ছবি সংগৃহীত
ধর্ম ডেস্ক :ইফতারে খেজুর খাওয়ার রীতি অনেক পুরোনো। যেকোনো খাবার খেয়ে ইফতার করা গেলেও খেজুর দিয়ে ইফতার করার বিশেষ কারণ রয়েছে। ইসলামে প্রত্যেক বিষয়ে নবীজির অনুসরণ অনুকরণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মহানবী (স.)-এর প্রিয় খাবারের একটি ছিল খেজুর। তিনি ইফতার করতেন খেজুর খেয়েই। তাই মুসলমানদের জন্য নবীজির অনুসরণে খেজুর খাওয়া সুন্নত।
হজরত আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী (স.) নামাজের আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর খেয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকত, তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না থাকত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে।’ (তিরমিজি; রোজা অধ্যায়: ৬৩২)
ইফতারে খেজুর খাওয়ার বৈজ্ঞানিক উপকাররিতাও রয়েছে। রোজায় দীর্ঘসময় আমরা খাবার ও পানীয় থেকে বিরত থাকি। এতে পুষ্টির অভাবে আমাদের শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই শরীরে দ্রুত শক্তি ফিরে পেতে খেজুর অনেক উপকারী খাবার। এ কারণেই রোজার সময় খেজুরের গুরুত্ব অনেকটাই বেড়ে যায়। নানা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খেজুরে আছে ক্যালরি, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফাইবার, আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়ামসহ নানা প্রাকৃতিক উপাদান।
ইফতারে খেজুর খাওয়ার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা
১. খেজুরে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
২. হৃৎপিণ্ডের সবচেয়ে নিরাপদ ওষুধ খেজুর।
৩. পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ও প্রাকৃতিক আঁশে পূর্ণ খেজুর ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। তাই যারা নিয়মিত খেজুর খান, তাদের বেলায় ক্যান্সারের ঝুঁকিটাও অনেক কম থাকে।
৪. খেজুরে থাকা আয়রন ও ফাইবার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।প্রচুর পটাসিয়াম পাওয়া যায় খেজুর থেকে। এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৫. মাত্র কয়েকটি খেজুর ক্ষুধার তীব্রতা কমিয়ে দেয় এবং পাকস্থলীকে কম খাবার গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। অল্পতেই শরীরের প্রয়োজনীয় শর্করার ঘাটতি পূরণ করে।
৬. খেজুরের পুষ্টিগুণ প্রচুর। সুগারের পরিমাণ এত বেশি থাকে খেজুরে যে এক কামড়েই অনেকটা এনার্জি পাওয়া যায়। এর মধ্যে আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফাইবার, গ্লুকোজ, ম্যাগনেশিয়াম ও সুক্রোজ থাকে। যে কারণে খেজুর খাওয়ার মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে শরীরে এনার্জি বেড়ে যায়। সারা দিন উপোস করে শরীরে ক্লান্তি আসে, তা দূর করে এনার্জি জোগাতে সাহায্য করে খেজুর।
৭. সারাদিন উপোস করলে সাধারণত অ্যাসিডিটি হয়। যার থেকে অস্বস্তি হতে থাকে। খেজুর শরীরে অ্যাসিডের মাত্রা বশে রেখে অস্বস্তি কমায়।
৮. সারা দিন না খেয়ে থাকলে খাওয়ার সময় বেশি খেয়ে ফেলার প্রবণতা তৈরি হয়। তাই খেজুর খেয়ে উপোস ভাঙলে এর মধ্যে থাকা জটিল কার্বোহাইড্রেট হজম হতে বেশি সময় নেয়। ফাইবার থাকার কারণে পেট ভরা লাগে। তাই বেশি খাওয়ার আগেই পেট ভরে যায়।
৯. অনেক ক্ষণ না খেয়ে থাকলে তা পৌষ্টিকতন্ত্রের কার্যকারিতায় ব্যাঘাত ঘটায়। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও হতে পারে। খেজুর শরীরে উত্সেচক ক্ষরণে সাহায্য করে। ফলে হজম ভাল হয়।
খেজুর হলো রোজা ভাঙার সর্বোত্তম উপায়। তবে ইফতারে যদি খেজুর না পাওয়া যায়, তাহলে পানি পান করা উচিত। কারণ উভয়ই বিশুদ্ধ এবং নিরাময়কারী। নবীজি (স.) খেজুর না থাকলে পানি দিয়েও ইফতার করতেন। সালমান ইবনে আমির (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ রোজা রাখলে খেজুর দিয়ে যেন ইফতার করে, খেজুর না হলে পানি দিয়ে; নিশ্চয় পানি পবিত্র‘। (আহমদ, তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ ও দারেমি; আলফিয়্যাতুল হাদিস: ৫৬২, পৃষ্ঠা: ১৩১-১৩২)