সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক : ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) কর্তৃক জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ জুনায়েদের নামে নামকৃত চত্বর এবং শহীদ আনাসের নামে নামকৃত সড়ক উদ্বোধন করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
সোমবার ডিএসসিসির অঞ্চল-০৫ আওতাভুক্ত ধূপখোলা মাঠ সংলগ্ন চত্বরের এবং দ্বীননাথ সেন সড়কের নতুন নামকরণের অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের চীফ প্রসিকিউটর এডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
ডিএসসিসির ৪৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ১৪ বছরের কিশোর মেহেদী হাসান জুনায়েদ ছাত্রদের পানি খাওয়াতে তাঁর মাটির ব্যাংকে জমানো টাকা নিয়ে এসেছিলেন ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট চানখাঁরপুলে মিছিলরত অবস্থায় তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। ৫ আগস্ট আরও শহীদ হয়েছিলেন শাহারিয়ার খান আনাস। আদর্শ একাডেমি গেন্ডারিয়ার ১০ম শ্রেণির ছাত্র আনাস মায়ের উদ্দেশ্য চিঠি লিখে বীরের মতো মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে নেমে এসেছিলেন চানখাঁরপুলের রাজপথে।
৫ আগস্টের স্মৃতিচারণ করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম নায়ক স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন, ‘চানখাঁরপুল হয়ে শহীদ মিনার যাওয়ার মুখে আমরা বিভিন্ন বাহিনীর হামলার শিকার হই। আমার খুব কাছাকাছি গলিতে আনাস এবং জুনায়েদ শহীদ হয়।’
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এই শহীদদের শুধু স্মরণে রাখলে হবে না, তারা যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রেরণা নিয়ে জীবন দিয়েছে, সেই প্রত্যয়ে আমাদের আজন্ম লড়াই করতে হবে। আর কাউকে যেন ট্যাক্সের টাকায় যে নিরাপত্তা বাহিনী আমাদের নিরাপত্তায় রয়েছে, তাদের গুলিতে শহীদ হতে না হয় এজন্য বিচার ও কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।’
মৎস ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, ‘আনাস ও জুনায়েদের মতো ১৪-১৫ বছরের বাচ্চারা একটি মন নিয়ে জন্মেছিলো বলে অন্যায়কে মেনে নেয়নি।’
শহীদদের রক্ত বৃথা গেলে যারা দায়িত্ব নিয়েছি তারা দায়ী থাকবো উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, এই সন্তানদের রক্ত যেন কখনও বৃথা না যায়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের চীফ প্রসিকিউটর বলেন, চানখাঁরপুলে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের চার্জশিট আগামী ১৪ জুলাই গঠন করা হবে এবং ৫ আগস্ট থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মুখোমুখি করা হবে যেন আগামী এক শতাব্দী আমাদের সন্তানদের গায়ে কেউ হাত তোলার সাহস না পায়।’
ডিএসসিসি প্রশাসক বলেন, ‘আনাস ও জুনায়েদ শুধু দু’টি নাম নয়। এটি একটি চেতনা, একটি আদর্শ।’
ডিএসসিসির পক্ষ থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে সংরক্ষণের সকল ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে উল্লেখ করে প্রশাসক বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় আদর্শে রূপ দিতে হলে জুলাই শহীদদের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
এছাড়া, স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক সারাদেশে শহীদের নামে স্মৃতিফলক তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব জাহেদী।
শহীদ পরিবারের পক্ষে শহীদ আনাসের পিতা শাহারিয়ার খান পলাশ, মাতা সানজিদা খান এবং শহীদ জুনায়েদের পিতা শেখ জামাল হাসান বক্তব্য রাখেন। শহীদ আনাসের মাতা বলেন, ‘যে উদ্দেশ্যে নিয়ে আমার সন্তান জীবন দিয়েছেন সেই উদ্দেশ্য যেন সফল হয়। বৈষম্যহীন, ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে যেন সবাই কাজ করে।’
জুলাই সনদ শহীদ পরিবারদের একমাত্র দাবি হিসেবে এ সময় উল্লেখ করেন তিনি।
নামফলক উন্মোচনের পাশাপাশি অনুষ্ঠানে শহীদদের উদ্দেশ্যে দুআ ও একটি কৃষ্ণচূড়া বৃক্ষরোপণ করা হয়।