কিডনিতে পাথর ও করণীয়

সংগৃহীত ছবি
 ডা. মারজোয়া হুমায়রা মেখলা :  কিডনিতে পাথর বলতে বুঝায় কিডনির ভিতরে যে অসংখ্য টিউবিউল থাকে অথবা কালেক্টিং সিস্টেমের মধ্যে পাথর তৈরি হওয়া। তবে পাথর মূত্রনালি বা মূত্রথলিতেও হতে পারে। সারা বিশ্বে বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন শতাংশ রোগী আছে। প্রায় ৪-২০ শতাংশ রোগী কিডনির পাথর রোগে ভোগে। সাধারণত ২০ থেকে ৬০ বছর বয়সের মধ্যে হয়।

 

কীভাবে বা কেন পাথর হয় :

প্রস্রাব কমে গেলে এবং প্রস্রাবের ঘনত্ব বেড়ে গেলে, প্রস্রাব দিয়ে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম, অক্সালেট, ইউরিক এসিড নির্গত হলে, মূত্রনালির জন্মগত ত্রুটির জন্য প্রস্রাব জমে থাকলে, মূত্রের দ্রবণ ক্ষমতা কমে গেলে।  ক্রিস্টালগুলো জমে একসঙ্গে মিলিত হয়ে পাথর তৈরি করে।

 

প্রকারভেদ :

বিভিন্ন ধরনের পাথর আছে। এর মধ্যে ক্যালসিয়াম ও স্ট্রুভাইট পাথর বেশি দেখা যায়। ক্যালসিয়াম অক্সালেট, ক্যালসিয়াম ফসফেট, স্ট্রুভাইট, ইউরিক এসিড ও সিস্টিন।

 

উপসর্গ :

অনেক সময় কিডনিতে পাথর হলে কোনো উপসর্গ না-ও থাকতে পারে। তবে পাথরের ধরন, অবস্থান ও সাইজ অনুযায়ী উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন- সাধারণত অনেক বড় পাথর হলেও তীব্র ব্যথা হয় না। আবার অনেক ছোট পাথরও যদি মূত্রনালিতে চলে আসে তাহলে তীব্র ব্যথা হয়। যেটা কোমর থেকে কুচকির দিকে যায়। প্রস্রাবের রং লাল, প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া, প্রস্রাব আটকে যাওয়া, বমিভাব ও বমি, জ্বর।

 

রোগ নির্ণয় :

রোগ নির্ণয় করার জন্য রোগীর পূর্ণ ইতিহাস, বিশেষ করে পরিবারে কারও কিডনিতে পাথর হয়েছে কি না, সারা দিন পানি খাওয়ার পরিমাণ, কোনো ওষুধ খায় কি না, (যেমন অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট বা অতিরিক্ত ভিটামিন সি ট্যাবলেট খাওয়া হয় কি না) আগে পাথর হয়েছিল কি না, পাথর ছাড়া আর কোনো রোগ আছে কি না, এসব জেনে নেওয়া জরুরি। রোগীর দৈনিক খাদ্য তালিকাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া রক্ত, প্রস্রাব (রুটিন টেস্ট, ২৪ ঘণ্টার পাথর স্ক্রিনিং), এক্স-রে, আল্ট্রাসোনো, সিটি স্ক্যান, আইভিইউ ইত্যাদি যাবতীয় পরীক্ষা করে পাথরের অবস্থান, আকার ও ধরন সম্পর্কে ধারণা গ্রহণ করা যায়।

 

চিকিৎসা :

পাথরের অবস্থান ও সাইজ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়। খুব ছোট পাথর এবং অবস্থান যদি এমন হয় যেটা মূত্রনালি দিয়ে বের হেতে পারবে তাহলে কিছু ওষুধ দিয়ে মেডিকেল এক্সপালসিভ থেরাপি দেওয়া যেতে পারে এক মাসের জন্য। পাথর ৬ মিলিমিটারের বেশি বড় হলে অবস্থান অনুযায়ী পাথর ক্রাশ করা (এক্সট্রা করপোরিয়াল শক ওয়েভ লিথোট্রিপসি), পিসিএনএল (পারকিউটেনিউয়াস নেফ্রোলিথোটমি), আরআইআরএস (রেট্রোগ্রেড ইন্ট্রারেনাল সার্জারি) ইত্যাদি অপারেশন করা যায়।

 

প্রতিরোধ :

