ছবি সংগৃহীত
অনলাইন ডেস্ক : শুক্রবার হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রকাশ্যে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এক পর্যায়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যান তিনি। জেলেনস্কি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ওই ঘটনার জন্য ট্রাম্পের কাছে ক্ষমা চাইবেন না। এমনকি নিজের আচরণের জন্য দুঃখপ্রকাশও করবেন না।
তবে সম্পর্ক মেরামতে রাজি তিনি। জেলেনস্কির কথায়, “এই ধরনের বাদানুবাদ উভয় পক্ষের জন্যই খারাপ। ট্রাম্প যদি ইউক্রেনকে সাহায্য না-করেন, তবে রাশিয়ার আক্রমণ ঠেকানো আমাদের পক্ষে মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে। তবে আমি নিশ্চিত, এই সম্পর্ক মেরামত করা সম্ভব। কারণ, এটা শুধু দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে সম্পর্কের বিষয় নয়। এটা দুই দেশের মধ্যেকার ঐতিহাসিক সম্পর্ক। আমি সব সময় আমার দেশের মানুষের পক্ষ থেকে আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।”
এদিকে, ট্রাম্প-জেলেনস্কির বাদানুবাদের পর ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছেন ইউরোপের একাধিক দেশের রাষ্ট্রনেতা। তারা জেলেনস্কি এবং ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। আমেরিকার সঙ্গে ইউরোপের যে সমস্ত দেশের বন্ধুত্ব রয়েছে, মূলত তারাই জেলেনস্কিকে সমর্থন করেছেন। ট্রাম্প আমেরিকার কুর্সিতে বসার পর থেকে এই মিত্র দেশগুলো আতঙ্কিত। তাদের ধারণা, জেলেনস্কিকে চাপে রেখে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকেই জয়ী ঘোষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে ট্রাম্পের। হোয়াইট হাউসে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের নজিরবিহীন বাদানুবাদের পর একযোগে তাই ইউরোপের রাষ্ট্রনেতারা মুখ খুলেছেন।
ইউক্রেন শান্তি চায়: জার্মানি
ট্রাম্প-জেলেনস্কি সংঘাতের পর জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বলেন, “ইউক্রেনের মানুষ শান্তি চায়। শান্তি কত জরুরি, তা তাদের চেয়ে বেশি কেউ জানেন না। সেই কারণেই আমরা সকলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির দাবি করে আসছি। জার্মানি এবং ইউরোপের উপর ভরসা রাখতে পারে ইউক্রেন।”
ইউক্রেনের মানুষ রুশ আগ্রাসনের শিকার: ফ্রান্স
ফান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁখো পর্তুগালের সাংবাদিকদের সামনে বলেন, “রাশিয়া আগ্রাসী, ইউক্রেনের মানুষ সেই আগ্রাসনের শিকার। আমরা তিন বছর আগেও ইউক্রেনকে সাহায্য করতে এবং রাশিয়ার উপর বিধিনিষেধ চাপাতে সম্মত হয়েছিলাম। এখনও তা-ই করতে চাই। আমরা বলতে আমি আমেরিকা, সমগ্র ইউরোপ, জাপান, কানাডা— সকলের কথাই বলছি। ইউক্রেন নিজের সম্মানের জন্য, স্বাধীনতার জন্য, ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য এই যুদ্ধ করছে।”
ভেদাভেদ নয়, একজোট হতে হবে: ইতালি
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেন, “পশ্চিমি শক্তির মধ্যে যেকোনও ভেদাভেদ আমাদের আরও দুর্বল করে তোলে। আমেরিকা, ইউরোপের মধ্যে অবিলম্বে আলোচনা প্রয়োজন। আমাদের সামনে যে চ্যালেঞ্জ এসেছে, কীভাবে তার মোকাবিলা সম্ভব, তা নিয়ে কথা বলা দরকার। ইউক্রেনের মাধ্যমে আমাদের সেই চ্যালেঞ্জ শুরু হয়েছে। কয়েক বছর ধরে আমরা ভালভাবেই সেই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করেছি। আগামী দিনে ইতালি তার বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সামনে এই আলোচনার প্রস্তাবই রাখতে চায়।”
প্রকাশ্যে বাগবিতণ্ডায় পুতিনের জয় হয়েছে: ডেনমার্ক
ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোক্কে রাসমুসেন বলেছেন, “ইউক্রেনের পেটে তো ঘুষি মারা হল! বন্ধুদের মধ্যে আলোচনার রাস্তা খোলা রাখতে হবে। কিন্তু সেটা এভাবে প্রকাশ্যে ক্যামেরার সামনে হলে একজনই জিতে যান। আর তিনি (পুতিন) ক্রেমলিনে বসে আছেন।”
ইউক্রেন, ভয় পেয়ো না: ইউরোপীয় কমিশন
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেন, “ইউক্রেনের মানুষের সাহসকে সম্মান জানাই। কঠোর হোন, সাহসী হোন, ভয় পাবেন না। প্রেসিডেন্ট, আপনি একা নন। আমরা শান্তির জন্য আপনার পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই চালিয়ে যাব।”
ইউক্রেনের পাশে আছি: মলডোভা
মলডোভার প্রেসিডেন্ট মাইয়া স্যান্ডু বলেন, “সত্যিটা খুব সহজ। রাশিয়া ইউক্রেনকে আক্রমণ করেছিল। রাশিয়াই এখানে আগ্রাসী। ইউক্রেন নিজেদের স্বাধীনতার জন্য লড়ছে। আমরা সকলে ইউক্রেনের পাশে আছি।”
পাশে আছি: স্পেন
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেড্রো স্যাঞ্চেস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, “ইউক্রেন, স্পেন তোমার পাশে আছে।”
আগ্রাসনের ইতি চাই: নেদারল্যান্ডস
নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কুফ বলেন, “নেদারল্যান্ডস ইউক্রেনকেই সমর্থন করে। আমরা স্থায়ী শান্তি চাই। যে আগ্রাসন রাশিয়া শুরু করেছে, ইউক্রেনের মানুষের জন্য, ইউরোপের মানুষের জন্য আমরা সেই আগ্রাসনের ইতি চাই।”
ইউক্রেন একা নয়: পোল্যান্ড
পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাক্স সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, “জেলেনস্কি, ইউক্রেনের বন্ধুগণ, আপনারা একা নন।”
ইউক্রেনের পাশে আছি: চেক প্রজাতন্ত্র
চেক প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট পিটার প্যাভেল লিখেছেন, “আমরা ইউক্রেনের পাশে দাঁড়াচ্ছি। সময় এসেছে, ইউরোপের কিছু করে দেখানো উচিত।” সূত্র: রয়টার্স, ইউরো নিউজ, দ্য গার্ডিয়ান, পিপল