দীর্ঘ ৯ বছরেও অগ্রগতি নেই তনু হত্যা মামলায়

ফাইল ছবি

 

ডেস্ক রিপোর্ট : সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের ৯ বছর পূর্ণ হবে বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ)। এ ৯ বছরেও তনুকে ধর্ষণের পর হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্তদের চিহ্নিত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদিকে গত চার বছর ধরে মামলার বাদীপক্ষ তনুর পরিবারের সঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তার কোনো যোগাযোগ নেই বলে পরিবারের অভিযোগ। তনু হত্যার বিচারের আশা ছেড়ে দিলেও পরিবর্তিত সরকার ব্যবস্থার কারণে আবারও বিচার পাওয়ার আশা করছেন তনুর মা-বাবা।

 

বিচার না পাওয়া নিয়ে মামলার বাদী তনুর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন বলেন, এতদিন আওয়ামী লীগ সরকার ছিল, তারা চায়নি এ মামলার বিচার হোক। এখন আমরা ড. ইউনূস সরকারের কাছে বিচার চাই।

তিনি আরও বলেন, যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে রহস্য বের হতো, তাদেরই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে না। পরিবারের প্রতিটি সদস্য ও আত্মীয়স্বজন এমনকি শিক্ষকরাও সাক্ষ্য দিয়েছেন, আর কি বাকি রইল? বিচার চেয়ে কী লাভ? গরিবের ওপর জুলুমের বিচার হয় না।

 

তনুর মা আনোয়ারা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তনুকে অনেক কষ্ট করে বড় করেছি। কী বেদনা নিয়ে বেঁচে আছি, আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। ৯ বছর যারা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন তাদেরও আইনের আওতায় আনা হোক। তারা মামলা নষ্ট করে দিয়েছে। ওদেরও বিচার করতে হবে। পিবিআই আমার মেয়ে হত্যায় জড়িত কাউকে ধরতে পারেনি।

 

তিনি আরও বলেন, ঢাকায় বসে আমাদের ডেকে পাঠিয়ে উল্টো হয়রানি করেছে। আমরা গরিব বলে মেয়ে হত্যার বিচার পাব না। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার যদি দুনিয়ায় না হয়, আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে রাখলাম। আল্লাহর বিচার বড় বিচার।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, আমি ঈদের আগে কুমিল্লায় যাব। এ মামলার তদন্ত তড়িঘড়ি করে করা যাবে না। কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ঘটনাস্থলে যেতে হয়। আমরা কাজ করছি। সময় হলে মামলার বাদীপক্ষসহ সবার সঙ্গেই দেখা করব। আমরা আসামিদের শনাক্ত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।

 

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় টিউশনি করতে গিয়ে বাসায় ফেরেননি তনু। পরে স্বজনরা খোঁজাখুঁজি করে রাতে বাসার অদূরে একটি জঙ্গলে তনুর মরদেহ পায়। পরেরদিন তার বাবা ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। থানা পুলিশ ও ডিবির পর ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। ২০১৭ সালের মে মাসে সিআইডি তনুর জামাকাপড় থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিনজন পুরুষের শুক্রাণু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল।

সর্বশেষ সন্দেহভাজন হিসেবে তিনজনকে ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সিআইডির একটি দল জিজ্ঞাসাবাদ করে। এর মধ্যে ২০২০ সালের নভেম্বরে মামলাটির দায়িত্ব পিবিআইকে দেওয়া হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয় পিবিআই পরিদর্শক মজিবুল হককে। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার শুরুর দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট তনুর খালাতো বোন লাইজু জাহানের সাক্ষ্য নেওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়। নির্ধারিত সময়ে তনুর মা-বাবা ও ভাইসহ লাইজু জাহান কুমিল্লা পিবিআই কার্যালয়ে হাজির হওয়ার পর তাদের জানানো হয় তদন্ত কর্মকর্তা অসুস্থ তাই সাক্ষ্য গ্রহণ স্থগিত করা হয়। এরপর আর আলোর মুখ দেখেনি মামলার কার্যক্রম।

 

গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠবারের মতো মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল করা হয়। এবার তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয় পিবিআইয়ের ঢাকার আরেক পরিদর্শক তরিকুল ইসলামকে।

 

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুকে ২০১৬ সালের ২০ মার্চ ধর্ষণের পর হত্যা করে মরদেহ ফেলে রাখা হয় জঙ্গলে। বৃহস্পতিবার তনুর নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মসজিদে দোয়া ও এতিম শিশুদের ইফতার করানো হবে জানায় তনুর পরিবার। সূএ: বার্তাবাজার

 

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় চাকরি, পুতুলের নামে মামলা

» পুরোনো রাজনীতি আমরা চাই না : নাহিদ ইসলাম

» সাবেক সেনা কর্মকর্তা-আমলাদের নিয়ে ‘জনতার দল’র আত্মপ্রকাশ

» গাজায় গণহত্যা বন্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালানোর আহ্বান জামায়াত আমিরের

