গাছের পাগল করা রূপ দেখতে বিশ্ব পর্যটকদের ভিড়

অক্টোবর ২৪, ২০২২। গাছগুলো যেন হলুদ সাজে সেজেছে। এটাকে ফলস টাইম বলে। পাতা ঝরে যাওয়ার আগে হলুদ রঙ ধারণ করে। সড়কের দুই পাশ ও পার্কে যেদিকে তাকানোয় যায় সেদিকেই রঙের বাহার। গাছের এই পাগল করা রূপ দেখতে বিশ্বের পর্যটকেরা ভিড় করেছে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডায়। সেপ্টেম্বর থেকে পাতাঝরা শুরু হয়ে চলতে থাকে মার্চ পর্যন্ত।

 

গ্রিন অ্যাশ, জিনকো, ক্যালারি পেয়ার, পেয়ার ট্রি, হানি লোকেস্ট, ক্যানওকস, ম্যাপেল ট্রি, পেনওক, রেড ম্যাপল ট্রি, লন্ডন পেন ট্রি, কট্রিসহ হাজারো প্রজাতির গাছ রয়েছে। ইচ্ছে করলেও কেউ গাছ কাটতে পারবে না। তবে সরকার যদি একটি গাছ কাটে একই সঙ্গে তিনটা রোপন করে। যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান, উইসকনসিনে প্রচুর ম্যাপল ট্রি আছে। শীতের আগ মুহূর্তে সব গাছ সাজে হলুদ রঙে।

যুক্তরাষ্ট্রে অটামকে বলা হয় ফলস টাইম। প্রতিটি ঋতুর আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মার্চ থেকে মে, এই তিন মাস স্প্রিং। এরপর প্রকৃতিকে রূপে-ঐশ্বর্যে ভরিয়ে দিয়ে আসে সামার। কখনো প্রচণ্ড গরমে কষ্ট হলেও যুক্তরাষ্ট্রে সামার খুব আদরের একটি ঋতু।

আগস্ট মাসে সামারের নানা আয়োজন থাকে। এরপর শুরু হয় পাতা ঝরার দিন। গাছে গাছে আগুন লাগে। একেক গাছে একেক রঙ। রঙিনের উৎসবে হলুদের প্রাধান্য বেশি। সবুজ পাতারা হলুদ বর্ণ ধারণ করে একে একে ঝরে পড়ে। রাস্তা, মাঠ, পার্কে বিছিয়ে থাকে শুকনো পাতা।

মোহাম্মদ তাসলিম সেলিম। জন্ম নোয়াখালীতে হলেও গত ৩০ বছর বসবাস করেন নিউইয়র্কের জ্যামাইকাতে। ফলস টাইম প্রসঙ্গে বলেন, ফলস টাইমে মন ভালো হয়ে যায়। স্বপরিবারে লং ড্রাইভে যায়, সড়কের চারপাশ থেকে যেন হলুদ রঙ হাতছানি দিয়ে ডাকে। শীতের আগে পাতা ঝরে যায়। পুরো গাছ খালি হয়ে যায়। গাছ যখন পাতা খালি হয় তখন শীত পড়ে প্রচণ্ড। মার্চের পরে পাতা গজাতে থাকে।

পায়ে পায়ে মাড়িয়ে গেলে মর্মর ধ্বনি ওঠে। গাছ থেকে পাতা ঝরে পড়ার দৃশ্য বিষণ্ন করলেও এক ধরনের মায়ায় ডুবিয়ে দেয়। নিয়ে যায় অন্য এক ভুবনে। ফল সিজনের পরে উইন্টারের আগমন। কখনো আকাশে মেঘের ঘনঘটা, কখনো প্রচণ্ড শীতল বাতাস গায়ে কাঁপুনি ধরায়, আবার কখনো রৌদ্রের হাসি। এরপর এই সময়টা টেনে নিয়ে যায় শীতে। শুরু হয় তুষার উৎসব।

যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার বাসিন্দা রবিউল হক। তার একটি গ্রোসারি শপ রয়েছে। দীর্ঘ ৩৫ বছর এই দেশেই বেড়ে ওঠা। জন্মস্থান নোয়াখালীর সেনবাগে খুব একটা যাওয়া পড়ে না।

রবিউল হক বলেন, দেশের জন্য আমার মন কাঁদে। কিন্তু নানা কারণে যেতে পারি না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃতি আমার কাছে বেশ ভালো লাগে। প্রকৃতির প্রত্যেকটি পরিবর্তন নিজের মতো করে উপভোগ করি আমি। সেই পরিবর্তন এবং আবহাওয়ার আচরণের ওপর নির্ভর করে পরিকল্পনা সাজাই। নিজেকে মানিয়ে নেই, উপভোগ করি।

