সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক : সড়ক থেকে কোনোভাবেই সরানো যাচ্ছে না মেয়াদোত্তীর্ণ বাস-লেগুনার মতো যানবাহন। পুরোনো এসব যানবাহনের কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে দুর্ঘটনা। একের পর এক ঝরছে তাজা প্রাণ। পাশাপাশি এসব যানবাহনের কারণে পরিবেশ দূষণও হচ্ছে। দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার পর মেয়াদোত্তীর্ণ এসব যান সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে উদ্যোগী হন।
তিনি ঘোষণা দেন, মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি সরিয়ে নিতে মালিকরা ছয় মাস সময় পাবেন। এ সময়ের পর সড়কে আর এসব গাড়ি চলতে পারবে না। মালিকদের দেয়া ছয় মাস সময় অতিবাহিত হয়েছে গত এপ্রিলে। এরপর আরো প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেছে, এখনো রাস্তায় অবাধে চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি। যদিও তিনি দাবি করেছেন, কিছু মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি এরই মধ্যে ডাম্পিং করে দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, সামনে যেহেতু ঈদ, এ সময় মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে তা জনভোগান্তির কারণ হবে, তাই ঈদের পর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যাত্রীবাহী বাসের অর্থনৈতিক আয়ু ২০ বছর ও পণ্যবাহী গাড়ির ২৫ বছর নির্ধারণ করে ২০২৩ সালের মে মাসে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন সরকার। যদিও পরিবহন মালিকদের চাপে তিন মাস পর প্রজ্ঞাপনটি স্থগিত করা হয়।
দেশের সড়ক পরিবহন খাতের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ’র তথ্য বলছে, ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলায় ২০ বছরের পুরনো বাস ও মিনিবাস রয়েছে ১০ হাজার ৫৫৬টি। এর বাইরে সারা দেশে আরো ১৮ হাজার ২০৫টি বাস ও মিনিবাস রয়েছে। আর ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলায় ২৫ বছরের পুরনো পণ্যবাহী (ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, ট্যাংকলরি) মোটরযানের সংখ্যা ১৪ হাজার ৬৮৩। এর বাইরে সারা দেশে আরো ৩১ হাজার ৭৯৮টি পণ্যবাহী মোটরযান রয়েছে। সব মিলিয়ে দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ বাস ও ট্রাকের সংখ্যা ৭৫ হাজারের বেশি।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর ২০২৪ সালের ২৪ অক্টোবর বিদ্যুৎ ভবনে ‘ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে পুরনো মোটরযান অপসারণ’ শিরোনামে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় ২০ বছরের পুরনো বাস ও ২৫ বছরের পুরনো ট্রাক বা সমজাতীয় পরিবহনকে পুরনো হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
সভা শেষে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছিলেন, ‘আমরা একটা অঙ্গীকার নিয়ে এই সভা করেছি। এতে সব অংশীজন উপস্থিত ছিলেন। সভায় আমরা রাস্তা থেকে পুরনো যানবাহন সরিয়ে নিতে ছয় মাস সময় দিয়েছি। এ সময়ের মধ্যে মালিকরা নতুন বাস কেনার জন্য সরকারের কাছ থেকে ঋণ পেতে পারেন কিনা, সরকারের যে ইলেকট্রিক ভেহিকল নীতিমালা আছে, সেটার অধীনে সরকার ইলেকট্রিক গাড়ি কিনবে কিনা, বর্তমান বাসগুলোকে বিদ্যুচ্চালিত হিসেবে রূপান্তরের সুযোগ আছে কিনা ইত্যাদি বিষয় পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ছয় মাস সময় দেয়া হয়েছে।’
এসময় শেষ হয়েছে চলতি বছরের এপ্রিলে। যদিও এরপর সড়ক থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি অপসারণের উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্যোগ শুরু হয়নি। বিষয়টি সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান গণমাধ্যম বলেন, ‘আমরা ঈদের (আসন্ন ঈদুল আযহা) সময়টা একটু দেখতে চাই। এখন আমরা সীমিত পরিসরে পুরনো যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছি। ঈদের পর বড় আকারে অভিযান শুরু হবে। ঈদের সময় মানুষের নির্বিঘ্নে যাতায়াতের একটা বিষয় আছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক গাড়ি উঠিয়ে দিয়েছি। অনেক গাড়ি ডাম্পিংয়ে পাঠিয়েছি। কিন্তু এগুলো করা হয়েছে ফিটনেসসহ আনুষঙ্গিক ইস্যুগুলোর নাম করে। ঈদের পরে বড় পরিসরে পুরনো যানবাহন অপসারণকাজ শুরুর লক্ষ্যে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ সূএ : বাংলাদেশ প্রতিদিন