» বিএনপিকে আন্ডারস্টিমেট করার সুযোগ নেই : জয়নুল আবদিন ফারুক

» গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৮৫, আহত ১৩৩

» বিআরটিসির ‘ঈদ স্পেশাল সার্ভিস’ শুরু ২৫ মার্চ

» ব্যাংকারদেরও বেতন হবে ২৩ মার্চ

» উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ৪ সিদ্ধান্ত গ্রহণ

» প্রাইম ব্যাংক ও ঢাকা আহছানিয়া মিশন-এর মধ্যে চুক্তি সাক্ষর

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

দীর্ঘ ৯ বছরেও অগ্রগতি নেই তনু হত্যা মামলায়

ফাইল ছবি

 

ডেস্ক রিপোর্ট : সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের ৯ বছর পূর্ণ হবে বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ)। এ ৯ বছরেও তনুকে ধর্ষণের পর হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্তদের চিহ্নিত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদিকে গত চার বছর ধরে মামলার বাদীপক্ষ তনুর পরিবারের সঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তার কোনো যোগাযোগ নেই বলে পরিবারের অভিযোগ। তনু হত্যার বিচারের আশা ছেড়ে দিলেও পরিবর্তিত সরকার ব্যবস্থার কারণে আবারও বিচার পাওয়ার আশা করছেন তনুর মা-বাবা।

 

বিচার না পাওয়া নিয়ে মামলার বাদী তনুর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন বলেন, এতদিন আওয়ামী লীগ সরকার ছিল, তারা চায়নি এ মামলার বিচার হোক। এখন আমরা ড. ইউনূস সরকারের কাছে বিচার চাই।

তিনি আরও বলেন, যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে রহস্য বের হতো, তাদেরই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে না। পরিবারের প্রতিটি সদস্য ও আত্মীয়স্বজন এমনকি শিক্ষকরাও সাক্ষ্য দিয়েছেন, আর কি বাকি রইল? বিচার চেয়ে কী লাভ? গরিবের ওপর জুলুমের বিচার হয় না।

 

তনুর মা আনোয়ারা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তনুকে অনেক কষ্ট করে বড় করেছি। কী বেদনা নিয়ে বেঁচে আছি, আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। ৯ বছর যারা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন তাদেরও আইনের আওতায় আনা হোক। তারা মামলা নষ্ট করে দিয়েছে। ওদেরও বিচার করতে হবে। পিবিআই আমার মেয়ে হত্যায় জড়িত কাউকে ধরতে পারেনি।

 

তিনি আরও বলেন, ঢাকায় বসে আমাদের ডেকে পাঠিয়ে উল্টো হয়রানি করেছে। আমরা গরিব বলে মেয়ে হত্যার বিচার পাব না। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার যদি দুনিয়ায় না হয়, আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে রাখলাম। আল্লাহর বিচার বড় বিচার।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, আমি ঈদের আগে কুমিল্লায় যাব। এ মামলার তদন্ত তড়িঘড়ি করে করা যাবে না। কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ঘটনাস্থলে যেতে হয়। আমরা কাজ করছি। সময় হলে মামলার বাদীপক্ষসহ সবার সঙ্গেই দেখা করব। আমরা আসামিদের শনাক্ত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।

 

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় টিউশনি করতে গিয়ে বাসায় ফেরেননি তনু। পরে স্বজনরা খোঁজাখুঁজি করে রাতে বাসার অদূরে একটি জঙ্গলে তনুর মরদেহ পায়। পরেরদিন তার বাবা ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। থানা পুলিশ ও ডিবির পর ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। ২০১৭ সালের মে মাসে সিআইডি তনুর জামাকাপড় থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিনজন পুরুষের শুক্রাণু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল।

সর্বশেষ সন্দেহভাজন হিসেবে তিনজনকে ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সিআইডির একটি দল জিজ্ঞাসাবাদ করে। এর মধ্যে ২০২০ সালের নভেম্বরে মামলাটির দায়িত্ব পিবিআইকে দেওয়া হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয় পিবিআই পরিদর্শক মজিবুল হককে। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার শুরুর দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট তনুর খালাতো বোন লাইজু জাহানের সাক্ষ্য নেওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়। নির্ধারিত সময়ে তনুর মা-বাবা ও ভাইসহ লাইজু জাহান কুমিল্লা পিবিআই কার্যালয়ে হাজির হওয়ার পর তাদের জানানো হয় তদন্ত কর্মকর্তা অসুস্থ তাই সাক্ষ্য গ্রহণ স্থগিত করা হয়। এরপর আর আলোর মুখ দেখেনি মামলার কার্যক্রম।

 

গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠবারের মতো মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল করা হয়। এবার তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয় পিবিআইয়ের ঢাকার আরেক পরিদর্শক তরিকুল ইসলামকে।

 

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুকে ২০১৬ সালের ২০ মার্চ ধর্ষণের পর হত্যা করে মরদেহ ফেলে রাখা হয় জঙ্গলে। বৃহস্পতিবার তনুর নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মসজিদে দোয়া ও এতিম শিশুদের ইফতার করানো হবে জানায় তনুর পরিবার। সূএ: বার্তাবাজার

 

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com