কিডনি রোগীর পুষ্টি তথ্য

 চৌধুরী তাসনীম হাসিন : কিডনি রোগের বিভিন্ন ধাপ অনুযায়ী রোগীর পুষ্টির চাহিদাও ভিন্ন হয়। এছাড়াও কিডনি রোগের পাশাপাশি অন্যান্য রোগ যেমন- ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ও কোলেস্টেরল থাকলে পুষ্টি চাহিদার ভিন্নতা বাড়ে। সুতরাং পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী একটি পরিপূর্ণ খাদ্যতালিকা ও পুষ্টি তথ্য কিডনি রোগীর জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়। কিডনি রোগীর খাদ্যতালিকার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, রোগীর কিডনির কর্মক্ষমতা হ্রাসের পরিমাণ কমিয়ে আনা, শরীরের অম্ল-ক্ষারের সাম্যতা বজায় রাখা এবং ইলেক ট্রলাইটের সাম্যতা বজায় রাখতে সহায়তা করা এবং সর্বোপরি রক্তে বর্জ্য ও তরল পদার্থ নিয়ন্ত্রণ করা, কিডনির কাজের চাপ কমিয়ে আনা। খাদ্যতালিকা প্রস্তুতির সময় অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে রোগী যেন পরিপূর্ণ পুষ্টি ও ক্যালরি পায় যদি তার ওজনের আধিক্য না থাকে। ক্যালরি চাহিদা পূরণ করতে হবে শর্করা ও স্নেহ জাতীয় খাদ্য থেকে। অসম্পৃক্ত চর্বি জাতীয় খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখার জন্য। সাধারণত কিডনি রোগীর পথ্যে আমিষ জাতীয় খাদ্যের সীমাবদ্ধতা থাকে যেহেতু আমিষ আমাদের শরীরে নাইট্রজেন বর্জ্যরে পরিমাণ বৃদ্ধি করে যা পরবর্তীতে কিডনির ওপর চাপ বৃদ্ধি করে। শরীরে অতিরিক্ত পানির পরিমাণ এবং উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য কিডনি রোগীর খাদ্যতালিকায় লবণের নিয়ন্ত্রণ একান্ত প্রয়োজন। এছাড়াও খাবারে পটাশিয়ামের নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় যা হাইপার ক্যালামিয়া (রক্তে উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম) রোধ করতে সহায়তা করে। কিডনি রোগীর অধিকাংশ ক্ষেত্রে রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি থাকে। উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম যুক্ত খাদ্যগুলো হচ্ছে, পালং শাক, টমেটো, কলা, মটরশুঁটি, বিচি জাতীয় খাবার, ডাল, আলু, লাল বাঁধাকপি, ব্রোকলি, ফুলকপি, গাঁজর, কলা, কমলা, কাঁঠাল, আনার ইত্যাদি। সুতরাং উক্ত খাবারগুলো কিডনি রোগীর সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত। তবে চিকিৎসার কোনো কোনো ধাপে কিডনি রোগীর রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা অতিরিক্ত কমে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে উচ্চ পটাশিয়ামযুক্ত খাবার দিয়ে তা সঠিক মাত্রায় আনতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে রক্তে অতিরিক্ত পটাশিয়াম রোগীকে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের দিকে ধাবিত করতে পারে। অ্যান্ড স্টেজ রেনাল ডিজিজ রোগীর লবণের কোনো বিকল্প ব্যবহার করা উচিত না। কারণ লবণের বিকল্প খাদ্যে সোডিয়ামের পরিবর্তে পটাশিয়াম ব্যবহার করা হয়।

 

অতিরিক্ত ফসফেটযুক্ত খাদ্য যেমন : দুধ ও দুধ জাতীয় খাদ্য, মাংস ইত্যাদি কিডনি রোগীর সীমিত পরিমাণে গ্রহণ প্রয়োজন। বেশির ভাগ কিডনি রোগীর রক্ত স্বল্পতা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে খাদ্য তালিকায় প্রচুর আয়রন এবং ভিটামিন-সি জাতীয় খাদ্য রাখতে হবে।

