ক্ষমতায় এসে ২০০ জনেরও বেশি কর্মচারীকে বরখাস্ত করেছেন ট্রাম্প

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : জ্যোতিষী, জরিপ, জল্পনাকল্পনা ও সব পূর্বাভাস তছনছ করে রেকর্ড গড়ে দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউজে পা রাখেন তিনি। দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতার মসনদে বসেছেন এক মাসও হয়নি। এরই মধ্যে ২০০ জনের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বরখাস্ত করেছেন ট্রাম্প। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি তাদের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

 

বিবিসি বলছে, ট্রাম্প একসময় ‘দ্য অ্যাপ্রেনটিস’ নামের টেলিভিশন রিয়েলিটি শো উপস্থাপনা করতেন। এই শোতে তিনি একটি বাক্য বলতেন। আর তা হলো, ‘তুমি বাদ’।রিয়েলিটি শোতে আওড়ানো জনপ্রিয় সেই বাক্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একের পর এক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করেছেন।

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১২৮ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ম্যান্ডেট নিয়েই হোয়াইট হাউসে বসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শপথ নিয়েই একের পর এক নির্বাহী আদেশে সই করেছেন তিনি।  বাতিল করেছেন পুরোনো অনেক আইন। অনেক কিছুই এখন ওলট–পালট। অভিবাসন থেকে পরিবেশ, সরকারি নিয়োগ থেকে নাগরিকত্ব—নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কোন বিষয়ে বদল আনেননি ট্রাম্প? নতুন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় আসার পর রদবদল হওয়াটা সাধারণ বিষয়। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে তার দায়িত্বের প্রথম সপ্তাহগুলোতে মার্কিন সরকারের প্রশাসনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুতিসহ ব্যাপক রদবদল এনেছেন।

 

ট্রাম্প লাখো সরকারি কর্মচারীকে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি মার্কিন সরকারে বৈচিত্র্য, ন্যায্যতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক (ডিইআই) কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন। গত শুক্রবার ট্রাম্প দেশটির শীর্ষ রেকর্ড-রক্ষক কোলিন শোগানকে বরখাস্ত করেন।

 

একই দিন রাতে তিনি জন এফ কেনেডি সেন্টার ফর দ্য পারফর্মিং আর্টসের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের বরখাস্তের অঙ্গীকার করেন। একই সঙ্গে তিনি নিজেকে এই বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত করবেন বলে জানান।

 

ট্রাম্পের দায়িত্বের প্রথম সপ্তাহগুলোতে বড় কিছু বরখাস্তের তথ্যের দিকে নজর দেওয়া যাক—

স্বেচ্ছায় পদত্যাগের প্রস্তাব:

ট্রাম্পের নতুন রিপাবলিকান প্রশাসন অর্থের বিনিময়ে সরকারি কর্মচারীদের চাকরি ছাড়ানোর কার্যক্রম হাতে নেয়।

 

হোয়াইট হাউস ২০ লাখের বেশি ফেডারেল কর্মচারীদের পদত্যাগের প্রস্তাব দেয়। কেন্দ্রীয় সরকারের আকার কমানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়।

 

তবে একজন বিচারক সাময়িকভাবে ট্রাম্পের পরিকল্পনাটি স্থগিত করেছেন। ট্রাম্প তাঁর প্রস্তাবে ফেডারেল কর্মীদের ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে আট মাসের বেতনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

 

হোয়াইট হাউসের দাবি, ইতিমধ্যে ৪০ হাজারের বেশি সরকারি কর্মচারী প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছেন।

 

ট্রাম্প নির্দিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদেরও নিশানা করেছেন। তিনি ফেডারেল ইলেকশন কমিটির (এফইসি) চেয়ার এলেন ওয়েইনট্রাবকে বরখাস্ত করেছেন। এই ডেমোক্র্যাট অনলাইনে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি পোস্ট করেছেন। তাঁর অভিযোগ, তাঁকে চাকরিচ্যুত করাটা বৈধ নয়।

