ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় যেভাবে…

কোনো স্থানে বায়ুর তাপ বৃদ্ধি পেলে সেখানকার বায়ু উপরে উঠে যায়। ফলে বায়ুর চাপ ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। একে নিম্নচাপ বলে। এ নিম্নচাপ অঞ্চলে প্রায় বায়ুশূন্য অবস্থা থাকে বলে আশপাশের অঞ্চল থেকে বায়ু প্রবল বেগে ঘুরতে ঘুরতে নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসে। এ নিম্নচাপ কেন্দ্রমুখী প্রবল ঘূর্ণি বায়ু প্রবাহকে ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোন বলে। সমুদ্রের উষ্ণ পানির কারণে বায়ু উত্তপ্ত হঠাৎ করে এসব ঝড়ের তৈরি হয়। তখন তুলনামূলক উষ্ণ বাতাস হালকা হয়ে যাওয়ার কারণে ওপরে উঠে যায়, আর ওপরের বাসা ঠাণ্ডা বাতাস নীচে নেমে আসে। এসে নীচের বায়ুমণ্ডলের বায়ুর চাপ কমে যায়। তখন আশেপাশের এলাকার বাতাসে তারতম্য তৈরি হয়।

 

সমুদ্রের পানি ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি গরম হয়ে গেলেই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে। এই উষ্ণতা থেকেই জন্ম নেয় বাষ্প ও স্যাঁতস্যাতে বাতাস। সেটিই রূপ নেয় ভয়ঙ্কর কালো মেঘে। দুই দিক থেকে আসা নিচের এই বাতাস এক হয়ে গরম পানির উপরের বাতাসকে ঠেলে দেয় আরও উপরের দিকে। তখন তাদের জায়গা করে দিতেই, অর্থাৎ এদের ধাক্কায় উপরের বাতাস ধেয়ে যায় উল্টো দুই দিকে। উপরের দিকে উঠতে থাকা ভেজা বাতাস এরই মাঝে তৈরি করতে থাকে ঝোড়ো মেঘ। আর এই ঘটনার আশপাশে বয়ে চলে যে হালকা বাতাস, সেও বাইরে থেকে ধীরে ধীরে এই ঘনঘটার ভেতর ঢুকতে শুরু করে, এতে ঝড়ের ঘূর্ণি আরও বড় হতে থাকে। বাতাসের গতি যখন প্রতি ঘণ্টায় ৭৪ মাইলের বেশি হয়ে যায়, তখনই তাকে হ্যারিকেন বলা হয়। গতি যখন এর চেয়ে কম থাকে কিন্তু প্রতি ঘন্টায় ৩৯ মাইলের বেশি থাকে তখন সেটা শুধুই মৌসুমী ঝড়।

বাংলাদেশের অধিকাংশ ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি হয় বঙ্গোপসাগরের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি। ঘূর্ণিঝড় উৎপত্তি হয় গভীর সমুদ্রে এবং এর জন্য সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার চেয়ে বেশি থাকে। ঘূর্ণিঝড় যেখানে উৎপত্তি হয় সেখানে ১০ থেকে ৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত ব্যাসার্ধে তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে এবং বায়ুর গতিবেগ খুব কম থাকে। এখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম। এ অঞ্চলটিকে বলে ঘূর্ণিঝড়ের চোখ। এর বাইরে ১৫০ থেকে ৭৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত ব্যাসার্ধে ঘূর্ণিঝড় বিস্তৃত হতে পারে এবং সেখানেই ঘণকালো মেঘের বিস্তার ও প্রবল বায়ুর প্রবাহসহ বৃষ্টিপাত ও আবহাওয়াগত গোলযোগ সংঘটিত হয়।

 

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের দেয়া তথ্য মতে, প্রতি বছর বঙ্গোপসাগরে গড়ে ১৩ থেকে ১৪টি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় (বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬১ দশমিক ৫৬ কিলোমিটারের কম) সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে ৫টি ঘূর্ণিঝড় শক্তি অর্জন করে এবং পাশ্ববর্তী উপকূল অতিক্রম করে। এদের যেকোনোটিরই বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ঘুরে প্রবাহিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