 

ডায়ালাইসিস রোগীর খাদ্য চাহিদা : ডায়ালাইসিস রোগীর খাদ্য তালিকায় কিছু অতিরিক্ত আমিষ জাতীয় খাবার থাকা প্রয়োজন। সাধারণত ডায়ালাইসিস রোগীর খাদ্যতালিকায় পটাসিয়ামের সীমাবদ্ধতা থাকে। একজন ডায়ালাইসিস কিডনি রোগীর খাদ্যতালিকা প্রস্তুতির ক্ষেত্রে সাধারণত ‘৮০-৩-৩’ লেখা হয়, যার অর্থ দৈনিক ৮০ গ্রাম প্রোটিন, ৩ গ্রাম পটাসিয়াম এবং ৩ গ্রাম সোডিয়াম। তবে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে, ডায়রিয়া, বমি, জ্বর ইত্যাদি থাকলে শরীরে সোডিয়ামের চাহিদা বাড়তে পারে।

 

লেখক : চিফ ক্লিনিকাল ডায়াটিশিয়ান ও হেড অব দ্য ডিপার্টমেন্ট, ক্লিনিকাল ডায়েটেটিকস অ্যান্ড নিউট্রিশন, ইউনাইটেড হাসপাতাল।  সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» স্বামী হাতে স্ত্রী খুন

» ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে বড় ভাইকে কুপিয়ে জখমের অভিযোগ

» হত্যা মামলায় মুক্তি পেয়ে অস্ত্র কারবার, অবশেষে র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার

» রোববার আংশিক সূর্যগ্রহণ, বাংলাদেশ থেকে দেখা যাবে না: আইএসপিআর

» বেঁচে থাকলে ৫৪ বছরে পা রাখতেন সালমান শাহ

» চালের দাম কমেছে, স্বস্তি ফেরেনি সবজি-পেঁয়াজে

» চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ৬ লেন করার দাবিতে অবরোধ

» পিআর পদ্ধতি নয়, আগের নিয়মেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে: ইলিয়াস হোসাইন

