কলকাতায় ডিএনএ নমুনা দিলেন আনারকন্যা ডরিন

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : কলকাতায় উদ্ধার হওয়া খণ্ডবিখণ্ড লাশটি ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনারের কিনা তা নিশ্চিত হতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়েছেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। গত নভেম্বর মাসের শেষ দিকে কলকাতায় নমুনা জমা দেন তিনি। এই মামলার তদন্তকারী সংস্থা পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সিআইডি সূত্র এমনটাই জানিয়েছে

 

উল্লেখ্য, গত ১২ মে ভারতে আসে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। তিনি ওঠেন পূর্ব পরিচিত গোপাল বিশ্বাসের পশ্চিমবঙ্গের বরানগরে বাড়িতে। পরদিন ১৩ মে চিকিৎসা করাতে যাবেন বলে গোপালের বাড়ি থেকে বের হন তিনি। কিন্তু ওইদিন রাতেই নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের বহুতল আবাসনের ‘বিইউ-৫৬’ ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে তাকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।

জানা যায়, বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আখতারুজ্জামান শাহীন এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী। মূলত আখতারুজ্জামানের নির্দেশেই জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদ সহ চারজন এমপি আনারকে ওই আবাসনে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে বলে অভিযোগ।

 

এই ঘটনায় সিআইডির হাতে গ্রেফতার হওয়া অন্যতম অভিযুক্ত বাংলাদেশি নাগরিক সিয়াম হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, এমপি আনারকে খুন ও খণ্ড-বিখণ্ড লাশ লোপাটের কাজে যুক্ত ছিল সে। নিউটাউনের অভিজাত ওই সঞ্জীভা গার্ডেনের যে সিসিটিভি ফুটেজ সামনে আসে তাতেও সিয়ামকে দেখা যায়।

 

সিআইডির হাতে গ্রেফতার হওয়া আরেক অভিযুক্ত কসাই জিহাদ খুনের পরই ধারালো অস্ত্র দিয়ে এমপি আনারের শরীর থেকে মাংস আলাদা করে সেগুলোকে ক্যারিব্যাগে ভরে রাখে। পরে সেই লাশের টুকরো গুলোকে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলার ভাঙ্গড় ব্লকের কৃষ্ণমাটি খাল এলাকায় ফেলা হয়। জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমনটাই জানতে পারে তদন্তকারী কর্মকর্তারা। পরবর্তীতে ওই খাল সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু হাড় উদ্ধার করে সিআইডির কর্মকর্তারা। যা দেখে সিআইডি কর্মকর্তা ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের অনুমান সেগুলি মানুষের হাড়।

 

পাশাপাশি সঞ্জীবা গার্ডেনের ওই আবাসনের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হয় প্রায় চারকেজি মাংস। উদ্ধারকৃত ওই মাংস পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় ‘সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরী’ (সিএফএসএল)-এ। সিএফএসএল-এর প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী পুরুষ মানুষের।

 

যদিও সেই খণ্ডবিখণ্ড লাশ এমপি আনারের কি না, তা নিশ্চিত হতেই ডিএনএ পরীক্ষা জরুরি ছিল। সেক্ষেত্রে অনেক আগেই নিহত এমপি আনারের কন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডোরিন কলকাতায় আসার কথা থাকলেও নানা কারণে তা পিছিয়ে যায়। অবশেষে গত নভেম্বর মাসেই কলকাতা এসে সিআইডি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন এবং ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তার কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তদন্তকারী সংস্থা।

 

ওই মামলার তদন্ত করতে কলকাতা এসেছিল তৎকালীন ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল। সঞ্জীবা গার্ডেন, বাগজোলা খাল সহ বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শনের পাশাপাশি দফায় দফায় সিআইডি কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন ডিবি প্রধান।

 

এদিকে, গত ২৩ মে জিহাদ হাওলাদার এবং ৭ জুন  সিয়াম হোসেনকে গ্রেফতারের পর আগস্ট মাসে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসাত জেলা আদালতে প্রায় ১২০০ পাতার চার্জশিট জমা পড়ে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ), ৩০২ (অপরাধমূলক নরহত্যা), ২০১ (তথ্য প্রমাণ লোপাট) এবং ৩৪ (সংঘবদ্ধ ভাবে অপরাধমূলক কাজ সংঘটিত করা) এবং ১৪ ফরেনার্স আইনে মামলা দেওয়া হয়।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» জামায়াতে ইসলামী কোনো চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীর সঙ্গে জোট করবে না

» নতুন বন্দোবস্ত না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়ব না: আখতার হোসেন

» ইতিহাসের বিশেষ সময় অতিবাহিত করছি: জামায়াত সেক্রেটারি

» আমাদের আন্দোলন দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে : নাহিদ ইসলাম