যাদের বারবার কিডনিতে পাথর হচ্ছে তাদের এ রোগ প্রতিরোধ করতে হলে সবচেয়ে ভালো হয় যদি জেনে নেওয়া যায় পাথরের ধরন কী ছিল। কারণ শুধু খাদ্য তালিকা মেনে চললেই অনেকাংশে বারবার পাথর হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। পানি বেশি পরিমাণে পান করতে হবে, যেন দিনে অন্তত আড়াই লিটার প্রস্রাব হয়। সকালে বড় এক গ্লাস পানি খাওয়া, ফলের জুস দৈনিক খাওয়া ভালো। ঘণ্টায় ঘণ্টায় পানি খেতে হবে প্রোটিন পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়া, কেজিপ্রতি ০.৮ থেকে ১ গ্রাম দৈনিক প্রোটিন খাওয়া যাবে। লবণ কম খেতে হবে। দৈনিক ৬ গ্রাম। ক্যালসিয়াম, যেমন অতিরিক্ত ট্যাবলেট সেবন করা যাবে না তেমনি দৈনিক অন্তত ৭০০-১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম খেতে হবে। তবে সেটা খাদ্য থেকে নেওয়া ভালো, ওষুধ থেকে নয়।

অক্সালেটযুক্ত খাবার :

বিট, পালংশাক, মটরশুঁটি, চকলেট, স্ট্রবেরি, ব্ল্যাকবেরি, কিউই ফল, বাদাম।

ইউরিক এসিডযুক্ত খাবার :

গরু বা খাসির মাংস, কলিজা, হার্ট, ভুঁড়ি, কাঁকড়া, চিংড়ি, সবজি : কিডনি বিনস, পালংশাক, মাশরুম ইত্যাদি। কার কোন ধরনের পাথর হচ্ছে তা জানার পর তাকে সেই ধরনের খাবার কম খেতে বলা হয়। এভাবে পাথর হওয়ার প্রবণতা কমিয়ে আনা সম্ভব। তাই এ বিষয়ে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।

লেখক: কিডনি রোগ বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করছে: ড. ইউনূস

» ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতার নামে ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন মেনে নেওয়া হবে না’

» প্লে-অফের আশা বাঁচিয়ে রাখল খুলনা

» বাংলাদেশে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি জাপানের

» দল গঠন বা পদত্যাগের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি: উপদেষ্টা নাহিদ

» শাবান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি, পবিত্র শবে বরাত ১৪ ফেব্রুয়ারি

» কোটা নিয়ে সরকারের তিন সিদ্ধান্ত

» ভারতের বিভিন্ন বাঁধের কারণে আমাদের নদী শুকিয়ে গেছে: তারেক রহমান

» বড়াইগ্রামের চবি শিক্ষার্থী টুম্পা’র পাশে নাটোরের ডিসি আসমা শাহীন

» স্বাধীনতার পর জাতির জন্য ভালো কিছু হয়নি তাতে একমত হবো না ” ডাঃ শফিকুর রহমান

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

কিডনিতে পাথর ও করণীয়

সংগৃহীত ছবি
 ডা. মারজোয়া হুমায়রা মেখলা :  কিডনিতে পাথর বলতে বুঝায় কিডনির ভিতরে যে অসংখ্য টিউবিউল থাকে অথবা কালেক্টিং সিস্টেমের মধ্যে পাথর তৈরি হওয়া। তবে পাথর মূত্রনালি বা মূত্রথলিতেও হতে পারে। সারা বিশ্বে বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন শতাংশ রোগী আছে। প্রায় ৪-২০ শতাংশ রোগী কিডনির পাথর রোগে ভোগে। সাধারণত ২০ থেকে ৬০ বছর বয়সের মধ্যে হয়।

 

কীভাবে বা কেন পাথর হয় :

প্রস্রাব কমে গেলে এবং প্রস্রাবের ঘনত্ব বেড়ে গেলে, প্রস্রাব দিয়ে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম, অক্সালেট, ইউরিক এসিড নির্গত হলে, মূত্রনালির জন্মগত ত্রুটির জন্য প্রস্রাব জমে থাকলে, মূত্রের দ্রবণ ক্ষমতা কমে গেলে।  ক্রিস্টালগুলো জমে একসঙ্গে মিলিত হয়ে পাথর তৈরি করে।

 

প্রকারভেদ :

বিভিন্ন ধরনের পাথর আছে। এর মধ্যে ক্যালসিয়াম ও স্ট্রুভাইট পাথর বেশি দেখা যায়। ক্যালসিয়াম অক্সালেট, ক্যালসিয়াম ফসফেট, স্ট্রুভাইট, ইউরিক এসিড ও সিস্টিন।

 

উপসর্গ :

