জিলহজ মাসে চুল কাটলে কি গুনাহ হবে?

সংগৃহীত ছবি

 

ধর্ম ডেস্ক :পবিত্র জিলহজ মাসের আগমন মুসলিম উম্মাহর জন্য বরকতময় সময়। এ মাসের প্রথম দশ দিনকে ইসলামে বিশেষ ফজিলতের সময় হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এই সময়ে কোরবানি এবং হজসহ বিভিন্ন ইবাদতের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে অনেকেই প্রশ্ন করেন—এই মাসে চুল ও নখ কাটলে কি গুনাহ হবে?

হাদিসে কী বলা হয়েছে

যারা কোরবানি করার নিয়ত করেছেন, তাদের উদ্দেশ্যে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন। তা হলো- إِذَا رَأَيْتُمْ هِلَالَ ذِي الْحِجّةِ، وَأَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ يُضَحِّيَ، فَلْيُمْسِكْ عَنْ شَعْرِهِ وَأَظْفَارهِ ‘যখন জিলহজের চাঁদ দেখবে তখন তোমাদের মধ্যে যে কোরবানি করবে সে যেন তার চুল নখ না কাটে। (সহিহ মুসলিম: ১৯৭৭; জামে তিরমিজি: ১৫২৩)

 

এই হাদিস অনুযায়ী, যারা নিজের পক্ষ থেকে কোরবানি করবেন, কেবল তাদের জন্যই এই নির্দেশ প্রযোজ্য। অন্য কেউ চুল বা নখ কাটলে তার ওপর কোনো নিষেধ নেই।

 

কেন চুল-নখ না কাটার নির্দেশনা

ইসলামি স্কলারদের ব্যাখ্যায়, এটি একটি আত্মত্যাগমূলক প্রতীকি আমল। এর মাধ্যমে কোরবানির পশু জবাইয়ের আগ পর্যন্ত নিজেকে পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত রাখা হয়, যেন আত্মত্যাগের চেতনাটি আরও বেশি গভীরভাবে উপলব্ধি করা যায়। অতএব, কোরবানিদাতারা জিলহজ আগমনের পূর্বেই নখ-চুল কেটে পরিপাটি হয়ে থাকবেন এবং কোরবানির পশু জবাই না করা পর্যন্ত এই মোস্তাহাব আমলে সচেষ্ট হবেন।

যারা কোরবানি করবেন না তারা কী করবেন?

যারা কোরবানি করবেন না, তারাও ফজিলতপূর্ণ এ আমলে শরিক হতে পারেন। এমনকি বাচ্চাদেরকেও অভিভাবকগণ চুল-নখ কাটা থেকে বিরত রাখতে পারেন। এতেও ইনশাআল্লাহ সাওয়াব লাভ হবে। (দ্রষ্টব্য: সুনানে আবু দাউদ: ২৭৮৯; সুনানে নাসায়ি: ৪৩৬৫; মুস্তাদরাকে হাকেম: ৭৫২০; আলমুহাল্লা, ইবনে হাজম: ৬/২৮)

চুল বা নখ কাটলে কি কোরবানি বাতিল?

না, চুল বা নখ কেটে ফেললে কোরবানি বাতিল হয় না। তবে এটি সুন্নাহসমর্থিত কাজ হবে না। কেউ ভুলে কেটে ফেললে তার জন্য কোরবানির কোনো ক্ষতি হবে না এবং কাফফারাও দিতে হবে না।

গুনাহ হবে কি?

হানাফি ফিকহবিদদের মতে, এটি গুনাহ নয়, বরং সুন্নাহ ত্যাগ করা। যারা সুন্নতটি পালন করবেন না, তারা একটি উত্তম আমল থেকে বঞ্চিত হন। তবে শরিয়তের দৃষ্টিতে এটি হারাম বা গুনাহের পর্যায়ে পড়ে না। তবে, কিছু ফকিহ এটিকে ওয়াজিব বলেছেন। তাদের মতে, কোরবানিদাতাদের জন্য জিলহজের ১০ দিন চুল-নখ কাটা গুনাহের কারণ হবে।

 

শেষ কথা, পবিত্র জিলহজের প্রতিটি ইবাদত যেন আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে হয়—এই দোয়া ও প্রত্যাশা আমাদের থাকা উচিত। কোরবানি করি বা না করি, কোরবানির পশু জবাই হওয়ার আগ পর্যন্ত চুল নখ না কাটার সুন্নত জিন্দা করতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» আন্দোলন কারো জন্যই কল্যাণ বয়ে আনবে না : রিজভী

» হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেলেন নুরুল হক নুর

» দোহায় তৌহিদ হোসেন-ইসহাক দার বৈঠক

» বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জোরদার, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াতে প্রস্তুত ঢাকা

» যমুনা অভিমুখে প্রাথমিক শিক্ষকরা, পুলিশের জলকামান-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

» জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহযোগিতা করা হবে: আসিফ মাহমুদ

» নবীর আদর্শ মনে প্রাণে ধারণ করে জীবন গঠন হবে ….. জেলা প্রশাসক নরসিংদী 

» ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশের উত্তরা ক্যাম্পাসে ইয়াং লার্নার ইংলিশ লার্নিং সেন্টার-এর নতুন শাখা চালু করল ব্রিটিশ কাউন্সিল

» ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’-এর অধীনে ব্র্যাক ব্যাংকের দেশব্যাপী আর্থিক সাক্ষরতা প্রোগ্রাম আয়োজন

» নওগাঁয় ডিবি পুলিশের অভিযানে মাদক কারবারি স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাসহ আটক ৩

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

জিলহজ মাসে চুল কাটলে কি গুনাহ হবে?

