ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য ব্যবস্থাপনা

 চৌধুরী তাসনীম হাসিন :বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস আজ। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে এ দিনটি। বর্তমান বিশ্বে ঘাতক ব্যাধিগুলোর মধ্যে অন্যতম ডায়াবেটিস। যা নীরবে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে মানব শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। অপরিমিত খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনাচরণ এই নীরব ঘাতক ব্যাধির মূল কারণ। ঠিক একইভাবে পরিকল্পিত খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও সুনিয়ন্ত্রিত জীবনাচরণ একজন ডায়াবেটিস রোগীকে সুস্থ রাখতে পারে বছরের পর বছর।

 

আমাদের দৈনিক খাদ্যতালিকায় প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার এবং পানির সমন্বয় থাকা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্যতালিকাতে কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবারগুলো যেভাবে নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে থাকতে হবে তেমনি থাকতে হবে আঁশ ও আঁশযুক্ত খাবার।

 

সুদীর্ঘ সময় যারা অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তারা অনেক ক্ষেত্রেই হৃদরোগ, স্ট্রোক অথবা কিডনি রোগে আক্রান্ত হতে পারেন এবং সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে অনেকের এই রোগগুলোর লক্ষণগুলো সুপ্ত থাকে। এক্ষেত্রে খুব সহজেই আমরা বুঝতে পারছি একজন ডায়াবেটিস রোগীর রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। চিনি, গুড় ইত্যাদি দিয়ে তৈরি মিষ্টান্ন যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। মিষ্টি ফল, আম, কলা, লিচু, আঙ্গুর, আনার, বেল ইত্যাদি সীমিত পরিমাণে খাওয়া যাবে। এড়িয়ে চলতে হবে মাটির নিচের সবজি আলু, মুলা, গাজর, কচু, কচুমুখী ইত্যাদি।

 

এছাড়াও যাদের কিছুটা অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস তাদের কর্নফ্লাওয়ার, কাস্টার্ড পাউডার, শুকনো খাবার যেমন-মুড়ি, চিড়া, খই, চানাচুর, খেজুর ইত্যাদি সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি এড়িয়ে চলতে হবে অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার। ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য ব্যবস্থাপনা প্রতিদিন একটি শাক বা পাতাজাতীয় সবজি থাকা বাঞ্ছনীয়। প্রতিদিন ৩০-৫০ মিনিট শরীরচর্চার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। প্রতিটি ডায়াবেটিস রোগীর ওজন, উচ্চতা, বয়স, শারীরিক পরিশ্রমের হার এবং রক্তের সুগার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় প্যারামিটারের ওপর ভিত্তি করে খাদ্যতালিকা নির্ণয় করা প্রয়োজন। একজন সুদক্ষ পুষ্টিবিদই পারেন এই খাদ্য পরিকল্পনাটি সঠিকভাবে নির্ণয় করতে। অন্তত প্রতি তিন মাসে একবার পুষ্টিবিদের শরণাপন্ন হয়ে ডায়াবেটিস রোগীকে তার দৈনন্দিন খাদ্য-ব্যবস্থাপনার রূপরেখা তৈরি করে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক : চিফ ক্লিনিকাল ডায়াটিশিয়ান ও হেড অব দ্য ডিপার্টমেন্ট, ক্লিনিকাল ডায়েটেটিকস অ্যান্ড নিউট্রিশন, ইউনাইটেড হাসপাতাল

সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বিশেষ অভিযানে ১৪৭৮ জন গ্রেফতার

» মৌলিক সংস্কারে ঐকমত্য অনেক দূর: আখতার হোসেন

» একজন উপদেষ্টা স্বার্থসিদ্ধির জন্য মুরাদনগরে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন: ফখরুল

» মুরাদনগরে প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তি ‘বিএনপি কর্মী নয়’: রিজভী

» ইমাম ও খতিবদের বেতন ২০১৫ সালের পে স্কেল অনুযায়ী দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি

» সবার জন্য বাসযোগ্য ও বৈষম্যহীন পৃথিবী গড়তে চাই: প্রধান উপদেষ্টা

» বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে কানাডার হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ

» গ্রীষ্মে খাবার সতেজ রাখার স্মার্ট উপায়

» আউটওয়ার্ড রেমিটেন্সের জন্য ভিসা ডিরেক্ট ফর অ্যাকাউন্ট চালু করতে ভিসার সঙ্গে ব্র্যাক ব্যাংকের চুক্তি

» বড়াইগ্রামে শিশু ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে এক বৃদ্ধ গ্রেফতার

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য ব্যবস্থাপনা

 চৌধুরী তাসনীম হাসিন :বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস আজ। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে এ দিনটি। বর্তমান বিশ্বে ঘাতক ব্যাধিগুলোর মধ্যে অন্যতম ডায়াবেটিস। যা নীরবে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে মানব শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। অপরিমিত খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনাচরণ এই নীরব ঘাতক ব্যাধির মূল কারণ। ঠিক একইভাবে পরিকল্পিত খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও সুনিয়ন্ত্রিত জীবনাচরণ একজন ডায়াবেটিস রোগীকে সুস্থ রাখতে পারে বছরের পর বছর।

 

আমাদের দৈনিক খাদ্যতালিকায় প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার এবং পানির সমন্বয় থাকা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্যতালিকাতে কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবারগুলো যেভাবে নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে থাকতে হবে তেমনি থাকতে হবে আঁশ ও আঁশযুক্ত খাবার।

 

সুদীর্ঘ সময় যারা অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তারা অনেক ক্ষেত্রেই হৃদরোগ, স্ট্রোক অথবা কিডনি রোগে আক্রান্ত হতে পারেন এবং সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে অনেকের এই রোগগুলোর লক্ষণগুলো সুপ্ত থাকে। এক্ষেত্রে খুব সহজেই আমরা বুঝতে পারছি একজন ডায়াবেটিস রোগীর রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। চিনি, গুড় ইত্যাদি দিয়ে তৈরি মিষ্টান্ন যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। মিষ্টি ফল, আম, কলা, লিচু, আঙ্গুর, আনার, বেল ইত্যাদি সীমিত পরিমাণে খাওয়া যাবে। এড়িয়ে চলতে হবে মাটির নিচের সবজি আলু, মুলা, গাজর, কচু, কচুমুখী ইত্যাদি।

 

এছাড়াও যাদের কিছুটা অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস তাদের কর্নফ্লাওয়ার, কাস্টার্ড পাউডার, শুকনো খাবার যেমন-মুড়ি, চিড়া, খই, চানাচুর, খেজুর ইত্যাদি সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি এড়িয়ে চলতে হবে অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার। ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য ব্যবস্থাপনা প্রতিদিন একটি শাক বা পাতাজাতীয় সবজি থাকা বাঞ্ছনীয়। প্রতিদিন ৩০-৫০ মিনিট শরীরচর্চার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। প্রতিটি ডায়াবেটিস রোগীর ওজন, উচ্চতা, বয়স, শারীরিক পরিশ্রমের হার এবং রক্তের সুগার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় প্যারামিটারের ওপর ভিত্তি করে খাদ্যতালিকা নির্ণয় করা প্রয়োজন। একজন সুদক্ষ পুষ্টিবিদই পারেন এই খাদ্য পরিকল্পনাটি সঠিকভাবে নির্ণয় করতে। অন্তত প্রতি তিন মাসে একবার পুষ্টিবিদের শরণাপন্ন হয়ে ডায়াবেটিস রোগীকে তার দৈনন্দিন খাদ্য-ব্যবস্থাপনার রূপরেখা তৈরি করে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক : চিফ ক্লিনিকাল ডায়াটিশিয়ান ও হেড অব দ্য ডিপার্টমেন্ট, ক্লিনিকাল ডায়েটেটিকস অ্যান্ড নিউট্রিশন, ইউনাইটেড হাসপাতাল

সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com