কোমর ব্যথার রোগীদের রোজায় করণীয়

ছবি সংগৃহীত

 

অনলাইন ডেস্ক : রোজার সময় কোমর ব্যথায় রোগীদের বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি। নিম্নে আলোচনা করা হলো-

 

খাদ্যাভ্যাস ও পানীয় গ্রহণ

(ক) সাহরি ও ইফতারে উপযুক্ত খাবার নির্বাচন

 

প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খান

 

মাছ, মুরগি, ডিম, দুধ, দই, বাদাম, ছোলা ও শাকসবজি খাবেন। এগুলো হাড় ও পেশিকে শক্তিশালী করে এবং ব্যথা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

 

অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি খাবার খান:

 

হলুদ, আদা, রসুন, অলিভ অয়েল, বাদাম ও সামুদ্রিক মাছ (ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ) খাবার খেলে ব্যথা কমে।

 

ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খান। দুধ, দই, পনির, মাশরুম, সূর্যমুখীর বীজ, বাদাম ও সবুজ শাকসবজি খাওয়া ভালো।

 

সূর্যের আলোতে কিছুক্ষণ সময় কাটানোও উপকারী।

(খ) পর্যাপ্ত পানি পান করুন

শরীরে পানির ঘাটতি হলে ডিস্ক ও জয়েন্ট শুকিয়ে গিয়ে কোমর ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।

 

ইফতার থেকে সাহরির মধ্যে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। * চা-কফি বা সফট ড্রিঙ্ক কম পান করুন, কারণ এগুলো শরীর থেকে পানি বের করে দেয়।

 

(গ) কিছু খাবার এড়িয়ে চলুন

এ সময় ভাজাপোড়া ও অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো প্রদাহ বাড়িয়ে দিতে পারে। * অন্যদিকে বেশি লবণ খেলে শরীরে পানি ধরে রাখতে পারে, যা কোমর ব্যথার সমস্যা বাড়াতে পারে।

সঠিক শোয়ার পদ্ধতি

* কোমর ব্যথা থাকলে বেশি নরম বা খুব শক্ত বিছানায় না শুয়ে মাঝারি-কঠিন (medium-firm) গদি ব্যবহার করুন।

 

চিত হয়ে শোয়ার সময় হাঁটুর নিচে একটি বালিশ দিন বা পাশ ফিরে শোয়ার সময় দুই হাঁটুর মাঝে বালিশ রাখুন।

 

অতিরিক্ত উঁচু বালিশ ব্যবহার করবেন না, এটি মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক অবস্থান নষ্ট করতে পারে। তাই শোয়ার বিষয়ে আমাদের যত্নবান ও সচেতন হতে হবে।

 

সঠিকভাবে বসা ও চলাফেরা করা

দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা এড়িয়ে চলুন, প্রতি ৩০-৪৫ মিনিট পর একটু হাঁটুন বা শরীর নড়াচড়া করুন।

 

সোজা হয়ে বসুন, বেশি নীচু বা শক্ত চেয়ারে না বসে কুশনযুক্ত চেয়ার ব্যবহার করুন।

 

ভারী বস্তু তুলতে হলে কোমর সোজা রেখে হাঁটু ভাঁজ করে তুলুন, কোমর বাঁকা করবেন না।

ফিজিওথেরাপি ও এক্সারসাইজ

কোমর ব্যথা কমাতে ফিজিওথেরাপি খুবই কার্যকারী চিকিৎসা পদ্ধতি, কোমর ব্যথার কারণ অনুযায়ী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে তাই রমজানে কোমর ব্যথায় আক্রান্ত হলে ব্যথানাশক ওষুধের ব্যবহার কমাতে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে পারেন। *রোজার সময় অতিরিক্ত ভারী ব্যায়াম না করলেও হালকা স্ট্রেচিং এবং কোমর ব্যথা কমানোর সহজ ব্যায়াম করতে পারেন।

 

ইফতারের পর হালকা হাঁটাহাঁটি করা ভালো।

কিছু সহজ ব্যায়াম

পেলভিক টিল্ট এক্সারসাইজ (পিঠ সোজা রেখে কোমর সামান্য ওঠানামা করা)।

ক্যাট-কাউ স্ট্রেচ (হাত ও হাঁটুর ওপর ভর দিয়ে মেরুদণ্ড বাঁকানো ও সোজা করা)।

তবে যেকোনো ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শে করা উচিত।

ব্যথা বেড়ে গেলে করণীয়

যদি ব্যথা বেশি হয়, তাহলে গরম সেঁক (হট প্যাক) বা ঠান্ডা সেঁক (আইস প্যাক) দিন।

প্রয়োজন হলে ব্যথানাশক জেল বা পেইন রিলিফ স্প্রে ব্যবহার করুন। * যদি ব্যথা বেশি তীব্র হয়ে হাঁটতে বা বসতে সমস্যা হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। রোজার সময় কোমর ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি পান, শরীরের সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা এবং হালকা ব্যায়াম করা জরুরি।

লেখক : ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, চিফ কনসালটেন্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা।  সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ইনসাফভিত্তিক মানবিক দেশ প্রতিষ্ঠার এখনই সময়: তারেক রহমান

» গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ঐক্য বজায় রাখার ডাক খালেদা জিয়ার

» নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি পরিবর্তন চায় : মির্জা ফখরুল

» বাবাকে জড়িয়ে ধরতে সন্তানের আকুতি শুনে কাঁদলেন তারেক রহমান

» আবারও ভারত-পাক যুদ্ধবিরতি নিয়ে ট্রাম্পের দাবি খণ্ডন করলেন জয়শঙ্কর

» মায়ার মোহে মোড়া নতুন গান ‘মায়া মায়া লাগে’

