ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কি এবং কেন, বিশ্ব প্রতিক্রিয়া কি?

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক :আচমকা! আবারও! মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কলমের খোঁচায় ১২টি দেশের ওপর নেমে এলো কঠোর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা। হোয়াইট হাউস সূত্রে জানানো হয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তার ঝুঁকি কমানোই এই নিষেধাজ্ঞার প্রধান কারণ। কিন্তু এটি কেবল একটি সাধারণ ঘোষণা নয়, এটি বিশ্বজুড়ে জন্ম দিয়েছে তীব্র বিতর্কের, উসকে দিয়েছে বহু পুরনো ক্ষত। আট বছর আগে ঘটে যাওয়া এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির স্মৃতি ফিরিয়ে আনছে এই নতুন আদেশ।

 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নতুন ঘোষণা দিয়েছেন। যার মাধ্যমে নতুন করে ১২টি দেশের নাগরিকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই দেশগুলো হলো আফগানিস্তান, মিয়ানমার, চাদ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, নিরক্ষীয় গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান এবং ইয়েমেন।

 

তবে এখানেই শেষ নয়! আরও সাতটি দেশের নাগরিকদের জন্য রয়েছে আংশিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা। এই দেশগুলো হলো বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান এবং ভেনিজুয়েলা।

 

আগামী সোমবার রাত ১২:০১ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সকাল ৫:০১) এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। এই সময়সীমা দেওয়া হয়েছে যাতে ২০১৭ সালের মতো বিমানবন্দরে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, যখন প্রায় কোনো আগাম ঘোষণা ছাড়াই একই ধরনের পদক্ষেপ কার্যকর হয়েছিল।

 

কেন এই নিষেধাজ্ঞা?

হোয়াইট হাউস এই নিষেধাজ্ঞাকে সাধারণ জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা হিসেবে বর্ণনা করেছে, যা বিপজ্জনক বিদেশিদের থেকে আমেরিকানদের রক্ষা করবে। ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল ওয়েবসাইটে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে বলেছেন, কলোরাডোর বোল্ডারে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কথিত সন্ত্রাসী হামলা বিদেশি নাগরিকদের সৃষ্ট চরম বিপদকে সামনে এনেছে। যাদের সঠিকভাবে যাচাই করা হয়নি। তিনি উল্লেখ করেন, কলোরাডোর ওই হামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি একজন মিশরীয় নাগরিক।

 

বিশ্ব প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের এই আদেশ, যা আইনগত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে, দেশ-বিদেশে দ্রুত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। সোমালিয়া ঘোষণা করেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যেকোনো নিরাপত্তা সমস্যা সমাধানে কাজ করবে। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সোমালিয়ার রাষ্ট্রদূত দাহির হাসান আবদি বলেছেন যে তার দেশ আমেরিকার সাথে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ককে মূল্য দেয়।

 

ভেনিজুয়েলার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিওসদাদো কাবেলো সতর্ক করে বলেছেন, শুধু ভেনিজুয়েলার জন্য নয় যুক্তরাষ্ট্রে থাকা যে কারও জন্য, একটি বড় ঝুঁকি

 

ডেমোক্র্যাটরা এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করেছেন। ওয়াশিংটন থেকে ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য প্রমিলা জয়পাল একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে বলেছেন, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের মুসলিম নিষেধাজ্ঞা থেকে প্রসারিত এই নিষেধাজ্ঞা, আমাদের বিশ্ব মঞ্চে আরও বিচ্ছিন্ন করবে। আরেক ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য ডন বেয়ার বলেছেন, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতাদের আদর্শের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।

 

আগেরবার কী হয়েছিল
ট্রাম্প ২০১৭ সালে তার প্রথম মেয়াদে একই ধরনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। সেই তালিকায় কিছু দেশ এই নতুন তালিকার মতোই ছিল, যেমন ইরান, লিবিয়া এবং সোমালিয়া। সমালোচকরা এটিকে মুসলিমদের বিরুদদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বলে অভিহিত করেছিলেন, কারণ প্রাথমিকভাবে তালিকাভুক্ত সাতটি দেশই ছিল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। হোয়াইট হাউস পরে নীতিটি সংশোধন করে শেষ পর্যন্ত দুটি অ-মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, উত্তর কোরিয়া এবং ভেনিজুয়েলা যোগ করে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট এটি বহাল রাখে।

 

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২১ সালে এই নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে এটিকে মার্কিন জাতীয় বিবেকের উপর একটি কলঙ্ক বলে অভিহিত করেছিলেন।  সূত্র: বিবিসি

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» আমিরাতে ঈদুল আজহা উদযাপন

» সীমান্তে গরু চোরাচালান কমলেও হত্যা থামেনি : আজাদ মজুমদার

» দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানালেন তারেক রহমান

» এবার নিরাপত্তা নিয়ে শতভাগ কনফিডেন্ট আছি : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

» আজ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা

» বিপুল পরিমাণ মাদকসহ পাঁচজন গ্রেপ্তার

» ঢাকার একটি ঈদ জামাতও নিরাপত্তার বাইরে থাকবে না: ডিএমপি কমিশনার

» তারুণ্যনির্ভর আর্জেন্টিনার দুর্দান্ত জয়

» ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সরকার সচেষ্ট রয়েছে: উপদেষ্টা আসিফ

» রাজধানীতে কোরবানির বর্জ্য অপসারণে প্রস্তুত ২০ হাজার ২৬৭ পরিচ্ছন্ন কর্মী

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কি এবং কেন, বিশ্ব প্রতিক্রিয়া কি?