» সাংগঠনিকভাবে যতটা শক্তিশালী হওয়ার কথা ছিল, তা অর্জন করতে পারিনি: নাহিদ ইসলাম

» ১৩ ঘণ্টা বন্ধ থাকবে গ্রামীণফোনের রিচার্জ সেবা

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

কিডনি রোগীর পুষ্টি তথ্য

 চৌধুরী তাসনীম হাসিন : কিডনি রোগের বিভিন্ন ধাপ অনুযায়ী রোগীর পুষ্টির চাহিদাও ভিন্ন হয়। এছাড়াও কিডনি রোগের পাশাপাশি অন্যান্য রোগ যেমন- ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ও কোলেস্টেরল থাকলে পুষ্টি চাহিদার ভিন্নতা বাড়ে। সুতরাং পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী একটি পরিপূর্ণ খাদ্যতালিকা ও পুষ্টি তথ্য কিডনি রোগীর জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়। কিডনি রোগীর খাদ্যতালিকার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, রোগীর কিডনির কর্মক্ষমতা হ্রাসের পরিমাণ কমিয়ে আনা, শরীরের অম্ল-ক্ষারের সাম্যতা বজায় রাখা এবং ইলেক ট্রলাইটের সাম্যতা বজায় রাখতে সহায়তা করা এবং সর্বোপরি রক্তে বর্জ্য ও তরল পদার্থ নিয়ন্ত্রণ করা, কিডনির কাজের চাপ কমিয়ে আনা। খাদ্যতালিকা প্রস্তুতির সময় অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে রোগী যেন পরিপূর্ণ পুষ্টি ও ক্যালরি পায় যদি তার ওজনের আধিক্য না থাকে। ক্যালরি চাহিদা পূরণ করতে হবে শর্করা ও স্নেহ জাতীয় খাদ্য থেকে। অসম্পৃক্ত চর্বি জাতীয় খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখার জন্য। সাধারণত কিডনি রোগীর পথ্যে আমিষ জাতীয় খাদ্যের সীমাবদ্ধতা থাকে যেহেতু আমিষ আমাদের শরীরে নাইট্রজেন বর্জ্যরে পরিমাণ বৃদ্ধি করে যা পরবর্তীতে কিডনির ওপর চাপ বৃদ্ধি করে। শরীরে অতিরিক্ত পানির পরিমাণ এবং উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য কিডনি রোগীর খাদ্যতালিকায় লবণের নিয়ন্ত্রণ একান্ত প্রয়োজন। এছাড়াও খাবারে পটাশিয়ামের নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় যা হাইপার ক্যালামিয়া (রক্তে উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম) রোধ করতে সহায়তা করে। কিডনি রোগীর অধিকাংশ ক্ষেত্রে রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি থাকে। উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম যুক্ত খাদ্যগুলো হচ্ছে, পালং শাক, টমেটো, কলা, মটরশুঁটি, বিচি জাতীয় খাবার, ডাল, আলু, লাল বাঁধাকপি, ব্রোকলি, ফুলকপি, গাঁজর, কলা, কমলা, কাঁঠাল, আনার ইত্যাদি। সুতরাং উক্ত খাবারগুলো কিডনি রোগীর সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত। তবে চিকিৎসার কোনো কোনো ধাপে কিডনি রোগীর রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা অতিরিক্ত কমে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে উচ্চ পটাশিয়ামযুক্ত খাবার দিয়ে তা সঠিক মাত্রায় আনতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে রক্তে অতিরিক্ত পটাশিয়াম রোগীকে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের দিকে ধাবিত করতে পারে। অ্যান্ড স্টেজ রেনাল ডিজিজ রোগীর লবণের কোনো বিকল্প ব্যবহার করা উচিত না। কারণ লবণের বিকল্প খাদ্যে সোডিয়ামের পরিবর্তে পটাশিয়াম ব্যবহার করা হয়।

 

অতিরিক্ত ফসফেটযুক্ত খাদ্য যেমন : দুধ ও দুধ জাতীয় খাদ্য, মাংস ইত্যাদি কিডনি রোগীর সীমিত পরিমাণে গ্রহণ প্রয়োজন। বেশির ভাগ কিডনি রোগীর রক্ত স্বল্পতা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে খাদ্য তালিকায় প্রচুর আয়রন এবং ভিটামিন-সি জাতীয় খাদ্য রাখতে হবে।

 

ডায়ালাইসিস রোগীর খাদ্য চাহিদা : ডায়ালাইসিস রোগীর খাদ্য তালিকায় কিছু অতিরিক্ত আমিষ জাতীয় খাবার থাকা প্রয়োজন। সাধারণত ডায়ালাইসিস রোগীর খাদ্যতালিকায় পটাসিয়ামের সীমাবদ্ধতা থাকে। একজন ডায়ালাইসিস কিডনি রোগীর খাদ্যতালিকা প্রস্তুতির ক্ষেত্রে সাধারণত ‘৮০-৩-৩’ লেখা হয়, যার অর্থ দৈনিক ৮০ গ্রাম প্রোটিন, ৩ গ্রাম পটাসিয়াম এবং ৩ গ্রাম সোডিয়াম। তবে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে, ডায়রিয়া, বমি, জ্বর ইত্যাদি থাকলে শরীরে সোডিয়ামের চাহিদা বাড়তে পারে।

 

লেখক : চিফ ক্লিনিকাল ডায়াটিশিয়ান ও হেড অব দ্য ডিপার্টমেন্ট, ক্লিনিকাল ডায়েটেটিকস অ্যান্ড নিউট্রিশন, ইউনাইটেড হাসপাতাল।  সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com