ওমানে চাকরি হারানো প্রবাসী পুরুষরা এখন ‘হাউজ-হাজব্যান্ড’

করোনার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে চাকরি হারানো প্রবাসী পুরুষ কর্মীদের বেশির ভাগই বাড়িতে কাজ করছেন। তবে তাদের স্ত্রীর চাকরি থাকায় পুরুষদের সাংসারিক কাজে সময় দিতে হচ্ছে। চাকরি হারিয়ে গৃহকর্মে সময় দেওয়া এসব প্রবাসী পুরুষকর্মীকে ‘হাউজ-হাজব্যান্ড’ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে ওমানের সংবাদমাধ্যমগুলো।

 

গালফ নিউজ এক খবরে বলেছে, চাকরি থেকে ছাঁটাই হওয়া এসব প্রবাসী কর্মীদের বেশিরভাগেরই বয়স ৪০ এর বেশি। যে কারণে তাদের হয় নিজ দেশে ফিরতে অথবা স্ত্রীর আয়ের ওপর নির্ভর করতে হবে। বয়সের কারণে তাদের নতুন করে ক্যারিয়ার শুরু করাও প্রায় অসম্ভব। আর এসব প্রবাসীদের অধিকাংশই ভারতীয়।

ওমানে প্রবাসী এসব পুরুষদের অনেক কর্মীর স্ত্রীরা চাকরি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় স্বামীরা ঘরের সব কাজ দেখাশোনা করেন। এ নতুন ব্যবস্থাকে ‘হাউজ-হাজব্যান্ড’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তেমনই একজন ভারতের কেরালা রাজ্যের নাগরিক জোসেফ মানাকাড। ওমানের একটি অটোমোবাইল এজেন্সিতে চাকরি করতেন জোসেফ। আর স্ত্রী অন্য একটি কোম্পানিতে এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারির কাজ করতেন।

 

গালফ নিউজ বলছে, করোনা মহামারীর পর জোসেফের চাকরি চলে যায়। তবে স্ত্রীর চাকরি থেকে যায়। এই দম্পতির মাধ্যমিক পড়ুয়া এক ছেলের পড়াশুনার ব্যয়সহ তারা ওমানে বেশ ভালোই ছিলেন। তবে চাকরি হারানোর পর জোসেফ পড়ে যান বিপাকে।

 

জোসেফ বলেন, ‘করোনার শুরুতেই চাকরি চলে যাওয়ার আশংঙ্কা ভর করে মনে। ২০২০ সালের শেষে কোম্পানি থেকে আমাকে ছাঁটাই করা হয়। ফলে ওমানে বৈধভাবে বসবাসের ভিসাও বাতিল হয়ে যায়। আমার ছেলের বার্ষিক পরীক্ষাও ছিল সন্নিকটে। আমার স্ত্রীর চাকরি থাকায় আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে আমি দেশে ফিরে যাবো। আর আমার স্ত্রী এখানে চাকরি করবে। কিছুদিন পরে স্ত্রীর ভিসায় আবার ওমানে চলে আসবো। বর্তমানে আমার স্ত্রী চাকরি করছে। আর আমি বাড়ির কাজ দেখাশোনা করছি।’

 

জোসেফ জানান, বাড়িতে তাকে বেশি শারীরিক পরিশ্রম করতে হয় না। যদিও চাকরি যাওয়ার পর দুই রুমের ফ্ল্যাটের পরিবর্তে এক রুমের ফ্ল্যাটে উঠেছেন এই দম্পতি। এখন রান্না করা, সিনেমা দেখা এবং লাইভ খেলা উপভোগ করেই দিন পার করছেন এই ভারতীয় প্রবাসী।

 

ওমানে জোসেফের মতো চাকরি হারানো অনেক প্রবাসী পুরুষ কর্মীর স্ত্রীরা নিজেদের চাকরিতে সময় দিচ্ছেন। আর ঘরের যাবতীয় কাজে ব্যস্ত থাকছেন তাদের চাকরি না-থাকা স্বামীরা। এমন স্বামীদেরই বলা হচ্ছে ‘হাউজ-হাজব্যান্ড’।

 

এমনই আরেকজন ভারতীয় প্রবাসী ষাট বছর বয়সী কৃষ্ণান ঈশ^রান। স্ত্রী ও ছেলে মেয়ে নিয়ে ২৬ বছর যাবত ওমানে বাস করছেন। বর্তমানে তার ছেলে মেয়েরা অন্য দেশে বাস করছে। ২০২০ সালে কৃষ্ণানের কোম্পানি তার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে। চাকরি হারালেও দীর্ঘদিন ওমানে বসবাসের কারণে দেশটির প্রতি ভালোবাসা থেকে সেখানেই রয়ে গেছেন। জোসেফের মতো কৃষ্ণানও বাড়ির কাজ করেই সময় পার করছেন।

 

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» সংস্কার প্রতিবেদনের আলোকে গণঅভ্যুত্থানের চার্টার তৈরি হবে: ড. ইউনূস

» মালয়েশিয়ার হাইকমিশনারের সঙ্গে জামায়াত আমিরের সৌজন্য সাক্ষাৎ

» শর্তহীন মার্জনা

» ভুলে শিশুর বাম চোখের বদলে ডান চোখে অপারেশনের অভিযোগ

» ন্যায়বিচার পেয়েছি, আমরা সন্তুষ্ট: আইনজীবী জয়নুল আবেদীন

» আবারও রিমান্ডে সালমান-পলক

» শীতে পরিযায়ী পাখিরা কীভাবে সহস্র মাইল পথ চিনে যায়-আসে?