» কর্মকর্তাদের জন্য ব্র্যাক ব্যাংকের কমপ্লায়েন্স মিট আয়োজন

» সংস্কারবিহীন কোনো নির্বাচন জামায়াত গ্রহণ করবে না: তাহের

» ৪৮তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা ১৮ জুলাই

» বিশেষ অভিযানে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত আরও ৮১১ জন আসামি গ্রেফতার

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

কোমর ব্যথার রোগীদের রোজায় করণীয়

ছবি সংগৃহীত

 

অনলাইন ডেস্ক : রোজার সময় কোমর ব্যথায় রোগীদের বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি। নিম্নে আলোচনা করা হলো-

 

খাদ্যাভ্যাস ও পানীয় গ্রহণ

(ক) সাহরি ও ইফতারে উপযুক্ত খাবার নির্বাচন

 

প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খান

 

মাছ, মুরগি, ডিম, দুধ, দই, বাদাম, ছোলা ও শাকসবজি খাবেন। এগুলো হাড় ও পেশিকে শক্তিশালী করে এবং ব্যথা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

 

অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি খাবার খান:

 

হলুদ, আদা, রসুন, অলিভ অয়েল, বাদাম ও সামুদ্রিক মাছ (ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ) খাবার খেলে ব্যথা কমে।

 

ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খান। দুধ, দই, পনির, মাশরুম, সূর্যমুখীর বীজ, বাদাম ও সবুজ শাকসবজি খাওয়া ভালো।

 

সূর্যের আলোতে কিছুক্ষণ সময় কাটানোও উপকারী।

(খ) পর্যাপ্ত পানি পান করুন

শরীরে পানির ঘাটতি হলে ডিস্ক ও জয়েন্ট শুকিয়ে গিয়ে কোমর ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।

 

ইফতার থেকে সাহরির মধ্যে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। * চা-কফি বা সফট ড্রিঙ্ক কম পান করুন, কারণ এগুলো শরীর থেকে পানি বের করে দেয়।

 

(গ) কিছু খাবার এড়িয়ে চলুন

এ সময় ভাজাপোড়া ও অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো প্রদাহ বাড়িয়ে দিতে পারে। * অন্যদিকে বেশি লবণ খেলে শরীরে পানি ধরে রাখতে পারে, যা কোমর ব্যথার সমস্যা বাড়াতে পারে।

সঠিক শোয়ার পদ্ধতি

* কোমর ব্যথা থাকলে বেশি নরম বা খুব শক্ত বিছানায় না শুয়ে মাঝারি-কঠিন (medium-firm) গদি ব্যবহার করুন।

 

চিত হয়ে শোয়ার সময় হাঁটুর নিচে একটি বালিশ দিন বা পাশ ফিরে শোয়ার সময় দুই হাঁটুর মাঝে বালিশ রাখুন।

 

অতিরিক্ত উঁচু বালিশ ব্যবহার করবেন না, এটি মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক অবস্থান নষ্ট করতে পারে। তাই শোয়ার বিষয়ে আমাদের যত্নবান ও সচেতন হতে হবে।

 

সঠিকভাবে বসা ও চলাফেরা করা

দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা এড়িয়ে চলুন, প্রতি ৩০-৪৫ মিনিট পর একটু হাঁটুন বা শরীর নড়াচড়া করুন।

 

সোজা হয়ে বসুন, বেশি নীচু বা শক্ত চেয়ারে না বসে কুশনযুক্ত চেয়ার ব্যবহার করুন।

 

ভারী বস্তু তুলতে হলে কোমর সোজা রেখে হাঁটু ভাঁজ করে তুলুন, কোমর বাঁকা করবেন না।

ফিজিওথেরাপি ও এক্সারসাইজ

কোমর ব্যথা কমাতে ফিজিওথেরাপি খুবই কার্যকারী চিকিৎসা পদ্ধতি, কোমর ব্যথার কারণ অনুযায়ী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে তাই রমজানে কোমর ব্যথায় আক্রান্ত হলে ব্যথানাশক ওষুধের ব্যবহার কমাতে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে পারেন। *রোজার সময় অতিরিক্ত ভারী ব্যায়াম না করলেও হালকা স্ট্রেচিং এবং কোমর ব্যথা কমানোর সহজ ব্যায়াম করতে পারেন।

 

ইফতারের পর হালকা হাঁটাহাঁটি করা ভালো।

কিছু সহজ ব্যায়াম

পেলভিক টিল্ট এক্সারসাইজ (পিঠ সোজা রেখে কোমর সামান্য ওঠানামা করা)।

ক্যাট-কাউ স্ট্রেচ (হাত ও হাঁটুর ওপর ভর দিয়ে মেরুদণ্ড বাঁকানো ও সোজা করা)।

তবে যেকোনো ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শে করা উচিত।

ব্যথা বেড়ে গেলে করণীয়

যদি ব্যথা বেশি হয়, তাহলে গরম সেঁক (হট প্যাক) বা ঠান্ডা সেঁক (আইস প্যাক) দিন।

প্রয়োজন হলে ব্যথানাশক জেল বা পেইন রিলিফ স্প্রে ব্যবহার করুন। * যদি ব্যথা বেশি তীব্র হয়ে হাঁটতে বা বসতে সমস্যা হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। রোজার সময় কোমর ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি পান, শরীরের সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা এবং হালকা ব্যায়াম করা জরুরি।

লেখক : ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, চিফ কনসালটেন্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা।  সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com