নির্বাচনী প্রচারাভিযানে অর্থসংক্রান্ত আইন প্রয়োগের দায়িত্ব এফইসির। ফেডারেল নির্বাচন তত্ত্বাবধান করে এফইসি।

 

ন্যাশনাল লেবার রিলেশনস বোর্ডে কাজ করা প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী গোয়েন উইলকক্সকেও বরখাস্ত করেছেন ট্রাম্প। গোয়েন এখন ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করছেন।

সাবেক মিত্রদের বরখাস্ত:

একসময় ট্রাম্পের মিত্র ছিলেন, এমন কর্মকর্তাদেরও চাকরিচ্যুত করছেন তিনি।

ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল নামের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন, প্রেসিডেন্টের কাউন্সিল অন স্পোর্টস, ফিটনেস অ্যান্ড নিউট্রিশনের জোসে আন্দ্রেস, ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যাডভাইজরি কাউন্সিলের মার্ক মিলে, উইলসন সেন্টার ফর স্কলারসের ব্রায়ান হুক ও প্রেসিডেন্টের এক্সপোর্ট কাউন্সিলের কেইশা ল্যান্স বটমসকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

 

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ইরানবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত ছিলেন ব্রায়ান হুক। জেনারেল মার্ক মিলেকে ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন।

 

পেন্টাগন জেনারেল মার্ক মিলে নিরাপত্তা সুরক্ষা প্রত্যাহার করেছেন ট্রাম্প। মার্ক মিলে অতীতে ট্রাম্পের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফার অভিষেকের কয়েক ঘণ্টার মাথায় তাঁর প্রশাসনের কর্মকর্তারা মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন থেকে মার্ক মিলের একটি প্রতিকৃতি সরিয়ে ফেলেন।

ডিইআই নিয়ে অঙ্গীকার:

নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্প ডিইআইয়ের কার্যক্রম বন্ধ করার বিষয়ে অঙ্গীকার করেছিলেন। ডিইআইয়ের কার্যক্রমের লক্ষ্য সরকারি কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন পটভূমির লোকদের অংশগ্রহণ বাড়ানো।

 

ডিইআইয়ের সমর্থকেরা বলছেন, এই কার্যক্রম সরকারি কর্মক্ষেত্রে ঐতিহাসিক বা বিদ্যমান বৈষম্য ঘোচাতে সহায়ক। এই কার্যক্রম সরকারি কর্মক্ষেত্রে জাতিগত সংখ্যালঘুসহ নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর অপ্রতুল প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি নিয়ে কাজ করে। তবে সমালোচকদের দাবি, খোদ এই কার্যক্রমই বৈষম্যমূলক হতে পারে।

 

ডিইআইয়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারাভিযানে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা পূরণে তিনি তাঁর দায়িত্বের দ্বিতীয় দিনই উদ্যোগী হন। এ-সংক্রান্ত প্রকল্পে কাজ করা সব কর্মীদের চাকরিচ্যুত করার জন্য তিনি ফেডারেল এজেন্সিগুলোকে নির্দেশ দেন।

 

ট্রাম্প প্রশাসন হাজারো ফেডারেল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ই–মেইল করেছে। এ ই–মেইলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তাঁদের এজেন্সিগুলোতে বৈচিত্র্যসংক্রান্ত যেকোনো ‘ছদ্মবেশী’ উদ্যোগ নিয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় কঠোর পরিণতির বিষয়ে সতর্ক করা হয়।

প্রসিকিউটরদের বরখাস্ত:

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ গত মাসে বলে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা তদন্তের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজন প্রসিকিউটরকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

দুটি ফেডারেল মামলায় ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর এই মামলা খারিজ হয়।

ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রচারাভিযানে অঙ্গীকার করেছিলেন, তিনি নির্বাচিত হলে সরকারি সংস্থাকে কারও বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার ধারার অবসান ঘটাবেন।

