সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক : আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে জার্মানিতে ছড়িয়ে দিতে দেশটির জাক্সেন অঙ্গরাজ্যের কেম্নিটজে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল কেম্নিটজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আয়োজনে শীতকালীন পিঠা এবং ঐতিহ্যবাহী বাংলা খাবারের উৎসব।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) কেম্নিট্জ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বা টিইউ কেম্নিটজের বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ স্টুডেন্টস ইউনিয়ন কেম্নিট্জ (বিসুক)’ এর আয়োজনে বাঙালিয়ানার এই উৎসবে যোগ দেন স্থানীয় জার্মানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত নানা দেশের শিক্ষার্থীরাও।
উৎসবে সবার মন কেড়েছে বাংলাদেশি শীতকালীন জনপ্রিয় পিঠা দুধ চিতই, পাটিসাপটা, তেলের পিঠা, ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, পুলি পিঠা, সুজি পিঠা, গোলাপ পিঠা (পাকন), মুগ পাকন এবং ডিম পিঠা (মিষ্টি ও নোনতা)। আয়োজনে ঐতিহ্যবাহী বাংলা খাবারের মধ্যে ছিল সুস্বাদু পিয়াজু, চটপটি, ফুচকা, দই ফুচকা, সিঙ্গারা, মোগলাইসহ আরো অনেক কিছু। কিন্তু আমন্ত্রিতদের মন জিতে নেয় ঝালমুড়ি ও চা।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক ও শিক্ষিকা এবং কর্মকর্তারাও যোগ দেন। এসময় বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীদের এমন উদ্যেগের ভূয়সী প্রশংসা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির জার্মান ভাষার শিক্ষক বারবারা বলেন, বাংলাদেশের সংস্কৃতি ভাষা ও কৃষ্টিতে আমি মুগ্ধ। এমন আয়োজনে থাকতে পেরে আমি গর্বিত। আশা করছি ভবিষ্যতে এমন আয়োজন আরো বেশী বেশী হবে।
এদিন আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানা যায়, প্রথমবারের মত বাংলাদেশি ঝালমুড়ি, চটপটি, ফুচকা আর বাহারি সব পিঠার স্বাদ পেয়ে দারুণ খুশি স্থানীয় জার্মানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা।
উৎসবে শীতকালীন পিঠার স্টলের শিক্ষার্থী ফারদিনা, টুনটুন, ঐশ্বী এবং তামান্না বলেন, আজ আমরা গর্বিত যে সরাসরি স্টলেই পিঠা বানিয়ে সবার মাঝে পরিবেশন করতে পেরেছি বলে। এই সময় বাংলাদেশের চায়ের প্রশংসা করেন পাকিস্তানের শিক্ষার্থী আফজাল।
দেশের টং দোকানের আদলে তৈরি অন্য আরেকটি স্টলের শিক্ষার্থী তামান্না, তানভির, আবরার এবং নিশাত বলেন, কখনও কল্পনা করতে পারিনি, জার্মানিতে পড়ালেখা করতে এসে, আমাদের সংস্কৃতিকে এভাবে তুলে ধরতে পারবো। বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের বাংলাদেশি চা এবং ঝালমুড়ি বানিয়ে খাওয়াতে পারবো। এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।
পাশাপাশি বাংলাদেশি ঐতিহ্যবাহী খাবার, সিঙ্গারা এবং মোঘলাই পরিবেশনকারী প্রকৌশলী আদিল এবং ইপ্সিতা বলেন, বাংলাদেশে থাকাকালীন সিঙ্গারা, মোঘলাই আমাদের প্রিয় খাবার ছিল। এখানে এসব খাবারের স্বাদ পাওয়া বিরল, আজকে আমরা এই উৎসবে অনুষ্ঠানটিতে এই খাবার নিয়ে আসতে পেরে খুবই আনন্দিত।
ফুচকার দোকান দিয়ে চমক লাগিয়ে দেওয়া ছাত্র রুদ্র, আফিক, রুবেল, সাকিব বলেন, বাংলাদেশে আড্ডা মানেই ফুচকা, আমরা সবাই আজ এক বিশাল আড্ডার আয়োজন করতে পেরে ভাল লাগছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতের শিক্ষার্থী আরজুন বলেন, আমি ভাবতাম, তোমাদের দেশের ফুচকা এবং আমাদের পানিপুরি একই। কিন্তু আজ বুঝলাম, দেখতে একরকম হলেও, স্বাদ একদমই ভিন্ন।
উৎসবের আয়োজন নিয়ে বাংলাদেশ স্টুডেন্টস ইউনিয়ন কেম্নিটজের এডমিন জুলকার নাইন বলেন, অনুষ্ঠানটির বিশেষ দিক ছিল আন্তঃসাংস্কৃতিক পরিবেশ ও সম্পর্কোন্নয়ন, যেখানে দুই শতাধিক দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থী আমাদের খাবার ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। আয়োজনে সবার অংশগ্রহণ এবং উচ্ছ্বাস এটিকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছিল।
তিনি বলেন, আশা করি, আমরা আমাদের দেশিও সংস্কৃতিকে এভাবেই বিদেশের মাটিতে তুলে ধরতে পারবো এবং ভবিষ্যতে আরও বড় আয়োজন করতে পারবো। এই ধরনের আয়োজন শুধু বাংলাদেশের ঐতিহ্য তুলে ধরার মাধ্যমই নয়, বরং বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ইতিবাচকভাবে তুলে ধরতে অনবদ্য ভূমিকা রাখবে। সূএ:বাংলাদেশ প্র্রতিিদদিন