সামারের বিদায় ঘণ্টা যখন বাজিয়ে ফলস সিজনকে ঘিরে প্রস্তুতির শুরু। বিশেষ করে ঝরা পাতার গান কান পেতে শুনবো বলে নানা দেশ থেকে পর্যটকেরা ভিড় করে যুক্তরাষ্ট্রে।

প্রত্যেকটি পার্কে গাছগুলো রূপ বদলাচ্ছে। অদ্ভূত এক অনুভূতি হয়। লাল-মেরুন-হলুদ-সবুজের বিভিন্ন শেড। গাছের নিচে বাদামি ঝরা পাতা। কাঠবিড়ালিদের উৎসব। এসব দৃশ্য সবাইকে মুগ্ধ করে। যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় নরওয়ে থেকে বেড়াতে এসেছেন মাইকেল সানসিস।

মাইকেল সানসিস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফলস টাইম মানেই মনোমুগ্ধকর প্রকৃতির রূপ। অক্টোবর এসে এই রূপ দেখে পুনরায় দেশে ফিরে যায়। পাতাগুলো নিঃশেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে যে রূপ দেখায় তা সত্যিই অসাধারণ।

কেউ গাছ কাটলে বড় ধরনের জরিমানা দিতে হয়। কারোর জমিতে বাড়ি নির্মাণ করার সময় যদি বড় গাছ থাকে তবে সেটা সরকার সরিয়ে নেবে। বিনিময়ে জমির মালিককে গুনতে হবে তিন থেকে চার হাজার মার্কিন ডলার।

নিউইয়র্ক বাফেলোর বাসিন্দা শরিফুল করিম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে গাছ কাটলে বড় বিপদ। কেউ ইচ্ছে করলে কাটতে পারবে না। নিজের জমির গাছও সরকার কাটবে বিনিময়ে তিন থেকে চার হাজার ডলার দিতে হবে। সূএ:জাগোনিউজ২৪.কম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ‘জাতীয় সমাবেশ’ সফল করতে জামায়াত আমিরের আহ্বান

» এনসিপি বাংলাদেশপন্থি, দিল্লি-লন্ডন-আমেরিকার ওপর নির্ভর করে না : হাসনাত

» শামীম হায়দারের নেতৃত্বে আ. লীগের পুনর্বাসন হতে যাচ্ছে : রাশেদ খান

» ঢাকায় নির্বাচনী শোডাউন করতে চায় জামায়াত

» আবরার ফাহাদের দেখানো পথে এনসিপি রাজনীতি করছে : নাহিদ

» এবার সাবেক এমপি আসাদুজ্জামান নূর গ্রেপ্তার

» আমার কথা বলার স্বাধীনতা থাকতে হবে, তোমারও থাকতে হবে: মির্জা ফখরুল

» ‘যারা পিআর চায়, তারা আওয়ামী লীগকে ফেরাতে চায়’

» বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বৃক্ষরোপণ অভিযানের উদ্বোধন করলেন সেনাবাহিনী প্রধান

» অবশেষে এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে ক্ষমা চাইলেন ২ শতাধিক আন্দোলনকারী

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

গাছের পাগল করা রূপ দেখতে বিশ্ব পর্যটকদের ভিড়

অক্টোবর ২৪, ২০২২। গাছগুলো যেন হলুদ সাজে সেজেছে। এটাকে ফলস টাইম বলে। পাতা ঝরে যাওয়ার আগে হলুদ রঙ ধারণ করে। সড়কের দুই পাশ ও পার্কে যেদিকে তাকানোয় যায় সেদিকেই রঙের বাহার। গাছের এই পাগল করা রূপ দেখতে বিশ্বের পর্যটকেরা ভিড় করেছে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডায়। সেপ্টেম্বর থেকে পাতাঝরা শুরু হয়ে চলতে থাকে মার্চ পর্যন্ত।

 

গ্রিন অ্যাশ, জিনকো, ক্যালারি পেয়ার, পেয়ার ট্রি, হানি লোকেস্ট, ক্যানওকস, ম্যাপেল ট্রি, পেনওক, রেড ম্যাপল ট্রি, লন্ডন পেন ট্রি, কট্রিসহ হাজারো প্রজাতির গাছ রয়েছে। ইচ্ছে করলেও কেউ গাছ কাটতে পারবে না। তবে সরকার যদি একটি গাছ কাটে একই সঙ্গে তিনটা রোপন করে। যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান, উইসকনসিনে প্রচুর ম্যাপল ট্রি আছে। শীতের আগ মুহূর্তে সব গাছ সাজে হলুদ রঙে।

যুক্তরাষ্ট্রে অটামকে বলা হয় ফলস টাইম। প্রতিটি ঋতুর আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মার্চ থেকে মে, এই তিন মাস স্প্রিং। এরপর প্রকৃতিকে রূপে-ঐশ্বর্যে ভরিয়ে দিয়ে আসে সামার। কখনো প্রচণ্ড গরমে কষ্ট হলেও যুক্তরাষ্ট্রে সামার খুব আদরের একটি ঋতু।

