খাবার চিবিয়ে না খেলে হতে পারে যেসব বিপদ

প্রতিদিন সকালে অফিসে যাওয়ার তাড়া আমরা প্রথমে খাবারের সাথেই দেখাই। দ্রুত ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য অধিকাংশ সময়ই কোনো রকমে খাবার শেষ করি। যার ফলে খাবার ভাল ভাবে না চিবিয়ে গিলে ফেলি। এই অভ্যাসে সময় বাঁচলেও শরীরের ক্ষতি হয়। ফলে খাবার হজম ঠিক মতো হয় না। 

 

গিলে খেলে সেই খাবার এমন জটিলরূপে থাকে যে তা শরীর হজম করতে পারে না। সেই খাদ্যকে আবার চিবিয়ে নিলে সেটা থুতুর সঙ্গে মিশে একটা সহজ রূপ ধারণ করে ফলে শরীর তা স্বচ্ছন্দে হজম করতে পারে। এই ভাবে খাওয়ার দীর্ঘ অভ্যাস থেকে যে রোগ শরীরে বাসা বাঁধে তা হল মেটাবলিক সিনড্রম। মেটাবলিক সিনড্রম একটা শারীরিক অবস্থা যার মধ্যে থাকে উচ্চরক্তচাপ, স্থূলতা, উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইড এবং এইচডিএল অর্থাৎ ভাল কোলেস্টেরলের ঘাটতি। যার ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।

 

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, খাবার যদি না চিবিয়ে তাড়াতাড়ি খাওয়া হয় তাহলে মেটাবলিক সিনড্রোম এবং স্থূলতার মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এই গবেষণায় আরও দেখা গেছে, মেটাবলিক সিনড্রোমের প্রবণতা যারা তাড়াতাড়ি খায় তাদের ক্ষেত্রে ১১.৬ শতাংশ। আর যারা স্বাভাবিকভাবে চিবিয়ে খান তাদের ক্ষেত্রে ৬.৫ শতাংশ।

 

অন্যদিকে চিকিৎসকরা বলেন, থুতুতে একটি এনজাইম থাকে যাকে বলে সালিভারি অ্যামায়লেস। এটি খাবারে স্টার্চ এবং মালটোডেক্সট্রিন্স নামক একটি কার্বোহাইড্রেট হজম করতে সাহায্য করে। যদি খাবার এই থুতুর সঙ্গে মেশার সময় না পায় তবে হজমের সমস্যা হবেই। খাবার না চিবিয়ে দ্রুত খেলে, শরীরে অপ্রয়োজনীয় বায়ু প্রবেশ করে। ফলে গ্যাস ওঠার সম্ভাবনা বাড়ে।

 

এছাড়া পেট ফেঁপে ওঠা ও বুক জ্বালা করার আরেকটি কারণ হলো সহজ ভাবে খাদ্য শরীরে প্রবেশ করার জায়গায় জটিল ভাবে প্রবেশ করে। এছাড়া খাবার শ্বাসনালীতে আটকে হঠাৎ শ্বাস বন্ধ হয়ে মারাত্মক বিপদও ঘটতে পারে। তাই যতটা সম্ভব ধীরে সুস্থে খান।

 

চিকিৎসকদের মতে, খাবার অন্তত ৩০ বার চিবাতেই হবে। না হলে খাবার ঠিক করে হজম হবে না। যারা খাবার না চিবিয়ে গিলে নেন, তাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা বাড়তে পারে। খাবার ঠিক করে চিবিয়ে না খেলে তার সম্পূর্ণ পুষ্টিগুণও শরীর গ্রহণ করতে পারে না। বিশেষ করে খাবারের অধিকাংশ ভিটামিনেরই অপচয় হয়। এছাড়া খাবার যত বেশি বার চিবিয়ে নেবেন, ততই এটি ভাঙবে এবং লালারসের সঙ্গে মিশবে। তাতে এর মধ্যে থাকা ক্ষতিকারক জীবাণুগুলিও মারা যাবে। কিন্তু দ্রুত খাবার খাওয়ার তাড়ায় সেটি গিলে নিলে ওই সব জীবাণু পেটে চলে যায়।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বিএনপি নেতাদের সতর্ক থাকার আহ্বান রিজভীর

» বাংলাদেশ ভ্রমণে কানাডার সতর্কতা জারি

» জনগণের ৭০ ভাগ পিআরের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে: মতিউর রহমান আকন্দ

» বদরুদ্দীন উমর ছিলেন বহু রাজনীতিবীদের শিক্ষক: মির্জা ফখরুল

» বিএনপি সেই গণতন্ত্রের কথা বলে, যে গণতন্ত্রে মানুষ ভোটের অধিকার নিশ্চিত করে  : ড. মঈন খান

» সুন্দরবনের উপকূলের বাগেরহাটে শাপলা বিক্রি করেই চলছে দিনমজুর হানিফের সংসার, সরকারী সহায়তা বঞ্চিত!

