আদালত থেকে পুলিশের চোখে স্প্রে করে প্রকাশক দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় করা মামলার ১৩ নম্বর এজহারনামীয় আসামি ঈদী আমিনের তিন আশ্রয়দাতাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালদ।
তারা হলেন- ঈদী আমিনের বোন খোতেজা আক্তার লিপি, তার ভাগিনা নাসির মিয়া ও বন্ধু তানভীর হোসেন।
আজ (৩ নভেম্বর) তিনদিনের রিমান্ড শেষে তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাকিল আহম্মদ তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) তাদের আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাকিল আহম্মদ তাদের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে ২৭ নভেম্বর ঈদী আমিন আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন তার চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গতকাল (২ ডিসেম্বর) রিমান্ড শেষে তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠুতদন্তের জন্য ঈদী আমিনের ১১ দিন রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। শুনানি শেষে বিচারক আসামি ঈদী আমিনর ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ২০ নভেম্বর দুপুরে ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণ থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় জঙ্গিরা। এসময় আসামি আরাফাত এবং সবুরকেও ছিনিয়ে নিতে চেষ্টা করে তারা। পরে ঘটনাস্থল আরাফাত ও সবুরকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় কোর্ট পরিদর্শক জুলহাস বাদী হয়ে ২০ জনের নামে একটি মামলা করেন। মামলায় আরও সাত-আটজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে সাগর ওরফে বড় ভাই ওরফে মেজর জিয়ার (চাকরিচ্যুত মেজর) পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় আয়মান ওরফে মশিউর রহমান (৩৭), সাব্বিরুল হক চৌধুরী ওরফে আকাশ ওরফে কনিক (২৪), তানভীর ওরফে সামশেদ মিয়া ওরফে সাইফুল ওরফে তুষার বিশ্বাস (২৬), রিয়াজুল ইসলাম ওরফে রিয়াজ ওরফে সুমন (২৬) ও মো. ওমর ফারুক ওরফে নোমান ওরফে আলী ওরফে সাদ (২৮) পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে।
এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দুটি মোটরসাইকেলযোগে আনসার আল ইসলামের অজ্ঞাতপরিচয় পাঁচ-ছয়জন সদস্য অবস্থান নেয়। এছাড়া আদালতের আশপাশে অবস্থান করা অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জন আনসার আল ইসলামের সদস্য আদালতের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেয়। এরপর তারা পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, গত ২০ নভেম্বর সকাল ৮টা ৫ মিনিটে গাজীপুরের কাশিমপুর থেকে ১২ জন আসামিকে ঢাকার আদালতে প্রিজনভ্যানে নিয়ে আসা হয়। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে ঢাকার প্রসিকিউশন বিভাগে আসামিদের হাজিরা দেওয়ার জন্য সিজেএম আদালত ভবনের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল ৮-এ নেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, এ মামলার শুনানি শেষে জামিনে থাকা ১৩ নম্বর আসামি মো. ঈদী আমিন (২৭) ও ১৪ নম্বর আসামি মেহেদী হাসান অমি ওরফে রাফি (২৪) আদালত থেকে বের হয়ে যান। এরপর বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটের দিকে আদালতের মূল ফটকের সামনে পৌঁছানো মাত্র আগে থেকেই দুটি মোটরসাইকেলযোগে অজ্ঞাতনামা আনসার আল ইসলামের পাঁচ-ছয়জন সদস্য এবং আদালতের আশপাশে অবস্থানরত আরও ১০-১২ জন হামলা করে। তারা কনস্টেবল আজাদের হেফাজতে থাকা আসামি মইনুল হাসান শামিম ওরফে সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান (২৪), মো. আবু সিদ্দিক সোহেল (৩৪), মো. আরাফাত রহমান (২৪) ও মো. আ. সবুর ওরফে রাজু ওরফে সাদ ওরফে সুজনকে (২১) ছিনিয়ে নিতে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের হত্যার উদ্দেশে আক্রমণ করে।
কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা তাদের কর্মকাণ্ডে বাধা দিলে আসামিদের মধ্যে কোনো একজন তার হাতে থাকা লোহা কাটার যন্ত্র দিয়ে কনস্টেবল আজাদের মুখে আঘাত করে বলেও মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়। সূএ:জাগোনিউজ২৪.কম