» সাফে শ্রীলঙ্কাকে ৯ গোলে বিধ্বস্ত করলো বাংলাদেশ

» বিএনপি দেশে দ্রুত গণতান্ত্রিক উত্তরণ চায় : গয়েশ্বর

» আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদকে অপবিত্র করেছে : আলাল

» কাতারের মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানি হামলা, স্যাটেলাইট চিত্রে যা দেখা গেলো

» ১১ জুলাইকে ‘প্রথম প্রতিরোধ দিবস’ ঘোষণা উপদেষ্টা আসিফের

» তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জয়পুরহাটে বিএনপি নেতা ফয়সল আলীমের গণসংযোগ  

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

কলকাতায় ডিএনএ নমুনা দিলেন আনারকন্যা ডরিন

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : কলকাতায় উদ্ধার হওয়া খণ্ডবিখণ্ড লাশটি ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনারের কিনা তা নিশ্চিত হতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়েছেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। গত নভেম্বর মাসের শেষ দিকে কলকাতায় নমুনা জমা দেন তিনি। এই মামলার তদন্তকারী সংস্থা পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সিআইডি সূত্র এমনটাই জানিয়েছে

 

উল্লেখ্য, গত ১২ মে ভারতে আসে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। তিনি ওঠেন পূর্ব পরিচিত গোপাল বিশ্বাসের পশ্চিমবঙ্গের বরানগরে বাড়িতে। পরদিন ১৩ মে চিকিৎসা করাতে যাবেন বলে গোপালের বাড়ি থেকে বের হন তিনি। কিন্তু ওইদিন রাতেই নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের বহুতল আবাসনের ‘বিইউ-৫৬’ ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে তাকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।

জানা যায়, বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আখতারুজ্জামান শাহীন এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী। মূলত আখতারুজ্জামানের নির্দেশেই জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদ সহ চারজন এমপি আনারকে ওই আবাসনে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে বলে অভিযোগ।

 

এই ঘটনায় সিআইডির হাতে গ্রেফতার হওয়া অন্যতম অভিযুক্ত বাংলাদেশি নাগরিক সিয়াম হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, এমপি আনারকে খুন ও খণ্ড-বিখণ্ড লাশ লোপাটের কাজে যুক্ত ছিল সে। নিউটাউনের অভিজাত ওই সঞ্জীভা গার্ডেনের যে সিসিটিভি ফুটেজ সামনে আসে তাতেও সিয়ামকে দেখা যায়।

 

সিআইডির হাতে গ্রেফতার হওয়া আরেক অভিযুক্ত কসাই জিহাদ খুনের পরই ধারালো অস্ত্র দিয়ে এমপি আনারের শরীর থেকে মাংস আলাদা করে সেগুলোকে ক্যারিব্যাগে ভরে রাখে। পরে সেই লাশের টুকরো গুলোকে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলার ভাঙ্গড় ব্লকের কৃষ্ণমাটি খাল এলাকায় ফেলা হয়। জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমনটাই জানতে পারে তদন্তকারী কর্মকর্তারা। পরবর্তীতে ওই খাল সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু হাড় উদ্ধার করে সিআইডির কর্মকর্তারা। যা দেখে সিআইডি কর্মকর্তা ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের অনুমান সেগুলি মানুষের হাড়।

 

পাশাপাশি সঞ্জীবা গার্ডেনের ওই আবাসনের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হয় প্রায় চারকেজি মাংস। উদ্ধারকৃত ওই মাংস পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় ‘সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরী’ (সিএফএসএল)-এ। সিএফএসএল-এর প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী পুরুষ মানুষের।

 

যদিও সেই খণ্ডবিখণ্ড লাশ এমপি আনারের কি না, তা নিশ্চিত হতেই ডিএনএ পরীক্ষা জরুরি ছিল। সেক্ষেত্রে অনেক আগেই নিহত এমপি আনারের কন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডোরিন কলকাতায় আসার কথা থাকলেও নানা কারণে তা পিছিয়ে যায়। অবশেষে গত নভেম্বর মাসেই কলকাতা এসে সিআইডি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন এবং ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তার কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তদন্তকারী সংস্থা।

 

ওই মামলার তদন্ত করতে কলকাতা এসেছিল তৎকালীন ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল। সঞ্জীবা গার্ডেন, বাগজোলা খাল সহ বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শনের পাশাপাশি দফায় দফায় সিআইডি কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন ডিবি প্রধান।

 

এদিকে, গত ২৩ মে জিহাদ হাওলাদার এবং ৭ জুন  সিয়াম হোসেনকে গ্রেফতারের পর আগস্ট মাসে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসাত জেলা আদালতে প্রায় ১২০০ পাতার চার্জশিট জমা পড়ে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ), ৩০২ (অপরাধমূলক নরহত্যা), ২০১ (তথ্য প্রমাণ লোপাট) এবং ৩৪ (সংঘবদ্ধ ভাবে অপরাধমূলক কাজ সংঘটিত করা) এবং ১৪ ফরেনার্স আইনে মামলা দেওয়া হয়।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com