ছবি সংগৃহীত
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় থামছেই না ইসরায়েলি বর্বরতা। দখলদার দেশটির হামলায় প্রতিনিয়ত প্রাণ হারানো ফিলিস্তিনিদের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। আহতদের সংখ্যাটাও বেড়ে চলেছে। গাজায় শরণার্থীদের জন্য সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত আল-মাওয়াসিতে ইসরায়েলি বাহিনীর গোলাবর্ষণে ১৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৬০ জনেরও বেশি।
স্থানীয় লোকজন এবং গাজার প্রশাসনের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সিএনএন। বর্বরোচিত এই হামলায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ধ্বংসস্তূপ এবং বালিতে অনেকের দেহ চাপা পড়ে থাকায় এমন আশঙ্কা করছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্থানীয় লোকজন এবং উদ্ধারকর্মীরা হতাহতদের উদ্ধারে ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ শুরু করেছেন।
আল-মাওয়াসির বাসিন্দা মামুদ আল নিমস সিএনএনকে বলেন, ‘রাতে আমরা ঘুমিয়েছিলাম। এ সময় হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হলে আমরা জেগে উঠি। এরপর চারদিক থেকে গুলির শব্দ শুনলাম। আমরা এখনও বুঝতে পারছি না যে শরণার্থী এলাকার ঠিক কোথায় হামলা হয়েছিল এবং যারা ধ্বংসস্তূপ ও বালির নিচে চাপা পড়েছে, তাদের অবস্থান কোথায়। পুরো এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।
আল মাওয়াসি শরণার্থী এলাকাটি গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসের নিকটবর্তী। হামলার পর নিহত এবং আহতদের খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। হতাহতদের মধ্যে নারী-পুরুষ, শিশু- সব ধরনের এবং সব বয়সী মানুষ আছে।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, আল মাওয়াসিতে হামাসের অন্তত তিন জন জ্যেষ্ঠ নেতা আত্মগোপন করে আছেন বলে গোয়েন্দা তথ্য ছিল তাদের কাছে। সে কারণেই তারা সেখানে চালিয়েছে। তবে যাদের লক্ষ্য করে হামলা পরিচালিত হয়েছিল, তারা নিহত হয়েছেন কি না— বিবৃতিতে তা নিশ্চিত করেনি আইডিএফ।
গত বছরের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলার প্রতিক্রিয়ায় গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে কয়েক লাখ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি খান ইউনিসে পালিয়েছে।
১১ মাসেরও বেশি সময় ধরে চালানো ইসরায়েলি হামলায় ইতোমধ্যে ৪১ হাজার ১১৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৯৫ হাজার ১২৫ ফিলিস্তিনি। হামলার পর বিভিন্ন ভবনের ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া অনেকেই নিখোঁজ হয়েছেন। তারা মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে যুদ্ধের মধ্যেই গাজায় শিশুদের পোলিও প্রতিরোধে জাতিসংঘের নেতৃত্বে টিকাদান অভিযানের প্রথম ধাপ শেষ হয়েছে। প্রায় পাঁচ লাখ ৬০ হাজার শিশু ১২ দিনের মধ্যে তাদের প্রথম ডোজ পেয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, গাজার বিরুদ্ধে তার ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই ইসরায়েলকে চাপ দিতে হবে। তবে এও স্বীকার করেন, ‘আমি আমেরিকান রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে যথেষ্ট জানি যে এটি ঘটবে না।’