সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক : ঢাকা মিরপুর থেকে আসা নৌবাহিনী কলেজের ছাত্র মোহাম্মদ ফাওয়াজ সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর কার্যক্রম নিয়ে একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে নিজের মতামত তুলে ধরেছেন। তিনি দাবি করেছেন, জামায়াতে ইসলামী চাঁদাবাজি বা লুটতরাজের মতো কাজে লিপ্ত নয়, কারণ তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক মডেল রয়েছে।
ফাওয়াজের ভাষ্যমতে, গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশে এমন কোনো রাজনৈতিক দল নেই যারা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান বা কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। তিনি বলেন, অন্যান্য দলের আদর্শ হলো ‘নেতার পিছনে নেতাকর্মী ঘুরবে, জয় বাংলা নাইলে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ স্লোগান দিবে আর নেতার নাম নিবে।’ কিন্তু জামায়াতের আদর্শ ভিন্ন; তাদের লক্ষ্য হলো নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি করা। তিনি উল্লেখ করেন, গত ৫৩ বছরে অসংখ্য জামায়াত সমর্থিত হাসপাতাল এবং ব্যাংকিং সেক্টর তৈরি হয়েছে। এর ফলে, জামায়াতের নেতাকর্মীরা পড়াশোনা শেষে যদি চাকরি না পান, তবে তাদেরকে এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়া হয়, যার কারণে তাদের চাঁদাবাজি বা অবৈধ কাজে লিপ্ত হতে হয় না। তারা একটি ভালো অর্থনৈতিক কাজের মাধ্যমে জীবনযাপন করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, অন্যান্য দলে যেখানে কেন্দ্র থেকে টাকা না পেলে নেতাকর্মীরা চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়, সেখানে জামায়াতের অর্থ উপার্জনের উৎস ভিন্ন। ফাওয়াজ একটি ব্যক্তিগত উদাহরণ দিয়ে বলেন, বরিশালের তার গ্রামের এক ক্লাস নাইনের ছাত্রের বাবা-মা মারা যাওয়ার পর জামায়াত তার পড়াশোনার সম্পূর্ণ ব্যবস্থা করে। তাকে সম্পূর্ণ শিক্ষিত করে দেশের বাইরে পড়াশোনার জন্য পাঠিয়ে ডক্টর বানিয়ে দেশে ফেরত আনা হয়। ফাওয়াজের প্রশ্ন, যে সংগঠন কাউকে এত উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে এবং রাষ্ট্রের সম্পদে পরিণত করেছে, সেই দলের কি তার কাছে কোনো সাহায্য চাইতে হবে? তিনি বিশ্বাস করেন, ওই ব্যক্তি নিজে থেকেই তার অর্থের ৫০% এই দলের জন্য দান করে দেবে। এই কারণেই জামায়াতের কারো কাছে ‘চেয়ে খেতে হয় না’।
ফাওয়াজ দাবি করেন, জামায়াতের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট অনুদানের অর্থ দিতে হয় এবং সেই টাকা দিয়েই অসংখ্য অসহায় ও দরিদ্র ছেলে-মেয়েকে পড়াশোনা করানো হয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, যে ছেলে বা মেয়েটি এত কষ্ট করে দলে টিকে থাকার জন্য নিজের পকেট থেকে টাকা খরচ করে, মাস শেষে দুটি করে বই পড়ে ভাইভা দেয়, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে এবং জামাতে কয় রাকাত নামাজ পড়ছে তার রিপোর্টও জমা দেয়, সেই মানুষটার নৈতিকতা নিয়ে কি কোনো প্রশ্ন থাকতে পারে? তিনি মনে করেন, এমন মানুষ কোনো স্বার্থের জন্য দল করে না, বরং তাদের মধ্যে নৈতিকতা আছে বলেই তারা এই দলের প্রতি ভালোবাসার কারণে এত কষ্ট সহ্য করেও টিকে থাকে।
