ছবি সংগৃহীত
ডেস্ক রিপোর্ট : জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে জুলাই গণঅভ্যুত্থান সফল হয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
আজ শনিবার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
নিজের লেখা ‘জুলাই : মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’ বই নিয়ে অনুষ্ঠিত প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, গণঅভ্যুত্থান সফল হওয়ার পেছনের কারণ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। আমরা যখন থেকে আক্রমণের শিকার হবো বুঝেছি, তখন থেকে আমরা প্রাইভেট, মাদরাসা ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু সেখানে মাঠ গুছিয়ে সংগঠিত করে রেখেছি, এমন ছিল না। বরং প্রাইভেটের শিক্ষার্থীরা যেভাবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছে, আমরাও অবাক হয়েছি। সেখানেও কেউ না কেউ অভ্যন্তরীণভাবে সংগঠিত করার কাজ করেছে। তারা সামনে আসেনি।
তিনি বলেন, এই স্বতঃস্ফূর্ততা কোটা সংস্কার আন্দোলনকে একটি গণঅভ্যুত্থানের দিকে নিয়ে গেছে। এখানে অনেকগুলো অনুঘটক ছিল। ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনে একটা অপোলোজিটিক অবস্থান ছিল। ‘শেখ হাসিনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাই নাই’ এমন স্লোগান দেওয়া হয়েছে। এবার তা হয়নি। বরং এবার আমরা প্রতিরোধে যাওয়ার কাজ করেছি। পিছিয়ে থাকার অবস্থান আমাদের ছিল না। যেটা অবধারিত, সেদিকে আমরা এগিয়ে গেছি। ফলে ছাত্রলীগের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় সংঘাত হয়েছে। আমরা মার খেয়েছি। ফলে মানুষের একটি পুঞ্জিভূত ক্ষোভ প্রকাশ করার সুযোগ ছিল।
আসিফ মাহমুদ বলেন, আন্দোলনে অনেকগুলো ধাপ ছিল। আমরা যখন ক্যাম্পাসে আর পারছিলাম না, তখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসার শিক্ষার্থীরা, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা সামনে এগিয়ে আসেন। কোটা আন্দোলনকে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে দমানো হলো। তখন প্রবাসীরা এগিয়ে এলো। জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে জনমত গঠনে কাজ করলেন। তারা বাংলাদেশে রেমিটেন্স পাঠানো বন্ধ করে দিলেন। আন্দোলনে প্রত্যেকটা ফ্রন্ট এভাবে এগিয়ে আসা আন্দোলনকে জীবিত রেখেছে। অনেক জায়গায় মানুষ নেমে এসেছে, যেখানে হয়তো সংগঠকও ছিল না। এসব অনুঘটকের মাধ্যমে জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরিণতি লাভ করেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আরও বলেন, জুলাইয়ের ইতিহাস তখনই পরিপূর্ণতা পাবে, যখন যে সহস্র সংগঠকের (ইতিহাসটি) অংশটি উঠে আসবে। যেমন কুমিল্লায় বা রংপুরে যারা সংগঠিত করেছেন, আমরা হয়তো ভাসা ভাসা জানি। কিন্তু ভেতরের গল্প তো আমরা জানি না। আরও অনেকে আছেন, যারা পেছনের রূপকার; তাদের হয়তো দুয়েকটি গ্রুপের কথা আপনারা জানেন; যেহেতু এসব সোশ্যাল মিডিয়ায় এসেছে। কিন্তু এমন অন্তত ১০-১৫টি গ্রুপ আছে, যারা পেছন থেকে সহযোগিতা করে গেছেন। অনেকে আছেন, যারা তাদের অ্যাক্টিভিজম বা পেশার কারণে চান না, তাদের নামগুলো আমরা সামনে আনি।
তিনি আরও বলেন, বইটি শুধু আমার ব্যক্তিগত জায়গা থেকে লেখা। যারা গণঅভ্যুত্থানে যেভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন, সবাই আপনাদের অংশটি লিখুন। যেন আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাই; আমাদের কাছে যেন একটি পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস থাকে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে যেভাবে বিভিন্ন সময় ফেব্রিকেটেড করা হয়েছে, সেটি যেন না হয়। তাই আপনাদের স্মৃতিগুলো পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সংরক্ষণ করবেন। বইতে গণঅভ্যুত্থানে আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া, পেছন থেকে যারা সহযোগিতা করেছে, তাদের সাবলীল বর্ণনা আছে। এটা একটি ছোট বর্ণনা। অনেকের নাম আসেনি। অনেকের নাম হয়তো আমার মনে নেই। তবে সবাই নিজের অংশ লিখলে আমরা গণঅভ্যুত্থানের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাব।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব রিফাত রশীদ প্রমুখ।