ঘূর্ণিঝড়ের শ্রেণী বিভাজন
বাতাসের তীব্রতা ও গতির ভিত্তিতে ঘূর্ণিঝড়ের শ্রেণী বিভাজন করা হয়। যেমন-

১. নিম্নচাপ-বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ২০ থেকে ৫০ কিলোমিটার।

২. গভীর নিম্নচাপ- বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১ দশমিক ৮৪ থেকে ৬১ দশমিক ৫৬ কিলোমিটার।

৩. ঘূর্ণিঝড়- বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬১ দশমিক ৫৬ থেকে ৮৭ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার।

৪. প্রবল ঘূর্ণিঝড়- বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ দশমিক ১ থেকে ১১৮ দশমিক ২৬ কিলোমিটার।

৫. হারিকেনের তীব্রতা সম্পন্ন প্রবল ঘূর্ণিঝড়- বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ১১৯ দশমিক ৮৮ কিলোমিটারের ঊর্ধ্বে।

 

বাংলাদেশের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘূর্ণিঝড়-

২৮ ও ২৯ মে ১৯৬৩
মানুষের প্রাণহানি ১১ হাজার ৫২০। বসতবাড়ি বিনষ্ট ১০ লাখ। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার। জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল ৮ থেকে ১০ ফুট উচ্চতায়।

 

১৫ ডিসেম্বর, ১৯৬৫
মানুষের প্রাণহানি ৮৭৩। লবণক্ষেত্র নিমজ্জিত হয় ১০ হাজার একর। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ২০৪ কিলোমিটার। জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল ২ দশমিক ৪ থেকে ৩ দশমিক ৭ মিটার উচ্চতায়।

 

১২ নভেম্বর, ১৯৭০
বলা হয়ে থাকে এই ঝড়ে মানুষের প্রাণহানী হয়েছিল ৫ লাখ। যদিও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর বলছে ৩ লাখ। গবাদিপশু ও বসতবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা যায়নি। বাতাসের গতিবেগ ছিলো ঘন্টায় ২২০ কিলোমিটার। জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল ১০ থেকে ৩৩ ফুট উচ্চতায়।

 

২৮ নভেম্বর, ১৯৭৪
মানুষের প্রাণহানি ২৮জন। নিখোঁজ ২৮০। গবাদিপশুর মৃত্যু এক হাজার। বসতবাড়ি বিনষ্ট ১৫ হাজার। বাতাসের গতিবেগ ছিলো ঘন্টায় ১৬০ কিলোমিটার। জলোচ্ছ্বাস হয়েছিলো ১০ ১২ ফুট উচ্চতায়। এটি হয়েছিল সন্দীপে।

 

২৫ মে ১৯৮৫
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ১৯০৬ বর্গমাইল। মানুষের প্রাণহানি ১১ হাজার ৬৯জন। নিখোঁজ ৬৮০৫। ক্ষতিগ্রস্থ লোকের সংখ্যা এক কোটি ৩১ লাখ ৯৩৫। গবাদি পশুর মৃত্যু এক লাখ ৩৫ হাজার ৫৫। বাতাসের গতিবেগ ছিলো ঘণ্টায় ১৫৪ কিলোমিটার। জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল ১৫ ফুট উচ্চতায়।

 

২৯ নভেম্বর, ১৯৮৮
মানুষের প্রাণহানী ৫ হাজার ৭০৮। নিখোঁজ ৬ হাজার। হরিণ নিহত হয় ১৫ হাজার এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগার ৯টি। গবাদি পশুর মৃত্যু হয় ৬৫ হাজার। বাতাসের গতিবেগ ছিলো ঘন্টায় ১৬৫ কিলোমিটার। জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল ২ থেকে ১৪ দশমিক ৫ ফুট উচ্চতায়।

 

২৯ এপ্রিল, ১৯৯১
মানুষের প্রাণহানি এক লাখ ৩৮ হাজার ৮৮২ জন। ক্ষতিগ্রস্থ লোক প্রায় এক কোটি। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার। জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল ১২ থেকে ২০ ফুট উচ্চতায়। এ ঘূর্ণিঝড়টি বয়ে যায় সন্দীপ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ভোলা, কুতুবদিয়া ও টেকনাফের ওপর দিয়ে।