» নারীকে গলা কেটে হত্যা

» মৃতব্যক্তিকে কবরে সকাল-সন্ধ্যায় যা দেখানো হয়

» সবজি থেকে কীটনাশক দূর করার উপায়

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ওমানে চাকরি হারানো প্রবাসী পুরুষরা এখন ‘হাউজ-হাজব্যান্ড’

করোনার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে চাকরি হারানো প্রবাসী পুরুষ কর্মীদের বেশির ভাগই বাড়িতে কাজ করছেন। তবে তাদের স্ত্রীর চাকরি থাকায় পুরুষদের সাংসারিক কাজে সময় দিতে হচ্ছে। চাকরি হারিয়ে গৃহকর্মে সময় দেওয়া এসব প্রবাসী পুরুষকর্মীকে ‘হাউজ-হাজব্যান্ড’ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে ওমানের সংবাদমাধ্যমগুলো।

 

গালফ নিউজ এক খবরে বলেছে, চাকরি থেকে ছাঁটাই হওয়া এসব প্রবাসী কর্মীদের বেশিরভাগেরই বয়স ৪০ এর বেশি। যে কারণে তাদের হয় নিজ দেশে ফিরতে অথবা স্ত্রীর আয়ের ওপর নির্ভর করতে হবে। বয়সের কারণে তাদের নতুন করে ক্যারিয়ার শুরু করাও প্রায় অসম্ভব। আর এসব প্রবাসীদের অধিকাংশই ভারতীয়।

ওমানে প্রবাসী এসব পুরুষদের অনেক কর্মীর স্ত্রীরা চাকরি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় স্বামীরা ঘরের সব কাজ দেখাশোনা করেন। এ নতুন ব্যবস্থাকে ‘হাউজ-হাজব্যান্ড’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তেমনই একজন ভারতের কেরালা রাজ্যের নাগরিক জোসেফ মানাকাড। ওমানের একটি অটোমোবাইল এজেন্সিতে চাকরি করতেন জোসেফ। আর স্ত্রী অন্য একটি কোম্পানিতে এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারির কাজ করতেন।

 

গালফ নিউজ বলছে, করোনা মহামারীর পর জোসেফের চাকরি চলে যায়। তবে স্ত্রীর চাকরি থেকে যায়। এই দম্পতির মাধ্যমিক পড়ুয়া এক ছেলের পড়াশুনার ব্যয়সহ তারা ওমানে বেশ ভালোই ছিলেন। তবে চাকরি হারানোর পর জোসেফ পড়ে যান বিপাকে।

 

জোসেফ বলেন, ‘করোনার শুরুতেই চাকরি চলে যাওয়ার আশংঙ্কা ভর করে মনে। ২০২০ সালের শেষে কোম্পানি থেকে আমাকে ছাঁটাই করা হয়। ফলে ওমানে বৈধভাবে বসবাসের ভিসাও বাতিল হয়ে যায়। আমার ছেলের বার্ষিক পরীক্ষাও ছিল সন্নিকটে। আমার স্ত্রীর চাকরি থাকায় আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে আমি দেশে ফিরে যাবো। আর আমার স্ত্রী এখানে চাকরি করবে। কিছুদিন পরে স্ত্রীর ভিসায় আবার ওমানে চলে আসবো। বর্তমানে আমার স্ত্রী চাকরি করছে। আর আমি বাড়ির কাজ দেখাশোনা করছি।’

 

জোসেফ জানান, বাড়িতে তাকে বেশি শারীরিক পরিশ্রম করতে হয় না। যদিও চাকরি যাওয়ার পর দুই রুমের ফ্ল্যাটের পরিবর্তে এক রুমের ফ্ল্যাটে উঠেছেন এই দম্পতি। এখন রান্না করা, সিনেমা দেখা এবং লাইভ খেলা উপভোগ করেই দিন পার করছেন এই ভারতীয় প্রবাসী।

 

ওমানে জোসেফের মতো চাকরি হারানো অনেক প্রবাসী পুরুষ কর্মীর স্ত্রীরা নিজেদের চাকরিতে সময় দিচ্ছেন। আর ঘরের যাবতীয় কাজে ব্যস্ত থাকছেন তাদের চাকরি না-থাকা স্বামীরা। এমন স্বামীদেরই বলা হচ্ছে ‘হাউজ-হাজব্যান্ড’।

 

এমনই আরেকজন ভারতীয় প্রবাসী ষাট বছর বয়সী কৃষ্ণান ঈশ^রান। স্ত্রী ও ছেলে মেয়ে নিয়ে ২৬ বছর যাবত ওমানে বাস করছেন। বর্তমানে তার ছেলে মেয়েরা অন্য দেশে বাস করছে। ২০২০ সালে কৃষ্ণানের কোম্পানি তার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে। চাকরি হারালেও দীর্ঘদিন ওমানে বসবাসের কারণে দেশটির প্রতি ভালোবাসা থেকে সেখানেই রয়ে গেছেন। জোসেফের মতো কৃষ্ণানও বাড়ির কাজ করেই সময় পার করছেন।

 

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com