আসাদ হোসেন রিফাতঃ পবিত্র ঈদুল আযহা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন পশুরহাট গুলো জমে উঠতে শুরু করেছে। জেলার বিভিন্ন হাটে এখন প্রাধান্য পাচ্ছে দেশীয় খামারে ও গৃহস্থবাড়িতে লালিত গরু। এ বছর ভারতীয় গরুর আমদানি কম। তবে হাটে গরু-ছাগলের সরবরাহ বাড়লেও ক্রেতার উপস্থিতি তুলনামূলক কম। আর এতে পশুর ন্যায্য দাম না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা।
উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী এ জেলার পাঁচটি উপজেলায় সাপ্তাহিক পশুর হাটগুলো এখন গবাদিপশু ক্রয়-বিক্রয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এই হাটগুলো সাধারণত সাপ্তাহিক ভিত্তিতে হয়ে থাকে এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
জানা গেছে, সদর উপজেলার দুড়াকুটিহাট, নবাবেরহাট (বিডিআরহাট), সাপটানা (নয়ারহাট), বড়বাড়ীহাট ছাড়াও জেলার অন্যান্য বড় হাটের মধ্যে রয়েছে পাটগ্রামের রসুলগঞ্জহাট, হাতীবান্ধার বড়খাতাহাট ও দইখোওয়া হাট, কালীগঞ্জের কাকিনাহাট ও চাপারহাট এবং আদিতমারীর সাপ্টিবাড়ীহাট। এসব হাটে ইতোমধ্যেই কোরবানির পশু আসতে শুরু করেছে।
কালীগঞ্জের কাকিনা হাট ও চাপারহাট ঘুরে দেখা গেছে, ব্যাপক সংখ্যক গরু উঠলেও ক্রেতা কম থাকায় বিক্রি অনেকটা থমকে আছে। বিক্রেতারা বলছেন, পশুর আমদানি পুরোপুরি শুরু হয়েছে, দেশীয় গরুর চাহিদা বেশি। তবে ক্রেতারা বলছেন, খামারিদের কাছ থেকে গরু কিনবেন তারা। ঈদের তো আরও বেশ কিছুদিন বাকি। তাই হাট ঘুরে দাম দেখছি। এ ছাড়া বেচা কেনাও তেমন একটা নেই। আর খামারিরাও গরু ছাড়ছেন না।
আআদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ি ইউনিয়নের খামারি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, “একটা গরু মোটাতাজা অনেক পরিশ্রম করতে হয়। এখন খাবারের দামও অনেক বেশি। কিন্তু দাম ঠিকমত পাচ্ছি না। গত বছর একটা উন্নত জাতের ষাঁড় দুই লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এবার তিনটি ষাঁড় প্রস্তুত করেও ভালো দাম পাচ্ছি না।”
হাট সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, এবারের কোরবানির বাজারে দেশীয় গরুর চাহিদা বেশি। সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরুর আমদানি নেই। এছাড়া গত কয়েক বছরে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা এবছর বড় পরিসরে খামার করেননি। ফলে স্থানীয় গৃহস্থদের পালন করা গরুই এবার হাটে ভরসা হয়ে উঠেছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলার কোরবানির পশুর চাহিদা ১ লক্ষ ৭১ হাজার ৭৭৭টি হলেও প্রস্তুত রয়েছে ২ লক্ষ৬২ হাজার ৬৩১টি পশু। এতে দেখা যাচ্ছে, জেলার চাহিদার তুলনায় প্রায় ৯০ হাজার ৮৫৪টি পশু বেশি রয়েছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে পশু জেলার বাইরে সরবরাহ করা যেতে পারে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, অন্য বছর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে পশু কিনে নিয়ে যেতেন। এবার সেই উপস্থিতি নেই বললেই চলে। ফলে সরবরাহ থাকলেও চাহিদা নেই; যার কারণে দামও পাওয়া যাচ্ছে না।
হাট ইজারাদাররা বলছেন, পাইকারদের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। হাটে এখন পর্যন্ত ভারতীয় গরু-মহিষের আমদানি নেই। সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু এখন তেমন আসছে না। তাই এবারের কোরবানিতে দেশীয় গরুর কদর বেশি থাকবে। এবারের কোরবানির ঈদে বিভিন্ন এলাকার খামার ও গৃহস্থদের বাড়ির গরুই তাদের হাটে প্রধান্য পাচ্ছে। দেশীয় গরুর সরবরাহ ও চাহিদা উভয়ই ভালো থাকায় এবারের ঈদে দেশীয় গরুই প্রধান বাজার দখল করবে। এ ছাড়া হাটে সঠিক নিয়মে টোল আদায় হচ্ছে। তবে আগের মত বাড়তি চাপ নেই।
ভারত থেকে অবৈধভাবে পশু আসা ঠেকাতে সীমান্তে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে লালমনিরহাট-১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম বলেন, “সীমান্তে টহল বাড়ানো হয়েছে। কোনো অবস্থাতেই যেন ভারত থেকে অবৈধভাবে গরু কিংবা অন্য কিছু প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিজিবি তৎপর রয়েছে।
Facebook Comments Box