অনলাইন ডেস্ক : গুম ও ক্রসফায়ারের ভয়ংকর হোতা ছিলেন সাবেক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। তার নির্দেশে বিএনপির সাবেক এমপি ইলিয়াস আলী ও কাউন্সিলর চৌধুরী আলমকে গুম করা হয়। এ ছাড়াও বহু গুম ও ক্রসফায়ারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তার নাম। এসব গুম ও ক্রসফায়ারে সহায়তার জন্য পুলিশের অতিরিক্ত এসপি আলেপ উদ্দিনকে শিষ্য বানিয়েছিলেন জিয়াউল।
আলেপের বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ ওঠায় কয়েক মাস আগে র্যাব থেকে তাকে রংপুর পুলিশে বদলি করা হয়েছিল। কিন্তু জিয়াউলের তদবিরে দুই মাসের মাথায় আবারও র্যাবে ফিরে আসেন আলেপ। গুম কমিশন ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জিয়াউল আহসান সেনাবাহিনীতে মেজর পদে কর্মরত থাকাকালে ২০০৯ সালের ৫ মার্চ র্যাব-২-এ উপ-অধিনায়ক হিসেবে যোগ দেন।
একই বছর তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে উন্নীত হন এবং ২০১০ সালের ২৭ আগস্ট র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর ২০১৩ সালের ৭ ডিসেম্বর কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়ে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) হন তিনি। সর্বশেষ তাকে জাতীয় টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক করা হয়। এনটিএমসিতে যোগদানের আগে তিনি জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক ছিলেন।
গুম, হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় চলতি বছরের ৬ আগস্ট জিয়াউল আহসানকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে।
সেনাবাহিনীতে তিনি মেজর পদ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে র্যাবে যোগ দেওয়ার পর গত ১৫ বছরে তার আর সেনাবাহিনীতে ফেরা সম্ভব হয়নি। এত দীর্ঘ সময় মাতৃবাহিনীর বাইরে থাকার নজির নেই।
তবে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সরাসরি যোগাযোগ ছিল। এই যোগাযোগকে ব্যবহার করে জিয়াউলের কথায় পরিচালিত হতো র্যাবে পদায়নসহ নানা কর্মকাণ্ড। কাকে গুম করতে হবে, কাকে ক্রসফায়ারে দিতে হবে, এর বেশ কিছু বাস্তবায়িত হয়েছে জিয়াউলের তত্ত্বাবধানে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ৩১তম বিসিএস পাস করে আলেপ উদ্দিন ২০১৩ সালে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনার পর র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের সব কর্মকর্তা ও সদস্যকে বদলি করা হয়। ওই সময় নতুন করে নিয়োগ দেওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে সুযোগ পান এএসপি আলেপ উদ্দিন। র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নে যোগ দেওয়ার পর তিনি জিয়াউলের নজরে আসেন। এরপর তারা হয়ে ওঠেন গুরু-শিষ্য।
সূত্র বলেছে, জিয়াউল শেখ হাসিনার কাছ থেকে যে বার্তা পেতেন সে বার্তা আলেপকে পৌঁছে দিতেন। আর আলেপ সেটি বাস্তবায়ন করতেন। গুমের সময় র্যাবের পোশাক পাল্টে সাদা পোশাকে ডিবি পরিচয়ে উঠিয়ে আনা হতো টার্গেট করা ব্যক্তিকে।
আলেপ উদ্দিন র্যাবে থাকার সময় ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার, মিডিয়া সেল ও জঙ্গি সেল ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। জঙ্গি দমনের নামে ধর্মভিরু অনেক আলেমকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এর প্রতিদান হিসেবে আলেপ পেয়েছেন বিপিএম ও পিপিএম পুরস্কার। ২০২২ সালের বিপিএম-পিপিএম পুরস্কারে আলেপের নাম না থাকলেও পুরস্কার প্রদানের আগের দিন তার নাম যুক্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করে, যা ছিল নজিরবিহীন।
র্যাবে কর্মরত সময়ে সহকর্মীরা আলেপকে জল্লাদ বলে ডাকতেন বলে জানা গেছে। এক র্যাব কর্মকর্তা জানান, সরকারের আস্থাভাজন হতে আলেপ সার্বক্ষণিক ব্যস্ত থাকতেন। গুম, খুন ও আয়নাঘরের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর বর্তমানে গুরু-শিষ্য দুজনই কারাগারে।
সূত্র মতে, গুম কমিশনের অনুসন্ধানে জিয়াউল আহসানের ভয়াবহ অপরাধের চিত্র পাওয়া যাচ্ছে বলে জানা গেছে। সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন