ছবি সংগৃহীত
অনলাইন ডেস্ক : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মনোনীত ‘সাদী-বৈশাখী-সাজ্জাদ-ইকরা’ পরিষদ ৮ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর সংলগ্ন ‘অদম্য ২৪’ ভাস্কর্যের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা ইশতেহার ঘোষণা করে।
ইশতেহারটি পাঠ করেন প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী মো. শেখ সাদী হাসান ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদপ্রার্থী মো. সাজ্জাদুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদপ্রার্থী আনজুমান আরা ইকরাসহ অন্য প্রার্থীরা।
ইশতেহারের ৮ দফা হলো-
আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষা ও গবেষণা,শিক্ষাবান্ধব, নিরাপদ, মুক্ত ও বৈচিত্র্যময় ক্যাম্পাস,পরিকল্পিত আবাসন ও খাবারের উন্নত মান নিশ্চিতকরণ,নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ শিক্ষাঙ্গণ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা,মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা, সুসমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থাপনা, ক্রীড়াচর্চা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, এবং পরিবেশ-প্রতিবেশ সংরক্ষণ ও প্রাণীবান্ধব ক্যাম্পাস।
ইশতেহারের বিভিন্ন অঙ্গীকারে বলা হয়, একাডেমিক ক্যালেন্ডারে নিয়মিত ডাকসু নির্বাচনকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কোর্স কারিকুলামকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে। গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি ও গবেষণাগারের মানোন্নয়ন করা হবে। সব বর্ষে মানোন্নয়ন পরীক্ষার সুযোগ থাকতে হবে।
জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণে বাধ্য করা, গেস্টরুম-গণরুম সংস্কৃতি, র্যাগিং, নিপীড়ন, মানসিকভাবে হেনস্তা, শিক্ষার্থীদের অবদমিত করে জিম্মি করা এবং দখলদারিত্ব ও সন্ত্রাসের আত্মবিনাশী প্রক্রিয়াকে চিরতরে ক্যাম্পাস থেকে উৎখাত করা হবে। সব মত, পথ, মতাদর্শ, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, পাহাড়, সমতলের সহাবস্থান, সমতা ও বৈচিত্র্যের মাঝে একতা নিশ্চিত করা হবে।
ইশতেহারে আরও রয়েছে, প্রতিটি অনুষদে নারীদের জন্য নামাজের আলাদা রুমের ব্যবস্থা করা হবে। কেন্দ্রীয় মসজিদে নারীদের নামাজের জন্য পৃথক ব্যবস্থা নেওয়া। আবাসিক হলগুলোতে খেলাধুলাসহ সুস্থ ও শিক্ষামূলক বিনোদনের ব্যবস্থা করা হবে। হলগুলোকে মশা ও ছারপোকা থেকে মুক্ত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। পুষ্টিবিদদের সমন্বয়ে আবাসিক হলগুলোর মেস ও ক্যান্টিনে উন্নত খাবার তালিকা প্রণয়ন এবং বটতলার রেস্টুরেটগুলোসহ সব খাবারের পুষ্টিমান নিয়মিত যাচাইয়ের ব্যবস্থা করা হবে।
নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ শিক্ষাঙ্গণ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে বলা হয়েছে, নারীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তাবাবস্থা অধিকতর জোরদার করা হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে নারী হলগুলোর সীমানা প্রাচীর ও হলগুলোর দিকের অ্যাপ্রোচ রোড সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে নারীদের নতুন হলগুলোর করিডরের বাইরের পাশে লোহার গ্রিল দেওয়া এবং সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে নারী রাজনীতিবান্ধব ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে তোলা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলটিকে আগামী দিনে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও অধিকতর কার্যকর করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের আধুনিকায়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন, সার্বক্ষণিক চিকিৎসক ও নার্সের উপস্থিতি, অ্যাম্বুলেন্স ও ফার্মেসি সেবা নিশ্চিত করা এবং জরুরি ঔষধসমূহ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। মহিলা চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ দিতে হবে। চিকিৎসাসেবা হতে হবে ২৪/৭ এবং চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় ন্যূনতম সেবা নিশ্চিত করতে হবে বলেও অঙ্গীকার করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান পরিবহন সংকট সম্পর্কে বলা হয়েছে, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ পরিবহন সংকট নিরসনকল্পে নিয়ন্ত্রিত ও পরিকল্পিতভাবে নিরাপদ অটোরিকশা চালু এবং ইলেকট্রিক কাটের সংখ্যা বৃদ্ধি ও ভাড়া হ্রাস করা হবে। শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে বিদ্যমান বাস রুট পর্যালোচনা, বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি ও নতুন রুট চালু করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বাসে জিপিএস ট্র্যাকার স্থাপন করে একটি মোবাইল অ্যাপস চালু করা হবে, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বাসের লাইড লোকেশন ও সময়সূচি জানতে পারবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি, উদ্যান, গাছপালা ও সবুজ আবহ সংরক্ষণ ও বৃদ্ধি করা হবে। বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির সব উদ্ভিদ সংরক্ষণে কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। ক্যাম্পাসে বিচরণরত সব প্রাণীর জন্য অনুকূল পরিবেশ এবং বিলুপ্তায় প্রাণী সংরক্ষণে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে ইশতেহারে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি ‘ইনক্লুসিভ’ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করা, সব শিক্ষার্থীদের জন্য একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা এবং নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতাকে প্রাধান্য দিয়ে ইশতেহার তৈরি করা হয়েছে বলে জানান সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখি।
তিনি বলেন, জাহাঙ্গীরনগরের ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী নারী। এই নারীদের বাদ দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর এগিয়ে যেতে পারবে না। আমরা দেখেছি যে ক্যাম্পাসের বেশিরভাগ সমস্যাই নারীদের সমস্যা। সেই হিসেবে আমরা ইশতেহারে অবশ্যই নারী শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, যখন জাকসুর তফশিল ঘোষণা হয়, তার আগেই আমরা প্রশাসনকে অনুরোধ করেছিলাম যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শীর্ষ পদগুলোতে নারীদের রিপ্রেজেন্টেশন রাখতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৮ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) জাকসু নির্বাচন সামনে রেখে মো. শেখ সাদী হাসানকে সহ-সভাপতি ও তানজিলা হোসাইন বৈশাখীকে সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনীত করে ২৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল প্রকাশ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।