 

২৯ এপ্রিল, ১৯৯৪
মানুষের প্রাণহানি ১৮৮। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ২২০ কিলোমিটার।

 

১৯ মে, ১৯৯৭ 
এ ঘটনায় মৃত ১৫৫ জন। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৩২ কিলোমিটার।

 

সিডর, ১৫ নভেম্বর, ২০০৭ 
বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২৩ কিলোমিটার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী সিডরে প্রাণ হারিয়েছে তিন হাজার ৩৬৩ জন। যদিও ঘটনার পর রেডক্রিসেন্ট ও বিভিন্ন বেসরকারি হিসেবে বলা হয়েছিল প্রায় ১০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। সরকারি হিসেবে সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছে বরগুনা জেলায় এক হাজার ২৫৭ জন। এরপর বাগেরহাটে ৮১০জন। পটুয়াখালীতে ৪৫৭ জন। আর খুঁজে পাওয়া যায়নি ৮৭১ জনকে।

 

আইলা, ২৫ মে, ২০০৯ 
নিহত ১৯০ জন। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯২ কিলোমিটার। এটি দিনে আঘাত হানে বলে প্রাণহানি কম হয়। তবে ব্যাপক জলোচ্ছ্বাস হয় এবং সমুদ্র থেকে প্রচুর লবণ পানি ঢুকে পড়ায় এখনো খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলের অনেক এলাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট বিরাজ করছে। বহু মানুষ এখনো বাঁধে আশ্রয় নিয়ে আছেন।

সূএ:ডেইলি বাংলাদেশ

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» পবিত্র আশুরা ৬ জুলাই

» তোষামোদি করতে কিছু নেতা তারেক রহমানকে মাস্টারমাইন্ড বলছেন: সারজিস

» নতুন বাংলাদেশের জন্ম ৫ আগস্ট, ৮ নয়: হাসনাত আব্দুল্লাহ

» গণমাধ্যমের ওপর সরকারের কোনো চাপ নেই: প্রেসসচিব

» গণতন্ত্র ধ্বংসকারী তিন সিইসির বিচার হওয়া উচিত : রিজভী

» ইরান কখনও আত্মসমর্পণ করবে না: খামেনি

» আগস্টে মালয়েশিয়া সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা

» প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সিইসির সাক্ষাৎ

» যেকোনও সময় ভোটার তালিকাভুক্তির ক্ষমতা চায় ইসি

» আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস লক্ষ্মীপুরে বিতর্ক ও কুইজ প্রতিযোগিতা  

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় যেভাবে…

কোনো স্থানে বায়ুর তাপ বৃদ্ধি পেলে সেখানকার বায়ু উপরে উঠে যায়। ফলে বায়ুর চাপ ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। একে নিম্নচাপ বলে। এ নিম্নচাপ অঞ্চলে প্রায় বায়ুশূন্য অবস্থা থাকে বলে আশপাশের অঞ্চল থেকে বায়ু প্রবল বেগে ঘুরতে ঘুরতে নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসে। এ নিম্নচাপ কেন্দ্রমুখী প্রবল ঘূর্ণি বায়ু প্রবাহকে ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোন বলে। সমুদ্রের উষ্ণ পানির কারণে বায়ু উত্তপ্ত হঠাৎ করে এসব ঝড়ের তৈরি হয়। তখন তুলনামূলক উষ্ণ বাতাস হালকা হয়ে যাওয়ার কারণে ওপরে উঠে যায়, আর ওপরের বাসা ঠাণ্ডা বাতাস নীচে নেমে আসে। এসে নীচের বায়ুমণ্ডলের বায়ুর চাপ কমে যায়। তখন আশেপাশের এলাকার বাতাসে তারতম্য তৈরি হয়।

 