» লালমনিরহাটে শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে প্রস্তুত ৪ শত ৬৮ টি পূজা মন্ডব

» আগৈলঝাড়ার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রিয় মুখ ললিতা সরকার শিক্ষা ও নৃত্যকলায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত

» ঢাকা থেকে জামালপুরের আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার

» গানের শিক্ষক নিয়োগ বাতিল না করলে সরকারকে বাধ্য করার হুমকি ওলামা পরিষদের

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

খাবার চিবিয়ে না খেলে হতে পারে যেসব বিপদ

প্রতিদিন সকালে অফিসে যাওয়ার তাড়া আমরা প্রথমে খাবারের সাথেই দেখাই। দ্রুত ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য অধিকাংশ সময়ই কোনো রকমে খাবার শেষ করি। যার ফলে খাবার ভাল ভাবে না চিবিয়ে গিলে ফেলি। এই অভ্যাসে সময় বাঁচলেও শরীরের ক্ষতি হয়। ফলে খাবার হজম ঠিক মতো হয় না। 

 

গিলে খেলে সেই খাবার এমন জটিলরূপে থাকে যে তা শরীর হজম করতে পারে না। সেই খাদ্যকে আবার চিবিয়ে নিলে সেটা থুতুর সঙ্গে মিশে একটা সহজ রূপ ধারণ করে ফলে শরীর তা স্বচ্ছন্দে হজম করতে পারে। এই ভাবে খাওয়ার দীর্ঘ অভ্যাস থেকে যে রোগ শরীরে বাসা বাঁধে তা হল মেটাবলিক সিনড্রম। মেটাবলিক সিনড্রম একটা শারীরিক অবস্থা যার মধ্যে থাকে উচ্চরক্তচাপ, স্থূলতা, উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইড এবং এইচডিএল অর্থাৎ ভাল কোলেস্টেরলের ঘাটতি। যার ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।

 

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, খাবার যদি না চিবিয়ে তাড়াতাড়ি খাওয়া হয় তাহলে মেটাবলিক সিনড্রোম এবং স্থূলতার মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এই গবেষণায় আরও দেখা গেছে, মেটাবলিক সিনড্রোমের প্রবণতা যারা তাড়াতাড়ি খায় তাদের ক্ষেত্রে ১১.৬ শতাংশ। আর যারা স্বাভাবিকভাবে চিবিয়ে খান তাদের ক্ষেত্রে ৬.৫ শতাংশ।

 

অন্যদিকে চিকিৎসকরা বলেন, থুতুতে একটি এনজাইম থাকে যাকে বলে সালিভারি অ্যামায়লেস। এটি খাবারে স্টার্চ এবং মালটোডেক্সট্রিন্স নামক একটি কার্বোহাইড্রেট হজম করতে সাহায্য করে। যদি খাবার এই থুতুর সঙ্গে মেশার সময় না পায় তবে হজমের সমস্যা হবেই। খাবার না চিবিয়ে দ্রুত খেলে, শরীরে অপ্রয়োজনীয় বায়ু প্রবেশ করে। ফলে গ্যাস ওঠার সম্ভাবনা বাড়ে।

 

এছাড়া পেট ফেঁপে ওঠা ও বুক জ্বালা করার আরেকটি কারণ হলো সহজ ভাবে খাদ্য শরীরে প্রবেশ করার জায়গায় জটিল ভাবে প্রবেশ করে। এছাড়া খাবার শ্বাসনালীতে আটকে হঠাৎ শ্বাস বন্ধ হয়ে মারাত্মক বিপদও ঘটতে পারে। তাই যতটা সম্ভব ধীরে সুস্থে খান।

 

চিকিৎসকদের মতে, খাবার অন্তত ৩০ বার চিবাতেই হবে। না হলে খাবার ঠিক করে হজম হবে না। যারা খাবার না চিবিয়ে গিলে নেন, তাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা বাড়তে পারে। খাবার ঠিক করে চিবিয়ে না খেলে তার সম্পূর্ণ পুষ্টিগুণও শরীর গ্রহণ করতে পারে না। বিশেষ করে খাবারের অধিকাংশ ভিটামিনেরই অপচয় হয়। এছাড়া খাবার যত বেশি বার চিবিয়ে নেবেন, ততই এটি ভাঙবে এবং লালারসের সঙ্গে মিশবে। তাতে এর মধ্যে থাকা ক্ষতিকারক জীবাণুগুলিও মারা যাবে। কিন্তু দ্রুত খাবার খাওয়ার তাড়ায় সেটি গিলে নিলে ওই সব জীবাণু পেটে চলে যায়।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com