জীবনের প্রথম ‘সলো ফ্লাইট’, শেষ করেই উদযাপনের কথা ছিল তৌকিরের

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। বিধ্বস্ত হওয়ার সাথে সাথে প্রশিক্ষণ বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। এ ঘটনায় বিমানের পাইলট বাফা-৭৬ ব্যাচের ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর নিহত হয়েছেন। সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

 

বাহিনীর এক সদস্য জানান, নিহত তৌকির পাবনা ক্যাডেট কলেজের ৩৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। সম্প্রতি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। আজকের দিনটি হতে পারতো ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকিরের জীবনের সবচেয়ে সুখের দিন। আজ জীবনের প্রথম সলো ফ্লাইট ছিল তার। প্রশিক্ষণ চলাকালে একজন শিক্ষানবিস যখন যথেষ্ট দক্ষ হয়ে ওঠেন এবং তার প্রশিক্ষক মনে করেন, তিনি এককভাবে বিমান চালাতে প্রস্তুত, তখনই তাকে প্রথম সলো ফ্লাইটে পাঠানো হয়। এই ফ্লাইটে পাইলটকে সম্পূর্ণ একা সব সিদ্ধান্ত নিতে হয়—রানওয়ে নির্বাচন, টেক-অফ, ইন-ফ্লাইট ম্যানুভারিং এবং ল্যান্ডিংসহ সবকিছু তার নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে।

 

তৌকির সফলভাবে এই ফ্লাইটটি সম্পন্ন করতে পারবেন সেই অপেক্ষায় ছিলেন তার সহকর্মীরা। এমনকি তৌকিরের জীবনের এই বিশেষ দিনটি উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা। এ বিষয়ে বিমানবাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, সোলো ফ্লাইট একজন পাইলটের জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন। সফল ফ্লাইট শেষে সাধারণত জলখেলা হয় ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়। আজ রাতে তৌকিরের জন্য এসব আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। কে জানত মাইলফলক অর্জনের এই দিনটিই তৌকিরের জীবনের শেষ দিন হবে— যোগ করেন সেই সহকর্মী।

 

বিমান বাহিনীর ওই সূত্রটি জানায়, শুরুতে তৌকির বেঁচে ছিলেন; তার পালস পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু এখন তিনি আর নেই। এর আগে তাকে হেলিকপ্টার এমআই ১৭-তে করে রাজধানীর একটি সিএমএইচ হাসপাতালের সিসিইউ-তে ভর্তি করা হয়। ওই সদস্য আরও জানান, বিধ্বস্ত হওয়ার সময় ফ্ল্যাইটেই ছিলেন তৌকির; এটি ছিল তার প্রথম সোলো ফ্লাইট।

 

কী হয়েছিল বিধ্বস্ত হওয়ার শেষ মুহূর্তে। ফ্ল্যাইট লেফট্যানেন্ট তৌকির ইসলাম সাগর কী ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন? এ বিষয়ে বিমানবাহিনীর ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘তৌকিরের আজ প্রথম একক মিশন ছিল, একটু আগে তিনি ডুয়াল ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন। এয়ারক্রাফট টেকঅফ করার একটুখানি যাওয়ার পর এয়ারক্রাফট কোন রিঅ্যাক্ট করছিল না। তারপরে এয়ারক্রাফট স্টল করে, তখন তার কন্ট্রোলে ছিল না। মোবাইল টাওয়ার থেকে তাকে ইজেক্ট করতে বলা হচ্ছিল, কিন্তু এত লোয়ার ফ্লাইয়িং হচ্ছিল যে, ওই সময়ে ইজেক্ট করা আসলে পসিবলও ছিল না। তিনি চেষ্টা করছিলেন যে, অন্যভাবে কিছু করা যায় কি না। কিন্তু দুর্ভাগ্য।’

 

ওই সদস্য আরও বলেন, ফ্ল্যাইটটি দিয়াবাড়ির ফাঁকা স্থানে ফেলতে চেয়েছিলেন তৌকির ইসলাম। এজন্য বেশ কিছু সময় ধরে চেষ্টাও চালাচ্ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারেননি; জেটটি বাউন্স করে মাইলস্টোন এলাকায় গিয়ে আছড়ে পড়ে।

 

এদিকে ঘটনাস্থলে এখনও উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা। যোগ দিয়েছেন বিজিবি সদস্যরাও। অন্যদিকে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অন্তত ৫০ জন; যাদের অধিকাংশই রাজধানীর জাতীয় বার্ন ইউনিটে। যদিও এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে বলে জানা গেছে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» দগ্ধ হয়েও শিক্ষার্থীদের বাঁচানোর চেষ্টা করা শিক্ষিকা মাহরিন লাইফ সাপোর্টে

» জামায়াতের আমির-সেক্রেটারি দগ্ধদের দেখতে বার্ন ইনস্টিটিউটে

» আহতদের চিকিৎসা সহায়তায় বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের মেডিকেল টিম গঠন

» উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত: তিন দিন স্থগিত জুলাইয়ের অনুষ্ঠান

» বিমান বিধ্বস্ত হতাহত পরিবারের পাশে থাকার আহ্বান খালেদা জিয়া

» দগ্ধদের দেখতে নেতাকর্মীদের নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া বন্ধ করুন: সারজিস

» সরকারের ঘাড়ে বন্দুক রেখে তারা আখের গোছাতে চায়, নির্বাচন চায় না

» নিজেদেরই জবাব দিতে পারছি না, নিহতদের পরিবারকে কী জবাব দেব?

» উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত : বার্ন ইনস্টিটিউটে রক্ত দিতে মানুষের ঢল

» আহতদের চিকিৎসার জন্য বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনা হবে: আসিফ নজরুল

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

জীবনের প্রথম ‘সলো ফ্লাইট’, শেষ করেই উদযাপনের কথা ছিল তৌকিরের

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। বিধ্বস্ত হওয়ার সাথে সাথে প্রশিক্ষণ বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। এ ঘটনায় বিমানের পাইলট বাফা-৭৬ ব্যাচের ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর নিহত হয়েছেন। সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

 

বাহিনীর এক সদস্য জানান, নিহত তৌকির পাবনা ক্যাডেট কলেজের ৩৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। সম্প্রতি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। আজকের দিনটি হতে পারতো ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকিরের জীবনের সবচেয়ে সুখের দিন। আজ জীবনের প্রথম সলো ফ্লাইট ছিল তার। প্রশিক্ষণ চলাকালে একজন শিক্ষানবিস যখন যথেষ্ট দক্ষ হয়ে ওঠেন এবং তার প্রশিক্ষক মনে করেন, তিনি এককভাবে বিমান চালাতে প্রস্তুত, তখনই তাকে প্রথম সলো ফ্লাইটে পাঠানো হয়। এই ফ্লাইটে পাইলটকে সম্পূর্ণ একা সব সিদ্ধান্ত নিতে হয়—রানওয়ে নির্বাচন, টেক-অফ, ইন-ফ্লাইট ম্যানুভারিং এবং ল্যান্ডিংসহ সবকিছু তার নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে।

 

তৌকির সফলভাবে এই ফ্লাইটটি সম্পন্ন করতে পারবেন সেই অপেক্ষায় ছিলেন তার সহকর্মীরা। এমনকি তৌকিরের জীবনের এই বিশেষ দিনটি উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা। এ বিষয়ে বিমানবাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, সোলো ফ্লাইট একজন পাইলটের জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন। সফল ফ্লাইট শেষে সাধারণত জলখেলা হয় ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়। আজ রাতে তৌকিরের জন্য এসব আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। কে জানত মাইলফলক অর্জনের এই দিনটিই তৌকিরের জীবনের শেষ দিন হবে— যোগ করেন সেই সহকর্মী।

 

বিমান বাহিনীর ওই সূত্রটি জানায়, শুরুতে তৌকির বেঁচে ছিলেন; তার পালস পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু এখন তিনি আর নেই। এর আগে তাকে হেলিকপ্টার এমআই ১৭-তে করে রাজধানীর একটি সিএমএইচ হাসপাতালের সিসিইউ-তে ভর্তি করা হয়। ওই সদস্য আরও জানান, বিধ্বস্ত হওয়ার সময় ফ্ল্যাইটেই ছিলেন তৌকির; এটি ছিল তার প্রথম সোলো ফ্লাইট।

 

কী হয়েছিল বিধ্বস্ত হওয়ার শেষ মুহূর্তে। ফ্ল্যাইট লেফট্যানেন্ট তৌকির ইসলাম সাগর কী ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন? এ বিষয়ে বিমানবাহিনীর ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘তৌকিরের আজ প্রথম একক মিশন ছিল, একটু আগে তিনি ডুয়াল ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন। এয়ারক্রাফট টেকঅফ করার একটুখানি যাওয়ার পর এয়ারক্রাফট কোন রিঅ্যাক্ট করছিল না। তারপরে এয়ারক্রাফট স্টল করে, তখন তার কন্ট্রোলে ছিল না। মোবাইল টাওয়ার থেকে তাকে ইজেক্ট করতে বলা হচ্ছিল, কিন্তু এত লোয়ার ফ্লাইয়িং হচ্ছিল যে, ওই সময়ে ইজেক্ট করা আসলে পসিবলও ছিল না। তিনি চেষ্টা করছিলেন যে, অন্যভাবে কিছু করা যায় কি না। কিন্তু দুর্ভাগ্য।’

 

ওই সদস্য আরও বলেন, ফ্ল্যাইটটি দিয়াবাড়ির ফাঁকা স্থানে ফেলতে চেয়েছিলেন তৌকির ইসলাম। এজন্য বেশ কিছু সময় ধরে চেষ্টাও চালাচ্ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারেননি; জেটটি বাউন্স করে মাইলস্টোন এলাকায় গিয়ে আছড়ে পড়ে।

 

এদিকে ঘটনাস্থলে এখনও উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা। যোগ দিয়েছেন বিজিবি সদস্যরাও। অন্যদিকে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অন্তত ৫০ জন; যাদের অধিকাংশই রাজধানীর জাতীয় বার্ন ইউনিটে। যদিও এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে বলে জানা গেছে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com