সমুদ্রের পানি ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি গরম হয়ে গেলেই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে। এই উষ্ণতা থেকেই জন্ম নেয় বাষ্প ও স্যাঁতস্যাতে বাতাস। সেটিই রূপ নেয় ভয়ঙ্কর কালো মেঘে। দুই দিক থেকে আসা নিচের এই বাতাস এক হয়ে গরম পানির উপরের বাতাসকে ঠেলে দেয় আরও উপরের দিকে। তখন তাদের জায়গা করে দিতেই, অর্থাৎ এদের ধাক্কায় উপরের বাতাস ধেয়ে যায় উল্টো দুই দিকে। উপরের দিকে উঠতে থাকা ভেজা বাতাস এরই মাঝে তৈরি করতে থাকে ঝোড়ো মেঘ। আর এই ঘটনার আশপাশে বয়ে চলে যে হালকা বাতাস, সেও বাইরে থেকে ধীরে ধীরে এই ঘনঘটার ভেতর ঢুকতে শুরু করে, এতে ঝড়ের ঘূর্ণি আরও বড় হতে থাকে। বাতাসের গতি যখন প্রতি ঘণ্টায় ৭৪ মাইলের বেশি হয়ে যায়, তখনই তাকে হ্যারিকেন বলা হয়। গতি যখন এর চেয়ে কম থাকে কিন্তু প্রতি ঘন্টায় ৩৯ মাইলের বেশি থাকে তখন সেটা শুধুই মৌসুমী ঝড়।

বাংলাদেশের অধিকাংশ ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি হয় বঙ্গোপসাগরের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি। ঘূর্ণিঝড় উৎপত্তি হয় গভীর সমুদ্রে এবং এর জন্য সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার চেয়ে বেশি থাকে। ঘূর্ণিঝড় যেখানে উৎপত্তি হয় সেখানে ১০ থেকে ৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত ব্যাসার্ধে তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে এবং বায়ুর গতিবেগ খুব কম থাকে। এখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম। এ অঞ্চলটিকে বলে ঘূর্ণিঝড়ের চোখ। এর বাইরে ১৫০ থেকে ৭৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত ব্যাসার্ধে ঘূর্ণিঝড় বিস্তৃত হতে পারে এবং সেখানেই ঘণকালো মেঘের বিস্তার ও প্রবল বায়ুর প্রবাহসহ বৃষ্টিপাত ও আবহাওয়াগত গোলযোগ সংঘটিত হয়।

 

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের দেয়া তথ্য মতে, প্রতি বছর বঙ্গোপসাগরে গড়ে ১৩ থেকে ১৪টি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় (বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬১ দশমিক ৫৬ কিলোমিটারের কম) সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে ৫টি ঘূর্ণিঝড় শক্তি অর্জন করে এবং পাশ্ববর্তী উপকূল অতিক্রম করে। এদের যেকোনোটিরই বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ঘুরে প্রবাহিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

ঘূর্ণিঝড়ের শ্রেণী বিভাজন
বাতাসের তীব্রতা ও গতির ভিত্তিতে ঘূর্ণিঝড়ের শ্রেণী বিভাজন করা হয়। যেমন-

১. নিম্নচাপ-বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ২০ থেকে ৫০ কিলোমিটার।

২. গভীর নিম্নচাপ- বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১ দশমিক ৮৪ থেকে ৬১ দশমিক ৫৬ কিলোমিটার।

৩. ঘূর্ণিঝড়- বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬১ দশমিক ৫৬ থেকে ৮৭ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার।

৪. প্রবল ঘূর্ণিঝড়- বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ দশমিক ১ থেকে ১১৮ দশমিক ২৬ কিলোমিটার।

৫. হারিকেনের তীব্রতা সম্পন্ন প্রবল ঘূর্ণিঝড়- বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ১১৯ দশমিক ৮৮ কিলোমিটারের ঊর্ধ্বে।

 

বাংলাদেশের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘূর্ণিঝড়-

২৮ ও ২৯ মে ১৯৬৩
মানুষের প্রাণহানি ১১ হাজার ৫২০। বসতবাড়ি বিনষ্ট ১০ লাখ। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার। জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল ৮ থেকে ১০ ফুট উচ্চতায়।

 

১৫ ডিসেম্বর, ১৯৬৫
মানুষের প্রাণহানি ৮৭৩। লবণক্ষেত্র নিমজ্জিত হয় ১০ হাজার একর। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ২০৪ কিলোমিটার। জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল ২ দশমিক ৪ থেকে ৩ দশমিক ৭ মিটার উচ্চতায়।

