন। যেসব দোকানপাট খোলা রয়েছে, তাদেরও মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্যের দোকানিরা মহাবিপাকে পড়েছেন। ধুলোবালি মিশ্রিত খাবার খেয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কেউ কেউ হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন বাসার অলিগলির প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে অনেকেই গত ৬ মাস ধরে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছেন। স্থানীয়রা বলছেন, ২০১৭ সাল থেকে মেট্রোরেলের কাজ শুরু হয়েছে। তখন থেকে এখন পর্যন্ত ওই এলাকার মানুষের দুর্ভোগ আর দুর্গতির শেষ নেই। মেট্রোরেলের কাজ শেষ হলেও নিচের অংশে এখনো অবরোধ করে রাখা হয়েছে। এতে রাস্তা সরু হয়ে গেছে। দুইদিকের যানবাহন এখন ১০/১২ ফুট রাস্তা দিয়ে পারাপার হচ্ছে। এতে দিনরাত সব সময়ই এই এলাকায় যানজট থাকছেই। মাঝে মধ্যে গণপরিবহন আটকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলে যায়, তবুও যানজট কমে না। মধ্যরাত পর্যন্ত লেগে থাকে যানজট। সিটি করপোরেশনের কাজের পাশাপাশি মেট্রোরেলের কাজের জন্য রাস্তা বন্ধ রাখা হয় সময়ে সময়ে। এতে যানজট অসহনীয় রূপ নেয়।
বেলা ১২টার দিকে দেখা যায়, কয়েকজন স্কুলছাত্রী লাফিয়ে ড্রেন পার হচ্ছেন। একজন আরেক জনের হাত টেনে ড্রেন থেকে তুলছেন। কথা হলে তারা জানান, রাস্তার কাজ চলমান থাকায় অনেক পথ ঘুরে আসতে সময় লাগবে। আগে যে পথে বাসায় যেতেন, এখন সেই পথ বন্ধ। তাই বিকল্প পথে বাসায় যেতে ঝুঁকি নিয়ে নির্মাণাধীন ড্রেনের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। শুধু স্কুলছাত্রীরা নয়, এলাকার অনেকই কোনো উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন। দেখা যায়নি নিরাপত্তা কর্মীদেরও।
মো. শিমুল নামের এক পথচারী বলেন, আগে তালতলা থেকে মিরপুর-১০ এ বাসে যাতায়াত করতাম। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির পর এখন বাসের আগে হেঁটেই যাতায়াত করি। তবে রাস্তা এমনভাবে কাটা হয়েছে ফুটপাথ দিয়ে হাঁটার মতোও অবস্থা নেই। সব সময় দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকি কখন ধাক্কা খেয়ে ড্রেনে পড়ে যাই। এ ছাড়া ধুলোবালিতে নাক, মুখসহ জামাকাপড় নষ্ট হয়ে যায়। গত ৫/৬ মাস ধরে এই খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। আর আমাদের ভোগান্তি বাড়ছে। কবে যে এই অবস্থা থেকে আমরা মুক্তি পাবো। এনিয়ে সংশ্লিষ্টদের কোনো মাথাব্যথা নেই। মিজান নামের এক চা দোকানি বলেন, ধুলোর কারণে মানুষ চা খেতে আসে না। সারাদিন বসে থেকেও ২০০ টাকার চা বিক্রি করতে পারি না। প্রতি মুহূর্তেই ধুলোবালি উড়ে এসে চায়ের মধ্যে পড়ে। রুটি, বিস্কুটের প্যাকেট খোলা যায় না। তবুও বসে থাকি যদি দোকান ভাড়াটা উঠানো যায়। গত ৬ মাসের বেশি সময় ধরে এমনই দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে দিন পার করছি। মোদির দোকানি কামাল হোসেন বলেন, প্রতি আধা ঘণ্টা পরপর দোকান ঝাড়ু দিতে হয়। ধুলোয় দোকানের মালামাল নষ্ট হয়ে যায়। আগে মেট্রোরেলের কাজের কারণে অসুবিধা হতো। এখন হয় সিটি করপোরেশনের খোঁড়াখুঁড়িতে। রাস্তা খুঁড়ে রেখে দেয়। সময় নিয়ে কাজ করে। যদি যেটুকু খুঁড়ে সঙ্গে সঙ্গে সেটুকুর কাজ করতো তাহলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। এখন এই এলাকার মানুষ মহাবিপদে আছে। শিক্ষার্থী রিয়াদ হোসেন বলেন, প্রতিদিনই ধুলোর মধ্যেই যাতায়াত করতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে সিটি করপোরেশনের পানির গাড়ি দেখি। তবে তারা ভালো জায়গায় পানি ছিটায়। যেখানে ধুলোবালি আছে সেখানে ছিটানো হচ্ছে না। সিটি করপোরেশন মানুষকে দেখানোর জন্য কাজ করছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