মার্কিন বিচার বিভাগ গণমাধ্যমকে বলেছে, প্রসিকিউটরদের বরখাস্ত করার এই পদক্ষেপ ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

 

২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে (ক্যাপিটল হিল) দাঙ্গা হয়েছিল। তখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন ট্রাম্প। তিনি নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে হেরেছিলেন। বাইডেনের জয়ের সত্যায়ন ঠেকাতে ট্রাম্পের উসকানিতে তাঁর উগ্র সমর্থকেরা ক্যাপিটল হিলে রক্তক্ষয়ী হামলা চালিয়েছিলেন।

 

ক্যাপিটল হিল দাঙ্গার ঘটনা তদন্তে জড়িত যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) আটজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

 

ট্রাম্প প্রশাসন এফবিআইকে ৬ জানুয়ারির ঘটনা তদন্তের সঙ্গে জড়িত সব এজেন্টদের একটি তালিকা তৈরি করতে বলেছে। ট্রাম্প ইতিমধ্যে বেশ কিছু ফেডারেল সংস্থার কমপক্ষে ১২ জন মহাপরিদর্শককে বরখাস্ত করেছেন। ফেডারেল সংস্থাগুলোর মধ্যে প্রতিরক্ষা, জ্বালানি ও পররাষ্ট্র দফতর রয়েছে।  সূত্র: বিবিসি

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» সাবেক এমপি নিখিলের সহযোগী রিংকু গ্রেফতার

» আতিকুল ইসলামসহ ছয়জনকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ

» ৯ বছর পর ফের মুক্তি, বক্স অফিসে ঝড় তুলছে যে সিনেমা

» গণঅভ্যুত্থানের ফল পেতে দেশের জনগণকে ধৈর্য ধরার আহ্বান : উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

» হাসিনা রক্তপিপাসুর কণ্ঠ এখনও আমাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে : আসিফ নজরুল

» চাঁদপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযানে অস্ত্রসহ আটক ৫

» জনগণ বিরক্ত হওয়ার আগেই দায়িত্বশীলতার প্রমাণ দিন, সরকারকে মঞ্জু

» সাগর-রুনি হত্যা বুধবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দেবে ডিআরইউ

» বিয়ের জন্য কেমন পাত্র চান সেমন্তী সৌমি

» মাদক-ছিনতাই বিরোধী অভিযানে ৪৮ জনকে গ্রেপ্তার

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ক্ষমতায় এসে ২০০ জনেরও বেশি কর্মচারীকে বরখাস্ত করেছেন ট্রাম্প

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : জ্যোতিষী, জরিপ, জল্পনাকল্পনা ও সব পূর্বাভাস তছনছ করে রেকর্ড গড়ে দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউজে পা রাখেন তিনি। দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতার মসনদে বসেছেন এক মাসও হয়নি। এরই মধ্যে ২০০ জনের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বরখাস্ত করেছেন ট্রাম্প। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি তাদের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

 

বিবিসি বলছে, ট্রাম্প একসময় ‘দ্য অ্যাপ্রেনটিস’ নামের টেলিভিশন রিয়েলিটি শো উপস্থাপনা করতেন। এই শোতে তিনি একটি বাক্য বলতেন। আর তা হলো, ‘তুমি বাদ’।রিয়েলিটি শোতে আওড়ানো জনপ্রিয় সেই বাক্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একের পর এক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করেছেন।

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১২৮ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ম্যান্ডেট নিয়েই হোয়াইট হাউসে বসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শপথ নিয়েই একের পর এক নির্বাহী আদেশে সই করেছেন তিনি।  বাতিল করেছেন পুরোনো অনেক আইন। অনেক কিছুই এখন ওলট–পালট। অভিবাসন থেকে পরিবেশ, সরকারি নিয়োগ থেকে নাগরিকত্ব—নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কোন বিষয়ে বদল আনেননি ট্রাম্প? নতুন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় আসার পর রদবদল হওয়াটা সাধারণ বিষয়। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে তার দায়িত্বের প্রথম সপ্তাহগুলোতে মার্কিন সরকারের প্রশাসনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুতিসহ ব্যাপক রদবদল এনেছেন।