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক :আচমকা! আবারও! মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কলমের খোঁচায় ১২টি দেশের ওপর নেমে এলো কঠোর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা। হোয়াইট হাউস সূত্রে জানানো হয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তার ঝুঁকি কমানোই এই নিষেধাজ্ঞার প্রধান কারণ। কিন্তু এটি কেবল একটি সাধারণ ঘোষণা নয়, এটি বিশ্বজুড়ে জন্ম দিয়েছে তীব্র বিতর্কের, উসকে দিয়েছে বহু পুরনো ক্ষত। আট বছর আগে ঘটে যাওয়া এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির স্মৃতি ফিরিয়ে আনছে এই নতুন আদেশ।

 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নতুন ঘোষণা দিয়েছেন। যার মাধ্যমে নতুন করে ১২টি দেশের নাগরিকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই দেশগুলো হলো আফগানিস্তান, মিয়ানমার, চাদ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, নিরক্ষীয় গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান এবং ইয়েমেন।

 

তবে এখানেই শেষ নয়! আরও সাতটি দেশের নাগরিকদের জন্য রয়েছে আংশিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা। এই দেশগুলো হলো বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান এবং ভেনিজুয়েলা।

 

আগামী সোমবার রাত ১২:০১ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সকাল ৫:০১) এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। এই সময়সীমা দেওয়া হয়েছে যাতে ২০১৭ সালের মতো বিমানবন্দরে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, যখন প্রায় কোনো আগাম ঘোষণা ছাড়াই একই ধরনের পদক্ষেপ কার্যকর হয়েছিল।

 

কেন এই নিষেধাজ্ঞা?

হোয়াইট হাউস এই নিষেধাজ্ঞাকে সাধারণ জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা হিসেবে বর্ণনা করেছে, যা বিপজ্জনক বিদেশিদের থেকে আমেরিকানদের রক্ষা করবে। ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল ওয়েবসাইটে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে বলেছেন, কলোরাডোর বোল্ডারে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কথিত সন্ত্রাসী হামলা বিদেশি নাগরিকদের সৃষ্ট চরম বিপদকে সামনে এনেছে। যাদের সঠিকভাবে যাচাই করা হয়নি। তিনি উল্লেখ করেন, কলোরাডোর ওই হামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি একজন মিশরীয় নাগরিক।

 

বিশ্ব প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের এই আদেশ, যা আইনগত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে, দেশ-বিদেশে দ্রুত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। সোমালিয়া ঘোষণা করেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যেকোনো নিরাপত্তা সমস্যা সমাধানে কাজ করবে। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সোমালিয়ার রাষ্ট্রদূত দাহির হাসান আবদি বলেছেন যে তার দেশ আমেরিকার সাথে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ককে মূল্য দেয়।

 

ভেনিজুয়েলার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিওসদাদো কাবেলো সতর্ক করে বলেছেন, শুধু ভেনিজুয়েলার জন্য নয় যুক্তরাষ্ট্রে থাকা যে কারও জন্য, একটি বড় ঝুঁকি

 

ডেমোক্র্যাটরা এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করেছেন। ওয়াশিংটন থেকে ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য প্রমিলা জয়পাল একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে বলেছেন, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের মুসলিম নিষেধাজ্ঞা থেকে প্রসারিত এই নিষেধাজ্ঞা, আমাদের বিশ্ব মঞ্চে আরও বিচ্ছিন্ন করবে। আরেক ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য ডন বেয়ার বলেছেন, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতাদের আদর্শের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।

 

আগেরবার কী হয়েছিল
ট্রাম্প ২০১৭ সালে তার প্রথম মেয়াদে একই ধরনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। সেই তালিকায় কিছু দেশ এই নতুন তালিকার মতোই ছিল, যেমন ইরান, লিবিয়া এবং সোমালিয়া। সমালোচকরা এটিকে মুসলিমদের বিরুদদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বলে অভিহিত করেছিলেন, কারণ প্রাথমিকভাবে তালিকাভুক্ত সাতটি দেশই ছিল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। হোয়াইট হাউস পরে নীতিটি সংশোধন করে শেষ পর্যন্ত দুটি অ-মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, উত্তর কোরিয়া এবং ভেনিজুয়েলা যোগ করে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট এটি বহাল রাখে।

 

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২১ সালে এই নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে এটিকে মার্কিন জাতীয় বিবেকের উপর একটি কলঙ্ক বলে অভিহিত করেছিলেন।  সূত্র: বিবিসি

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com