৭১ সালের ‘আল বদর’ বা ‘রাজাকার’ প্রসঙ্গ টেনে ফাওয়াজ পাল্টা প্রশ্ন করেন, যদি জামায়াতে ইসলামী সত্যিই রাজাকার হয়ে থাকে, তাহলে কেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বা জিয়াউর রহমানের শাসনামলে জামায়াতের কোনো নেতাকর্মীকে রাজাকার হিসেবে শাস্তি দেওয়া হয়নি? তিনি আরও উল্লেখ করেন, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের সময় শেখ হাসিনা নিজে জামায়াতের একজন হুজুরের কাছে গিয়ে দোয়া নিয়েছিলেন। এরপর ক্ষমতায় আসার পর কেন তিনি জামায়াতকে রাজাকার বলতে শুরু করলেন? ফাওয়াজের মতে, এর কারণ হলো জামায়াতে ইসলামী তাদের মতের সাথে একমত ছিল না, কারণ জামায়াত ‘ভারতপন্থী’ নয়।
তিনি ভারতের সাহায্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং ইন্দিরা গান্ধীর একটি মন্তব্য উল্লেখ করে ব্যাখ্যা করেন যে, ভারতের পাশে দুটি ইসলামিক রাষ্ট্র থাকলে তারা ‘হিন্দুত্ববাদ ছড়াতে পারবে না’। ফাওয়াজ বলেন, ভারত নামমাত্র সাহায্য করে, কিন্তু আমাদের দেশ থেকে হাজার হাজার টাকার ইলিশ মাছ নিয়ে যায় এবং ফারাক্কার পানি দিয়ে বাংলাদেশকে প্লাবিত করে। তিনি অভিযোগ করেন, ভারত বাংলাদেশকে নিজেদের অঙ্গরাজ্য বানাতে চেয়েছে এবং রেল বানিয়ে দেশের মাঝখান দিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো পরিকল্পনা করেছে।
ফাওয়াজের মতে, বিএনপি হলো ‘ভারতের দালাল’। তিনি প্রশ্ন করেন, বর্তমানে তারেক রহমান বাংলাদেশে না থাকায় বিএনপির সবচেয়ে বড় নেতা মির্জা ফখরুল কেন গত তিন মাসে কোনো টকশো বা মিডিয়ার মুখোমুখি হননি, অথচ সালাউদ্দিন আহমেদকে দেখা যাচ্ছে? ফাওয়াজের দাবি, সালাউদ্দিন আহমেদ গত ১০ বছর ধরে ভারতে বিলাসবহুলভাবে থ্রি স্টার প্লাস রিসোর্টে ছিলেন এবং তাকে ‘সেটিং’ করা হয়েছে ভারতীয় দালাল হিসেবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “বিএনপি হচ্ছে ভারতের দালাল, ভারতের দালাল, ভারতের দালাল।” ফাওয়াজ আরও দাবি করেন, ইলিয়াস আলী বাবর-এর মতো যারা ভারতের সমর্থন করেন না, তাদের বিএনপি সামনে আনছে না, কারণ তারা ‘ভারতপন্থী নয়’। তার মতে, “দুই সাপের এক বিষ – আওয়ামী লীগ আর ধানের শীষ।”
ইসলাম এবং নারী স্পর্শের বিষয়ে ফাওয়াজ বলেন, ইসলামে নারীর শরীর স্পর্শ করা নিষেধ। তবে তিনি ইরানের উদাহরণ টেনে বলেন, ইরান একটি ইসলামিক রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও নারীরা সেখানে উন্নত, চাকরি-বাকরি করছে এবং শক্তিশালী। ইরান সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশ ভারতের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে না। তিনি দাবি করেন, যখন জামায়াতে ইসলামী এই দেশে জাতীয় সরকার গঠন করবে, তখনই একমাত্র বাংলাদেশ ভারতের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারবে। ফাওয়াজের মতে, জামায়াতের নেতাকর্মীদের ‘ভয় নেই’, কারণ তারা ‘ফাঁসির মঞ্চে হাসি মুখে দাঁড়াতে পারে’ এবং ‘আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পায় না’।
ফাওয়াজ আরও বলেন, নারী অবশ্যই এগিয়ে যাচ্ছে, তবে বর্তমানে সমাজে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ছে এবং তা থেকে মুক্তি পেতে হলে জামায়াতকে ক্ষমতায় আনতে হবে। তবে তিনি স্পষ্ট করেন, এর অর্থ এই নয় যে নারীরা অধিকার পাবে না। তিনি বলেন, নারীরা অধিকার পাবে এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাও তাদের ধর্ম পালন করতে পারবে। তার মতে, জামায়াত আসলে যারা ইসলামে বিশ্বাস করে এবং পর্দা করে, তাদের জন্য বেশি সুবিধা নিশ্চিত করবে, যাতে তারা সুন্দরভাবে পর্দা করতে পারে এবং কেউ তাদের দিকে আড়াল চোখে তাকাতে না পারে। তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, যদি কেউ জামায়াতের একটি ভুলও প্রমাণ করতে পারে, তাহলে তিনি জামায়াতকে সমর্থন করা বন্ধ করে দেবেন।