রাইসুল ইসলাম নামের একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সিটি করপোরেশন রাস্তা কেটে মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। ৬ মাসের বেশি সময় জনদুর্ভোগ হলেও কর্তৃপক্ষ নাছোড়বান্দা। মেয়র বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শনে যায়। নানা পদক্ষেপ নেয়। এখানে কেন আসে না। প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মানুষের কত কষ্ট আর ভোগান্তি হয় একবার এসে দেখুক।
দীর্ঘ সময় ধরে খোঁড়াখুঁড়িতে মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করে নির্মাণ কাজের প্রকৌশলী ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) মো. শহিদুল ইসলাম  বলেন, গত ৬ মাসের অধিক সময় ধরে ড্রেন নির্মাণ চলছে। এতে রাস্তা কাটতে হচ্ছে। এটি সিটি করপোরেশনের কাজ। সিটি করপোরেশন থেকেই প্রায় ১৫ কোটি টাকার কাজের টেন্ডার হয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে। রাস্তার একপাশে কাজ চলমান থাকায় ওই অংশ বন্ধ করে কাজ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে তালতলা অংশ থেকে শেওড়াপাড়ার কিছু অংশের কাজ শেষ হয়েছে। যা চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। নির্মাণ কাজের জন্য ধুলোবালি হচ্ছে। এজন্য মাঝেমধ্যে পানি ছিটানো হয়। যাতে ধুলোবালি কম হয়। এ ছাড়া অলিগলির মুখ বন্ধ করে দেয়ার কারণ হচ্ছে কিছু গলিতেও কাজ চলছে। তবে আশা করি খুব দ্রুতই কাজ শেষ করবো।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের বক্তব্য জানতে এক সপ্তাহ ধরে ফোনে চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেন, বিষয়টি আগে আমার জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করবো।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির এমন চিত্র শুধু বেগম রোকেয়া সরণিতেই সীমাবদ্ধ নয়। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়তই খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। রাজধানীর উত্তরা, বাড্ডা, রামপুরা, মগবাজার, লালবাগ, তেজগাঁও, কাওরান বাজার, কেরানীগঞ্জসহ অন্তত ৩০ থেকে ৪০টি স্থানে রাস্তা খুঁড়ে রাখা হয়েছে। এতে প্রতিনিয়তই দুর্ভোগে পড়ছেন নগরবাসী।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক ও নগর পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান  বলেন, সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির অন্যতম কারণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের বাস্তবায়ন অথবা বিভিন্ন পরিষেবার রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি। তবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মসূচি পৃথকভাবে গ্রহণ এবং সমন্বয়হীনতার কারণে অনেক সময় একটা সড়কে একাধিকবার খোঁড়াখুঁড়ি করতে দেখা যায়। এতে ধুলোবালি, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, যানজট-জলজটসহ বিভিন্ন ধরনের জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছে যাচ্ছে দিন দিন। সবগুলো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে পরিকল্পনা করে, পরিকল্পনামাফিক বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ, পারস্পরিক সমন্বয় এবং সমঝোতার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করলে এমন দুর্ভোগ হয় না। এ জন্য রাজউকের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় প্রস্তাবিত সমন্বিত ইউটিলিটি ডাক্ট বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সূএ:মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com