 

ট্রাম্প লাখো সরকারি কর্মচারীকে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি মার্কিন সরকারে বৈচিত্র্য, ন্যায্যতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক (ডিইআই) কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন। গত শুক্রবার ট্রাম্প দেশটির শীর্ষ রেকর্ড-রক্ষক কোলিন শোগানকে বরখাস্ত করেন।

 

একই দিন রাতে তিনি জন এফ কেনেডি সেন্টার ফর দ্য পারফর্মিং আর্টসের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের বরখাস্তের অঙ্গীকার করেন। একই সঙ্গে তিনি নিজেকে এই বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত করবেন বলে জানান।

 

ট্রাম্পের দায়িত্বের প্রথম সপ্তাহগুলোতে বড় কিছু বরখাস্তের তথ্যের দিকে নজর দেওয়া যাক—

স্বেচ্ছায় পদত্যাগের প্রস্তাব:

ট্রাম্পের নতুন রিপাবলিকান প্রশাসন অর্থের বিনিময়ে সরকারি কর্মচারীদের চাকরি ছাড়ানোর কার্যক্রম হাতে নেয়।

 

হোয়াইট হাউস ২০ লাখের বেশি ফেডারেল কর্মচারীদের পদত্যাগের প্রস্তাব দেয়। কেন্দ্রীয় সরকারের আকার কমানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়।

 

তবে একজন বিচারক সাময়িকভাবে ট্রাম্পের পরিকল্পনাটি স্থগিত করেছেন। ট্রাম্প তাঁর প্রস্তাবে ফেডারেল কর্মীদের ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে আট মাসের বেতনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

 

হোয়াইট হাউসের দাবি, ইতিমধ্যে ৪০ হাজারের বেশি সরকারি কর্মচারী প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছেন।

 

ট্রাম্প নির্দিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদেরও নিশানা করেছেন। তিনি ফেডারেল ইলেকশন কমিটির (এফইসি) চেয়ার এলেন ওয়েইনট্রাবকে বরখাস্ত করেছেন। এই ডেমোক্র্যাট অনলাইনে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি পোস্ট করেছেন। তাঁর অভিযোগ, তাঁকে চাকরিচ্যুত করাটা বৈধ নয়।

নির্বাচনী প্রচারাভিযানে অর্থসংক্রান্ত আইন প্রয়োগের দায়িত্ব এফইসির। ফেডারেল নির্বাচন তত্ত্বাবধান করে এফইসি।

 

ন্যাশনাল লেবার রিলেশনস বোর্ডে কাজ করা প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী গোয়েন উইলকক্সকেও বরখাস্ত করেছেন ট্রাম্প। গোয়েন এখন ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করছেন।

সাবেক মিত্রদের বরখাস্ত:

একসময় ট্রাম্পের মিত্র ছিলেন, এমন কর্মকর্তাদেরও চাকরিচ্যুত করছেন তিনি।

ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল নামের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন, প্রেসিডেন্টের কাউন্সিল অন স্পোর্টস, ফিটনেস অ্যান্ড নিউট্রিশনের জোসে আন্দ্রেস, ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যাডভাইজরি কাউন্সিলের মার্ক মিলে, উইলসন সেন্টার ফর স্কলারসের ব্রায়ান হুক ও প্রেসিডেন্টের এক্সপোর্ট কাউন্সিলের কেইশা ল্যান্স বটমসকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

 

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ইরানবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত ছিলেন ব্রায়ান হুক। জেনারেল মার্ক মিলেকে ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন।

 