আগস্ট মাসে সামারের নানা আয়োজন থাকে। এরপর শুরু হয় পাতা ঝরার দিন। গাছে গাছে আগুন লাগে। একেক গাছে একেক রঙ। রঙিনের উৎসবে হলুদের প্রাধান্য বেশি। সবুজ পাতারা হলুদ বর্ণ ধারণ করে একে একে ঝরে পড়ে। রাস্তা, মাঠ, পার্কে বিছিয়ে থাকে শুকনো পাতা।

মোহাম্মদ তাসলিম সেলিম। জন্ম নোয়াখালীতে হলেও গত ৩০ বছর বসবাস করেন নিউইয়র্কের জ্যামাইকাতে। ফলস টাইম প্রসঙ্গে বলেন, ফলস টাইমে মন ভালো হয়ে যায়। স্বপরিবারে লং ড্রাইভে যায়, সড়কের চারপাশ থেকে যেন হলুদ রঙ হাতছানি দিয়ে ডাকে। শীতের আগে পাতা ঝরে যায়। পুরো গাছ খালি হয়ে যায়। গাছ যখন পাতা খালি হয় তখন শীত পড়ে প্রচণ্ড। মার্চের পরে পাতা গজাতে থাকে।

পায়ে পায়ে মাড়িয়ে গেলে মর্মর ধ্বনি ওঠে। গাছ থেকে পাতা ঝরে পড়ার দৃশ্য বিষণ্ন করলেও এক ধরনের মায়ায় ডুবিয়ে দেয়। নিয়ে যায় অন্য এক ভুবনে। ফল সিজনের পরে উইন্টারের আগমন। কখনো আকাশে মেঘের ঘনঘটা, কখনো প্রচণ্ড শীতল বাতাস গায়ে কাঁপুনি ধরায়, আবার কখনো রৌদ্রের হাসি। এরপর এই সময়টা টেনে নিয়ে যায় শীতে। শুরু হয় তুষার উৎসব।

যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার বাসিন্দা রবিউল হক। তার একটি গ্রোসারি শপ রয়েছে। দীর্ঘ ৩৫ বছর এই দেশেই বেড়ে ওঠা। জন্মস্থান নোয়াখালীর সেনবাগে খুব একটা যাওয়া পড়ে না।

রবিউল হক বলেন, দেশের জন্য আমার মন কাঁদে। কিন্তু নানা কারণে যেতে পারি না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃতি আমার কাছে বেশ ভালো লাগে। প্রকৃতির প্রত্যেকটি পরিবর্তন নিজের মতো করে উপভোগ করি আমি। সেই পরিবর্তন এবং আবহাওয়ার আচরণের ওপর নির্ভর করে পরিকল্পনা সাজাই। নিজেকে মানিয়ে নেই, উপভোগ করি।

সামারের বিদায় ঘণ্টা যখন বাজিয়ে ফলস সিজনকে ঘিরে প্রস্তুতির শুরু। বিশেষ করে ঝরা পাতার গান কান পেতে শুনবো বলে নানা দেশ থেকে পর্যটকেরা ভিড় করে যুক্তরাষ্ট্রে।

প্রত্যেকটি পার্কে গাছগুলো রূপ বদলাচ্ছে। অদ্ভূত এক অনুভূতি হয়। লাল-মেরুন-হলুদ-সবুজের বিভিন্ন শেড। গাছের নিচে বাদামি ঝরা পাতা। কাঠবিড়ালিদের উৎসব। এসব দৃশ্য সবাইকে মুগ্ধ করে। যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় নরওয়ে থেকে বেড়াতে এসেছেন মাইকেল সানসিস।

মাইকেল সানসিস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফলস টাইম মানেই মনোমুগ্ধকর প্রকৃতির রূপ। অক্টোবর এসে এই রূপ দেখে পুনরায় দেশে ফিরে যায়। পাতাগুলো নিঃশেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে যে রূপ দেখায় তা সত্যিই অসাধারণ।

কেউ গাছ কাটলে বড় ধরনের জরিমানা দিতে হয়। কারোর জমিতে বাড়ি নির্মাণ করার সময় যদি বড় গাছ থাকে তবে সেটা সরকার সরিয়ে নেবে। বিনিময়ে জমির মালিককে গুনতে হবে তিন থেকে চার হাজার মার্কিন ডলার।

নিউইয়র্ক বাফেলোর বাসিন্দা শরিফুল করিম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে গাছ কাটলে বড় বিপদ। কেউ ইচ্ছে করলে কাটতে পারবে না। নিজের জমির গাছও সরকার কাটবে বিনিময়ে তিন থেকে চার হাজার ডলার দিতে হবে। সূএ:জাগোনিউজ২৪.কম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com