স্বপ্নের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি লিখেছিলেন পা দিয়ে লিখে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া অদম্য তামান্না আক্তার নূরা। গত ২৪ জানুয়ারি লেখা ওই চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
তামান্নার চিঠি পেয়ে সোমবার বিকেলে ও সন্ধ্যায় পৃথক দুটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে কল দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা। একই সঙ্গে তারা দুই বোনই তামান্নার স্বপ্নপূরণে সব সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া আলীপুরের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন শিল্পী দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে বড় তামান্না আক্তার নূরা। উপজেলার বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি। ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ফলাফলে এসএসসির মতো এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি। এছাড়াও জেএসসি ও পিইসিতেও পেয়েছিলেন জিপিএ-৫।
সোমবার ভালোবাসা দিবসে তার জীবনে ঘটে যায় ভিন্ন ঘটনা। সন্ধ্যার দিকে তামান্না পড়াশোনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখন ঘড়ির কাটায় সন্ধ্যা ৬টা ৫৬ মিনিট। হঠাৎ হোয়াটসঅ্যাপে ফোন। ফোন রিসিভ করতেই তামান্নার ফোনের ওপাশ থেকে এক নারী বলে উঠলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছিলাম। আমি কি তামান্নার সঙ্গে কথা বলছি? ফোনের ওপাশের কণ্ঠস্বর শুনে তামান্নার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রী তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন!
এ সময় আবেগে কেঁদেই ফেললেন তামান্না। এক পর্যায়ে কান্না থামাতে বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কান্না থামিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সালাম দেন তামান্না। এ সময় তামান্না প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা এবং তার স্বপ্ন পূরণে প্রধানমন্ত্রীকে পাশে চান।
প্রধানমন্ত্রীও তার স্বপ্ন পূরণে পাশে থাকার আশ্বাস দেন। তখন তামান্নাকে ‘বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে’ একটা আবেদন করার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। ওই ট্রাস্টের মাধ্যমে তাকে সব সহযোগিতা দেবেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তামান্নার সঙ্গে টানা চার মিনিটের কথোপোকথনে প্রধানমন্ত্রী তামান্নাকে সাহস না হারাতে বলেন।
এর আগে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তামান্নার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ফোন দেন শেখ রেহানা। ফোন রিসিভ করতেই তামান্নার ফোনের ওপাশের নারী বলেন, আমি লন্ডন থেকে শেখ রেহানা বলছি। আমি কি তামান্না নূরার সঙ্গে কথা বলছি? টানা ভালো রেজাল্ট করায় তোমাকে অভিনন্দন। তোমার সংগ্রামের কথা শুনেছি। তুমি খুব সাহসী। তুমি এগিয়ে যাও। আমরা দুই বোন বেঁচে থাকা পর্যন্ত তোমাকে সহযোগিতা করে যাব। যারা সাহস রেখে চলে তারা কখনো হেরে যায় না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে পেরে দারুন খুশি তামান্না। তিনি বলেন, দুইজনের সঙ্গে কথা বলতেই ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। অনুভূতিটা আপনাদের বুঝাতে পারব না। এতোটাই আনন্দিত হয়েছিলাম যে, কেঁদে ফেলেছিলাম। প্রধানমন্ত্রী আমাকে নিয়মিত ভালোভাবে পড়াশোনা এবং নিজের যত্ন নিতে বলেছেন।
তামান্না ২০১৯ সালে বাঁকড়া জনাব আলী খান মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। একই ফল করেছিলেন পিইসি ও জেএসসিতেও। তার বাবা রওশন আলী ঝিকরগাছা উপজেলার ছোট পৌদাউলিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার (ননএমপিও) শিক্ষক। মা খাদিজা পারভীন গৃহিণী। তামান্নার ছোট বোন মুমতাহিনা রশ্মি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ভাই মুহিবুল্লাহ তাজ প্রথম শ্রেণিতে পড়ে।
তামান্নার বাবা রওশন আলী বলেন, তামান্নার লেখা চিঠি প্রথমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, তারপর যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। একই সঙ্গে তামান্নার আঁকা বিভিন্ন ছবিও দেয়া হয় ওই চিঠির সঙ্গে। পরম করুণাময় আল্লাহর অসীম দয়ায় তামান্নার সঙ্গে আজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা কথা বলেছেন। আশা করি সবার দোয়ায় তামান্নার স্বপ্ন পূরণ হবে।
এদিকে তামান্নার ভালো ফলাফলে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন টিম পজিটিভ বাংলাদেশের মুখপাত্র গোলাম রাব্বানী।
নিজের ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি জানান, তামান্নাকে দেখতে গিয়ে তাকে কথা দিয়েছিলাম তামান্নার জীবন সংগ্রামে সবসময়ই পাশে থাকবে টিম পজিটিজ বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে তাকে এককালীন ৫০ হাজার টাকা, পরবর্তীতে দুই ধাপে ৩০ হাজার টাকা অর্থসহায়তাসহ বিভিন্ন সময়ে সাধ্যমতো সহায়তার চেষ্টা করা হয়েছে।