সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক : অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান কর্তৃক জাতীয় নির্বাচন ও জাতীয় ঐক্যমত সংক্রান্ত কমিশন গঠনের ধারণাকে স্বাগত জানিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বলেছেন, সরকারের কাজের গতি ও দক্ষতা থাকলে ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে ২০২৫ সালের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব। তারা উচ্চ আদালত কর্তৃক সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর কয়েকটি ধারা বাতিল সংক্রান্ত রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন এবং বলেছেন, এই রায়ের মধ্যদিয়ে সংবিধানে জাতীয় নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হলো।
আজ সকালে গণতন্ত্র মঞ্চের সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ার উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বলেন, বাস্তবে প্রশাসনে স্থবিরতা চলছে। একশ্রেণির আমলারা ব্যক্তিগত এজেন্ডা ও প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই ব্যস্ত রয়েছে। তোপখানা রোডে নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
নেতৃবৃন্দ বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মহিবুল হককে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে গ্রেফতারের ঘটনায় ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলেন, চার বছর আগে অবসরে যাওয়া মহিবুল হককে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিরোধী দলসমূহের মহাসমাবেশে এক হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার বাদি আদালতে উপস্থিত হয়ে তার মামলার সাথে মহিবুল হকের কোন ধরনের সংশ্লিষ্টতা না থাকার কথা জানিয়ে হলফনামা দিলেও গত একমাসে তার জামিন হয়নি। তিনি যেন জামিনে ছাড়া না পান তার জন্য ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে এক নিহতের মামলায়ও তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তারা বলেন, ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই সরকারি পদ ও ক্ষমতা ব্যবহার করে মহিবুল হককে অন্যায়ভাবে জেলে পুরে রাখা হয়েছে। তারা বলেন, এই ধরনের হয়রানিমূলক প্রতিশোধাত্বক মামলা চলতে থাকলে প্রকৃত অপরাধীরা পার পেয়ে যেতে পারে।
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে আইনানুগভাবে মহিবুল হকের মুক্তি দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপর মানুষের বিপুল প্রত্যাশা। তারা যদি পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে তাদের দলনিরপেক্ষতা হারান তাহলে তাদের অধীনে জাতীয় নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যেতে পারে। তিনি রাজনৈতিক দলসমূহসহ সবাইকে আস্থায় নিয়ে সরকারকে সংস্কার, জাতীয় নির্বাচনসহ দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিশেষ কোন দিকে ঝুঁকে না পড়ে সরকারকে দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বাতিল হওয়া স্থানীয় পরিষদের কাউন্সিলরদেরকে পুনর্বহাল করার তৎপরতায় তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং বলেন, এইভাবে পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তির দোসরেরা আবার পুনর্বাসিত হবে। তিনি এসব তৎপরতা বন্ধের দাবি জানান।
শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, ফ্যাসিবাদী শক্তির গোটা প্রশাসন অক্ষুন্ন রেখে গণঅভ্যুত্থানের চেতনায় দেশ এগিয়ে নেয়া যাবে না। তিনি বলেন, আমলাদের শোধ প্রতিশোধের তৎপরতা সরকারকে বিপদে ফেলে দিতে পারে।
শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, সংস্কার ছাড়া গতানুগতিক নির্বাচন দিয়ে দেশ এগুতে পারবে না। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্য সংস্কার প্রয়োজন।
আবুল হাসান রুবেল বলেন, গণ অভ্যুত্থানের সংগঠকেরা গুপ্ত হত্যার শিকার হচ্ছেন। তিনি গণঅভ্যুত্থানের সংগঠকদের নিরাপত্তাসহ জনগণের জান মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ ও অকার্যকরী করে তুলতে বহু আয়োজন চলছে, যার সাথে যুক্ত রয়েছে পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি ও নানা অশুভ চক্র। এসব বিবেচনায় রেখেই সরকারকে প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতাতার সাথে দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নির্ধারণ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে দেশবিরোধী অপতৎপরতার প্রতিবাদে ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোর দাবিতে আগামী ২৪ ডিসেম্বর বিক্ষোভ সমাবেশ ঘোষণা করা হয়। বেলা ১১ টায় পুরানা পল্টন মোড়ে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল – জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, গণ সংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়ক আবুল হাসান রুবেল। সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।