 

১২ নভেম্বর, ১৯৭০
বলা হয়ে থাকে এই ঝড়ে মানুষের প্রাণহানী হয়েছিল ৫ লাখ। যদিও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর বলছে ৩ লাখ। গবাদিপশু ও বসতবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা যায়নি। বাতাসের গতিবেগ ছিলো ঘন্টায় ২২০ কিলোমিটার। জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল ১০ থেকে ৩৩ ফুট উচ্চতায়।

 

২৮ নভেম্বর, ১৯৭৪
মানুষের প্রাণহানি ২৮জন। নিখোঁজ ২৮০। গবাদিপশুর মৃত্যু এক হাজার। বসতবাড়ি বিনষ্ট ১৫ হাজার। বাতাসের গতিবেগ ছিলো ঘন্টায় ১৬০ কিলোমিটার। জলোচ্ছ্বাস হয়েছিলো ১০ ১২ ফুট উচ্চতায়। এটি হয়েছিল সন্দীপে।

 

২৫ মে ১৯৮৫
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ১৯০৬ বর্গমাইল। মানুষের প্রাণহানি ১১ হাজার ৬৯জন। নিখোঁজ ৬৮০৫। ক্ষতিগ্রস্থ লোকের সংখ্যা এক কোটি ৩১ লাখ ৯৩৫। গবাদি পশুর মৃত্যু এক লাখ ৩৫ হাজার ৫৫। বাতাসের গতিবেগ ছিলো ঘণ্টায় ১৫৪ কিলোমিটার। জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল ১৫ ফুট উচ্চতায়।

 

২৯ নভেম্বর, ১৯৮৮
মানুষের প্রাণহানী ৫ হাজার ৭০৮। নিখোঁজ ৬ হাজার। হরিণ নিহত হয় ১৫ হাজার এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগার ৯টি। গবাদি পশুর মৃত্যু হয় ৬৫ হাজার। বাতাসের গতিবেগ ছিলো ঘন্টায় ১৬৫ কিলোমিটার। জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল ২ থেকে ১৪ দশমিক ৫ ফুট উচ্চতায়।

 

২৯ এপ্রিল, ১৯৯১
মানুষের প্রাণহানি এক লাখ ৩৮ হাজার ৮৮২ জন। ক্ষতিগ্রস্থ লোক প্রায় এক কোটি। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার। জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল ১২ থেকে ২০ ফুট উচ্চতায়। এ ঘূর্ণিঝড়টি বয়ে যায় সন্দীপ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ভোলা, কুতুবদিয়া ও টেকনাফের ওপর দিয়ে।

 

২৯ এপ্রিল, ১৯৯৪
মানুষের প্রাণহানি ১৮৮। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ২২০ কিলোমিটার।

 

১৯ মে, ১৯৯৭ 
এ ঘটনায় মৃত ১৫৫ জন। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৩২ কিলোমিটার।

 

সিডর, ১৫ নভেম্বর, ২০০৭ 
বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২৩ কিলোমিটার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী সিডরে প্রাণ হারিয়েছে তিন হাজার ৩৬৩ জন। যদিও ঘটনার পর রেডক্রিসেন্ট ও বিভিন্ন বেসরকারি হিসেবে বলা হয়েছিল প্রায় ১০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। সরকারি হিসেবে সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছে বরগুনা জেলায় এক হাজার ২৫৭ জন। এরপর বাগেরহাটে ৮১০জন। পটুয়াখালীতে ৪৫৭ জন। আর খুঁজে পাওয়া যায়নি ৮৭১ জনকে।

 

আইলা, ২৫ মে, ২০০৯ 
নিহত ১৯০ জন। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯২ কিলোমিটার। এটি দিনে আঘাত হানে বলে প্রাণহানি কম হয়। তবে ব্যাপক জলোচ্ছ্বাস হয় এবং সমুদ্র থেকে প্রচুর লবণ পানি ঢুকে পড়ায় এখনো খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলের অনেক এলাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট বিরাজ করছে। বহু মানুষ এখনো বাঁধে আশ্রয় নিয়ে আছেন।

সূএ:ডেইলি বাংলাদেশ

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com