অনেক সময় কিডনিতে পাথর হলে কোনো উপসর্গ না-ও থাকতে পারে। তবে পাথরের ধরন, অবস্থান ও সাইজ অনুযায়ী উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন- সাধারণত অনেক বড় পাথর হলেও তীব্র ব্যথা হয় না। আবার অনেক ছোট পাথরও যদি মূত্রনালিতে চলে আসে তাহলে তীব্র ব্যথা হয়। যেটা কোমর থেকে কুচকির দিকে যায়। প্রস্রাবের রং লাল, প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া, প্রস্রাব আটকে যাওয়া, বমিভাব ও বমি, জ্বর।

 

রোগ নির্ণয় :

রোগ নির্ণয় করার জন্য রোগীর পূর্ণ ইতিহাস, বিশেষ করে পরিবারে কারও কিডনিতে পাথর হয়েছে কি না, সারা দিন পানি খাওয়ার পরিমাণ, কোনো ওষুধ খায় কি না, (যেমন অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট বা অতিরিক্ত ভিটামিন সি ট্যাবলেট খাওয়া হয় কি না) আগে পাথর হয়েছিল কি না, পাথর ছাড়া আর কোনো রোগ আছে কি না, এসব জেনে নেওয়া জরুরি। রোগীর দৈনিক খাদ্য তালিকাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া রক্ত, প্রস্রাব (রুটিন টেস্ট, ২৪ ঘণ্টার পাথর স্ক্রিনিং), এক্স-রে, আল্ট্রাসোনো, সিটি স্ক্যান, আইভিইউ ইত্যাদি যাবতীয় পরীক্ষা করে পাথরের অবস্থান, আকার ও ধরন সম্পর্কে ধারণা গ্রহণ করা যায়।

 

চিকিৎসা :

পাথরের অবস্থান ও সাইজ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়। খুব ছোট পাথর এবং অবস্থান যদি এমন হয় যেটা মূত্রনালি দিয়ে বের হেতে পারবে তাহলে কিছু ওষুধ দিয়ে মেডিকেল এক্সপালসিভ থেরাপি দেওয়া যেতে পারে এক মাসের জন্য। পাথর ৬ মিলিমিটারের বেশি বড় হলে অবস্থান অনুযায়ী পাথর ক্রাশ করা (এক্সট্রা করপোরিয়াল শক ওয়েভ লিথোট্রিপসি), পিসিএনএল (পারকিউটেনিউয়াস নেফ্রোলিথোটমি), আরআইআরএস (রেট্রোগ্রেড ইন্ট্রারেনাল সার্জারি) ইত্যাদি অপারেশন করা যায়।

 

প্রতিরোধ :

যাদের বারবার কিডনিতে পাথর হচ্ছে তাদের এ রোগ প্রতিরোধ করতে হলে সবচেয়ে ভালো হয় যদি জেনে নেওয়া যায় পাথরের ধরন কী ছিল। কারণ শুধু খাদ্য তালিকা মেনে চললেই অনেকাংশে বারবার পাথর হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। পানি বেশি পরিমাণে পান করতে হবে, যেন দিনে অন্তত আড়াই লিটার প্রস্রাব হয়। সকালে বড় এক গ্লাস পানি খাওয়া, ফলের জুস দৈনিক খাওয়া ভালো। ঘণ্টায় ঘণ্টায় পানি খেতে হবে প্রোটিন পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়া, কেজিপ্রতি ০.৮ থেকে ১ গ্রাম দৈনিক প্রোটিন খাওয়া যাবে। লবণ কম খেতে হবে। দৈনিক ৬ গ্রাম। ক্যালসিয়াম, যেমন অতিরিক্ত ট্যাবলেট সেবন করা যাবে না তেমনি দৈনিক অন্তত ৭০০-১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম খেতে হবে। তবে সেটা খাদ্য থেকে নেওয়া ভালো, ওষুধ থেকে নয়।

অক্সালেটযুক্ত খাবার :

বিট, পালংশাক, মটরশুঁটি, চকলেট, স্ট্রবেরি, ব্ল্যাকবেরি, কিউই ফল, বাদাম।

ইউরিক এসিডযুক্ত খাবার :

গরু বা খাসির মাংস, কলিজা, হার্ট, ভুঁড়ি, কাঁকড়া, চিংড়ি, সবজি : কিডনি বিনস, পালংশাক, মাশরুম ইত্যাদি। কার কোন ধরনের পাথর হচ্ছে তা জানার পর তাকে সেই ধরনের খাবার কম খেতে বলা হয়। এভাবে পাথর হওয়ার প্রবণতা কমিয়ে আনা সম্ভব। তাই এ বিষয়ে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।

লেখক: কিডনি রোগ বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com