সংগৃহীত ছবি

 

ধর্ম ডেস্ক :পবিত্র জিলহজ মাসের আগমন মুসলিম উম্মাহর জন্য বরকতময় সময়। এ মাসের প্রথম দশ দিনকে ইসলামে বিশেষ ফজিলতের সময় হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এই সময়ে কোরবানি এবং হজসহ বিভিন্ন ইবাদতের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে অনেকেই প্রশ্ন করেন—এই মাসে চুল ও নখ কাটলে কি গুনাহ হবে?

হাদিসে কী বলা হয়েছে

যারা কোরবানি করার নিয়ত করেছেন, তাদের উদ্দেশ্যে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন। তা হলো- إِذَا رَأَيْتُمْ هِلَالَ ذِي الْحِجّةِ، وَأَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ يُضَحِّيَ، فَلْيُمْسِكْ عَنْ شَعْرِهِ وَأَظْفَارهِ ‘যখন জিলহজের চাঁদ দেখবে তখন তোমাদের মধ্যে যে কোরবানি করবে সে যেন তার চুল নখ না কাটে। (সহিহ মুসলিম: ১৯৭৭; জামে তিরমিজি: ১৫২৩)

 

এই হাদিস অনুযায়ী, যারা নিজের পক্ষ থেকে কোরবানি করবেন, কেবল তাদের জন্যই এই নির্দেশ প্রযোজ্য। অন্য কেউ চুল বা নখ কাটলে তার ওপর কোনো নিষেধ নেই।

 

কেন চুল-নখ না কাটার নির্দেশনা

ইসলামি স্কলারদের ব্যাখ্যায়, এটি একটি আত্মত্যাগমূলক প্রতীকি আমল। এর মাধ্যমে কোরবানির পশু জবাইয়ের আগ পর্যন্ত নিজেকে পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত রাখা হয়, যেন আত্মত্যাগের চেতনাটি আরও বেশি গভীরভাবে উপলব্ধি করা যায়। অতএব, কোরবানিদাতারা জিলহজ আগমনের পূর্বেই নখ-চুল কেটে পরিপাটি হয়ে থাকবেন এবং কোরবানির পশু জবাই না করা পর্যন্ত এই মোস্তাহাব আমলে সচেষ্ট হবেন।

যারা কোরবানি করবেন না তারা কী করবেন?

যারা কোরবানি করবেন না, তারাও ফজিলতপূর্ণ এ আমলে শরিক হতে পারেন। এমনকি বাচ্চাদেরকেও অভিভাবকগণ চুল-নখ কাটা থেকে বিরত রাখতে পারেন। এতেও ইনশাআল্লাহ সাওয়াব লাভ হবে। (দ্রষ্টব্য: সুনানে আবু দাউদ: ২৭৮৯; সুনানে নাসায়ি: ৪৩৬৫; মুস্তাদরাকে হাকেম: ৭৫২০; আলমুহাল্লা, ইবনে হাজম: ৬/২৮)

চুল বা নখ কাটলে কি কোরবানি বাতিল?

না, চুল বা নখ কেটে ফেললে কোরবানি বাতিল হয় না। তবে এটি সুন্নাহসমর্থিত কাজ হবে না। কেউ ভুলে কেটে ফেললে তার জন্য কোরবানির কোনো ক্ষতি হবে না এবং কাফফারাও দিতে হবে না।

গুনাহ হবে কি?

হানাফি ফিকহবিদদের মতে, এটি গুনাহ নয়, বরং সুন্নাহ ত্যাগ করা। যারা সুন্নতটি পালন করবেন না, তারা একটি উত্তম আমল থেকে বঞ্চিত হন। তবে শরিয়তের দৃষ্টিতে এটি হারাম বা গুনাহের পর্যায়ে পড়ে না। তবে, কিছু ফকিহ এটিকে ওয়াজিব বলেছেন। তাদের মতে, কোরবানিদাতাদের জন্য জিলহজের ১০ দিন চুল-নখ কাটা গুনাহের কারণ হবে।

 

শেষ কথা, পবিত্র জিলহজের প্রতিটি ইবাদত যেন আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে হয়—এই দোয়া ও প্রত্যাশা আমাদের থাকা উচিত। কোরবানি করি বা না করি, কোরবানির পশু জবাই হওয়ার আগ পর্যন্ত চুল নখ না কাটার সুন্নত জিন্দা করতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com