পেন্টাগন জেনারেল মার্ক মিলে নিরাপত্তা সুরক্ষা প্রত্যাহার করেছেন ট্রাম্প। মার্ক মিলে অতীতে ট্রাম্পের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফার অভিষেকের কয়েক ঘণ্টার মাথায় তাঁর প্রশাসনের কর্মকর্তারা মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন থেকে মার্ক মিলের একটি প্রতিকৃতি সরিয়ে ফেলেন।

ডিইআই নিয়ে অঙ্গীকার:

নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্প ডিইআইয়ের কার্যক্রম বন্ধ করার বিষয়ে অঙ্গীকার করেছিলেন। ডিইআইয়ের কার্যক্রমের লক্ষ্য সরকারি কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন পটভূমির লোকদের অংশগ্রহণ বাড়ানো।

 

ডিইআইয়ের সমর্থকেরা বলছেন, এই কার্যক্রম সরকারি কর্মক্ষেত্রে ঐতিহাসিক বা বিদ্যমান বৈষম্য ঘোচাতে সহায়ক। এই কার্যক্রম সরকারি কর্মক্ষেত্রে জাতিগত সংখ্যালঘুসহ নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর অপ্রতুল প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি নিয়ে কাজ করে। তবে সমালোচকদের দাবি, খোদ এই কার্যক্রমই বৈষম্যমূলক হতে পারে।

 

ডিইআইয়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারাভিযানে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা পূরণে তিনি তাঁর দায়িত্বের দ্বিতীয় দিনই উদ্যোগী হন। এ-সংক্রান্ত প্রকল্পে কাজ করা সব কর্মীদের চাকরিচ্যুত করার জন্য তিনি ফেডারেল এজেন্সিগুলোকে নির্দেশ দেন।

 

ট্রাম্প প্রশাসন হাজারো ফেডারেল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ই–মেইল করেছে। এ ই–মেইলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তাঁদের এজেন্সিগুলোতে বৈচিত্র্যসংক্রান্ত যেকোনো ‘ছদ্মবেশী’ উদ্যোগ নিয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় কঠোর পরিণতির বিষয়ে সতর্ক করা হয়।

প্রসিকিউটরদের বরখাস্ত:

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ গত মাসে বলে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা তদন্তের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজন প্রসিকিউটরকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

দুটি ফেডারেল মামলায় ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর এই মামলা খারিজ হয়।

ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রচারাভিযানে অঙ্গীকার করেছিলেন, তিনি নির্বাচিত হলে সরকারি সংস্থাকে কারও বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার ধারার অবসান ঘটাবেন।

মার্কিন বিচার বিভাগ গণমাধ্যমকে বলেছে, প্রসিকিউটরদের বরখাস্ত করার এই পদক্ষেপ ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

 

২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে (ক্যাপিটল হিল) দাঙ্গা হয়েছিল। তখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন ট্রাম্প। তিনি নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে হেরেছিলেন। বাইডেনের জয়ের সত্যায়ন ঠেকাতে ট্রাম্পের উসকানিতে তাঁর উগ্র সমর্থকেরা ক্যাপিটল হিলে রক্তক্ষয়ী হামলা চালিয়েছিলেন।

 

ক্যাপিটল হিল দাঙ্গার ঘটনা তদন্তে জড়িত যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) আটজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

 

ট্রাম্প প্রশাসন এফবিআইকে ৬ জানুয়ারির ঘটনা তদন্তের সঙ্গে জড়িত সব এজেন্টদের একটি তালিকা তৈরি করতে বলেছে। ট্রাম্প ইতিমধ্যে বেশ কিছু ফেডারেল সংস্থার কমপক্ষে ১২ জন মহাপরিদর্শককে বরখাস্ত করেছেন। ফেডারেল সংস্থাগুলোর মধ্যে প্রতিরক্ষা, জ্বালানি ও পররাষ্ট্র দফতর রয়েছে।  সূত্র: বিবিসি

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com